স্বপ্নের জগতের অপূর্ব লীলা ভূমি দিনাজপুরের স্বপ্নপুরী। নবাবগঞ্জ উপজেলার বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরী পর্যটন ও দর্শনপিপাসুদের অবকাশ কাটানোর জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় স্থান ।
দিনাজপুর জেলা শহর থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরে নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জে অবস্থিত এটি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠেছে এই বিনোদন জগত স্বপ্নপুরী। জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ হাটের স্বত্বাধিকারী প্রয়াত ডাঃ আফতাফ উদ্দীনের ছেলে ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ও প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ফিজু নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন স্বপ্নপুরী। ১৯৮৯ সালে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১’শ একর জমির ওপর স্বপ্নপুরী নামক পর্যটন কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ দিন ধরে চলছে এর কার্যক্রম। বর্তমানে দিনাজপুর ৬ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মো: শিবলি সাদিক এমপি’র অধীনে এটি চালু রয়েছে।
ঘুরে আসি স্বপ্নের জগত স্বপ্নপুরী
নামের সঙ্গে মিল রেখে সৌন্দর্য পিপাসী ও ভ্রমণ বিলাসীদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটন কেন্দ্র ও পিকনিক স্পট স্বপপুরী। দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে এর প্রবেশ দ্বারে, গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে মোহনীয় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে প্রস্তর নির্মিত ধবধবে সাদা ডানা মেলে দু’টি সুবিশাল পরী। কিছুদূর যেতেই ত্রিভুজ আকারের পুকুর, ১টি বিশাল মানব মূর্তির যাদুঘর, ১টি জীবন্ত প্রাণির চিড়িয়াখানা, ১টি যাদুঘর, রয়েছে কৃত্রিম পশুর দুনিয়া। পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ৪০/৫০টি অভিজাত রেস্ট হাউজ। ভি,আই,পি, রেস্ট হাউস ১০টি, মধ্যম শ্রেণির ১৪ টি এবং অন্যান্য ০৮ টি রেস্ট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রতি বছর স্বপ্নপুরীতে পরিবর্তন এবং নতুন নতুন রাইড সংযোজন করা হয়।
সেখানে রয়েছে দেশী বিদেশী বিভিন্ন পশু পাখীর অবিকল ভাস্কর্য, কৃত্রিম পাহাড়, কৃত্রিম ঝর্ণা, কৃত্রিম চিড়িয়াখানা, মিউজিয়াম এবং বিশাল লেক। আছে বাংলাদেশের সুবিশাল মানচিত্র, চিড়িয়াখানা, শিশু পার্ক, দীঘিতে স্পিডবোট, ক্যাবল কার, ইলেকট্রিক দোলনা, নাগরদোলা। বিভিন্ন রাইডস, চিড়িয়াখানা, রেস্ট হাউজ, বাগান, হ্রদ, বিশ্বের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ,’রংধনু’ আর্ট গ্যালারি, ‘মহা মায়া ইন্দ্রজাল’ নামে জাদুর গ্যালারী এবং পিকনিকের জন্য রয়েছে মনোরম পরিবেশ।
বর্তমানে আরও রেস্ট হাউস নির্মাণসহ স্বপ্নপুরীর উন্নয়ন কাজ চলছে। কেবলকার, ঘোড়াগাড়ী, চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম মৎস্য জগত, রেষ্টুরেন্ট আছে। কৃত্রিম মাছ এবং বিভিন্ন প্রাণিদের সঙ্গে, বিশ্বকে খুঁজে পেতে পারবেন দর্শনার্থীরা। বিনোদনের জন্য রয়েছে ছোট ছোট অনেক রাইডস।
প্রাণি জগতের, এমি, মোরাল, ডাইনোসর, কাব্য প্রতিভা এবং অন্যান্য প্রাণির মতো হুবহু কিছু প্রাণির কৃত্রিম মূর্তিও রয়েছে। ভাস্কর্য এবং চিত্রকলার রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ‘রংধনু’ আর্ট গ্যালারি। পরিবারসহ কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পুরো দিন উপভোগ করতে পারবেন। স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা বিশিষ্ট ফুলের বাগানগুলো সৃষ্টি করেছে স্বাপ্নিক আবহ।
দেশী-বিদেশী বিভিন্ন জাতের বৃক্ষও আছে এ বাগানে। আকর্ষণীয় বিভিন্ন পণ্য বিক্রয় করে এখানে অনেকে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন। ‘‘রেলগাড়ি ঝমঝম পা পিছলে আলুর দম’’ এ এলাকায় রেল যোগাযোগ না থাকলেও বিনোদনের জন্য তৈরি করা হয়েছে রেল লাইন। এই লাইন দিয়েই চলে বিনোদন রেল গাড়ীটা। নাই মাস্টার, নাই স্টেশন তবুও যাত্রীরা রেলগাড়িতে একটু আনন্দ পাবার আশায় উঠছেন। পুকুরকে সমুদ্র মনে করে স্টিমারে উঠে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলাচল করছেন অনেকে।
বাস্তবে সাতসাগর তেরো নদী পাড়ী না দিতেই পারলেও ওরা ময়ূর পঙ্খিতে উঠে পুকুরে পাড়ি দিচ্ছেন। জমিদার সাজে কেউ ঘোড়ার গাড়ীতে উঠছে। কেউ বা পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় উঠে যুদ্ধে যাবার প্রস্তুতি নেয়ার ভঙ্গিমা করছে। কেউ বাহারাম বাদশা, কেউ সিরাজ-উদ-দৌলা হয়ে হাতে রজনীগন্ধা নিয়ে আলেয়ার সন্ধানে ঘুরেই চলছেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, একাত্তরের বীর সেনাদের প্রতিকৃতিও রাস্তার মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে।
অজগর, বাঘ, সিংহ, হাতি, জেব্রা, পেগুইন পাখি ইত্যাদি’র প্রতিকৃতি পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্রাকৃতিক ঝরনা না থাকলেও চালু করা হয়েছে শ্যালো চালতি ঝরনা। সম্প্রতি মৎস্য জগত নামে আরও একটি নতুন ভুবন চালু হয়ছে। দেশের প্রখ্যাত জল মানব নওশাদ দীর্ঘদিন স্বপ্নপুরীতে কাজ করে তার নৈপূর্ণ্য প্রদর্শন করেছেন। এখানে বেড়াতে আসা উৎসুক জনতার অনেকেই
পুকুরে গোসল করে স্বস্তি পান। প্রতিদিন শত শত বাস, মাইক্রোবাস, মটর সাইকেল, রিক্সা, ভ্যানে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ দর্শনার্থী সমবেত হয়।
স্বপ্নপুরীর ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বলেন, দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কাজের অবসরে দেখতে আসেন স্বপ্নপুরীর এই অপরূপ দৃশ্য। এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি এবং নাটক চিত্রায়িত হয়েছে এখানে।
স্বপ্নপুরীর স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন জানান, নিজ উদ্যোগে নির্মিত এই বিনোদন কেন্দ্রে তিনি এলাকার শতাধিক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। এর পরিধি আরও বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।
দিনাজপুর-৬ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য সিবলী সাদিক বলেন, স্বপ্নপুরী আমি স্বপ্নের জগত হিসেবেই গড়তে চাই।
ঢাকা থেকেও স্বপ্নপুরীর বাংলো বুকিংয়ের সুবিধা আছে। ঠিকানা : হোটেলের সফিনা, ১৫২ হাজী ওসমান গনি রোড, আলুবাজার ঢাকা। ফোন : ৯৫৫৪৬৩০-৯৫৬২১৩০।
আরো পড়ুন: বর্ষা কালে যেসব যায়গায় ঘুরতে পারেন
যেভাবে যাবেন:
ঢাকার গাবতলি ও কল্যাণপুর থেকে নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এস আর ট্র্যাভেল, কেয়া পরিবহন, এস এ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহনের এসি ও নন-এসি দিনাজপুরগামী বাস রয়েছে। ভাড়া ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা।
এরপর দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ অথবা ফুলবাড়ি নেমে অটোরিকশায় করে যেতে পারবেন স্বপ্নপুরীতে।
যেখানে থাকবেন:
দিনাজপুর শহরে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো মানের হোটেল হচ্ছে পর্যটন মোটেল। এছাড়া কয়েকটি সাধারণ মানের হোটেল হচ্ছে হোটেল ডায়মন্ড, হোটেল আল রশিদ, হোটেল নবীন, হোটেল রেহানা, নিউ হোটেল ইত্যাদি।
ঢাকা থেকেও স্বপ্নপুরীর বাংলো বুকিংয়ের সুবিধা আছে। ঠিকানা : হোটেলের সফিনা, ১৫২ হাজী ওসমান গনি রোড, আলুবাজার ঢাকা। ফোন : ৯৫৫৪৬৩০-৯৫৬২১৩০।
আরো পড়ুন: রংপুর জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান
যেভাবে যাবেন:
ঢাকার গাবতলি ও কল্যাণপুর থেকে নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এস আর ট্র্যাভেল, কেয়া পরিবহন, এস এ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহনের এসি ও নন-এসি দিনাজপুরগামী বাস রয়েছে। ভাড়া ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা।
এরপর দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ অথবা ফুলবাড়ি নেমে অটোরিকশায় করে যেতে পারবেন স্বপ্নপুরীতে।
যেখানে থাকবেন:
দিনাজপুর শহরে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো মানের হোটেল হচ্ছে পর্যটন মোটেল। এছাড়া কয়েকটি সাধারণ মানের হোটেল হচ্ছে হোটেল ডায়মন্ড, হোটেল আল রশিদ, হোটেল নবীন, হোটেল রেহানা, নিউ হোটেল ইত্যাদি।