আমাদের সবার পরিচিত ফল লেবু। এই ফল যা ব্যবহারে খাবারের স্বাদে ভিন্নতা অনুভব হয়। তাই এই লেবু খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে লেবুতে ভিটামিন সি আছে। লেবুতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল একটি যা ৫৮ গ্রামের লেবু ৩০ মিলিগ্রাম এর বেশি ভিটামিন সি সরবরাহ করতে পারে।

এই ভিটামিন-সি সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ প্র্যোজন, যার অভাবে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই প্রতিবেদন টিতে লেবুর পুষ্টিকর বিষয়বস্তু, লেবুর স্বাস্থ্য উপকারিতা, খাবারের লেবুর ব্যবহারের উপায় এবং কেউ যদি অতিরিক্ত লেবু ব্যবহার করে থাকে তালে তার স্বাস্থ্য ঝুঁকি পরতে পারে।

লেবু খাওয়ার উপকারিতা
লেবুর ছবি

মূলত লেবু রুটেসি পরিবারের ছোট চিরসবুজ সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি প্রজাতি। এই লেবু দক্ষিণ এশিয়া সাধারণত ও উত্তর পূর্ব ভারতের একটি স্থানীয় গাছ। লেবু ফলটি সারা বিশ্বে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়ে, এমন কি রান্নার কাজ ছাড়াও বিভিন্ন উদ্দেশ্যে লেবু ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লেবু মূলত রসের জন্য বেশি ব্যবহিত হয়ে থাকে। লেবুর রস রান্না ও পরিষ্কারের উভয় কাজেই ব্যবহার করা হয়।

লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও ব্যবহার

কোষ্ঠবদ্ধতা, মেদবৃদ্ধি ও গিঁটবাত

সারা বিশ্বব্যাপী এক সাধারণ সমস্যা, ফার্স্ট ফুড আর জাংক ফুডের জামানায়। তবে এর সাথে কোষ্ঠবদ্ধতা ও গিঁটবাত বড় সমস্যা। মেদ বৃদ্ধি, সাময়িক কোষ্ঠবদ্ধতা ও গিঁটবাত ঠেকাতে রোজ যেমন আমরা দাঁত ব্রাশ করি এরোকম ভাবে লেবু-পানি খাওয়াকে একটা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। প্রতিদিন কাগজি লেবু বা অন্য লেবু হলেও চলবে, এই লেবু চিপে রস করে তা ১ কাপ পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় খেতে হবে। এভাবে সারা জীবন খেতে হবে। তবেই মেদবৃদ্ধি, কোষ্ঠবদ্ধতা অনেকটা ঠেকে যাবে এবং মেদ বৃদ্ধিজনিত অনেক রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। এটির পাশাপাশি একধরণের ইউরিক এসিডের আধিক্যজনিত কারণে গিঁটে ব্যথা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

ক্লান্তিবোধ

আমাদের মাঝে মাঝে দেখা যায়, অতিরিক্ত খেলাধুলা বা অধিক পরিশ্রমের পর শরীরটা এলিয়ে যায়, এমন কি ক্লান্তি জড়িয়ে ধরে। আবার একটানা কোন কাজ করলেও ক্লান্তিভাব চলে আসে। তবে এ অবস্থায় এক গ্লাস পানিতে একটা কাগজিলেবু চিপে তার রস সামান্য লবণ মিশিয়ে শরবত করে খেলে শরীর দ্রুত চাঙ্গা হয়ে ওঠে। যদি পারেন এর সাথে ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে খেলে আরও ভালো কাজ করবে।

কৃমিরোগ

আমাদের দেশে শিশুরা কৃমি রোগে বেশি ভোগে। এক্ষেত্রে তাই শিশুদেরও লেবুর রস খাওয়াতে হবে। কিন্তু ৪-৫ বছর বয়সী শিশুদেরক্ষেত্রে অর্ধেক পরিমাণ কাগজি লেবুর রস, ২ কাপ গরম পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খাওয়াতে হবে। আবার কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে একই পরিমাণ পানিতে দিতে হবে ১টি লেবু। কিন্তু পূর্ণবয়স্কদের ক্ষেত্রে ২টি লেবু। মাত্র এক সপ্তাহ এটা খেলে গোল কৃমি, সুতা কৃমি, ফিতা কৃমি- যাই থাকুক না কেন উপদ্রবটা দূর হয়ে যাবে।

অরুচি ও পেটফাঁপা

আমার মনে হয়, কাগজি লেবুর উপকারিতার কথা জানেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যদি আপনার কোন কিছু দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছে করছে না এবং খাওয়ায় কোন রুচি নেই সেক্ষেত্রে এ অবস্থা হলে খাবারে সাথে কাগজিলেবুর রস চিপে মিশিয়ে খেলে দ্রুত খাবারে রুচি ফিরে আসে এবং তা হজম হয়। যদি আপানার অরুচি হয়, তাহলে আপনি একটা লেবুকে দুভাগ করে, অর্ধেক সকালে ১ কাপ পানির সাথে ও বিকেলে বাকি অর্ধেক আর ১ কাপ পানির সাথে মিশিয়ে একইভাবে খালি পেটে খাওয়া যেতে পারে। সপ্তাহ খানেক এভাবে লেবু-পানি খাওয়ার পর অরুচি চলে যাবে এবং সম্পূর্ণ রুচি ফিরে আসবে।।

সর্দি নিরাময়ে

ঠান্ডার কারণে সর্দি হলে, নাক দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকলে রঙ চায়ের সাথে আধ টুকরো লেবুর রস ও ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে খেলে দ্রুত সুফল পাওয়া যায়। যদি এর সাথে কয়েক টুকরো আদা দেয়া যেতে পারে তাহলে আরো ভালো হবে। প্রথম একবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর আবার খেতে হবে। তবে এই ভাবটা না যাওয়া পর্যন্ত এটা চালিয়ে যেতে হবে। এভাবে কয়েকবার খেলে নাক দিয়ে পানি বা সর্দি ঝরা বন্ধ হবে।

পুরনো জ্বর

প্রায় এই রোগ গুলো দেখা যায় টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রভৃতি জ্বরে দীর্ঘদিন ভোগার পর মেজাজটা খিটখিটে হয়ে যায়। তবে মনে হয় জ্বরটা পুরোপুরি যায়নি, এমন কি শরীর দুর্বল লাগে, শরীর ম্যাজম্যাজ করে, আবার খিদে কম লাগে, এমনকি কাজেও মন বসে না। এমত অবস্থায় সব ওষুধ বন্ধ করে শুধু লেবু চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। প্রতিদিন সকালে ও বিকালে হালকা গরম পানিতেলেবুর রস মিশিয়ে এক মাস খেয়ে যেতে হবে। তবে টক বেশি লাগলে এর সাথে সামান্য লবণ মেশানো যেতে পারে। আবার এই ভাবে এটা খেলে, জন্ডিস রোগেও উপকার পাওয়া যায়।

দাঁতে পাথর

আমাদের প্রায় দেখা যায় দাতে পাথর হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আধা চা-চামচ খাবার সোডা, একটু লবণ ও লেবুর রস দিলে পাথর উঠবে। অথবা সাথে টুথপেস্ট বা টুথ পাউডার মিশিয়ে ২-৩ মিনিট ব্রাশ করলে দাঁতের লালচে ভাব কেটে সাদা হবে ও দাঁতের ফাঁকে জমা পাথর হলে পরিষ্কার হয়ে যাবে। যদি কেউ প্রতি মাসে একবার এটা করলে দাঁত সবসময় সাদা থাকবে।

খুশকি দূর করতে লেবু

আমাদের মাঝে মাঝে মাথায় খুসকি হয়ে থাকে। সেক্ষেতে একটা কাগজিলেবুর রস তার চার গুণ পরিমাণ গরম পানেতে মিশিয়ে গোসলের আগে চুলের গোড়ায় মাখিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকতে হবে। রস শুকিয়ে গেলে গোসল করে স্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে ৩-৪ বার একদিন অন্তর অন্তর লেবুর রস চুল ও মাথা ব্যবহার করলে, খুসকিমুক্ত হবে। এভাবে না গেলে আরও কয়েক দিন লেবুর রস ব্যবহার করতে হবে। যে কোন লেবুর রসে এ কাজ করবে।

জ্বর, হাঁচি-কাশি ও স্বরভঙ্গ

যদি কারো অ্যাজমা বা হাঁপানি হলে সেই সাথে কাশিটাও হতে পারে। আবার অনেক সময় হঠাৎ সর্দিকাশি হলে গলা ভেঙে যায়। কিন্তু এরূপ ক্ষেত্রে একটি কাগজিলেবু মাঝখান বরাবর লম্বালম্বিভাবে দোফালা করে চিরে তার বুকে লবণ মাখাতে হবে। এরপর লবণ মাখানো সেই লেবুর টুকরো হালকা আঁচে ভালোভাবে আগুনে গরম করে নিতে হবে। যখন দেখবেন লেবু গরম হয়ে লবণ গলে লেবুর সাথে মিশে ঙ্গিয়েছে। এরপর এই লেবু নামিয়ে চিপে নিজের সহ্যমতো গরম রস জিভের উপর ছাড়তে হবে। অথবা চেটে খেতেও পারেন। কেউ যদি এভাবে সারা দিনে ২ থেকে ৩ বার খায়, তাহলে এই জ্বর-সর্দি নিরাময় হয়ে যাবে।

Natural way to cure fever
জ্বর-সর্দি নিরাময়ের উপায়

দাদ রোগ

আপনি কি জানেন লেবু দিয়ে কত সহজেই না দাদ রোগ সারা যায়। আপনি একটা কাগজিলেবু মাঝ বরাবর কেটে বা চিরে সেই টুকরো কিছুক্ষণ দাদের উপরে ঘষতে হবে। যদি এভাবে দিনে ২ থেকে ৩ বার ঘষলে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে দাদরোগ ভালো হয়ে যাবে। আবার একইভাবে লেবু ঘষে মুখের মেছতা ও ছুলি দাগ দূর করা যায়।

চুল পাকা

আপনার যদি অল্প বয়েসে চুল পেকে যায়। তাহলে পাকা চুল কালো করার জন্য আমলকি ছেঁচে বেটে মলমের মতো করতে হবে। এর সাথে একটু লেবুর রস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় মাখতে হবে। এভাবে মাখলে এতে সাদা চুল কালো হবে ও চুল পড়া বন্ধ হবে। প্রতিদিন বা সপ্তাহে একদিন এটা করা যায়। প্রতিদিন করলে তাড়াতাড়ি চুল কালো হবে।

আরও একভাবে সাদা বা পাকা চুল কালো করা যায়। তার জন্য আপনাকে যা করতে হবে, ২ চা-চামচ হেনা পাউডার, ২ চা-চামচ চা পাতি ও ২ চা-চামচ মধু একসাথে ছোট একটা বাটিতে নিয়ে ভালো করে মাখতে হবে। তারপর এর মধ্যে একটু লেবুর রস দিয়ে আবারও ভাল করে তা মিশাতে হবে। তার সাথে একটু পানি দিয়ে জ্বাল দিয়ে ফুটাতে হবে। তবে ফুটার পর নামিয়ে ঠান্ডা করে তা চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভাল করে মেখে ম্যাসাজ করতে হবে। কিন্তু ব্যবহারের আগে মাথা ভাল করে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে তালু থেকে চুলের আগা পর্যন্ত ভাল করে মেখে ২০ মিনিট রেখে পরে তা সুন্দর করে ধুয়ে ফেলতে হবে।

লেবু খাওয়ার সঠিক উপায় কি

  • পানির সাথে মিশিয়ে লেবুর রস ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • লেবুর রস সালাদে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • লেবু কেক তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • লেবু মকটেলে ব্যবহার করা যেতে পারে।

লেবুর রস খাওয়ার উপকারিতা

আমাদের দেশে অনেকেই আছেন যারা সকালের শুরুতেই চা বা কফির বদলে লেবুর পানি খেয়ে দিন শুরু করেন। এই লেবু সুস্বাদু খেতে লাগে তাতে কোন রকমের সন্দেহ নেই। কিন্তু এই লেবু শরীরের জন্য যে কতটা উপকারি তা এই প্রতিবেদনে বলে শেষ করা যাবে না। সুতরাং লেবুর বিশেষ উপকারিতা জেনে নিন আজ।

(ক) বাংলাদেশের খাদ্য ও পুষ্টি বোর্ডের মতে

প্রতিদিন মহিলাদের শরীরে মিনিমাম ৯১ আউন্স এবং পুরুষদের মিনিমাম ১২৫ আউন্স পানির প্রয়োজন। তবে এই পানি, খাবার এবং পানীয় থেকে সাধারণত শরীরে প্রবেশ করে থাকে। পানি হাইড্রেশনের জন্য সেরা পানীয়, তবে অনেকেই বেশি পানি খেতে পছন্দ করেন না এর স্বাদের জন্য। এজন্য লেবু মিশিয়ে পানি খেলে তা স্বাদ বাড়ায় ও পানি খাওয়ার ইচ্ছেও বাড়িয়ে তোলে। তবে এটি শরীরকে হাইড্রেড করতেও সাহায্য করে থাকে।

(খ) লেবুর রস ওজন হ্রাস করে সহজেই

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে লেবুর রস বা লেবুর পানি নিয়মিত পান করলে ওজন কমতে সাহায্য করে থাকে। সুতরাং লেবুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ক্ষতিকর মেদ জমতে দেয় না। বিশেষ করে অতিরিক্ত মেদকে কমাতে সক্ষম এই লেবুর পানি। যদি তা কেউ সঠিক নিয়মে পান করলে তবেই সম্ভব। তবে কেউ যদি প্রতিদিন মধু ও লেবু মেশানো পানি খালি পেটে সকাল পান করলে, তাহলে ওজন কমাতে সাহায্য করবে তাড়াতাড়ি।

(গ) লেবুর রস ভিটামিন সি’র যোগান ঘটায়

ভিটামিন সি বিপুল পরিমানে থাকে, সাইট্রাস জাতীয় ফলে। এই লেবু সাইট্রাস জাতীয় ফলের মধ্যে একটি, যা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। লেবুতে ভিটামিন সি’ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা কোষকে ফ্রি র‍্যাডিক্যালগুলি ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। তাই লেবু এই কাজটি করতে সক্ষম।

সুতরাং লেবুতে থাকা ভিটামিন সি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এবং স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। আবার উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাস করতে পারে। একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিক্ষেত্র নির্ভর সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি লেবুর রস প্রায় ১৮.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি সরবরাহ করে থাকে। আর একজন প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দিনে শরীরে ৬৫ থেকে ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি’র প্রয়োজন। সুতরাং লেবু থেকে আপনারা অনায়াসে পেতে পারেন ভিটামিন সি।

(ঘ) লেবু দিয়ে রূপচর্চা

এই লেবুতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের কুঁচকে যাওয়া এবং বয়েসের বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। বেশির ভাগ যাদের ড্রাই স্কিন তারা নিয়মিত লেবুর পানি পান করলে কয়েকদিনের মধ্যে দেখবেন ড্রাইনেস কমে গিয়েছে। লেবু খাওয়ার ফলে ত্বকের হারানো উজ্জলতা নিমেষে ফিরে আসে লেবুর চমৎকারী কার্যকারিতার সাহায্যে। এই ব্ল্যাকহেডসের মত সমস্যার মোকাবিলা করতে লেবুকে আপনার হাতিয়ার বানাতে পারেন নির্দ্বিধায়। আবার লেবুর রস খেলে ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করে গোলাপি করতে দারুন কাজ করে।

(ঙ) নিঃশ্বাসকে সতেজ রাখে

পেঁয়াজ, রসুনের মত গন্ধযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে মুখ থেকে একধরনের বাজে গন্ধ বের হয়। এই গন্ধ নিঃশ্বাসের সাথেও মিশে যায়। তবে লেবুর রস আপনাদের এই সমস্যা থেকে মুক্ত কোরতে পারে। কোন কিছু খাওয়ার পরে এক গ্লাস লেবুর পানি পান করে আপনি সকালে দুর্গন্ধ এড়াতে পারেন। তবে লেবুর রস ব্যাকটেরিয়াজনিত দুর্গন্ধ দূর করে নিমেষে মুখের ভিতর ফ্রেসনেশ এনে দেয়। আপনি যদি রেস্তোরাঁ বা অনুষ্ঠান বাড়িতে অনেকেই খাবার পর এক টুকরো লেবু চিপে খেয়ে নেন। আপনার এতে হজম যেমন ভালো ভাবে হবে, এর পাশাপাশি মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।

(চ) হজমে সহায়তা করে

লেবু খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। তাই অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিন সকালে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে লেবুর পানি পান করেন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর উষ্ণ বা গরম লেবু পানি পান করা পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় করতে সহায়তা করে থাকে। এক গবেষণায় আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র বলছে যে, টক লেবুর স্বাদ অগ্নাশয়কে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। লেবু হজম সিস্টেমকে ঠিক রাখে, এর ফলে খাবার সহজে হজম হয়। লেবুর রস টক্সিনের গঠন প্রতিরোধে সহায়তা করে।

(ছ) কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সহায়তা করে

লেবুর রস খাওয়ার ফলে কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে করে। কারণ লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এই লেবুর রস প্রসাবকে কম অ্যাসিডযুক্ত করে তোলে এবং ছোট ছোট পাথরও ভেঙে ফেলতে পারে। আপনি কীভাবে লেবুর পানি বানাবেন, নিয়মিত লেবুর পানি পান করা মানে এই নয় যে পানিতে এক ফালি লেবু মিশিয়ে খেয়ে নিলেই হবে। তবে এর সঠিক প্রয়োগই এনে দেবে অনেক উপকার। লেবুর রস খেতে সবসময় টাটকা লেবুর ব্যবহার করবেন। তবে কোন প্রকারের কেমিক্যাল যুক্ত লেমন জুস না।

কিন্তু লেবুর পানি তৈরি করতে, অর্ধেক লেবু ৪ আউন্স গরম বা ঠান্ডা পানি মিশিয়ে নিন। তবে পানীয়টি যথাসম্ভব স্বাস্থ্যকর করতে, ফিল্টারযুক্ত পানি ও জৈব লেবু ব্যবহার করুন। বিশেষ করে আইস ট্রেতে লেবুর রস জমিয়ে আইস কিউব বানিয়ে রেখে দিতে পারেন। আপনি যখন পানি খাবেন একটুকরো লেবুর আইস কিউব মিশিয়ে তা পান করুন। এক্ষেত্রে বারবার কাটার ঝামেলা থাকবে না। আপনি উষ্ণ লেবুর পানি দিয়ে শুরু করতে পারেন আপনার সকাল টা।

লেবুর রস খাওয়ার অপকারিতা / পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

আমরা জানি যে, অনেকেই লেবু রস খুব পছন্দ করেন। তবে লেবুর রস হজমের সমস্যা কিংবা ওজন কমাতে লেবুর রস পান করার প্রবণতা অনেকের মাঝেই থাকে। তবে ভাল লাগছে বলেই বেশি করে লেবুর রস পান করলে কিন্তু, এর বিপরীত হতে পারে। কেউ যদি না বুঝে লেবুর রস খায়, বিশেষ করে কেউ যদি লেবুর রসের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াকে অগ্রাহ্য করে তাহলে তার সমস্যা হবে। বরংচ এটা এরিয়ে চলাই ভালো হবে। তাই আজকের এই প্রতিবেদন থেকে জেনে নিন লেবুর রসের ক্ষতিকারক কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে-

  • লেবুর রস অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে কিডনি বা গল ব্লাডারের সমস্যা সৃষ্টি করে৷
  • অতিরিক্ত লেবুর রস খাওয়ার ফলে, বুক জ্বালা, অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • বিশেষ করে লেবুর রসে অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যাসিড থাকে যা মানব শরীরে গেলে আলসার হতে পারে।
  • প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে লেবুতে, যা শরীরের ইউরিনেশনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে অতিরিক্ত লেবুর রস পান করলে, মানব শরীরে ইউরিনেশন হতে পারে। এতে করে ডিহাইড্রেশনের সমস্যায় ভুগতে পারেন।
  •  বিশেষ করে লেবুর রস হজমে কাজ করলেও কিন্তু বেশি খেলে অ্যাসিডিটি বারতে পারে। এর ফলে তার বমি বমি ভাব এবং পেট ব্যথার সমস্যা ও ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।

আমরা জানি সাধারণত লেবুর পানি পান করা নিরাপদ। কিন্তু কয়েকটি সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে, তাই সচেতন হওয়া জরুরি। আমরা জানি লেবুতে সাইট্রিক অ্যাসিড রয়েছে যা দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে। ঝুঁকি এড়াতে স্ট্র এর সাহায্যে লেবুর পানি পান করুন। পানি খাওয়ার পর মুখ পানি দিয়ে কুলকুচি করে নিন। বিশেষ করে অম্বলের সমস্যা যাদের আছে তাদের জন্য লেবু বেশি পরিমানে খাওয়া ঠিক না। আর সাইট্রিক অ্যাসিড লেবুতে থাকার ফলে অনেকের লেবু খেয়েও অম্বল হয়। যাদের অম্বল এর সমস্যা তারা একটু সাবধান থাকুন এই লেবুর রস পানের ক্ষেত্রে। অনেকর লেবুর পানি পান করলে বারবার বার্থরুমে যাওয়ার প্রবনতা বেড়ে যায়। কিন্তু এটি লেবুর জন্য হয় না। বেশি পরিমানের পানি পানের জন্য হয়।

আরও পড়ুন: স্বর্গীয় ডালিম ফল খাওয়ার উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুণ

কাগজি লেবু চাষ পদ্ধতি

আপনি যদি সঠিক নিয়ম মেনে লেবু চাষ করেন তাহলে মিলবে শতভাগ সফলত। আবার কোন মাটিতে কী পদ্ধতিতে লেবু চাষ করলে ভালো ফলন হবে এটা জানা যেমন জরুরি ঠিক তেমনি পরিমাণ মতো সব উপকরণও দিতে হবে। তাহলে আসুন জেনে নেয়া যাক, লেবু চাষের সঠিক পদ্ধতি কি।

মাটি: বেশির ভাগ হালকা দোআঁশ ও নিষ্কাশন সম্পন্ন জমিতে লেবু ভাল হয়।

রোপণ পদ্ধতি: লেবু চারা বা গুটি কলম ও কাটিং তৈরি করে, মধ্য-বৈশাখ থেকে মধ্য-আশ্বিন (মে-সেপ্টেম্বর) মাসে ২.৫x২.৫ মিটার দূরত্বে রোপণ করা হয়।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি: চারা রোপিণের প্রথম কিস্তি মধ্য-ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে, এবং ২য় কিস্তি মধ্য মাঘ-মধ্য ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি) মাসে ও ৩য় কিস্তি মধ্য-জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য-আষাঢ় (জুন) মাসে প্রয়োগ করতে হবে।

সারের নামসারের পরিমাণগাছ প্রতি
টিএসপি৩৭৫-৪২৫ গ্রামগাছ প্রতি
এমপি৩৭৫-৪২৫ গ্রামগাছ প্রতি
ইউরিয়া৪৫০-৫৫০গ্রামগাছ প্রতি
গোবর১৫-২০ কেজি।গাছ প্রতি

অঙ্গ ছাঁটাই: লেবু সংগ্রহ করার পর প্রতি বছর মধ্য-ভাদ্র থেকে মধ্য-কার্তিক (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে গাছের অবাঞ্ছিত শাখা ছাঁটাই করতে হবে। ছাটাই করলে আবার নতুন করে কুশি বের হবে। এই কুশিতে লেবু অনেক বেশি ধরবে।

পানি সেচ ও নিষ্কাশন: লেবুর জমিতে খরা মৌসুমে ২-৩ বার সেচ প্রয়োগ করা দরকার। লেবু কিন্তু জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না বিধায় বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের সময় গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পানি জমলে গাছ নষ্ট হয়ে যেতে পারে, সে জন্য নালা করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

অন্যান্য পরিচর্যা: লেবুতে প্রজাপতি পোকা কীড়া পাতা খেয়ে ফেলে। এতেকরে লেবুর ফলন ও গাছের বৃদ্ধি কম হয়।

প্রতিকার: লেবুর গাছে আক্রান্ত ডিম ও কীড়াযুক্ত পাতা সংগ্রহ করে মাটির নিচে পুঁতে বা পুড়ে ফেলতে হবে। এরপর ডাইমেক্রন ১০০ ইসি ১ মিলি অথবা সেভিন ৮৫ এসপি ১ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে মিনিমাম ১০-১৫ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে। এতে করে রগ মুক্ত হবে।

রফতানিযোগ্য লেবু উৎপাদন করতে লক্ষণীয় দিক:

লেবু উৎপাদন করতে হবে রোগ এবং পোকামাকড়মুক্ত। আবার রোগের ক্ষেত্রে ক্যাঙ্কার রোগটি আমদানিকারকদের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর তাই কোনোক্রমেই বাগানে ক্যাঙ্কার রোগ থাকতে পারবে না। লেবুর বাগানে, পোকার ক্ষেত্রে বাগানটিতে বিশেষ করে থ্রিপস এবং লিফ মাইনার মুক্ত হতে হবে।

যেহেতু লেবুর গাছে কাটা থাকে তাই লেবু তোলার সময় অবশ্যই হাতে গ্লোবস পরতে হবে। এরপর লেবু তোলার পর বাছাই করতে হবে। বিশেষ করে লেবু তোলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিপক্ব এবং কম পরিপক্বতাকে পরিহার করতে হবে। অবশ্যই লেবু তোলার ক্ষেত্রে রং এবং আকৃতি আকর্ষণীয় হতে হবে।

One thought on “বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও ব্যবহার”
  1. আমাদের দাদি নানীর দীর্ঘ দিন ধরে এই লেবু ব্যবহার করে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *