নানা কারণে শরীরে ব্যথা যন্ত্রণার সমস্যা দেখা দিতে পারে। ক্লান্তি, পরিশ্রম কিংবা নানা অসুখের কারণেও গায়ে ব্যথা হতে পারে। অনেকক্ষেত্রে আবার অত্যধিক শরীরচর্চার কারণেও এই সমস্যা দেখা দেয়। তবে, বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, গায়ে ব্যথার সমস্যা সাধারণ সমস্যা হলেও এর পিছনে অন্য অসুখের কারণও লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই অত্যধিক গায়ে ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
শরীরে বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা-বেদনা বেড়ে গেলে আমরা চিন্তায় পড়ে যাই, ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেল না তো! ইউরিক অ্যাসিডের নাম ব্যথার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত বলে আমরা কমবেশি অনেকেই জানি। এটি মূলত অক্সিজেন, নাইট্রোজেন আর কার্বন–গঠিত একটি যৌগিক পদার্থ, যা আমাদের শরীরের এক ধরনের বর্জ্য পদার্থ বলা যেতে পারে। আমাদের শরীরে আছে দুই ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড, এর মধ্যে কিছু আবশ্যিক বা অ্যাসেনশিয়াল, আর কিছু অনাবশ্যিক বা নন–অ্যাসেনশিয়াল। পিউরিন হচ্ছে এমনই একটা অনাবশ্যিক অ্যামাইনো অ্যাসিড। আমাদের শরীরের বেশির ভাগ ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয় এই পিউরিন থেকেই। আর কিছু পরিমাণ ইউরিক অ্যাসিড আসে খাবারের মধ্যে থাকা পিউরিন থেকে। ইউরিক অ্যাসিড কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে নিষ্কাশিত হয়ে যায়।
আমাদের শরীরে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ইউরিক অ্যাসিড থাকে। রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়লে নানা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। পুরুষের ক্ষেত্রে ২.৪ থেকে ৭, এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ২.৪ থেকে ৬ মিলিগ্রাম ইউরিক অ্যাসিড প্রতি ডেসিলিটারে থাকাটা স্বাভাবিক। এর চেয়ে মাত্রা বেড়ে গেলে তাকে বলে হাইপার ইউরেসিমিয়া। বিশেষ করে অস্থিসন্ধি বা জয়েন্টে ইউরিক অ্যাসিড স্ফটিক জমে সেখানে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যাতে করে শরীরের নানা জয়েন্টে মারাত্মক ব্যথা, লাল হয়ে ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিডের কারণে কিডনির পাথরজনিত সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা আছে। আছে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার ভয়ও। এমনিতে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চমাত্রার সঙ্গে আরও কিছু রোগের সহাবস্থান দেখা যায়। যেমন উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরলের উচ্চমাত্রা ইত্যাদি। কখনো কখনো ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলেও তা তেমনভাবে জানান দেয় না। অর্থাৎ তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না।
শরীরে ব্যথার লক্ষণ:
১. শরীরের নানা অংশে প্রবল ব্যথা, যন্ত্রণা।
২. দুর্বলভাব। কোনও কাজ করতে না ইচ্ছে না হওয়া।
৩. জ্বর জ্বরভাব দেখা দিতে পারে।
৪. মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, অবসাদ এর অন্যতম লক্ষণ।
৫. গায়ে ব্যথার কারণে শরীরের তাপমাত্রাতেও হেরফের দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুনঃ যোগাসনের ভিডিও ভাইরাল মালাইকার
শরীরে ব্যথার কারণ:
গরমকালে শরীরে ঘাম বসে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ঠান্ডা লাগা, সর্দি, জ্বরের লক্ষণ দেখা দেয়। জ্বরভাব থাকলেও গায়ে ব্যথা হয়।
সারাদিনের ক্লান্তির কারণে হাতে, পায়ে, পিঠে, কাঁধে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত ক্লান্তি দূর হলে গায়ে ব্যথার সমস্যাও দূর হয়। এর জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। তাঁদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সারাদিনে অন্তত ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। ঘুম কম হলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এর ফলেও ক্লান্তি দেখা দেয়। আর তা থেকে হতে পারে সারা শরীরে ব্যথা যন্ত্রণা। তবে, অত্যধিক এবং নাগাড়ে ব্যথা যন্ত্রণা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঃ প্রাকৃতিক নিয়মে চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
গরমকালে শরীরে জলের চাহিদা বেশি থাকে। ডিহাইড্রেশন দেখা দিলেও এই সমস্ত সমস্যা দেখা দেয়। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে, লিভারের সমস্যা থাকলে, জটিল কোনও রোগে দীর্ঘদিন ভুগলে, কিডনির সমস্যায় ভুগলে কিংবা কোনওপ্রকার ইনফেকশনের কারণেও গায়ে ব্যথা হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে সারাদিনে অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। ঘুম কম হলেও নানা সমস্যা দেখা দেয়।