জীব জন্ম নিলে মৃত্যু অনিবার্য হবেই। সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীব মানুষকেও এর স্বাদ নিতেই হবে। পালানোর কোনো প্রকার রাস্তা নেই মৃত্যুযন্ত্রণা থেকে। প্রত্যেককেই মরণের যন্ত্রণা মেনে নিতেই হবে। প্রতিটি মানুষের মৃত্যুর প্রতি বিশ্বাস রাখা একান্তই দায়িত্ব। এই দুনিয়াতে চরম সত্য হলো মৃত্যু,এটি সকলের জীবনে আসবেই আসবে।
মহান আল্লাহ বলেন সকলকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। মৃত্যু থেকে পালানোর পথ নেই। আল্লাহ আমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছে, আবার দুনিয়া থেকে তুলে নিবেন। হে মানুষ, আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো উভয় অবস্থার মধ্যে ফেলেই পরীক্ষা করি, অতঃপর তোমাদের আমার কাছেই ফিরিয়ে আনা হবে’ (সুরা আম্বিয়া-৩৫)
মৃত্যু থেকে পালানোর পথ নেই
মানুষের জন্য সারা জীবন বেঁচে থাকা অস্বাভাবিক কিন্তু মৃত্যু যে হবে এটি খুবই স্বাভাবিক। এটি থেকে পালানোর কোনো মাধ্যম নেই, চাঁদে গেলেও মৃত্যুর স্বাদ নিতেই হবে। যার শুরু আছে তার শেষ হবেই, এটি আল্লার শাশ্বত চিরন্তন বিধান। মৃত্যুর কোনো বয়স নেই। পৃথিবীতে সৃষ্টির শুরুর সময় যারা ছিল তারা আজ নেই।
এই পৃথিবীতে মানুষের চেয়ে কবরের সংখ্যাই বেশি। আল্লাহ বলেন, প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো মৃত্যু হবে না। আল্লাহর অনুমতি হলে সাথে সাথেই তার যান কবজ করে নিবে। যার হায়াৎ যতটুকু সে ততো দিনেই বেছে থাকবে। তার বেশি থাকার কোনো উপায় নেই।
দুনিয়াতে প্রতিটি মানুষের জন্য আল্লাহ অনেক আগেই মৃত্যুর সময় নির্ধারন করে দিয়েছেন। এটার কোনো পরিবর্তন কেউ করতে পারবে না। মৃত্যুর সাথে সাথে তার সকল আমলনামা বন্ধ করে দিবে। তখন চাইলেও আমলনামা বাড়াতে পারবে না। শুধু আফসোস করা ছাড়া তার আর কোনো উপায় থাকবে না।
পবিত্র কোরআনে এসেছে, মানুষ তখন আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, ‘হে আমার প্রতিপালক, যদি আপনি আমাকে আরও কিছু দিনের জন্য সময় দিতেন, তাহলে আমি সদকা করে আসতাম ও সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। অথচ নির্ধারিত সময়কাল যখন এসে যাবে, তখন আল্লাহ কাউকে আর অবকাশ দেবেন না।’ (সুরা মুনাফিকুন : ১০-১১)। আল্লাহ বান্দার এই দোয়া আর কবুল করবে না।
আল্লাহ বলেন, আমি বিধান করেছি, মৃত্যু সব সময় তোমাদের মাঝে অবস্থান করে। তোমাদের অস্তিত্বের প্রকৃতি পরিবর্তন বা তোমাদের জানা নেই, এমন আকৃতিতে তোমাদের সৃষ্টি করা থেকে আমাকে বিরত রাখার শক্তি কারো নেই।’ (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত ৬০-৬১) হে নবী তাহাদের বলো, তোমরা কোথায় পালাইতে চাও, তোমাদের কে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে।
আরো পড়ুন : সালাত বা নামাজ পড়ার সংক্ষিপ্ত নিয়ম
পবিত্র কোরআনে মৃত্যু সম্পর্কে আল্লাহ যা বলেন
দুনিয়াতে মানুষ বিভিন্ন কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে আল্লাহকে ভুলে যায়। দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। আখিরাতের কথা ভুলে যায়,ভুলে যায় মোহাম্মদ (সা.)এর অনুসরণ। প্রিয় নবী মোস্তফা মানুষের জন্য কিছু বাণী দিয়ে গেছেন তা পালন করে না। ভুলে যায় যে তাকে একদিন মরতেই হবে। মুছে ফেলে মৃত্যু নামক চিরন্তন সত্যকে। মৃত্যু হচ্ছে এমন একটি জিনিস যা দেখে মানুষ পালাতেই চাইবে। কিন্তু এখন থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই। মৃত্যু সবাইকে একদিন না একদিন তারা করবেই,সেই দিন পালানোর কোনো রাস্তা থাকবে না। আল্লাহ বলেন, ‘মৃত্যুযন্ত্রণা সত্যিই আসবে। (হে মানুষ!) এটাই সে জিনিস, যা থেকে তুমি পালাতে চাইতে।’ (সুরা : কাফ, আয়াত : ১৯)
মানুষের মরণ কখন আসবে কেউ তা বলতে পারে না। এটির কোনো সময় বা স্থান নেই,যে কোনো সময় যে কোনো জায়গায় এটি আপনার সামনে হাজির হতে পারে। মানুষ জানেনা কার মৃত্যু কোন জমিনে বা কোথায় হবে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘কোনো প্রাণী এটিও জানে না যে কোন জমিনে তার মৃত্যু হবে।’ ( সুরা : লুকমান, আয়াত : ৩৪)। দুনিয়াকে ক্ষণস্থায়ী বলা হয়। দুনিয়া একদিনা ধ্বংস হবেই। আখিরাত হচ্ছে চির স্থায়ী একটি জায়গা যার কোনো ভুল নেই।
আরো পড়ুন : মানুষের ক্ষতি করার ভয়াবহ পরিণতি
হাদিস গ্রন্থে মৃত্যু সম্পর্কে মহানবী (সা.) যা বলেছেন
মানুষ আখিরাতের কথা ভুলে থাকতে খুব আনন্দ ভোগ করে। নবী করিম (সা.) বলেন যে বেক্তি মৃত্যুর কথা চিন্তা করে না তাকে জ্ঞানালোক,বুদ্ধিহীন, বোকা এবং অসতর্ক বলে অভিহিত করেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বর্ণিত একটি বলা হয়, একজন মানুষ রাসূল (সা.)কে বললেন মানুষের মাঝে কে বেশি বুদ্ধিমান? জবাবে বিশ্ব নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)বলেন, ওই বেক্তি বেশি বুদ্ধিমান, যে সব সময় মৃত্যুর কথা বেশি স্মরণ করে এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে, সেই জ্ঞানী,সতর্ক ও প্রকৃত বুদ্ধিমান। ওই বেক্তি দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য বেশি মর্যাদা লাভ করতে পারবে।
বিশ্ব নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)বলেন দুনিয়াতে তুমি এমন ভাবে চলাচল করো যেন তুমি মুসাফির বা একজন পথিক। আরো বলেন সন্ধ্যার হলে যেমন সকালের অপেক্ষায় থাকো, শরীর সুস্থ থাকার জন্য যে ভাবে রোগ প্রতিরোধের প্রস্তুতি নেও। আর জীবদ্দশায় থাকা কালীন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা কর’ (বুখারি)।
দুনিয়া থেকে বিদায় নিলে কবরে যেতেই হবে। এটিকে বলা হয় আখিরাত। দুনিয়াতে যদি ভালো আমল করতে পারেন তাহলে আখিরাতের জীবন হবে সুখের জীবন। আর দুনিয়াতে যদি সৎকর্ম না করতে পারে তাহলে পরকালে ভয়াভয় শাস্তি ভোগ করতে হবে।