বিজ্ঞানের ইতিহাস

বিজ্ঞানের ইতিহাস

ভৌত বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডারের নাম বিজ্ঞান। অন্য ভাবে বলা যায় বিজ্ঞান হলো প্রকৃতি সম্পর্কিত জ্ঞান যা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক ঘটনাকে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে। ।ভৌত বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডারের নাম বিজ্ঞান। তবে আরও সহজ করে বোঝার জন্য আমাদের “বিজ্ঞান” শব্দটির অর্থ জানা দরকার।

বিজ্ঞান কি ?

ল্যাটিন শব্দ সায়েনটিয়া (scientia) থেকে ইংরেজি সায়েন্স শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শব্দটির অর্থ বিশেষ জ্ঞান। ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার ফলে কোন বিষয়ে প্রাপ্ত ব্যাপক ও বিশেষ জ্ঞানের সাথে জড়িত ব্যক্তি বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানবিদ কিংবা বৈজ্ঞানিক নামে পরিচিত হয়ে থাকেন। বিজ্ঞান শব্দটি ইংরেজি ‘Science’ শব্দের বাংলা অনুবাদ। Science শব্দটি আবার এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘Scientia’ থেকে, যার অর্থ জ্ঞান। বাংলায় বিজ্ঞান শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় বি+জ্ঞান, যার অর্থ দাঁড়ায় বিশেষ জ্ঞান। অর্থাৎ কোন বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান কে বলা হয় বিজ্ঞান। এবার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে এই “বিশেষ জ্ঞান” আবার কি! আসলে এই “বিশেষ জ্ঞান” ই হল কোন ভৌত বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞান।
অতএব, আমরা শুধুমাত্র যখন কোন বিষয় নিয়ে বিস্তর গবেষণা বা পরীক্ষা করি এবং সেই গবেষণা বা পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ ও যাচাই করে নিয়মতান্ত্রিক বা সুশৃঙ্খল জ্ঞান লাভ করি তখনই তাকে বিজ্ঞান বলে। আবার যারা এই বিশেষ জ্ঞান অর্জন করেন তাদের আমরা বিজ্ঞানী বলি।

আরো দেখুন : স্মার্ট ফেসবুক স্ট্যাটাস ও ক্যাপশন

আমাদের একটি প্রচলিত প্রশ্ন হল, বিজ্ঞান কত প্রকার? আসলে বিজ্ঞানকে এমন ‘প্রকারে’ বিভক্ত করা যায় না। তবে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা রয়েছে। বিজ্ঞানের এ শাখাগুলোকে আবার বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়।

বিজ্ঞানের তিনটি প্রধান শাখা রয়েছে। এগুলো হল-

১। প্রাকৃতিক বিজ্ঞান
২। সামাজিক বিজ্ঞান
৩। সাধারণ বিজ্ঞান

তবে সাধারণ বিজ্ঞান আদৌ বিজ্ঞানের কোন শাখা কি না তা নিয়ে কিছুটা মতভেদ আছে। প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানকে গবেষণামূলক বিজ্ঞানও বলা হয়।

১। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানঃ

প্রাকৃতিক বিজ্ঞান মূলত প্রকৃতির গতিধারার বর্ণনা, ভবিষ্যদ্বাণী এবং ব্যাখ্যার জন্য গবেষণামূলক প্রমাণ নিয়ে কাজ করে। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে এসকল গবেষণা মূলক প্রমাণ প্রস্তুত করা হয়। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়-জীব বিজ্ঞানঃ জীববিজ্ঞান হল প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে জীব ও জীবন সংক্রান্ত গবেষণা করা হয়। জীবের গঠন, বৃদ্ধি, বিবর্তন, শ্রেণীবিন্যাস-বিদ্যার আলোচনা বিজ্ঞানের এই শাখাটির অন্তর্ভুক্ত। জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা রয়েছে। যেমনঃ প্রাণীবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণরসায়ন, আণবিক জীববিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান প্রভৃতি।
ভৌত বিজ্ঞানঃ প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের যে শাখায় বিভিন্ন তত্ত্বীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে ভৌত বিজ্ঞান বলা হয়। তবে এসব তত্ত্বীয় বিষয় সমূহের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গাণিতিক হিসাব নিকাশের সাহায্যে সত্যতা প্রমাণ করা হয়। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের এ শাখাটিকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। তবে মূলত ভৌত বিজ্ঞানকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূবিদ্যা ইত্যাদি প্রধান প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।

২। সামাজিক বিজ্ঞানঃ

সামাজিক বিজ্ঞান বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যা সমাজ এবং সমাজস্থ একক ব্যক্তিকে নিয়ে গবেষণা করে। সামাজিক বিজ্ঞানী গন দার্শনিক তত্ত্বসমূহ ব্যক্তি এবং সমাজ গবেষণার সময় কাজে লাগাতে পারেন। সামাজিক বিজ্ঞানের শাখা বেশ প্রসারিত। এদের মধ্যে নৃবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, যোগাযোগ বিদ্যা, অর্থনীতি, ইতিহাস, মানবীয় ভূগোল, আইন, ভাষাবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, জনস্বাস্থ্য, এবং সমাজবিজ্ঞান উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও সামাজিক বিজ্ঞানের আরও কিছু শাখা রয়েছে।

৩। সাধারণ বিজ্ঞানঃ

বিজ্ঞানের যে শাখায় বিজ্ঞানের আদি মৌলিক বিষয় যেমন যুক্তি, গণিত ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে সাধারণ বিজ্ঞান বলে। সাধারণ বিজ্ঞানের শাখাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল যুক্তি, গণিত, কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং পরিসংখ্যান।ফলিত বিজ্ঞান হল তত্ত্বীয় বিজ্ঞানের একটি প্রয়োগিক দিক। বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে বাস্তবিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে তাকে ফলিত বিজ্ঞান বা প্রয়োগিক বিজ্ঞান বলে। এটি বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যেখানে বিদ্যমান বৈজ্ঞানিক জ্ঞান প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করা হয়। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে মূলত প্রকৃতির বিভিন্ন তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা, পরীক্ষা বা হিসাব নিকাশ সাপেক্ষে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করা হয়। আর এই সকল অর্জিত জ্ঞান যখন বাস্তবিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় তখন তাকে ফলিত বিজ্ঞান বলা হয়। যেমন বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি।

বিজ্ঞান শিক্ষা

বিজ্ঞান শিক্ষা হল অ-বিজ্ঞানীদের যেমন বিদ্যালয়ের শিশু, কলেজ ছাত্র বা সাধারণের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে বিজ্ঞানের পাঠদান এবং শেখানো। অর্থাৎ আমরা যারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে বিজ্ঞান শিখছি তাই বিজ্ঞান শিক্ষা।

ইতিহাস

ব্যাবিলনীয়দের প্লিম্পটন ৩২২ ট্যাবলেটটি পিথাগোরাসীয় ত্রয়ী সংরক্ষণ করে , যা প্রায় ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে লেখা হয়েছিল
আধুনিক যুগের পূর্বে ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক সভ্যতায় বিজ্ঞান ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হত। আধুনিক বিজ্ঞান পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র এবং ফলাফলের মধ্যে সফল তাই বিজ্ঞান বলতে কি বোঝায় তা এখন পরিষ্কার এবং কঠোরভাবে সংজ্ঞায়ীত ।

আরো দেখুন : শুভ সকাল এসএমএস

বিজ্ঞান শব্দটি উৎপত্তিগতভাবে এক ধরনের জ্ঞান বোঝাতো কিন্তু বিজ্ঞান সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন বুঝাতো না । বিশেষ করে, এটি ছিল এক ধরনের জ্ঞান যা মানুষের একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যবহৃত হত। উদাহরণস্বরূপ, প্রাকৃতিক বিষয়গুলির জ্ঞান লিপিবদ্ধ হবার পূর্বেই এগুলো সংগৃহীত হয়েছিল এবং জটিল বিমূর্ত ধারণাগুলির উন্নয়ন ঘটেছিল । এটি ছাপ দেখা যায় জটিল ক্যালেন্ডার নির্মাণ, কৌশল ব্যবহার করে বিষাক্ত উদ্ভিদকে খাবার উপযোগী করে তোলা, জনমানুষের জন্য জাতীয় পর্যায়ে কাজ করা যেমন প্লাবনভূমি থেকে বাধেঁর মাধম্যে জলাধার নির্মান এবং পিরামিডের মতো ভবন তৈরী করা। যাইহোক, এই ধরনের জিনিসগুলির জ্ঞানের মধ্যে কোন সঙ্গতিপূর্ণ বিশিষ্ট পার্থক্য তৈরি করা হয়নি যা প্রতিটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সত্য। সেই সাথে অন্যান্য ধরনের সাম্প্রদায়িক জ্ঞানের মতো বিষয়, যেমন: পৌরাণিক কাহিনী এবং আইনি ব্যবস্থা ইত্যাদির বেলাও তা সত্য।

ধাতুবিদ্যা পূর্বেও জানা ছিল এবং ভিনট্ফাক সংস্কৃতিতে ব্রোঞ্জের মত পদার্থ তৈরির জ্ঞান জানত। মনে করা হয় পূর্বে কোন বস্তু গরম করে গলিয়ে সেটার সাথে অন্যকোন উপাদান, পদার্থ যোগ করে অন্য একটি ধাতু তৈরির যে জ্ঞান সেটাই ধীরে ধীরে “আলকেমি” নামে পরিচিত হয়।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version