আদা (Ginger) একটি ভেষজ ঔষধ। আদার ভেষজ উপকারিতা অনেক। আমিষ ২·৩%, শ্বেতসার ১২·৩% , আঁশ ২·৪% , খনিজ পদার্থ, ১·২% পানি ৮০·৮% ইত্যাদি উপাদান বিদ্যমান। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা-জ্বরের পাশাপাশি নানান রোগ দেখা দেয়। আদায় রয়েছে ঔষধিগুণ যা মৌসুমি রোগ প্রতিরোধে কাজ করে।
আদা মসলা হিসেবে ব্যবহূত Zingiberaceae গোত্রের সুগন্ধি ঔষধিb Zingier officinale। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় এক প্রজাতি। রাইজোম (rhizome) বাইরের দিকে হলুদাভ, ভেতরে হালকা সবুজ-হলুদ। বড় বড় বিন্যস্ত পাতার অনেকগুলি চওড়া বৃন্তে গঠিত ভুয়োকান্ড উপরে ১৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা। আদায় রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট, যা শরীরের রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে। সর্দি, কাশি, আমাশয়, জন্ডিস, পেট ফাঁপায় আদা চিবিয়ে বা রস করে খাওয়া হয়। মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
আদার ভেষজ উপকারিতা:
রান্না করার চেয়ে কাঁচা আদার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। মাইগ্রেনের ব্যথা ও ডায়াবেটিস জনিত কিডনির জটিলতা দূর করতে সহায়তা করে অদা। আসুন জেনে নেই আদার ভেষজ উপকারিতা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে (Controlling diabetes):-
এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আদা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদেরও। ১ কাপ আদার রস খালি পেটের গ্লুকোজ লেভেলও নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে অদা মারাত্বক ভাবে কাজ করে।
বমি ভাব দূর করে (Get rid of Nausea):- বমি বমি ভাব দূর করতে এর ভূমিকা অপরিহার্য। তাই বমি বমি ভাব হলে কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে পারেন। এতে মুখের স্বাদ বৃদ্ধি পায়।
আরথ্রাইটিসের ব্যথা কমায় (Reduces the pain of arthritis):- অসটিও আর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস-এই অসুখগুলোয় সারা শরীরের প্রায় প্রতিটি হাড়ের জয়েন্টে প্রচুর ব্যথা হয়। এই ব্যথা দূর করে আদা। তবে রান্না করার চেয়ে কাঁচা আদার পুষ্টিগুণ বেশি।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে (Fighting Cancer) :- একটি আদায় বিভিন্ন ধরণের বায়োএকটিভ ফেনোলিক্স এবং নন ভোলাটাইল পাঞ্জেন্ট উপাদান থাকে যেমন- প্যারাডলস, জিঞ্জেরলস, শোগায়োল এবং জিঞ্জেরোনেস থাকে। একটি গবেষণায় জানা যায়, আদার রসে ক্যান্সারনাশক উপাদান বিদ্যমান। ক্যান্সার থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে কাজ করে আদার রস।
হাঁপানি কাশি বন্ধ করুন (Stop Asthmatic Cough) :- কাশি এবং হাঁপানির জন্য আদার রসের সাথে মধু মিশিয়ে সেবন করলে বেশ উপশম হয়।
জ্বর, ঠাণ্ডায় আদা উপকারী (Fever, Cold and Ginger Beneficial):- ঠান্ডায় আদা ভীষণ উপকারী। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট, যা ঠান্ডায় টনসিলাইটিস, মাথাব্যথা, টাইফয়েড জ্বর, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ হওয়া, বসন্তকে দূরে ঠেলে দেয় আদা। ওভারির ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আদা।
দ্রুত মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি (Get Rid of A Headache Quickly):- আদা। গর্ভবতী মায়েদের সকালবেলা, বিশেষ করে গর্ভধারণের প্রথম দিকে সকালবেলা শরীর খারাপ লাগে। কাঁচা আদা দূর করবে এ সমস্যা।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি (Increase immunity) :- দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আদার রস দাঁতের মাড়িকে শক্ত করে, দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা জীবাণুকে ধ্বংস করে।
ক্ষতস্থান দূর করে (Removes wounds) :- দেহের কোথাও ক্ষতস্থান থাকলে তা দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে আদা। এতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি এজেন্ট, যা যেকোনো কাটাছেঁড়া, ক্ষতস্থান দ্রুত ভালো করে।
হজম বাড়ায় (Boosts digestion) :- রক্তের অনুচক্রিকা এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম ঠিক রাখতেও আদা দারুণ কার্যকর। মুখের রুচি বাড়াতে ও বদহজম রোধে আদা শুকিয়ে খেলে বাড়বে হজম শক্তি।
পানিবাহিত রোগ (Water-borne Diseases):- আমাশয়, জন্ডিস, পেট ফাঁপা রোধে আদা চিবিয়ে বা রস করে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া যারা গলার চর্চা করেন তাদের গলা পরিষ্কার রাখার জন্য আদা খুবই উপকারী।
ব্যায়ামের পর শরীর ব্যথা দূর:- জিম করার পর সবসময় শরীর ব্যথা হয়। কিন্তু আদা খাওয়া শুরু করলে ৩-৪ দিন পর শরীরের ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে। আর কোনো ব্যথা দূর করার ওষুধও খাওয়া যাবে না।
মেদ কমায় (Reduces Fat):- অতিরিক্ত ওজন কমাতে আদা সাহায্য করবে। নিয়মিত আদায় খেলে কয়েক দিনেই মেদ কমানো যায়।
প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি (Increased Fertility):- কাঁচা আদার সাথে আধা সেদ্ধ ডিম খাওয়ার অভ্যাস পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায় এবং স্পার্ম কাউন্ট বৃদ্ধি করে। পুরুষকে শক্তিশালী করে।
এছাড়াও নিয়মিত অদা খেলে বয়সের ছাপ দূর করার করা যায়, স্মৃতি শক্তি বৃদ্বি পায়, শরীর শীতল করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে আরও নানা প্রভিতি রোগসমূহ দূর করে।
অদা খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা –
অদা অনেক উপকারী হলেও খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা জানা আবশ্যক। মনে রাখবেন, কোনো কিছুর অতিরিক্ত ভালো না। নিম্নে অদা খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা আলোচনা করা হলো।
সতর্কতা –
- গলস্টোনের সমস্যা থাকলে কত পরিমাণ আদা খাবেন, ডাক্তারের থেকে জেনে নিন।
- গর্ভাবস্থায় সারা দিনে ২৫০ গ্রামের বেশি আদা খাবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া বাঞ্ছনীয়।
আদা খাওয়ার নিয়ম –
- কাঁচা আদায় সামান্য পানি দিয়ে থেতলে নিন। আদার রস ও আদা গরম পানিতে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। চা বানানোর জন্যে এই পানি ব্যবহার করুন।
- সারা দিনে ৫০ গ্রাম আদা খেতে পারেন। পাউডারড জিঞ্জার আধা চামচ করে দিনে ৩ বার খেতে পারেন। আদা সরু লম্বা করে চিকন করে কেটে নিন। সামান্য লবণ, গোলমরিচ মেশান।
- আদা ছিলে , সামান্য লেবুর রস মেশান। হজমে এই মিশ্রণ খুব ভালো কাজ করে।
- হজমে সাহায্য করার জন্যে আদা দিয়ে সিরাপ বানিয়ে নিন। জিরে গুঁড়ো, বিট নুন, আদার রস, লেবুর রস, ঠাণ্ডা জল একসাথে মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন। তৈরি আদার সিরাপ। দুপুরে বা রাতের খাবারের পরে এই সিরাট খেতে পারেন।
- আদার টুকরো, লবণ, মরিচ দিয়ে কিছু দিন রাখুন। খাওয়ার সময় আচার হিসেবে খেতে পারেন।
- পানি ফুটিয়ে নিন। এবারে দুধ, মসলা, আদার রস, চা পাতা দিয়ে আরো একবার ফুটিয়ে নিন। কাপে চিনি দিয়ে পরিবেশন করুন। ওপরে সামান্য এলাচগুঁড়ো ছড়িয়ে দিতে পারেন।