আজকে আমি অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো। এই গাছটি সকলের কাছে পরিচিত। এই গাছের অনেক উপকারিতা ও গুনাগুন রয়েছে তা আলোচনা করবো। এই গাছের প্রত্যেকটা অংশ ঔষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

গাছের ছাল, পাতা এবং ফল ভেষজ ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই গাছের বাকল থেকে আহরিত যে ট্যানিন পাওয়া যায় তা চামড়াতে ব্যবহৃত করে থাকে। এই অর্জুন গাছের ছাল থেকে অনেক ধরনের উপকার পাওয়া যায়। এই গাছ আয়ুবেদেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে।

 অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা
অর্জুন গাছের ছবি

আমরা অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করে অনেক ভালো থাকতে পারি। আজকে আমরা জানবো কি কি রোগ থেকে বাচা যায় এই অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করে। আরো জানবো কি ভাবে ব্যবহার করতে হয় সেই সব বিষয়।

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা

অর্জুন গাছের বিভিন্ন ধরনের রোগের কাজ করে থাকে। যে সব রোগের কাজ করে সেই সব রোগের ব্যবহারবিধি এবং খাওয়ার নিয়ম আলোচনা করবো।

হৃদরোগ: অর্জুন গাছের ছাল এমন একটি ঔষধি গাছ অনেক বড় বড় রোগের কাজ করে থাকে। হৃদরোগ একটি মারাত্মক রোগ এই রোগের জন্য অর্জুন গাছের ছাল বিশেষ কাজ করে থাকে। তাই কেউ যদি নিয়মিত অর্জুন গাছের ছাল খায় সে অনেক ভালো থাকবে এই রোগ থেকে। এই গাছ হার্টের সমস্যা দূর করে।এই গাছের ছাল সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

অ্যাজমা রোগ:  অ্যাজমা একটি মারাত্মক রোগ এই রোগের হাত থেকে বাচার জন্য আপনি যদি নিয়মিত অর্জুন গাছের ছাল গুড়ো করে দুধের সাথে মিশিয়ে সেবন করলে আপনার এই রোগ ভালো হয়ে যাবে।

ত্বকের যত্নে: আমরা অনেকেই ত্বকের পরিচর্যা করতে পছন্দ করি। তবে আমরা সঠিক নিয়ম জানি না হয়তো। বিভিন্ন ত্বক্বের গবেষকরা এই অর্জুন গাছের ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে অর্জুন গাছের ছাল কতটা ত্বকের জন্য কতটা উপকারী সে বিষয়ে আজ আমরা অবগত হব। এই অর্জুন গাছের ছাল ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের ভিতর থেকে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বকের কোষ গুলো কে বেষি মজবুত করে । তবে বিশেষ করে বোরনের জন্য অনেক উপকার করে থাকে। তবে কেউ যদি অর্জুন গাছের ছাল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ব্রণের উপর কয়েক দিন লাগালে বোরন ভালো হয়ে যায়।

ক্ষত নিরাময়ে: অনেক মানুষে ঘা পচরা হয়ে থাকে এবং সেই ঘা পচরা সহজে ভালো হতে চায় না। সেই সব ঘা পাচরা এই অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এই গাছের ছাল পানিতে সুন্দর করে ভিজিয়ে রেখে দিন তার পর পরের দিন ওই পানি দিয়ে ক্ষত স্থানে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন কয়েক দিনের মধ্যে আপনার ঘা পচরা ভালো হয়ে যাবে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: আমাদের প্রায় লোকের এই সমস্যা দেখা যায় তবে একটু বয়স হলে এই রোগটি বেশি লক্ষ্য করা যায়। অনেক চিকিথসা করেও অনেকি ভালো হয় না। তবে এই গাছের ছাল সঠিক নিয়মে সেবন করলে তা সহজে ভালো হয়ে যায়। কেউ যদি নিয়মিত রাতে অর্জুন গাছের ছাল খেলে তার হজম ক্ষমতা বাড়বে।

আমাশা: আমাশা খুবই কষ্টকর এই রোগ। যার হবে তার এই রোগটি সহজে ভালো হতে চায় না। এই রোগে যে একবা আক্রান্ত হবে তার শরীর দিন দিন শুকিয়ে যাবে। চেহারা খারাপ দেখা যাবে। কোন কিছু খাওয়ার রুচি থাকবে না। আমাশা রোগির জন্য অর্জুন গাছের ছাল দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে আমাশা রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

কাশি রোগ: প্রত্যেকটা মানুষের কাশি হয়ে থেকে কম বেশি। এই কাশি অনেক সময়ে দেখা যায়। কোন জরুলী কাজের সময়ে এই কাশি শুরু হলে কেমন লাগে তখন। আমরা জানি যে এই বিষয়টা কাহারো ভালো লাগবে না। তাই এই কাশি থেকে ভালো থাকার জন্য কিছু প্রকৃতিক উপায় রয়েছে। আপনি এই জন্য অর্জুন গাছের সাহায্য নিতে পারেন। আপনি চাইলে এই কাজ টি করতে পারেন, অর্জুন গাছের ছাল ও বাসক পাতার রস সুন্দর করে ভিজিয়ে রেখে, কিছুক্ষন পর তা শুকিয়ে গুঁড়ো করে রেখে দিন।এই গুড়া মধু বা মিছরির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে আপনি অনেক উপকার পাবেন যা আপনি অন্য গাছ থেকে পাবেন না।

রক্তপিত্ত রোগ: এই রোগটি অনেক মানুষের অনেকে সময় হয়ে থাকে। অনেকেই তখন খুবই ভয় পায়। তবে এতে ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই। তবে শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে এটি ঘটতে পারে। আপনাকে অর্জুন গাছের ছাল এই রোগ থেকে মুক্তি দিবে। আপনি চাইলে নিয়মিত এই গাছের ছাল আগের দিন ভিজিয়ে রেখে দিয়ে পরের দিন ছেকে নিয়ে খালি পেটে খেলে অনেক উপকার পাবেন।

লিভারের রোগ: মানুষের লিভার এমন একটি শরীরের অংশ যা ভালো থাকলে শরীর ভালো থাকে। আর যদি লিভার ভালো না থাকে সেই লোকের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে না। তাই সব সময় স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অর্জুন গাছের ছাল এর গুড়ো করে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খেলে লিভার ভালো থাকে। লিভার সুস্থ রাখতে অর্জুন গাছের ছাল সঠিক ভাবে ব্যবহার করলে অনেক ভালো থাকবেন।

মাড়ি রোগ: অনেক সময়ে দেখা যায় আমাদের মুখের মাড়ির সমস্যা হয়। মুখের মাড়ি ফুলে যায়। তখন অনেক ব্যথা করে। ভালো ভাবে খেতে পারে না। ট্যানিন আছে প্রচুর পরিমানে অর্জুন গাছের ছালে তাই এই ছাল ব্যবহার করলে, মাড়ির সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। আপনি চাইলে অর্জুন গাছের ছাল গুঁড়ো করে মাজন হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন। মাজন হিসাবে ব্যবহার করলে আপনি অনেক উপকার পাবেন।

ক্যান্সার নিরাময়ে: এই রোগ মারাত্মক যাকে একবার আক্রান্ত করে সে আর সহজে ভালো হতে পারে না। তাই রোগের হাত থেকে বাচার জন্য আপনি চাইলে অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করতে পারবেন। অর্জুন গাছের ছালে প্রচুর পরিমানে গ্যালিক অ্যাসিড এবং লুটোনোনিন থাকায় ক্যান্সার এর কোষ কে ধংস করতে সাহায্য করে থাকে। আপনি চাইলে অর্জুন গাছের ছাল এর গুড়ো করে দুধের সাথে মিশিয়ে ঘুমানোর আগে নিয়মিত খেলে অনেক উপকার পাবেন।

আরো পড়তে পারেন: ক্যান্সার থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক ও বিকল্প উপায়

অর্জুন গাছ কোথায় পাওয়া যায়?

অর্জুন গাছ পায় অনেক দেশেই জন্মায় তার মধ্যে ভারোত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ এর আদি নিবাস। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই এই গাছ জন্মায়। চট্টগ্রাম, সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চল গুলোতে ও অনেক জন্ম নেয়। দো-আশ মাটিতে সাধারনত ভালো হয়ে থাকে তবে নাতিশীতোষ আবহাওয়া বা বনাঞ্চলে এই গাছ বেশি হয়ে থাকে।

বাণিজ্যিক মূল্যয়ন

অর্জুন গাছের উপকারিতা ও ভেষজ গুনাগুন যেমন অনেক বেশি তেমনি এর বাণিজ্যিক মূল্য অনেক বেশি। অর্জুন গাছের কাঠ দিয়ে অনেক কিছু তৈরি করা যায়। তাই এই কাঠের চাহিদা অনেক বেশি। আগে কার দিনে অর্জুন গাছের কাঠ যে সব উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করা হতো তা হলো জলযান, নৌকা দাড়, গৃহনির্মাণ কাজে, কৃষি উপকরণ, মাস্তুল ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *