আপনি যদি বাজারে যান দেখবেন যে, গতকালকে যে জিনিসের দাম যা ছিলো আজকে হয়তো একটু পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন কিন্তু কমছে না বাড়ছে। গরুর মাংস মুরগির মাংস এগুলোর দাম অনেক দূর চলে গেছে।

সাধারণ মানুষ ও গরুর গরুর মাংস কিনতে পারছে না। খাসির মাংসর কথা তো ছেড়েই দিলাম। শুধু যে আপনি এই খাবার জিনিসের বিষয়টা তা কিন্তু না। ওষুধ বলেন, ইলেকট্রনিক্স আইটেম বলেন, ফার্নিচার বলেন প্রত্যেকটা জিনিসের দাম হু হু করে বাড়ছে। কিন্তু আপনার ইনকাম তো বাড়ছে না। অনেকে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে হয়তো ইনকাম কিছু বাড়াতে পারেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষেরই তো সেই সুযোগ নেই।
মিতব্যয়ী জীবনযাপনের কৌশল - Frugal Living Tips
আরও পড়তে পারেন : জীবনে সাফল্য লাভের ১০টি শীর্ষ উপায়

ইনফ্লেশনারি ফ্যাক্টর কারণে মূলত তাদের ইনকাম কিন্তু কমছে। তারমানে আগে যে টাকা দিয়ে আপনি যে পরিমাণ জিনিস কিনতেন এখন কিন্তু সেই টাকা দিয়ে তার চেয়ে অনেক কম পরিমাণ জিনিস কিনতে হচ্ছে । এই যখন অবস্থা তাহলে আপনার এক্সপেন্ডিচার এর সাথে আপনার ইনকামের এডজাস্টমেন্ট করা ছাড়া আপনার সামনে বিশেষ কোনো পথ খোলা নেই। তাই আজকে আমরা অত্যন্ত মিতব্যয়ী জীবন যাপন করার জন্য কয়েকটি পরামর্শ আপনাদেরকে দিব। এই পরামর্শগুলো যদি আপনার মেনে চলেন তাহলে অত্যন্ত খরচ করার সময় বিষয়টা আপনার মনে থাকবে এবং দেখবেন যে ইনকামের সাথে আপনার এক্সপেন্ডিচারের একটা এডজাস্টমেন্ট আপনি করতে পারবেন।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে আসলে প্রত্যেকটা মানুষের চলতে কষ্ট হচ্ছে, দ্রব্যের মূল্য তো আকাশ ছুঁয়েছে। ফলে আপনাকে খুব চিন্তা ভাবনা করে সামনে অগ্রসর হওয়া ছাড়া আপনার হাতে আর কোনো পথ নেই। তাই আমরা আজকে যারা মূলত অত্যন্ত মিতব্যয়ী জীবনযাপন করতে চান, তাদের জন্য কিছু পরামর্শ দিব।

১। মাসিক বাজেটের লিস্ট করুন

এক নাম্বার পরামর্শ হচ্ছে আপনি আপনার মাসিক বাজেটের একটা ইভালুয়েশন করে মূল্যায়ন করেন। এই মূল্যায়ন করার পর এবার আপনি নিজেই দেখেন যে কোথায় কোথায় আপনি অ্যাডজাস্ট করতে পারেন। আপনার বাজেট হতে হবে এখনো খুব টাইট। নয়তো প্রত্যেক মাসে আপনার ঋণ করতে হবে অথবা আপনার আগে অল্প যে সঞ্চয় আছে সেই সঞ্চয় ভেঙে ভেঙে খেতে হবে। তাই আপনি আপনার যে খরচ হবে সেই খরচের একটা মূল্যায়ন করেন এবং এইটা লিখে হবে। লিখে দেখেন যে কোন কোন খরচ কমাতে পারেন।

গত সপ্তাহে আপনি তিন দিন মাংস খেতেন সেটা আপনি দুই দিনে নিয়ে আসেন। অথবা একদিন নিয়ে আসেন। কেউ হয়তো মাসে চার দিন মাংস খেতেন দরকার হলে দুই দিনে নিয়ে আসেন। হয়তো কেউ বেশি গরুর মাংস খান সেটা মুরগির মাংসতে নিয়ে আসেন। যেটা আপনি ভাল বুঝবেন যে আপনি এডজাস্টমেন্ট কিভাবে করবেন কিন্তু আপনার খরচের প্যাটার্ন এটা এখন দেখে নিন। দেখে আপনি দেখেন যে কোন কোন পয়েন্টে আপনি খরচ কমাতে পারেন।

২। আসবাবপত্র ইলেকট্রনিক্স আইটেম ক্লোথিং

যে কোন কিছু কেনার সময়ে আপনি একটু ঘুরে ঘুরে দামদর করে তারপর কিনুন। আগে হয়তো কোন এক দোকানে গেলে একবারে দেখে কিনে ফেলতেন বা হয়তো কোন একটা ফার্নিচার শপ ইন ঢুকলে একবারে কিনতে পারতেন কিন্তু এখনও সেটা করা দরকার নেই। কারণ আপনি এখন একটা টাইট সিচুয়েশন এর মধ্যে গেছেন। আমরা সবাই পড়ে গেছি। ফলে যে কোন কিছু কেনার আগে একটু বার্গেটিং করেন। কাঁচা বাজার আপনি হয়তো গুলশান থেকে কিনেন। সেখানে না কিনে যদি কারন বাজার জান তা হলে অনেক কমে কিনতে পারেন। এরকম প্রত্যেকটা জিনিস একটু ঘুরাঘুরি করলে কমে কিনতে পারবেন। আগে যেমন একটু চিন্তা কম করতেন এখন খরচ করার ক্ষেত্রে একটু চিন্তা বেশি করুন।

৩। পরিবহন খরচের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন

যাদের গাড়ি আছে তাদের সব সময় নিজের গাড়ি চালিয়ে সব জায়গায় যেতে হবে এমনটি নয়। দরকার হলে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করুন। হয়তো যেখানে আপনি রিকশা ব্যবহার করতেন সেখানে আপনি হেটে যান। আবার আমরা অনেকক্ষণ অল্প প্রয়োজনে অনেক জায়গায় ভ্রমণ করি। এগুলোকে কমিয়ে দিন। বরং অনেকগুলো কাজ এক সাথে ঠিক করে তার পর যান। তাহলে একসাথে অনেকগুলো কাজ করে ফিরতে পারবেন। ঢাকা শহরের পরিবহন খরচ কিন্তু অনেক বেশি। আর যারা গাড়ি চালান তাদের ফুয়েল কস্ট অনেক বেশি। ফলে এই দিকগুলো একটু এডজাস্ট করুন। জাস্ট চিন্তা করুন দেখবেন পথ বেরিয়ে গেছে।

৪। খাবারের বেপারে একটু ক্রিয়েটিভ হন

ক্রিয়েটিভ বলতে কি বুঝছি ? ধরুন মাসে কয়েকবারই কফিশপে জান, ফ্যামিলি মেম্বারদের নিয়ে ভালো ভালো রেস্টুরেন্ট খান। তারপর আপনার বাচ্চাদের জন্য বাইরে থেকে অর্ডার করে খাবার নিয়ে আসেন। এর প্রত্যেকটা জিনিস একটু এভোয়েট করেন। বাইরে খাবার কমিয়ে দিন। কফিশপে না গিয়ে সেই কফি বাসা বানিয়ে খান। আবার যে দোকানের দাম অনেক বেশি সেই এড়িয়ে একটু কমের দোকানে যান । এই ভাবে বিভিন্ন ভাবে এডজাস্ট করতে পারেন। যখন আপনি প্রপার নজর দিবেন দেখবেন আপনার খরচ অনেক কমিয়ে এসেছে।

৫। পুরনো কাপড় চোপড় ফার্নিচার এর প্রতি যত্নশীল হোন

এখানে কথাটা হচ্ছে এরকম, অনেকের ফার্নিচার দিন দিন পাল্টানোর একটা স্বভাব আছে। অনেকে কাপড় কিনতে পছন্দ করেন। এখন যেহেতু সময় খারাপ, আপনি দেখুন আপনার যে ফার্নিচার আছে সেটা দিয়ে চলে কি না ? যদি একেবারে ভেঙে চুরে যায় তাহলে রিপ্লাই করুন। বাসায় খুঁজে দেখেন অনেক পুরাতন কাপড় আছে। ফলে নতুন কাপড় কিনতে হয় কি না চিন্তা করে। দেখুন পথ পেয়ে গেছেন। একটা কাপড় জামা প্যান্ট তো অনেকদিন যায় সুতরাং বার বার কেন চেঞ্জ করতে হবে। পরিষ্কার হলেই তো হোল। ভুলবেন না আমরা কিন্তু কথা বলছি অত্যন্ত মিতব্যয় নিয়ে। যাদের কেনার সামর্থ আছে কথা ভিন্ন। যে সিচুয়েশনে আমরা পড়েছি। যারা স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের জন্য মূলত এই কথাগুলা।

তারপরে যদি কিনতেই হয় সেকেন্ড ফার্নিচার মার্কেট পুরনো ফার্নিচার কিনতে পাওয়া যায় সুন্দর সুন্দর ফার্নিচার। সেদিকে মনোযোগ দিতে পারেন। সেই ফার্নিচার কিনে পালিশ একেবারে নতুনের মত হয়ে যাবে।জাস্ট এটিটিউডের বেপার।

৬। পুরোনো জিনিস মানুষকে দিয়ে দিন

আপনার যে পুরোনো কাপড় চোপড় আছে যা ব্যবহার করেন না বা পুরোনো ফার্নিচার বা যে কোনো জিনিসপত্র যেটা আপনি ব্যবহার করেন না। শুধু জায়গা অপব্যয় করে আছে এগুলোকে আপনি ডোনেট করে দিন বা দান করে দিন বা মানুষকে দিয়ে দিন। এতে আপনার থাকার জায়গার পরিবেশ সুন্দর হবে। আপনি যদি অন্যভাবে দেখেন সমাজের সব মানুষ যদি এই কাজটা করে। তারপর দেখবেন আপনার টাকা পয়সা সাশ্রয় হবে।

৭। টাকা খরচ না করে কিভাবে আনন্দ করা যায় সেটা করুন।

যেমন খারাপ লাগতেছে আপনি চোলে যেতে পারেন কোনো রিসোর্টে। সেখানে অনেক খরচ। আপনি চলে যেতে পারেন কক্সবাজার বা কোথাও সেখানেও অনেক খরচ। আনন্দ পাওয়ার জন্য আমরা টাকা খরচ করার বিকল্প আমরা দেখি না। খারাপ লাগছে সবাই মাইল টাকা খরচ করে রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে ভালো লাগবে। এখন চিন্তা করা দরকার টাকা খরচ করব না কিন্তু ফান করবো, টাকা খরচ করব না কিন্তু আনন্দ করবো। বাচ্চাকাচ্চা সবাইকে নিয়ে যদি পার্কে যান দেখবেন ভালো লাগছে। সকালে উঠে হাটতে বের হন, মুক্ত বাতাসে হাঁটুন। ওই পূর্বাচল বা ওই দূরে কোথায় চলে যায়ন। চা কফি খান। তাহলে কিন্তু আপনার খরচের লাগাম টেনে ধরতে পারবেন। আপনার আনন্দ হবে কিন্তু খরচ কম হবে। সুতরাং এমন দিকে মনোযোগ দিন যেখানে আনন্দ পাবেন কিন্তু খরচ নাই বা অল্প খরচ।

৮। ফ্রি সুবিধা নিতে শিখুন

বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় লাইব্রেরী আছে এইগুলো সুবিধা নিতে পারেন। বইয়ের কিন্তু দাম কম না। যদিও আমরা সব সময় বই কিনতে উৎসাহ প্রদান করি। খারাপ সময় বই না কিনে যদি কোন লাইব্রেরিতে সুবিধা পান তাহলে খারাপ কি। যারা জিমে যেতে অভ্যস্ত তাদের খরচ কম করার জন্য যদি সরকারি জিমে যান হয়তো একটু দূরে হবে হয়তো সহজ না তারপরও আপনাদের পয়সা বাঁচবে। জিমে যেতেই হবে এমনটি কেন ?আপনি পার্কে গিয়ে ফ্রেহ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে পারেন, হাঁটতে পারেন। এগুলো থেকে বেনিফিট নিন। জিমে প্রতিমাসে যে খরচ হতো তা আর দেওয়া লাগবে না।

৯। শুধু সেগুলোই কিনুন যেগুলো না কিনলেই নয়

কোন জিনিস কেনার আগে নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করুন।

  • আপনি কেন কিনবেন?
  • এই জিনিস কি আপনাকে কিনতেই হবে ?
  • এই জিনিস না কিনে কি পৰ যায় না ?

যদি দেখেন যে এই জিনিস না কিনে আপনার কোন উপায় নেই। কোন অল্টারনেটিভ সোর্স নেই তাহলে হয়তো আপনি সেটা কিনতে হবে। কিন্তু অনেক বিষয় আছে, না কিনলেও চলে। এই খরচগুলো আপনি এড়িয়ে চলুন। শুধু মাত্র প্রযোজন উপরের মনোযোগ দিন। চাওয়ার উপর মনোযোগ কমিয়ে দিন তাতে খরচ সাশ্রয় হবে।

১০। বাসা-বাড়ির কাজ নিজে করার চেষ্টা করুন

বাথরুমের ট্যাব নষ্ট হয়েছে, একটা লাইট রিপ্লেস করতে হবে, চুলায় সমস্যা হয়েছে , পানির ট্যাবে সমস্যা হয়েছে বা হয়তো অন্য কোনো সমস্যা হয়েছে এই সমস্যাগুলো কিন্তু খুব মারাত্মক কোনো সমস্যা না। এই সমস্যা সমাধান করার জন্য কিন্তু আপনার অনেক টাকা খরচ করে হয়।

এই কাজ নিজে করার চেষ্টা করুন। যখন আপনি নিজে করবেন তখন এই টাকাগুলো খরচ হবে না। অনেকে পারে কিন্তু তাও করতে চায় না। তবে এখানে দুটো কাজ করা দরকার। যারা পারে না তারা শিখে নিবে, আর যারা পারে তারা ওই কাজটা করবে। এইটা কোনো সাংঘাতিক সাংঘাতিক কঠিন কোন কাজ না। যারা এই কাজগুলো করে তার চাইতে আপনার দক্ষতা অনেক বেশি। সুতরাং একটু মনোযোগ দিয়ে শিখে নিলেই হয়।

আরও পড়তে পারেন : বর্তমান এই দুঃসময়ে চাকরি প্রত্যাশী ভাই/বোনদের কি করণীয়

যদি এই ১০ টা পয়েন্টের দিকে ফোকাস করতে পারেন তাহলে দেখবেন যে আপনি জীবনের মান বেশি কমছে না। বরং একটা সুন্দর সাজানো জীবন পাচ্ছেন । সুতরাং একটা সুন্দর লাইভ লিট করে এই বিপদ থেকে নিজেকে বাঁচান। আর সবাই দেখেন যে মাল্টিপল ইনকামের ব্যবস্থা করা যায় কি না? সবাই এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ !!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *