মানুষের ক্ষতি করার ভয়াবহ পরিণতি। মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ জীব। মানব জাতির আদি পিতা-মাতা হিসেবে আদম ও হাওয়া (আঃ) দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন মহান আল্লাহতালা। আদম ও হাওয়া (আঃ)থেকে দুনিয়াতে মানুষের বংশবিস্তার শুরু হয়েছে (নিসা ৪/১)। কিন্তু মুসলমানদের বংশবিস্তার ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধর (হজ্জ ২২/৭৮)। এখন আমরা যেভাবেই বিবেচনা করি না কেন,দেখা যাবে দুনিয়াতে সকল মানুষেই রক্তের সম্পর্কে আবদ্ধ। তাই একজন মুসলমান বা একজন মানুষ অন্য আরেক জনকে কষ্ট দিতে পারেনা। মানুষ হয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়ার পরিণতি অনেক ভয়াবহ। মানুষকে কষ্ট দিলে নিজেকেই চরম পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে।
আরো পড়ুন : নামাজ পড়ার সংক্ষিপ্ত নিয়ম
কারো ক্ষতি করার ভয়াবহ পরিণতি
মুমিনরা সব সময় মানুষের কল্যাণকামী করে থাকে। এরা মানুষকে কখনই কষ্ট দেয়ার কথা চিন্তাও করে না। আবার কেও কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে নিয়ে উপহাস ও করে না কখনো। এটাই হচ্ছে শান্তির ধর্ম ইসলামের শিক্ষা। ইসলামের শিক্ষা হলো সবসময় মানুষের পাশে থাকা, ক্ষতি করা নয়। তবে এর বাহিরে গিয়ে যারা মানুষের ক্ষতি করার চিন্তা করে তাকে আল্লাহতালা কখনই ছেড়ে দিবেন না। এর শাস্তি আল্লাহ নিজেই দিবেন দুনিতে নয়তোবা আখিরাতে।
আবু সিরমা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,যে মানুষ অন্যের ক্ষতি করে,মহান রব্বুল আল-আমিন তা দিয়েই তার ক্ষতিসাধন করেন। অন্যকে কষ্ট দিলে আল্লাহ নিজেই তাকে সেই কষ্টের মাঝে ফেলবেন (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪০)। তাই মানুষ মানুষকে কষ্ট দিয়ে কখনই কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। বরং নিজেরাই ধ্বংস হয়ে যাবে।
হজরত আবু বক্কর সিদ্দিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,‘যে ব্যক্তি কোনো মানবের ক্ষতি করে এবং তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাহলে নিজেই সে অভিশপ্ত। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪১)
আবার এটি আরেক হাদিসে বলা হয়েছে ,আবু সিরমাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন,কেউ কারো ক্ষতি করলে মহান আল্লাহ্তালা নিজেই তার ক্ষতি সাধন করবেন। কোনো মানুষ অন্যায় ভাবে কারো ক্ষতি করলে আল্লাহ তার বিরোধীতা করবেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৩৫)
মুসলিমদের আল্লাহ নিজেই কষ্ট দিতে বাধা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন وَالَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوْا فَقَدِ احْتَمَلُوْا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِيْنًاঅপরাধ না করা সত্ত্বেও যারা মুমিন নর ও নারীদের কষ্ট দেয়,তারা প্রকাশ্যে গোনাহর বোঝা বহন করে। (আহযাব ৩৩/৫৮)।
মুমিনকে কষ্ট দিতে নিষেধ করে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
يَا مَعْشَرَ مَنْ قَدْ أَسْلَمَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يُفْضِ الإِيْمَانُ إِلَى قَلْبِهِ لاَ تُؤْذُوْا الْمُسْلِمِينَ وَلاَ تُعَيِّرُوهُمْ وَلاَ تَتَّبِعُوْا عَوْرَاتِهِمْ فَإِنَّهُ مَنْ تَتَبَّعَ عَوْرَةَ أَخِيهِ الْمُسْلِمِ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ وَلَوْ فِى جَوْفِ رَحْلِهِ،
‘হে ঐ জামা‘আত! যারা মুখে ইসলাম কবুল করেছ, কিন্তু অন্তরে এখনো ঈমান মযবূত হয়নি। তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দিবে না, তাদের লজ্জা দিবে না এবং তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হবে না। কেননা যে লোক তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ অনুসন্ধানে নিয়োজিত হবে আল্লাহ তার গোপন দোষ প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তির দোষ আল্লাহ প্রকাশ করে দিবেন তাকে অপমান করে ছাড়বেন, সে তার উটের হাওদার ভিতরে অবস্থান করে থাকলেও।
আরো পড়ুন : বিপদ থেকে মুক্তির প্রথম দোয়া
মানুষকে কষ্ট দেওয়ার মাধ্যম :
মানুষ মানুষকে বিভিন্ন মাধ্যমে কষ্ট দিয়ে থাকে। বিভিন্ন ভাবে কথার মাধ্যমে মানুষের মনে কষ্ট দিয়ে থাকে। যেমনঃ চোগলখুরী করা,গীবত-তোহমত,গালি দেওয়া,তুচ্ছ জ্ঞান করা,খোঁটা দেওয়া ইত্যাদি। কাজের মাধমেও মানুষ মানুষকে কষ্ট দিয়ে থাকে। যেমনঃ ধোঁকা-প্রতারণা,যুলুম করা,সম্পদ জবর দখল করা,হত্যা করা ও রাস্তা বন্ধ করার মাধ্যমে মানুষের মনে কষ্ট দিয়ে থাকে।
আল্লাহতালা যদি কারো বিরোধী হন, তাহলে তার মতো হতভাগা আর এই দুনিয়ায় নেই। কারো ক্ষতি করলে সে নিজেই নিজেকে পূর্ণ ধ্বংসের দিকে টেনে নিচ্ছেন। মানুষের ক্ষতি করে কেউ যদি পাহাড় সমতুল্য নেকি নিয়ে কবরে যান,সেগুলো কোনো কাজে আসবে না। তাই কারো মনে কষ্ট দেওয়া বা কারো বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে,কেউ কখনো কল্যাণ বয়ে আন্তে পারেনি বা পারবেওনা। বরং মানুষ এর অভিশাপে সে তিলে তিলে ধ্বংসে হয়ে যাবে। আল্লাহর সকল প্রকার রহমত তার উপর থেকে উঠে যাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে বেক্তি মুমিন বান্দার ক্ষতি করতে যাবে, সে নিজেই অভিশপ্ত হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪১)
আরো পড়ুন : বিয়ে পড়ানোর সুন্নতি পদ্ধতি
কারো বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা, কাউকে কষ্টে ফেলে দেওয়া কল্যাণ বয়ে আনে না; বরং এগুলো মানুষকে তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। মহান আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে দেয়। আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের ক্ষতিসাধন করে অথবা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সে অভিশপ্ত হবে। কথায় আছে কারো জন্য গর্ত খুঁড়লে সেই গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়।