আজেকর প্রসজ্ঞ অশ্বগন্ধা গাছের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো। অশ্বগন্ধা একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এই গাছের পাতা সেদ্ধ করলে ঘোড়ার মূত্রের মতো গন্ধ বেরোয় বলে একে অশ্বগন্ধা বলা হয়ে থাকে। অশ্বগন্ধা একটি ছোট আকারের গাছ। এই গাছের বৈজ্ঞানিক নামঃ ‘উইথানিয়া সোমনিফেরা’। তবে আয়ুর্বেদে একে অন্য নামেও বলে হয়। এই অন্য নামটা হলো বলদা ও বাজিকরি বা শীতকালীন চেরি।
এই গাছটি বেশি লম্বা হয় না, দুই-আড়াই হাত উঁচু হয়। তবে এই গাছটির শাখাবহুল। এই গাছের ছোট ছোট মটরের মতো ফল হয়। আয়ুর্বেদিক জগতের মধ্যে একটি জনপ্রিয় ভেষজ উদ্ভিদ হলো অশ্বগন্ধা। তবে অশ্বগন্ধাকে বলা হয় এডাপ্টোজেন যার বাংলা অর্থ হল অশ্বগন্ধা। এই ভেষজ গাছ আমাদের মানসিক চাপ কমাতে অনেকটা সাহায্য করে থাকে।
এই অশ্বগন্ধা বিশেষ করে রক্তে সুগারের পরিমাণ কমায় এবং মস্তিস্কের কার্যকলাপে উন্নতি সাধন করে থাকে। এতে করে দুঃচিন্তা ও হতাশা থেকে বাচাতে সাহায্য করে। তখন স্ট্রেস হওয়ার একে বারে কোন সম্ভ্যবনা থাকে না। দাঁতের সাথে সাদা ভাব এর ক্ষয় রোধেও করে থাকে এই অশ্বগন্ধা, তবে এটি দাতের জন্য দারুণ উপকারী।
এই অশ্বগন্ধা ব্যবহারের জন্য ভাল করে ধুয়ে, শুঁকিয়ে তারপর ভাঙানো হয়। তবে শিকড় হচ্ছে এর ব্যবহার্য অংশ। যদিও এর পাতা সাধারণত আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রে এই ঔষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয় তবুও এর ব্যবহার যে নিরাপদ তা কিন্তু নয়। কোনো রোগের ঔষধে হিসেবে কার্যকর সে ব্যাপারে যথেষ্ট ডাক্তারি তথ্য নেই।
ব্যবহার্য অংশঃ অশ্বগন্ধার পাতা, ফুল, ফল, ছাল, ডাল, মূল সবই কোনো না কোনো ঔষধি হিসেবে ব্যবহার হয়।
অশ্বগন্ধা গাছের উপকারিতা ও ভেষজ গুণাবলি:
এই অশ্বগন্ধা গাছের রস শক্তিবর্ধক। বিশেষ করে পুরুষের শুক্রাণু বাড়াতে বেশ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। এই অশ্বগন্ধার মূল ও পাতা স্নায়ুবিক বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে করে থাকে। শরীরে শক্তি ফিরে পেতে দুধ ও ঘিয়ের সঙ্গে পাতা ফুটিয়ে খেলে শক্তি পাওয়া যায়। কেউ যদি অনিদ্রায় ভুগে থাকেন তাহলে অশ্বগন্ধা উত্তম ঔষুধ হিসাবে কার্যকর হতে পারে। তবে ভালো ঘুমের জন্য অশ্বগন্ধা গুঁড়ো চিনিসহ ঘুমানোর আগে খেলে ভালো ঘুম হয়।
আপনি চাইলে সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পেতে অশ্বগন্ধার মূল গুঁড়ো করে খাওয়া যেতে পারে। অশ্বগন্ধা চোখের ব্যথা দূর করতে বিশেষ উপকারী। তবে ক্রনিক ব্রংকাইটিসের ক্ষেত্রেও অশ্বগন্ধা একটি কার্যকর ঔষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই অশ্বগন্ধার মূল অন্তর্ধুমে আগুনে পুড়িয়ে একধরনের ছোট মাটির হাঁড়িতে মূলগুলো ভরে সরা দিয়ে ঢেকে একই মাটি দিয়ে লেপে শুকিয়ে ঘুটের আগুনে পুড়ে নিতে হয়।
তারপর আগুন নিভে গেলে হাঁড়ি থেকে মূলগুলো বের করে গুঁড়ো করে নিতে হয়। তবে ভালো করে গুঁড়িয়ে নিয়ে আধা গ্রাম মাত্রায় একটু মধুসহ চাটনীর মতো চেটে খেলে ক্রনিক ব্রংকাইটিসে উপকার হয়। এই অশ্বগন্ধা মানুষের মানসিক এবং শারীরিক দুর্বলতা ও মাথা ঝিমঝিম করে ওঠা, অবসাদ প্রভৃতি সমস্যা দূর করে থাকে।
এই গুড়ো নিয়মিত খেলে মনোযোগ বাড়ায়। ক্লান্তি দূর করে সঞ্জীবনী শক্তি পুনরুদ্ধার করে। অশ্বগন্ধার ফল অম্বল-অজীর্ন, পেট ফাঁপা ও পেটের ব্যথা নিরাময় সহ যকৃতের জন্য ভীষণ উপকারী। এটি খেলে আবার হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সেই সাথে কেউ যদি অশোধিত অশ্বগন্ধা পাউডার এবং গুঁড়ো খেলে আবার হজমের গোলমাল সৃষ্টি করতে পারে।
সুতরাং এর ফলে তলপেটে ব্যথা উঠতে পারে। তবে যাদের হজমশক্তি দুর্বল, তাদের অবশ্যই ভালো মানের অশ্বগন্ধা সেবন করতে হবে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের এমন কিছু জরিবুটি আছে যেটাকে হার্বস বলা হয়। তবে এই অশ্বগন্ধা পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা কে বৃদ্ধিতে অনেক রকম ভাবে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে থাকে। তবে অশ্বগন্ধা এক আশ্চর্য ভেষজ উদ্ভিদ বলে বিবেচিত।
এই অশ্বগনশা কে হারবাল বিভাগের লোক জন অন্য নামেও ডাকে তা হল ইন্ডিয়ান জিনসেং। তবে এই জিংসেন টা হল একটা চায়না হার্বস। আর এই জিংসেন টা আমাদের সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে এবং পুরো পৃথিবীতে এটি পরিচিত ও প্রচারিত হয়ে আছে। এই জিংসেন টা পরিপূর্ণভাবে বলপূর্বক এবং পুরুষালী শক্তি বৃদ্ধিকারক একটা হার্বস।
অশ্বগন্ধা গাছকে হারবাল বলা হয়: হারবাল বলা হয় তার কারণ এই অশ্বগন্ধার মূলের মধ্যে থেকে অশ্বের অর্থাৎ ঘোড়ার মতন এক রকমের গন্ধ বের হয়। শুধু এটাই না এই অশ্বগন্ধা ঘোড়ার মত বল/শক্তি সম্পন্ন। আর বল/শক্তি দ্রুততায় কাজ করে এই অশ্বগন্ধা।
আরও পড়তে পারেনঃ এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম:
অশ্বগন্ধার পাউডার বা ট্যাবলেট প্রায় সব বাজারে পাওয়া যায়। তবে এর অনেক সময় এর মূল টাও পাওয়া যায়। বেশির ভাগ বাজারে যে কোন আয়ুর্বেদিক কোম্পানির ট্যাবলেট হিসেবেও পাওয়া যায় আবার এর চূর্ণ হিসাবেও পাওয়া যায়। এই অশ্বগন্ধার চূর্ণ আপনি চাইলে প্রথমে এটি দুধের সাথে ৪-৫ গ্রাম মত পাউডার মিশিয়ে খেতে পারেন।
যেন দুধটা হালকা গরম থাকে এর সঙ্গে কিছুটা মধু মিশিয়েও খেতে পারেন অথবা মিশ্রী মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। ট্যাবলেট এর ক্ষেত্রে রাতের বেলায় একটা করে খেতে হবে। আপনি চাইলে অশ্বগন্ধার যে মূল আছে, সেটাকে চায়ের মতো করে পানির মধ্যে ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে খেতে হবে তবেই বিভিন্ন রগ থেকে উপকারিতা পাওয়া যাবে।
অশ্বগন্ধা ব্যবহারবিধি:
বর্তমান যাদের ব্লাড সুগার আছে অর্থাৎ সুগারের মাত্রাটা অনেকখানি বেশি। এই অশ্বগন্ধা তাদের জন্য খুবই কার্যকরী। এর ফলে রক্তে সুগার মাত্রাটা অনেকখানি কম করে দেয়। বিশেশ করে যাদের সুগারের মাত্রাটা অনেক বেশি। সেই ক্ষেত্রে তারা যদি সুগারের ঔষুধ খায় এবং তার সাথে সাথে যদি বেশি পরিমাণে এই অশ্বগন্ধা খায় তাহলে সুগারের মাত্রা কিছুটা কমে যাবে। তাই ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে একটু সচেতন হতে হবে। এই ওষুধ খুব বেশিদিন খাওয়া উচিত নয়। তবে এক মাসে ১৫ দিন মত খেলে তারপরে অন্ততপক্ষে ৩-৪ মাস খাওয়া যাবে না। এরপর ৩-৪ মাস পর ১৫ দিন মত এই অশ্বগন্ধা আবার খাওয়া যাবে। তবে লাগাতারে এই ঔষধ খেয়ে গেলে কাজ হবে না, রংচ ক্ষতি হওয়ার সম্ভবা টাই বেশি।
অশ্বগন্ধা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে:
এই অশ্বগন্ধা মানুষের ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে থাকে। আবার যারা ভীষণভাবে যারা চিন্তার মধ্যে আছে এবং তারা যদি অশ্বগন্ধা খায়। সেই সব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, বেশ ভালো উপকার হবে। এই অশ্বগন্ধা খাওয়ার বিধি একই রকমই। অশ্বগন্ধার পাউডার কুসুম কুসুম দুধের মধ্যে ৪-৫ গ্রাম মতো দিয়ে খেতে হবে। অথবা হালকা গরম পানির মধ্যে ওই একই পরিমাণ ৩-৪ গ্রাম মিলিয়ে খেতে হবে। যাদের ঘুম কম আসে তাদের জন্য এটা খুবই ভালো রকম কার্যকারিতা দিবে।
আবার যাদের ঘুমের কোন সমস্যা নেই তাদের খাওয়া উচিত নয়। অশ্বগন্ধার সবথেকে বড় যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে সেটি হল– পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে স্পার্মের গুণ বা গুনাগুন এবং পরিমাপ দুটোই বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। এই অশ্বগন্ধা টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রাটা অনেকখানি বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে থাকে। অনেক পুরুষের অতিরিক্ত মাত্রায় স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে এবং স্বপ্নদোষে ভুগছে। অশ্বগন্ধা তাদের ক্ষেত্রে এটা অনেক কমিয়ে দিতে সাহায্য করে থাকে। কেউ যদি এক মাস বা ১৫ দিন মত টানা খায়। তাহলে তার এই ধরনের সমস্যা থেকে সে সহজে মুক্তি পাবে।
অশ্বগন্ধার উপকারিতা বন্ধ্যাত্ব নারীর ক্ষেত্রে:
যে সব নারীদের বন্ধ্যাত্ব তাদের জন্য এই অশ্বগন্ধার উপকারিতা রয়েছে। অশ্বগন্ধা বন্ধ্যাত্ব নারীদের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী একটি ভেষজ উদ্ভিদ। যদি কোন নারী অশ্বগন্ধার কাচা মূলের অংশ ২৫ গ্রাম মত নিয়ে। তার সাথে ৪ কাপ পানি আর ১ কাপ দুধের মধ্যে নিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে। এরপর ফুটানো যখন হবে যখন, এর চার ভাগের এক ভাগ নিয়ে তখন সেটা গাওয়া ঘি এর সাথে মিশিয়ে ঋতু স্নানের পরের দিন থেকে শুরু করে, আবার পুনরায় ঋতুস্রাব শুরু হওয়া আগ পর্যন্ত সেবন করতে হবে।
এই ভাবেখেলে তাহহে উপকারিতা পাওয়া যাবে। তবে এটি শিশুদের ক্ষেত্রে একে বারে খাওয়া যাবে না। অতেব খাওয়া যাবে তবে ওই একই পরিমাণ ৪-৫ গ্রাম খাওয়াতে হবে। কিন্তু যে সব শিশুরা খুবই দুর্বল প্রকৃতির হয়। সুতরাং তাদের ক্ষেত্রে, এটা খুব ভালো কাজ করবে। বিশেষ করে পুরুষদের মাংসপেশি গঠনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এটি আরো কার্যকারিতা রাখে সুস্থ ও ভালো থাকার কাজ করতে সাহায্য করে।
সুতারাং পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অশ্বগন্ধা এত কিছু ভালো হওয়া সত্বেও। এটি কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে যারা গর্ভবতী মহিলা তাদের ক্ষেত্রে এটা একদমই খাওয়া উচিত নয়। তাদের ও খাওয়া উচিত নয়, যাদের বাচ্চা আছে। সে সব মহিলাদেরকে বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়াতে হয়।
তাদের ক্ষেত্রে,এই ঔষধ খাওয়া উচিত নয়। এমন কি যে সব মানুষের কঠিন অসুখে ভুগছেন। অবশ্যই তাদেরকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এই উদ্ভিদ খেতে হবে। এট দেখা যায় অনেক সময় হাইটকে বাড়াতেও সাহায্য করে। সুতরাং এটি খেলে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রাটা বেড়ে যায়। অতএব মাংস উৎপন্ন হওয়ার সাথে সাথে হাইট টাকেও বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু হাইট বাড়ানোর ক্ষেত্রে খাওয়া- দাওয়া সঠিক ভাবে রাখতে হবে। তবে এর সাথে সাথে হালকা ব্যায়ামও করতে হবে।
অশ্বগন্ধার পাতা ওজন কমাতে সাহায্য করে:
এই অশ্বগন্ধা খাওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে। তবে এই অশ্বগন্ধার পাতা সঠিকভাবে চিনে খেতে হবে। তা না হলে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। অজন কমানোর ক্ষেত্রে আপনাকে লাগাতেরে ৩ দিন ৩ টা করে পাতা খেতে হবে। সকালে, দুপুরে এবং রাতের দিকে একটা করে খেতে হবে। অর্থাৎ পর পর সেটা ৩ দিন খেতে হবে। তার সঙ্গে সঙ্গে পরিমিত খাবার খেতে হবে। তাহলে ওজনের ওপর বেশ খানিকটা কাজ করবে।
অশ্বগন্ধার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
এই অশ্বগন্ধার মধ্যে অনেক উপকারিতা থাকলেও তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রয়াও রয়েছে। তাই এই ভেষজ গ্রহনের পূর্বে আপনাকে অবশ্যই রেজিস্ট্রিকৃত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- আপনি যদি নিজের খাদ্যাভ্যাসে সাথে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করতে চান তাহলে অবশ্যই রেজিস্ট্রিকৃত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নতুবা আপনি যে ওষুধ টি ইতিমধ্যেই গ্রহণ করেছেন তার প্রতিক্রিয়ার ওপর এটি প্রভাব ফেলতে পারে।
- এই অশ্বগন্ধার বিশেষ উপকারিতা থাকলেও এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও আছে। তাই এই ভেষজ গ্রহণের পুর্বে আপনার চিকিৎসকের সাথে অবশ্যই পরামর্শ করতে হবে। নতুবা এর ক্ষতির সম্মুক্ষী হতে হবে।
- এই অশ্বগন্ধা গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার সেবন করা নিরাপদ নয়। এই অশ্বগন্ধার ডোজ বহুসময় দেখা গিয়েছে, পশুপাখিদের বেশি মাত্রার ডোজ দেওয়ার ফলে গর্ভপাত অথবা নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রসব হয়ে থাকে।
- এই অশ্বগন্ধা মানুষের শরীরের রক্ত পাতলা করে। কিন্তু এটি একটি অ্যান্টিকোঅ্যাগুলেন্ট, এর ফলে আপনার শরীরে যদি অস্ত্রোপচারের কথা থাকে বা আপনার শরীরে সাম্প্রতিককালে অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে তাহলে এটি ব্যবহার করা যাবে না। ব্যবহার করলে অতি মাত্রায় ক্ষতি হতে পারে।
- এই অশ্বগন্ধা খেলে ঘুম ঘুম ভাব আসতে পারে। কারন এর মধ্যে সামান্য ঘুমের ওষুধের কার্যকারিতা থাকে। তাই এটি বেশি মাত্রায় খাওয়া যাবে না।
অশ্বগন্ধার গাছ চেনার উপায়:
এই অশ্বগন্ধার পাতা দু ধরনের হয়। জঙ্গলী আর সাধারণ অশ্বগন্ধা। জংলি অশ্বগন্ধার পাতাটা একটু মোটা ধরনের হয়। আর সাধারন অশ্বগন্ধার পাতাটা পাতলা ও নরম হয়। অশ্বগন্ধার দেখতে সাধারণত এর ফল লাল চেরির মতো হয়ে থাকে। বিশেষ করে এই অশ্বগন্ধা পাতা চিনে নিয়ে অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। তাহলে উপকৃত পাওয়া যাবে।
অশ্বগন্ধা গাছ কোথায় পাওয়া যায়ঃ
অশ্বগন্ধা ভারতের শুষ্ক অঞ্চলের অনেক স্থানে চাষ করা হয়। এটি নেপাল, চীন এবং ইয়েমেনে পাওয়া যায়। সূর্যালোক ও আংশিক ছায়া জায়গায় শুষ্ক পাথুরে মাটিতে এর উৎপাদন ভালো হয়। বসন্তকালে এর উৎপাদন সবথেকে ভাল হয়।
অশ্বগন্ধার চাষ পদ্ধতি:
এই ভেষজ গাছের চাহিদা অনেক বেশি, তাই যাঁরা এই ভেষজ গাছের চাষ করতে চান। তাঁরা এই বর্ষায় অশ্বগন্ধার চাষ করতে পারেন। কেননা এই ভেষজের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে এই গুণসমৃদ্ধ অশ্বগন্ধার। এই অশ্বগন্ধার চাহিদা শুধু এ দেশেই নয়। এর চাহিদা বিদেশেও রমরমা বাজার রয়েছে। রপ্তানীও হচ্ছে এই ভেষজ গাছ। এই গাছ বার্ধক্য নিরসন করে, হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি, আয়ুর্বেদ, সবেতে কাজ করে অশ্বগন্ধা। এই গাছের শিকড় থেকে সমস্ত কিছুই ভেষজ গুণ ভরা। এক বিঘা জমিতে প্রায় সাড়ে চোদ্দ হাজার অশ্বগন্ধার চারা লাগানো যেতে পারে। এর জন্য খরচও খুব একটা বেশি নয়। এই অশ্বগন্ধার প্রতিটি চারার দাম মাত্র তিন টাকা করে। তবে এর বীজ থেকে চারা তৈরি করতে চাইলে, আপনি ৩০০ গ্রাম বীজ রোপণ করেই এক বিঘায় অশ্বগন্ধা চাষ হয়ে যাবে। আর এই অশ্বগ্ধা চাষ করার ৮ মাস পর থেকেই পাওয়া যায় অশ্বগন্ধার বিভিন্ন ভেষজগুণ।
মাটি ও জলবায়ু:
বেলে, বেলে-দোআঁশ বা লাল দোআঁশ মাটিতে অশ্বগন্ধার চাষ ভালো হয়। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল চাষের পক্ষে খুব। জমির জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত হওয়া দরকার। কারণ গাছের গোড়ায় জল দাঁড়ালেই গাছ মরে যাবে।
বংশবিস্তার: অশ্বগন্ধা বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার হয়।
চারা তৈরি:
বীজ থেকে চারা তৈরি করা হয়। পাকা ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করার পর ভালোভাবে রোদে শুকানো করে নেওয়া উচিত।সাধারণত চৈত্র বৈশাখ মাসের মধ্যেই উত্তমরূপে বীজতলা বানিয়ে ফেলতে হবে। ভালোভাবে পচানো গোবর সার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে বীজতলা তৈরি করা উচিত। বীজতলায় বীজ বোনার পর গুঁরো মাটির হালকা আস্তরন বীজের উপর ছড়িয়ে দিতে হবে। ৮ থেকে ৯ দিনের মধ্যেই বীজ অঙ্কুরিত হয়ে যায়। ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই চারা মূল জমিতে লাগানোর উপযুক্ত হয়। সরাসরি মূল জমিতে বীজ ছড়িয়ে দিয়েও এর চাষ করা যায়। সে ক্ষেত্রে শ্রাবণ ভাদ্র মাসে বীজ বপন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
হেক্টর প্রতি বীজের হার:
মূল জমিতে সরাসরি বীজ বুললে হেক্টর প্রতি ৭.৫ -১০ কেজি প্রয়োজন হয়। আবার বীজতলায় চারা তৈরি করার পর মূল জমিতে রোপণ করতে হলে হেক্টর প্রতি ৩ -৩.৫ কেজি বীজ এর প্রয়োজন হয়।
বীজ শোধন পদ্ধতি:
অশ্বগন্ধার বীজ বোনার আগে অবশ্যই ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ৪ গ্রাম/কেজি অথাবা ডাবলু পি ২.৫ গ্রাম/কেজি হারে বীজের সঙ্গে মিশিয়ে শোধন করে নিতে হবে। তাহলে বীজের আর কোন সমস্যা হবে না।
চারা রোপণের পদ্ধতি:
যেই জমিতে চারা রোপণ করবেন, তবে সেই জমি তিন থেকে চার বার নাঙ্গল দিয়ে চাষ করে ঝুরঝুরে করতে হবে। অশ্বগন্ধা চারা রোপনের আগে হেক্টর প্রতি ৪০ থেকে ৫০ কুইন্টাল পচা জৈব সার প্রয়োগ করা একান্ত জরুরি। ২৫ থেকে ৩০ দিন বয়সের চারা সারিবদ্ধ ভাবে বসাতে হবে। চারা থেকে চারার দূরত্ব রাখতে হবে ৩০ সেন্টিমিটার এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪৫ সেন্টিমিটার রাখা উচিত। অশ্বগন্ধা বর্ষার মাঝামাঝি না লাগিয়ে বর্ষার শেষে লাগালে শুষ্ক আবহাওয়ায় এই গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং ফলনও অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়। তবে অশ্বগন্ধা সারা বছর জুড়েই চাষ করা যায়।
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা:
মাটির জো বুঝে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণত ১৫ দিন অন্তর মোট চার থেকে পাঁচবার সেচ দেওয়া দরকার। জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। প্রয়োজনে রোগ পোকার হাত থেকে বাঁচতে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বুলবুল পাখির একটি উপাদেয় খাদ্য হলো অশ্বগন্ধার বীজ সেই জন্য পাখির নষ্ট না করতে পারে সেদিকেও খেয়াল রাখা কর্তব্য।
ফসল তোলা
চারা লাগানোর ৫ থেকে ৬ মাসের মাথায় মূল সংগ্রহ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। গাছের ফল যখন হলুদভ- লালচে বর্ণ ধারণ করে এবং গাছের নিচের দিকের পাতা শুকিয়ে আসে, তখনই হল মূল সংগ্রহ করার উপযুক্ত সময়। এই সময় মূল এর ঔষধি গুণ পূর্ণমাত্রায় থাকে। সাধারণত পৌষের মাঝামাঝি থেকে চৈত্রের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে মূল সংগ্রহ করা উচিত। সেজন্য এমন ভাবে চারা গুলো লাগাতে হবে যাতে সঠিক সময়ের মধ্যে মূল সংগ্রহ করা যায়।
ফলন:
এক হেক্টর জমি থেকে ৮ থেকে ১০ কুইন্টাল কাঁচা মূল পাওয়া যায়। শুকনো করলে এই মূল তিন থেকে চার কুইন্টালে এসে পৌঁছায়।
এছাড়া একই সঙ্গে হেক্টর প্রতি ৬০ থেকে ৭০ কেজি বীজ পাওয়া যায়। প্রতি কেজি পরিষ্কার ও শুকনো ফুলের বাজার দর প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। উল্লেখিত শুকনো মূল বিক্রি করে প্রায় ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। হেক্টর প্রতি চাষ খরচ আনুমানিক ১০০০০ টাকা। সুতরাং এক হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করে প্রতি বছরে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা মতো লাভ করা যেতে পারে। আবার এর বীজ বিক্রি করেও কিছু অতিরিক্ত টাকা আয় করা যায়।
প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ:
সংগৃহীত মূল থেকে ১০-১৫ সেন্টিমিটারের টুকরো কেটে নিয়ে সূর্যালোকে শুকনো করে নিতে হবে। শুকনোমূল চটের ব্যাগে ভরে ঠান্ডা শুষ্ক ঘরে অন্যান্য ভেষজ উদ্ভিদের মত নিয়মে সংরক্ষণ করতে হবে।
ব্যবহার্য অংশ: পাতা, ফল এবং বীজ ব্যবহার করা হয়। প্রধানত এর শিকড় ব্যবহার করা হয়।
ব্যবহার: অশ্বগন্ধার মূল স্নায়ু দুর্বলতা, সর্দি-কাশি, বাতের রোগ এবং হাত পা ফোলায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কামোদ্দীপক হিসাবে এর ব্যবহার হয়। এই গাছের ফল হাঁপানির উপশমে এবং বীজ অর্শের ব্যাথা সারাতে ব্যবহৃত হয়।
- বিশেষ দ্রষ্টব্য: উপরোক্ত রোগের বিষয় যে সমস্ত ভেষজ উদ্ভিদের দ্বারা রোগ নিরাময়ের বিষয় বলা হল সেগুলি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই কোন আয়ুর্বেদিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। রোগ নিরাময় পদ্ধতি গুলি যদি আপনি ব্যবহার করতে চান সেটি সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার, এর জন্য রংপু মিডিয়া ওয়েবসাইট কোন ভাবেই দায়ী থাকবে না।
আরও পড়তে পারেনঃ এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিত