চিনে একদফা ধ্বংস যোগ্য চালিয়ে গেছে করোনা ভাইরাস। ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স এর মতো উন্নত দেশগুলোতে পরিণত করেছে শসানে। আমেরিকাতে চলছে মৃত্যুর মিছিল। সেখানে নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৮০ হাজারেরও বেশি। অথচো এশিয়ার একটা দেশে করোনা ভাইরাস (COVID-19) হানা দিলেও ডালপালা মেলতে পারেনি করোনা ভাইরাস। করোনার ভয়াল ডানা কেটে দেওয়ার দেশটির নাম ভিয়েতনাম। প্রায় ২৯০ জন মানুষ কোরোনায় আক্রান্ত হলেও মারা যায়নি sএকজনও । জিরো মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে করণের বিরুদ্ধে লড়াই অবিশ্বাস এক অনুপ্রেরণার গল্প লিখেছে ভিয়েতনাম। কিন্তু কিভাবে সম্ভব হলো করোনাকে হারিয়ে দেওয়া। চলুন সেই গল্পটা শুনা যাক।
ফেইসবুক আর ইউটুবে হাজারটা মানুষের মৃত্যুর খবর ছাপিয়ে আজ আপনাদের শুনাবো ভিয়েতনামের ( Real Story) সত্যিকারের গল্প। যে গল্প হার মানাবে রুপকথাকেও। ভিয়েতনামে করোনা রোগী ধরাপড়ে ছিলো ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রথম রোগীটি পজেটিভ হওয়ার কিছুদিন আগে চীন থেকে এসেছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে রোগীর সংখ্যা ছিল ১৬ জন। কিন্তু বিপথটা আসলো মার্চের ২ তারিখে। ভিয়েতনামের এক প্রভাবশালী নারী ব্যাবসায়ী ইউরোপের তিনটি দেশ ঘুরে লন্ডন থেকে ফিরলেন জ্বর নিয়ে। সঙ্গে নিয়ে এলেন ভাইরাসও। হ্যানওয়েন বিমানবন্ধরের দায়িত্বরত কর্মচারীদের পরীক্ষা ফাঁকি দিয়ে ওই মহিলা ঢুকে পড়লেন দেশে। বিমানবন্দরের ফাকিদিলেও ঐদেশের পুলিশ তাকে ঠিকি গ্রেপ্তার করলো। এরপর হাসপাতাল থেকে জানা গেলো তিনি করোনায় আক্রান্ত। ভিয়েতনামের পুলিশ এবং স্বাস্থমন্ত্রী সাথে সাথে উদ্যোগী হল।
সেই নারীর সাথে প্রায় আরো ৩০০ যাত্রী এসেছিলেন। বোডিং লিস্ট দেখে সবাইকে খুঁজে বের করা হলো। নেওয়া হলো বাধ্যতামূলক ভাবে করোনটাইনে। দেশে ফেরার পরে ওই নারী যার যার সঙ্গে দেখা করেছেন, যাদের সংস্পর্শে এসেছেন সবাইকে ট্রেস করলো পুলিশ। ১৪ দিনের জন্য আলাদা করে রাখা হলো তাদের। ভিয়েতনামের করোনা রোগীর সংখ্যা ৩০০ এর কাছাকাছি। এদের বেশিরভাগই ওই বিমানের যাত্রী বা ওই নারীর সগস্পর্শে আশা লোকজন। এর বাহিরে করোনা ভাইরাসকে খুব একটা ছড়াতে দেয়নি ভিয়েতনাম সরকার। করোনা ধরার সাথে সাথে বন্ধ করে দেশকে লকডাউন করেদিয়েছে সেদেশের সরকার।
ভিয়েতনামের মানুষও সেদেশের লকডাউন মেনে চলছে। অযথা ভিড় জমায়নি কোথাও , বের হয়নি বাড়ি থেকে। সবচে অবাক করা কথা হচ্ছে ২৯০ জন আক্রান্ত হলেও একজনও মারাযায়নি এখনো। এমনকি করোনায় আক্রান্ত ৮৮ বছরের বৃদ্ধাও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ভিয়েতনামে। এটার কৃতিত্ব দিতে হবে দেশের সরকার ও সাস্থ মন্ত্রলায়কে। প্রতিবছর সাস্থ খাতে বরাদ্ধ থাকে ভিয়েতনামে। অংকটা মোটেও কম নয়। চিকিৎসার আধুনিকায়ন করার বেপারে আপোষ করেন না ভিয়েতনাম।
আরও পড়ুন : করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক উপায়
করোনার সুফল পাচ্ছে হাতে নাতে দেশটি। প্রতিটি জেলায় জেলায় উন্নতমানের হাসপাতাল আর চিকিৎসক আছে। রোগীদের জন্য টেস্টিং কীট , আইসিইউ বা ডাক্তারদের জন্য পিপিআই কোনো কিছুরই অভাবনেই সেদেশে। অথচো কয়েক দশক আগে ভিয়েতনাম ছিল এশিয়ার গরিব দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। অর্থনিতির অবস্থাও ছিল বিপর্যস্ত। মানুষ জন খুব একটা শিক্ষিত ছিল না। আমেরিকার সাথে ভিয়েতনামের যুদ্ধের কথা সবাই জানেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধে জয় হয়েছিল ঠিকি কিন্তু অর্থনীতিতে ভেঙে পড়েছিল দেশটি। বর্তমান ভিয়েতনাম এশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকে উদয়মান শক্তি।
প্রশাক শিল্প থেকে শুরু করে আইটি টেকনোলজিতে জোয়ার এনেছে তারা। অনেক নামজাদা ইলেক্ট্রনিক কারখানা স্থাপন করেছে ভিয়েতনামে। কারিগরদের ভীষণ সুনাম এখানকার। এছাড়াও ভিয়েতনামের কফিও বিখ্যাত। ইন্দোনেশিয়ার পর বিশ্বের সবচে বেশি কপি রপ্তানি হয়। কাজুবাদাম , ধান আর কালো মরিচ রপ্তানি করে দেশটি অনেক টাকা কমায়। সেই সাথে রয়েছে খনিজ তেলের ভান্ডারও। টুরিজমেও দেশটি নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক আসে সেদেশে বেড়াতে। রাজধানীতে সাড়া বছর লেগে থাকে পর্যটকের ভিড়। জনপ্রিয় সব টুরিস্ট স্পোর্টকে ডেলে সাজিয়েছে ভিয়েতনাম। পর্যটকের জন্য শতভাগ নিরাপদ করে রেখেছে দেশটি।
আরও পড়ুন : কোভিড-১৯ পরবর্তী পৃথিবী কেমন হবে
ভিয়েতনামের একটা বেপার খুব অদ্ভুদ। এখানকার বেশিরভাগ লোকই কোনো ধর্ম পালন করে না। আরেকটা মজার বেপার হচ্ছে সেদেশের বেশিরভাগ মানুষ তাদের নামের সাথে গুয়েন পধবিটা বেবহার করা হয়। বাংলাদেশে যেমন , চৌধুরী আছে, খান আছে, মন্ডল আছে , আহমদ বা ভূঁইয়া আছে সেরকম ভিয়েতনামে শুধু গুয়েন পাবেন সেখানে। ভিয়েতনামের খাবারের অভ্যাস খানিকটা চীনাদের মতো। এখানে কুকুর আর বিড়ালের বড়ো বড়ো বাজার রয়েছে। কুকুরের মাংস (Dog meat) কিছু জায়গায় খুব জনপ্রিয় খাবার। স্টিট ফুড হিসেবে লুডুস খুবই জনপ্রিয়। তবে লুডুচের উপরে জেন্ত শোঁয়াপোকা ভেসে বেড়ালে একটুও অবাক হবেন না কিন্তু।
ভিয়েতনাম হয়তো চীন, জাপান বা কোরিয়ার মতো উন্নত নয়। এতো টাকা পয়সা বা প্রযুক্তিও নেই তাদের কাছে। যথা সময় সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে করোনা ভাইরাসকে (Coronavirus Disease) ঠেকিয়ে দিয়েছে। ধীরে ধীরে অনেক বছর ধরে তাদের সাস্থ বেবস্থাকে সেভাবে গড়ে তুলেছে। যার কারণে একজন মানুষকেও তারা মরতে দেয়নি করোনায় আক্রান্ত হয়ে। লকডাউনের কারণে বিমানবন্দর বন্ধ থাকার কারণে তাদের আগামী দুই মাসে ৬/৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হারাবে। কিন্তু তারা টাকার দিকে না তাকিয়ে ভাবছে দেশের মানুষের নিরাপদে থাকার কথা। এজন্য কেও মারা না গেলেও লকডাউন তুলে নিচ্ছেন সরকার করণে সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে লকডাউন তুলে নিবে। করণের বিরুদ্ধে মানব জাতির এই অসম যুদ্ধে ভিয়েতনাম এক অনুপ্রেণার নাম হয়ে আছে এখনও পর্যন্ত।
এই পোস্টি সম্পর্কে কাছে একটি কমেন্ট আশা করি। পজেটিভ এই সংবাদটি শেয়ার করে আপনার প্রিয়জনদের অনুপ্রাণিত করবেন। সবাই করোনাভাইরাস থেকে সতর্কতা থাকুন, নিরাপদ থাকু , নিরাপদ জীবন গড়ুন। ভালো থাকুক বাংলাদেশ।