নতুন অর্থবছরে সতর্ক আর সংকুলানমূলক নীতি গ্রহণের কথা জানালেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর পরেও সাড়ে ৭ শতাংশ উচ্চ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন তিনি।
করের বোঝা মধ্যবিত্তের ওপরেই বেশি পড়ে। তাই তাঁদের অনেকেই সঞ্চয়ের টাকায় সঞ্চয়পত্র কিনে কর কমানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী নতুন বাজেটে এই সুবিধা কমিয়ে দিয়েছেন, যা উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। কারণ, মধ্যবিত্তরা এবারে বিনিয়োগ নিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়বেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী ।
এখন থেকে কর রেয়াতের জন্য আগের মতো মোট আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যাবে না। আগামী ২০২২–২৩ অর্থবছরের বাজেটে এই বিনিয়োগসীমা কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে করদাতাদের বিনিয়োগের সুবিধা কমল। আর ধনী–গরিবনির্বিশেষে সব করদাতা বিনিয়োগকৃত অর্থের ১৫ শতাংশ হারের সমপরিমাণ কর রেয়াত পাবেন। এটাই এবারের বাজেটের বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের নতুন প্রস্তাব।
করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে কিছুটা স্বস্তিও দিয়েছেন। কিন্তু কর আদায় বাড়াতে এবার আয় নেই এমন ব্যক্তিকেও করের আওতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ব্যক্তি পর্যায়ে রিটার্ন দিলেই তাকে ২ হাজার টাকা কর গুণতে হবে। অন্যদিকে ধনীদের ওপর সারচার্জ শিথিল করা হয়েছে। আগে ৩ কোটি টাকার ওপরে কেউ পরিসম্পদ দেখালে সারচার্জ দিতে হতো। এবার এই সীমা বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:এবার লবণের কেজি ৫০ টাকা করার প্রস্তাব।
উদাহরনঃ ২০২১-২২ অর্থবছরে আপনি ১০ লাখ টাকা উপার্জন করেছেন। বাসাভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসাসহ বেশ কিছু খাতে ছাড় হিসাব করে এটাই ছিল আপনার করযোগ্য আয়। সংসার খরচ ও ঈদের বোনাসের টাকা বাঁচিয়ে আপনি দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। এ ছাড়া আপনার বেতন থেকে প্রতি মাসে হিসাব করে ৫০ হাজার টাকার অফিসের ভবিষ্যৎ তহবিলে বা প্রভিডেন্ট ফান্ডে রেখেছেন। সব মিলিয়ে আপনি আড়াই লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। আপনি যদি সঞ্চয়পত্র না কিনতেন বা প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা না রাখতেন, তাহলে গত বছর আপনার কর হতো ৮০ হাজার টাকা।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১৬ শতাংশ রাজস্ব বাড়ানোর যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেটি বাস্তবায়নে করের আওতা বাড়াতে হবে। যদি না বাড়ে, তাহলে সেই ভার ব্যবসায়ীদের ওপরই পড়বে। তবে এবারের বাজেটে ২৩৪টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক এবং ১৯১টি পণ্যের রেগুলেটরি ডিউটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। এজন্য কিছু সুবিধা আসবে ব্যবসায়ীদের জন্য।
আরও পড়ুন:চলছে সংসদের বাজেট অধিবেশন
বাজেট পাশ হবে ২৬ জুন :২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আগামী ২৬ জুন পাশ হবে। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অধিবেশন ২৬ জুন পর্যন্ত চলার পর ২ জুলাই পর্যন্ত মুলতুবি করা হবে। ২৬ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পাশ হবে। বাজেটের ওপর মোট ৪০ ঘণ্টা আলোচনা হবে। সংসদের বৈঠক প্রতিদিন বিকাল ৫টায় শুরু হবে। প্রতি বছর বাজেট অর্থবছরের শেষ কার্যদিবস ৩০ জুন বা তার আগের দিন (২৯ জুন) পাশ হলেও এবার কোরবানির ঈদের কারণে কিছুটা আগেভাগে পাশ করা হবে।