জাতীয় প্রতীকগুলো কোনো একটি জাতিকে চেনার জন্য পরিচয় বহন করে। জাতীয় প্রতীকগুলো একটি দেশের সাংস্কৃতিক জীবনধারা, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে। বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের যেমন কিছু প্রতীক আছে তেমনি আমাদের দেশেরও কিছু প্রতীক রয়েছে। স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেই মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সেই সময়ই তৎকালীন নেতৃত্ব বেশকিছু জাতীয় প্রতীকের নাম ঘোষণা করেছিলেন। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আরো কিছু প্রতীক নির্বাচন করা হয়েছে। বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক দলিল, রাষ্ট্রীয় প্রতীক, পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত ও স্মৃতিসৌধসহ বিভিন্ন সরকারি জাতীয় প্রতীক রয়েছে, যেগুলো স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময় গৃহীত হয়। এগুলো ছাড়া আরও কিছু জাতীয় প্রতীক রয়েছে। যেমন:ফুল, ফল, পতাকা, সঙ্গীত, কবি, উদ্যান, খেলা, সৌধ, পাখি, বৃক্ষ, মাছ, পশু, মসজিদ, মন্দির, নদী ইত্যাদি বেশকিছু ক্ষেত্রের প্রতীককে জাতীয়করণ করা হয়েছে। নিম্নে বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকসমূহ :
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেও কিছু জাতীয় প্রতীকসমূহ রয়েছে। সেই প্রতীক গুলো আমাদের দেশের মানুষের মাঝে অনেক পরিচিত। আমাদের দেশের মানুষ সেই সব প্রতীকগুলোকে অনেক সন্মান করে। নিম্নে প্রতীকগুলো নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হল।
১। জাতীয় পতাকা
আমাদের দেশের পতাকা লাল সবুজের পতাকা হিসেবে পরিচিত। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের ফলে আমরা এই লাল সবুজের পতাকাটি অর্জন করতে পেরেছি। এটি একটি সবুজ ক্ষেত্রের উপর একটি লাল বৃত্ত নিয়ে গঠিত, যার উত্তোলন দিকে সামান্য অফসেট, যাতে পতাকাটি উড়ন্ত অবস্থায় কেন্দ্রিক দেখায়। সবুজ ক্ষেত্রটি বাংলাদেশ এর সবুজে ভরা ফসলের মাঠের দৃশকে তুলে ধরা হয়েছে। সবুজের বুকে লাল বৃত্তটি মুক্তিযুদ্ধে শহীদের রক্তের কথা ও বাংলায় উদীয়মান সূর্যকে কেন্দ্র করে বানানো হয়েছে।
২। জাতীয় প্রতীক
বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক স্বাধীনতার পর থেকে ব্যবহার করা হয়। মোহাম্মদ ইদ্রিসের ও শামসুল আলমের হাতে আঁকা বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক। মোহাম্মদ ইদ্রিসের আঁকা ভাসমান শাপলা ফুল এবং শামসুল আলমের ধানের শীষ বেষ্টিত পাটপাতা ও চারটি তারকা নিয়ে তৈরী আমাদের জাতীয় প্রতীক।
বাংলাদেশের নিসর্গ ও অর্থনীতি বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়েছে পানি, ধান ও পাট প্রতীকে। তারকা চিহ্নিত গুলোতে ব্যক্ত হয়েছে জাতির লক্ষ্য ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা ক্ষেত্রে।
৩। সরকারী সিলমোহর
সরকারের সকল দপ্তর ও বাংলাদেশ সরকারের সকল মন্ত্রনালায়ে কাজ করার ক্ষেত্রে এই প্রতীকটি ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে পাসপোর্টেও এই সিল বসানো থাকে। এই প্রতীকটির নকশা করেন নিত্যানন্দ সাহা।
৪। জাতীয় সংগীত
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমার সোনার বাংলা গান থেকে প্রথম ১০ নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বানানো হয়। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে নেয়া হয়। গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে প্রথম ১০ লাইন করার পরে, এটা বাংলার মানুষের প্রিয় একটি গান হিসেবে পরিচিত হয়ে যায়। এই গানটি শুনলে বাংলাদেশের সকল সৌন্দর্যের কথা মনে পরে যায়। বাংলাদেশের আকাশ বাতাস যেন আমাদের প্রাণে বাশি বজায়।এই গানটির মাঝে বাংলাদেশকে আমাদের মায়ের সাথে তুলনা করা হয়েছে। ফাগুনের আমের বনের ঘ্রান যেন আমাদের পাগল করে থাকে। অঘ্রাণের ফসলে ভরা মাঠে যেন মধুর হাসি মিশে থাকে। এই সংগীতটির মাঝে বাংলার সকল রূপের কথা মিশে আছে।
৫। জাতীয় রণসঙ্গীত
১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে রচিত সুরারোপিত সন্ধ্যা কাব্যগ্রন্থের বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি গান,যা বাংলাদেশের জাতীয় রণসঙ্গীত হিসেবে পরিচিত। মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠকে বাংলাদেশের রণ-সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচন করা হয় সংগীতটি। বিবিসি বাংলার জরিপে ২০০৬ সালে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিশটি বাংলা গানের ১৮তম স্থান অধিকার করে আমাদের এই সংগীতটি। গানটি প্রথম প্রকাশিত হয় শিখা পত্রিকায় ” নতুনের গান ” শিরোনামে ।এর পরে সংগীতটি এটি সন্ধ্যা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়।
৬। জাতীয় পাখি
বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল। পাখিটি দেখতে খুবই সুন্দর। পাখিটির সাদা ও কালো রঙে যেন বাংলাকে আরো বেশি সুন্দর ও মনোমুখদ্ধ করে তুলেছে। বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলের সর্বত্রই দোয়েল দেখা যায়।
ভোরে তাদের কোলাহলে গ্রামীণ মানুষের ঘুম ভেঙ্গে যায়। মূলত বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, চীনের দক্ষিণাঞ্চল ও ফিলিপাইনে দোয়েল পাখি দেখা যায়। দোয়েল আকারে দিক থেকে ১৫-২০ সেন্টিমিটার বা ৭ – ৮ ইঞ্চি লম্বা হয়। দোয়েল পাখি তার অপরূপ লেজটি অধিকাংশই খাড়া করে রাখে।
৭। জাতীয় ফল
বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। যা খাইতে অনেক সুস্বাধু। বিশ্বের বিভীন্ন দেশে কাঁঠাল একটি জনপ্রিয় ফল। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রান্নাগুলিতে কাঁঠাল সাধারণত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কাঁঠাল বাংলাদেশের পাশাপাশি শ্রীলংকারও জাতীয় ফল হিসেবে পরিচিত। কাঁঠাল গাছের কাঠ আসবাবপত্র তৈরীর জন্য ব্যাবহারিত হয়। কাঁঠাল গাছের পাতা আঁকড়ে একটু বড়ো হয়ে থাকে ,যা বিভিন্ন পশুর খাবার হিসেবে কাজ করে থাকে। কাঁঠাল অনেক রসালো একটি ফল।
বাংলাদেশের সব জায়গায় কাঁঠাল গাছ দেখা যায়। অন্যান্য ফলের তুলনায় এই ফলটি আকারে বড়ো হয়ে থাকে। এর কয়েক প্রকারের জাত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ও ভারতে ২ প্রকারের কাঁঠাল পাওযা যায়,গলা ও খাজা। ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পটাশিয়ামের পরিমাণ ৩০৩ মিলিগ্রাম। ভিটামিন সি কাঁঠালের অন্যতম উপযোগিতা। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে থাকে এই ফল। কাঁঠালের শেকড় কার্যকরী চর্মরোগের সমস্যা সমাধানের কাজ করে। ২০১৭ সালে, ভারত ১.৪ মিলিয়ন টন কাঁঠাল উৎপাদন করেছিল, তারপরে রয়েছে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়া।
৮। জাতীয় ফুল
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল দেখতে সাদা। বাংলার চারদিকে বেষ্টিত নদী নালা খালবিলে এই ফুল দেখা যায়। বাংলাদেশের অনেক ক্ষেত্রে এই শাপলা ফুলের প্রতীকটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পানিতে ভাসমান থাকায় শাপলা ফুলটিকে অনেক সুন্দর লাগে। বাংলার মানুষের মান জুড়িয়ে দেয় এই ফুল।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের টাকা ও দলিল পেপারে শাপলাফুল জলছাপ হিসেবে দেখা হয়। ইংরেজিতে শাপলাকে বলা হয় “Water Lily” বাংলাদেশে সবসময় এই ফুল ফুটে থাকে ,তবে শরৎ ও বর্ষা মৌসুমে বেশি দেখা যায় এই জাতীয় ফুলটিকে।
৯। জাতীয় মাছ
বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। যার বৈজ্ঞানিক নাম: Tenualosa ilisha .বাঙ্গালীর কাছে ইলিশ মাছ খুবই জন প্রিয় মাছ হিসেবে পরিচিত। ইলিশ মাছ সাধারণত সমুদ্রে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় ২০১৭ সালে। বঙ্গোপসাগরের ব-দ্বীপাঞ্চল, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা নদীর মোহনার হাওর থেকে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ ধরা হয়। এটি লোনা পানির মাছ।
সাধারণত বড় নদী এবং মোহনায় সংযুক্ত খালে বর্ষাকালে এই জাতীয় মাছ পাওয়া যায়। বাঙ্গালীরা এই মাছ খেতে ভালোবাসে। এটি খেতে খুবই সুস্বাদু । ইলিশ একটি চর্বি জাতীয় মাছ ,এই মাছ এ প্রচুর পরিমানে তেল থাকে। ইলিশ মাছের ডিম অনেক বেশি মজাদার হতে থাকে। বাংলাদেশ প্রতি বছর ইলিশ রপ্তানি করে প্রচুর পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকরে থাকে। ইলিশ এর অনেক গুলো গুনাগুন থাকার কারণে এই মাছকে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হিসেবে পরিচিত লাব করে।
১০। জাতীয় বৃক্ষ
আম গাছ বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে পরিচিত। ২০১০ সালে আম গাছকে জাতীয় বৃক্ষের মর্যাদা দেয়া হয়। আম বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ফল, যা খেতে খুবই সুস্বাদু হয়ে থাকে। আম গাছ সাধারণত ৩৫-৪০মি: (১১৫-১৩০ ফিট) লম্বা এবং সর্বোচ্চ ১০মি: (৩৩ ফিট) ব্যাসার্ধের হয়ে থাকে। আম গাছের কাট দিয়ে বিভিন্ন প্রকার কাজ করা হয়। আম গাছের নিচে বসে আমরা আরাম আয়েশ করতে পারি। আম গাছের অনেকগুলো ডালপালা হয়ে থাকে যা দেখতে অনেক সুন্দরলাগে। বাংলাদেশে প্রচুর পরিমানে আম চাষ হয়ে থাকে। যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বহি বিশ্বে রপ্তানিকরা হয়।
১১। জাতীয় পশু
বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার (বাঘ) বাংলাদেশে অবস্থিত পৃথিবীর একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের রয়েছে। এর গায়ের রঙ হলুদ থেকে হালকা কমলা রঙের হয়, এবং ডোরার রঙ হয় গাঢ় খয়েরি থেকে কালো; পেটটি হচ্ছে সাদা, এবং লেজ কালো কালো আংটিযুক্ত সাদা। কটি নর বাঘের দৈর্ঘ্য ২১০-৩১০ সেঃমিঃ। ঘাড়ের উচ্চতা হচ্ছে ৯০-১১০ সেঃমিঃ। পুরুষ বাঘ এর গড় ওজন হচ্ছে ২২১.২ কেজি এবং মহিলাদের বাঘের হচ্ছে ১৩৯.৭ কেজি। সুন্দরবনই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শেষ আশ্রয়স্থল। বন উজর হয়ে যাওয়ার কারণে এই পশু দিন দিন হারিয়ে যাইতেছে। রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখতে অনেক সুন্দর।
১২। জাতীয় খেলা
বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হাডুডু। প্রাচীন কাল থেকে এই খেলা খুবই জনপ্রিয় অর্জন করে আসছে। এই খেলা সাধারণত ছেলে মেয়ে থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষের পছন্দের খেলা। ১৯৯০ সাল থেকে এশিয়ান গেমসে কাবাডি খেলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১৯৭২ সালে হা-ডু-ডু খেলাকে কাবাডি নামকরণ করা হয়। সেই সময়যে কাবাডি খেলাকে জাতীয় খেলা হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়।
১৩। জাতীয় জাদুঘর
ঢাকা জাদুঘর নামে যাত্রা শুরু করেছিল জাতীয় জাদুঘর ১৯১৩ সালের ৭ আগস্ট । সে সময়কার বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ঢাকা মেডিকেল কলেজের একটি কক্ষে এর উদ্বোধন করেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর নামকরণ করা হয় ১৯৮৩ সালে। ২০ হাজার বর্গমিটারের এই ভবনটির অবস্থান। ভবনটির ৪৬টি গ্যালারিতে রয়েছে প্রায় ৮৩ হাজারের বেশি নিদর্শন। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের ইতিহাস ও সভ্যতার প্রতিটি ধাপের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে অনেক খানি ভূমিকা পালন করে থাকে এই প্রতিষ্ঠানটি।
১৪। জাতীয় পোশাক
বাঙ্গালী জাতির পোশাক -শাড়ি ও কুর্তা। বাঙালিরা এই পোশাক গুলো পড়তে পছন্দ করে থাকে। প্রতিটি জাতির জন্য কোনো না কোনো পোশাক পছন্দের থাকে তেমনি বাঙালি জাতির জন্য শাড়ি ও কুর্তা অনেক জনপ্রিয় একটি পোশাক। বাঙ্গালী মেয়েরা শাড়ি পেতে ভালোবাসে। আর পুরুষরা কুর্তা পরে। শাড়ি পড়লো মেয়েদের অনেক ভালোলাগে ,তেমনি কুর্তা বাঙ্গালী পুরুষদেড় একটি ঐতির্যবাহী পোশাক। কুর্তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত একটি পোশাক। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় সাথে শাড়ি এবং কুর্তা মানিয়ে যায় খুব সহজেই।
১৫। জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান
ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশের জাতীয় উদ্যান। ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন নামেও অধিক পরিচিত এই উদ্যানটি। ২০৮ একর বিস্তিত এলাকাজুড়ে বাংলাদেশের জাতীয় উদ্যানটির অবস্থান। বাংলাদেশের জাতীয় উদ্যানা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ আসে। এই উদ্দানে আনুমানিক ছোট ব্রো প্রায় ৮০০ এর অধিক গাছপালা রয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় বাংলাদেশের উদ্ভিদ উদ্যানে প্রায় ৬০ প্রজাতির বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের সংগ্রহ রয়েছে। এগুলোর মাঝে উল্লেখ যোগ্য হলো রাজা অশোক, ক্যামেলিয়া, আমাজান লিলি, বাঁশপাতা, চন্দন,তমাল, ভূর্জপত্র, উদল, স্টারকুলিয়া,ক্যাকটাস ও অর্কিড। উদ্যানের ভিতরে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের সমাহার।
১৬। জাতীয় গ্রন্থাগার
একটি দেশের সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বিশেষ ধরনের গ্রন্থাগার ।গণগ্রন্থাগার থেকে পৃথক গ্রন্থাগার হিসেবে এগুলোয় খুব কমসংখ্যক নাগরিকদেরকেই গ্রন্থ ধার করার অনুমতি দেয়া হয়।
প্রথম জাতীয় গ্রন্থাগারসমূহে সার্বভৌম বা রাষ্ট্রের কিছু সর্বোচ্চ সংস্থার রাজকীয় সংগ্রহশালাকে ঘিরে গড়ে উঠে। স্বাধীনতা লাভের পরপরই সরকারি এক বিশেষ অধ্যাদেশের অধীনে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। ধীনতার পূর্বে ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের একটি শাখা চালু হয় এবং এর নাম দেওয়া হয় ‘বুকস্ অ্যান্ড নিউজপেপারস্ কালেকশন ব্রাঞ্চ’। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রকাশিত গ্রন্থ ও সংবাদপত্র সংগ্রহ করাই ছিল এর কাজ। এটিই বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক ধাপ। কার্যত ১৯৭৩ সাল থেকেই বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার চালু হয়। সংগ্রহ ও সংরক্ষণ দুর্লভ পুস্তক ও পান্ডুলিপিসহ জাতীয় গ্রন্থাগারে প্রায় চার লক্ষ গ্রন্থের সংগ্রহ রয়েছে। আরও রয়েছে বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত গবেষণা পত্রিকার প্রায় এক লক্ষ কপি। জাতীয় গ্রন্থাগারের সংগ্রহ কর্মসূচির একটি অন্যতম প্রধান দিক হচ্ছে পত্রিকা সংগ্রহ করা। ব্যক্তি বিশেষের দান থেকেও এ গ্রন্থাগারে বিপুল পরিমাণ দুর্লভ পুস্তক, পত্রিকা এবং পান্ডুলিপি সংগৃহীত হয়। সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি এবং ইউনেস্কো, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আইএলও-এর মতো বিদেশি উৎস থেকেও এ গ্রন্থাগার পুরানো দৈনিক সংবাদপত্র, গ্রন্থাদি এবং পত্রিকা সংগ্রহ করে।
এ গ্রন্থাগারে উর্দু, আরবি ও ফারসি গ্রন্থ ও পান্ডুলিপি এবং বাংলাদেশের ও ভারতীয় উপমহাদেশের বিপুলসংখ্যক পুরনো মানচিত্রের সংগ্রহ রয়েছে। জাতীয় গ্রন্থাগারের সকল সংগ্রহ একটি সাত তলা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও আধুনিক সাজ-সরঞ্জামে সজ্জিত ভবনে মজুদ করে রাখা হয়।জাতীয় গ্রন্থাগারে রয়েছে নানা ধরনের পাঠক সেবা ও অন্যান্য সুবিধা। প্রায় ৭৪৩.২২ বর্গমিটার আয়তনের চারটি বড় পাঠ কক্ষ এতে রয়েছে। আরও রয়েছে একটি ৩০০ আসনবিশিষ্ট শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অডিটোরিয়াম।
১৭। জাতীয় স্মৃতিসৌধ
স্বাধীনতার যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ও নিহত বেসামরিক বাঙালি স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি স্মারক স্থাপনা। এটি সাভারে অবস্থিত। এর নকশা প্রণয়ন করেছেন সৈয়দ মাইনুল হোসেন এখানে মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের দশটি গণকবর রয়েছে। বিদেশি রাষ্ট্রনায়কগণ সরকারিভাবে বাংলাদেশ সফরে আগমন করলে এই স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন রাষ্ট্রাচারের অন্তর্ভুক্ত।
ইতিহাসঃ
১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে নবীনগরে এই স্মৃতিসৌধের স্থান ঠিক করেন । ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং নকশা আহবান করা হয়। ১৯৭৮-এর জুন মাসে প্রাপ্ত ৫৭টি নকশার মধ্যে সৈয়দ মাইনুল হোসেনের প্রণীত নকশাটি গৃহীত হয়। ১৯৭৯ সালে মূল স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮২ সালে ১৬ ডিসেম্বরের কিছু দিন আগে কাজ শেষ হয়। এই যুদ্ধে প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি হয়। এই স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের জনসাধারণের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের স্মরণে নিবেদিত এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধার উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের সর্বমোট আয়তন ৮৪ একর। মিনারটি ৪৫ মিটার (১৫০.০০ ফুট)উঁচু এবং জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিন্দুতে অবস্থিত। মিনার ঘিরে আছে কৃত্রিম হ্রদ এবং বাগান। স্মৃতিসৌধ চত্বরে আছে মাতৃভূমির জন্য আত্মোৎসর্গকারী অজ্ঞাতনামা শহীদের দশটি গণসমাধি। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে আরও রয়েছে উন্মুক্ত মঞ্চ, অভ্যর্থনা কক্ষ, মসজিদ, হেলিপ্যাড, ক্যাফেটেরিয়া।
জাতীয় মসজিদ
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ১৯৬৮ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। মসজিদটি রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র পল্টনে অবস্থিত।মসজিদে একসাথে প্রায় ত্রিশ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন । পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানির উদ্যোগে এই মসজিদ নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহন করা হয় । মসজিদটির জন্য ৮.৩০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। সেই সময় মসজিদের অবস্থানে একটি বড় পুকুর ছিল। যা ‘পল্টন পুকুর’ নামে পরিচিত ছিল। পুকুরটি ভরাট করে ২৭ জানুয়ারি ১৯৬০ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান মসজিদের কাজের উদ্ভোধন করেন ।বাংলাদেশ সরকার এখন মসজিদ টি বারিয়ে ৪০ হাজারের ধারণক্ষমতা উন্নিত করে।
মসজিদটি খুব উঁচু, মসজিদের প্রধান ভবনটি আট তলা এবং মাটি থেকে ৩০.১৮ মিটার বা ৯৯ ফুট উঁচু। প্রধান ভবনটির রং সাদা। মূল নকশা অনুযায়ী, মসজিদের প্রধান প্রবেশপথ পূর্ব দিকে হওয়ার কথা। পূর্ব দিকের সাহানটি ২৬৯৪.১৯ বর্গ মিটারের। এর দক্ষিণ ও উত্তর পার্শ্বে ওযু করার জন্য জায়গা রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে, মসজিদে প্রবেশ করার বারান্দার উপর দুটি ছোট গম্বুজ নির্মাণের মাধ্যমে প্রধান ভবনের উপর গম্বুজ না থাকার অভাবকে ঘোচানো হয়েছে।