আমাশয় রোগের লক্ষণ ও বিশেষ প্রতিকার

আমাশয় রোগের লক্ষণ

আজকে এমন একটি রোগ নিয়ে আলোচনা করবো, যে রোগটি আমাদের সকলের পরিচিত এর নাম আমাশা। এই রোগটি ছোট থেকে বড় সকল বয়সের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আর এই রোগে আক্রান্ত হয়নি এমন মানুষ খুজে পাওয়া বিরল।

চলুন আমাশয় রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই। এই রোগ টি হলো অন্ত্রের একটি সংক্রমণ যেখানে শ্লেষা সাথে ঘন ঘন পায়খানা হয়। সাধারণত এটি ৩-৭ দিন স্থায়ী হয়। কিন্তু বেশির ভাগ আমাশয় দীর্ঘস্থায়ী ও হতে পারে। আমাশয় সৃষ্টি হয়ে থাকে পরজীবী বা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে। বিশেষ করে এই রোগটি খুব একটা মারাত্মক না হলেও অনেক যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে।

           আমাশয় রোগের লক্ষণ ও বিশেষ প্রতিকার

আমাশয় রোগের লক্ষণ

এই আমাশয় রোগের লক্ষণগুলি বেশির ভাগ হালকা থেকে তীব্র পর্যন্ত হতে পারে। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সংক্রমণ এলাকায় স্যানিটেশন অবস্থার উপর নির্ভর করে। কিন্তু উন্নত দেশে, আমাশয়ের লক্ষণ ও লক্ষণগুলি ক্রান্তীয় অঞ্চলে তুলনায় হালকা হতে থাকে।

এই আমাশায় রোগে সংক্রামিত হওয়ার ১-৩ দিনের মধ্যে লক্ষণগুলি প্রকাশ পায় থাকে। আবার কিছু লোকের মধ্যে লক্ষণগুলি দেখা দিতে বেশি সময় লাগে।

আবার দুটি আমাশয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা আলাদা লক্ষণ থাকে।

ব্যাসিলারি আমাশয়ের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলি

জ্বর, বমি বমি ভাব এবং বমি, তীব্র পেট ব্যাথা, মলের সাথে রক্ত বা শ্লেষ্মা থাকে। কিন্তু অ্যামোবিক আমাশয় হলে সাধারণত লক্ষণ গুলো দেখা দেয় না। এবং অসুস্থতা বোধ করলে সংক্রামিত হওয়ার ২-৪ সপ্তাহ পরে লক্ষণগুলি প্রকাশ পাবে।

যেমন: পেট ব্যাথা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, ওজন কমানো, জ্বর, ক্লান্তি ।

এই লক্ষণ গুলো গুরুতর হলে বা এক সপ্তাহের মধ্যে সেগুলি ভাল না হলে দ্রুত্ব চিকিৎসাকের পরামর্শ নিতে হব।

আমাশয় রোগের চিকিৎসা

ডাক্তারি পরিভাষায় ব্যাসিলারি আক্রান্ত রোগীদের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওষুধের প্রয়োজন হয় না। বিশেষ করে এই ধরনের আমাশয় সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।

তবে পানিশূন্যতা পূরন করতে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি বা “রিহাইড্রেশন” পানীয় পান করতে হবে। ডাক্তারি পরিভাষায় বিসমথ সাবসিলিকেট মতো মেডিসিন ডায়রিয়ার মতো উপসর্গগুলি দূর করতে পারে। আবার এই ধরনের ব্যাথাজনিত সমস্যা সমাধানের জন্য এসিটামিনোফেন এর মতো ব্যথা রিলিভারও(Reliever) ব্যবহার করা যায়।

এরপরও যদি কিছুদিনের মধ্যে ঠিক না হয় তখন চিকিৎসাকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

এই অ্যামিবিক আমাশয়টি মেট্রোনিডাজল (ফ্ল্যাগিল) বা টিনিডাজল (টিনডাম্যাক্স) দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু পরজীবীদের হত্যা করার জন্য এরা কার্যকরী।

এই ধরনের দীর্ঘস্থায়ী আমাশয় এর যন্ত্রণা লাঘব করার জন্য অনেক ধরনের ঔষধ আছে। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ সেবন করা যাবেনা। সেবন করলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

আমাশায় প্রতিরোধের করনীয়

যেকোন রোগের প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিরোধ উত্তম। তাই নিম্নোক্ত প্রতিরোধ গুলো মেনে চললে আমাশয় থেকে দূরে থাকা সম্ভব। চলুন জেনে নেই কারণ গুলো কি ?

প্রথমে খাবার গ্রহণের পূর্বে এবং রান্না করার আগে অবশ্যই হাত পানি ও হ্যান্ড ওয়াশ বা সাবান দিয়ে ভালো করে ধুতে হবে। এরপরে বাইরের খাবার কম খেতে হবে। যেসব খোসাযুক্ত ফল বা সবজি খাওয়া যায় সেই সব সবজি বা ফল খাওয়ার পূর্বে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

বিশেষ করে সবসময় বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে এবং দাঁত ব্রাশ করার সময়ও বিশুদ্ধ পানি ব্যাবহার করতে হবে। এমনকি মলত্যাগের পরে হাত বিশুদ্ধ পানি ও হ্যান্ডওয়াস বা সাবান দিয়ে ভালো করে ধোয়া। নিজের ব্যবহৃত পোশাক হালকা গরম পানি ও ডিটারজেন্ট পাওডার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। তাহলে দ্রুত্ব এই রো গ থেকে পরিতান পাওয়া যাবে।

এমনকি একজনের তাওয়াল আরেকজনের ব্যাবহার করা যাবে না। ব্যবহার করলে তারো হতে পারে। তাই একজেনে কারপর অন্যজনে ব্যবহার না করাই ভালো হব। বাড়িতে যদি ছোট শিশুদের হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে জানাতে হবে। অনেকেই সুইমিংপুলে সাঁতার কেটে থাকেন, তাহারা সাতার কাটার সময় সময় পানি গিলে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।

বাচ্চাদের বা শিশুদের রক্ত আমাশয় হলে কি করণীয়?

শিশুদের রক্ত আমাশা এ বিষয় নিয়ে আজ আলোচনা করবো সংক্ষেপে। ডাক্তারি ভাষায় রক্ত আমাশয়ের প্রধান কারণ হলো একধরনের ব্যাকটেরিয়া; যা দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। রক্ত আমাশয়ের লক্ষণ গুলো হলো পেটে তীব্র ব্যাথা বা মোচড় দিয়ে ব্যথা হওয়া এবং অল্প অল্প করে বারবার পায়খানা হওয়া, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া ঙ্গেমন কি মলদ্বারে তীব্র ব্যথা হওয়া।
আর আমরা সাধারণভাবে আমাশয় বা ডিসেন্ট্রি বলতে সাধারন ভাবে যা বুঝায়– তাহলো অ্যামিবা এক প্রকার এক কোষী পরজিবি এবং সিগেলা এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যেগুলি মানুষের দেহে পরিপাকতন্ত্রে বাসা বেঁধে যে ঘা বা ইনফেকশনে তৈরি করে, এর সাথে পেটে কামড়ানো সহ মলের সাথে সাদা পিচ্ছিল আম বা শ্লেষ্মা যুক্ত রক্ত অথবা খালি রক্ত যাওয়া কে আমাশয় বা ডিসেন্ট্রি বলা হয়।

আর একটি হলো এমোয়েবিক আমাশয় থেকে বেসিললারিক আমাশয় জোড়ালোভাবে হয়। এতে তখন মলের সাথে আম এবং প্রচুর পরিমাণ রক্ত যাবে। এর সাথে পেটে ব্যথা থাকবে, কিন্তু পায়খানার চাপ হবে, পায়খানা হবে। আবার দেখা যাবে অনেক সময় পেটে ব্যথায়ই হবে কিন্তু পায়খানা হবে না। এক্ষেত্র অনেক সময় দেখা যাবে রোগীর সিস্টেমিক এবং অন্যান্য রোগের অভিযোগগুলো চলে আসে।

যেহেতু সে বারবার মল ত্যাগ করছেন, বারবার শরীর থেকে পানীয় বেরিয়ে যাচ্ছে। তাই প্রথমেই ফ্লুইড দিতে হবে। আর দ্বিতীয় ধাপে পায়খানাকে কালচার সেনসিটিভিটি করে যেভাবে রিপোর্ট আসে, সেই ভাবে এলোপ্যাথিক ডাক্তারগণ চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। অথবা যেখানে কালচার সেনসিটিভিটি করার সামর্থ নেই বা রিপোর্ট পেতে রোগীর দুই তিনদিন সময় লেগে যেতে পারে, এতে করে রোগী মারাত্মক পর্যায়ে চলে যেতে পারে, তখন অনুসন্ধান ছাড়া যেই চিকিৎসা আছে, সেটা দিয়ে থাকেন। মূলত আমাশয়ের যে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক সেটাই বড়দের ক্ষেত্রে দিয়ে থাকেন এলোপ্যাথরা।

কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসাটি তাদেরকে আরো নিবিড়ভাবে চিন্তা করতে হয়। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক শিশুদের না দেয়াই উত্তম। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক – আমাদের শরীরের উপকারী এবং উপকারী সব ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়। তাই যেকোন বয়সে যেকোন সময় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করার আগে ১০০ বার চিন্তা করবেন। তা কেবল আপনার উপকারই করবে না, বন্ধুর বেশে আপনার ১২টাও বাজাবে। বিশেষ করে সব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক নেয়ারই ভালো, কেননা হোমিওপ্যাথির মতো রয়েছে পার্শপ্রতিক্রিয়াহীন বিস্ময়কর এক চিকিৎসা পদ্ধতি।

এবার আসুন মূল বিষয়ে। আপনি শুনলে হয়তো অবাক হবেন এর রয়েছে উন্নত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা, শুধু বাচ্চাদের জন্যই নয় বড়দের জন্যও। অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে শিশুকে চিকিৎসা করালে রোগ থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করবে এবং এরই সাথে তার জীবনীশক্তিও অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠবে। কারণ দেখা গেছে যারা শিশুকাল থেকেই হোমিও চিকিৎসার আওতায় চলে আসে তারা উন্নত জীবনীশক্তি নিয়ে বেড়ে উঠে। তাই আপনার শিশুর রক্ত আমাশয় হলে সাথে সাথেই অভিজ্ঞ একজন হোমিও ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এটাই এই ক্ষেত্রে আপনার বিশেষ করণীয়।

রক্ত বা সাদা আমাশয় শিশুদের জন্য এমনিতেই একটি বেদনাদায়ক অসুখ তার মধ্যে এলোপ্যাথিক ঔষধ সেবনের ফলে শিশুদের জন্য আরো তিক্ততা ছাড়া আর কি বা দিয়ে থাকে, বিশেষ করে এই রোগের পুরাতন অবস্থায় এলোপ্যাথি চিকিৎসা বলতে গেলে প্রায় অকার্যকর। অথচ হোমিওর ক্ষেত্রে শিশু থেকে বয়স্ক কারো জন্যই ঔষধ সেবনের কোন প্রকার জটিলতা নেই। নেই কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া। তাই শুধু রক্ত আমাশয় নয় যেকোন প্রকার পেটের পীড়ায় হোমিও চিকিৎসা নিন।

আমাশয় হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে

আমাশা ব্যাকটেরিয়া জনিত এমন একটি রোগ এর সাথে আমরা সকলেই পরিচিত প্রায়। তাই এই রোগ হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

ডালিমের খোসা –

এই ব্যাকটেরিয়া জনিত আমাশয় দূর করতে ডাকলিমের খোসা অত্যন্ত উপকারি । যে সব মানুষ আমাশয়ে ভুগছেসন তারা ডালিমেরশ খোসা সিদ্ধ করে খেতে পারেন। আর সিদ্ধ করে ডালিমের খোসা খেলে এ রোগ নিরাময়ে সুবিধা পাবেন। আমাশয় দূর করতে ডালিমের শুকনো খোসা এবং কাঁচা খোসা দুটোই কার্যকর্যরি। যদি কেউ ১-২ গ্রাম ডালিমের খোসা চূর্ন করে মধুর সাথে মিশিয়ে খান ভালো ফল পাবেন।

আরও পড়ুনঃ স্বর্গীয় ডালিম ফল খাওয়ার উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুণ

থানকুনি পাতা –

প্রকৃতিক ভেষজ গাছ থানকুনি পাতা আমাশয় দূরদূ করতে অনেক কার্যকারি। কেউ যদি সকালে উঠে খালি পেটে নিয়মিত থানকুনি পাতা সেবন করলেই এর ফলা ফল দেখতে পাবে। এই অন্যভাবেও কাজে লাগাতে পারেন। তবে পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা বেটেনিন এর সাথে মধু কিং বা চিনি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। নিয়মিত এই উপাদানটি দিনে দুইবার করে খেলে আপনার কষ্ট কমে যাবে।

আরও পড়ুনঃ থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও ব্যবহারবিধি

পরামর্শঃ

আমাশয় রোগের জন্য বিশেষ করে এই বিষয়গুলো আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে। রোগ সচেতনতা গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে আমাশয় থেকে দূরে থাকা সম্ভব। অবশ্যই প্রতিবার মলত্যাগের পর হাত সাবান দিয়ে ভালো ভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। যেন হাতে জীবাণু লেগে না থাকে এবং স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করতে হবে। হাত না ধুয়ে কোনো ফল বা খাবার খাওয়া যাবে না।বিশেষ করে খাবার খোলা রাখা যাবে না। এমনকি বাসি, পচা কোনো খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তি মহিলা হলে, সেই ব্যক্তিকে খাবার তৈরি থেকে বিরত রাখতে হবে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version