নিম এমন একটি ঔষধি গাছ যার ডাল, পাতা, রস সবই কাজে লাগে। যার বৈজ্ঞানিক নাম – AZADIRACHTA INDICA এটি আর্য়োবেদিক ঔষধি গাছ হিসেবে পরিচিত। নিম একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ বৃক্ষ। ভেষজ চিকিৎসায় নিম পাতার বহুল ব্যবহার।
নিমপাতা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে পারে। দেহের চামড়ার ইনফেকশন রোধে ও ব্রণ, চুলকানি ও এলার্জি রোধের ক্ষেত্রে নিমপাতা অনেক উপকারি। এছাড়া শরীরের ব্যাথা, কান ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, কেঁটে গেলে, পুড়ে গেলে, মচকানো, জ্বর কমাতে নিমপাতা ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। নিম গাছের ডাল, পাতা, রস, ফুল, ফল, তেল, বাকল, শিকড় সবই কাজে লাগে। জেনে নেই নিমপাতার অসাধারণ গুনাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে।
নিমপাতার ভেষজ গুনাগুন ও ব্যবহার :
নিমপাতার ভেষজ গুনাগুন, উপকারিতা জানার আপনার ইচ্ছেকে অভিনন্দন। আদিকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। ভেষজ গাছের মধ্যে নিমগাছ একটি অন্যতম। এটি আমাদের দেহ ও মনকে সুস্থ রাখে। নিম্নে বিষদ ভাবে বর্ণনা করা হলো : –
কফজনিত বুকের ব্যথা: আমাদের অনেক সময় বুকে কফ জমে বুক ব্যথা হয়। এ সময় ৩০ ফোটা নিম পাতার রস সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে ৩/৪ বার খেতে হবে। এতে বুকের ব্যথা কমে যাবে। সতর্কতাঃ গর্ভবতী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এই ঔষধটি নিষেধ।
এইডস (HIV/AIDS): নিম গাছের বাকল হতে আহরিত রস এইডস ভাইরাসকে মারতে সক্ষম। নিম পাতার রস অথবা পুরু পাতা অথবা নিম পাতার চা পান করলে এইডস রোগের কোনো ঝুঁকি থাকে না। নিম গাছের বাকল হতে আহরিত নির্যাস এইডস ভাইরাসকে মারতে সক্ষম। নিম পাতার নির্যাস অথবা পুরু পাতা অথবা নিম পাতার চা পান করলে এইডস উপশম হয়।
উকুন নাশ (Lice removal): বেশির ক্ষেত্রে মেয়েদের মাথায় উকুন হয়। আর উকুন হলে অনেক ক্ষেত্রে মাথায় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। নিমের পাতা বেটে হালকা করে মাথায় লাগিয়ে ১ ঘন্টা পরে মাথা ধুয়ে ফেললে ২/৩ দিনের মধ্যে উকুন মরে যাবে। অথবা নিমের ফুল বেটে মাথায় মাখলে উকুন মরে যায়।
ব্রণ তাড়ায় (Acne removal): নিমপাতা ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া বিরোধী। ত্বকের সুরক্ষায় নিমপাতার জুড়ি নেই। ব্রণের সংক্রমণ হলেই নিম পাতা গুঁড়ো করে পেস্ট বানিয়ে ব্রণে লাগিয়ে দিন। এতে ভালো ফল নিশ্চিত। নিম পাতা পেষ্ট করে মধুর সাথে মিশিয়ে প্রলেপ দিলে ব্রণ সেরে যায়। যতদিন ব্রণ না শুকোচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এভাবে লাগিয়ে যান। মুখের যেকোনো ধরনের ফুসকুড়ি, ডার্ক স্পট এবং দীর্ঘমেয়াদি ঘা দূর করে নিম।
কৃমি (Worms): পেটে কৃমি হলে শিশুরা রোগা হয়ে যায়। পেট বড় হয়। চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। এই জন্য ৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ নিম গাছের মূলের ছালের গুঁড়ো দিনে ৩ বার সামান্য গরম পানিসহ খেতে হবে।
অজীর্ণ (Indecent): অনেকদিন ধরে পেটের অসুখ, পাতলা পায়খানা হলে ৩০ ফোঁটা নিম পাতার রস অর্ধেক কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে সকাল-বিকাল খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়।
খোস পাচড়া (Pacara itch): নিম পাতা সিদ্ধ করে পানি দিয়ে গোসল করলে খোসপাচড়া চলে যায়। পাতা বা ফুল বেটে গায়ে কয়েকদিন লাগালে চুলকানি ভালো হয়।
বহুমূত্র রোগ (Diabetes): প্রতিদিন ১ টেবিল চামচ নিম পতার রস সকালে খালি পেটে ৩ মাস খেলে ডায়বেটিস থেকে মুক্তি হয়। প্রতিদিন সকালে ১০টি নিম পাতা গুড়া বা চিবিয়ে সেবন করলে ডায়বেটিস ভাল হয়। নিম পাতার রস খেলে ৩০-৭০% ইনসুলিন নেয়ার প্রবণতা কমে যায়।
বসন্ত (Spring Disease): বসন্ত রোগ প্রায় সকলের একবার না একবার হয়ে থাকে। কিছু নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের সাথে বেটে বসন্তের গুটিতে দিলে গুটি দ্রুত শুকিয়ে যায়।
রাতকানা (Night Blindness): নিমপাতা রাতকানা রোগ দূর করতে বেশ উপকার করে। নিম ফুল ভাজা খেলে রাতকানা উপশম হয়।
পোকা-মাকড়ের কামড় (Insect bites): পোকা মাকড় কামড়ালে বা হুল ফোটালে নিমের মূলের ছাল বা পাতা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে ব্যথা উপশম হয়।
দাঁতের রোগ (Dental Disease): নিমের পাতা ও ছালের গুঁড়ো কিংম্বা নিমের ছাল দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে দাঁত মজবুত হয়।
জন্ম নিয়ন্ত্রণে নিম (In neem birth control): নিম তেল একটি শক্তিশালী শুক্রাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, নিম তেল মহিলাদের জন্য নতুন ধরনের কার্যকরী গর্ভনিরোধক হতে পারে। এটি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই শুক্রানু মেরে ফেলতে সক্ষম।
ব্লাড সুগার (Blood sugar): ব্লাড সুগারের রোজ সকালে খালি পেটে ১৫ থেকে ২০ টি নিম পাতা চিবিয়ে খেলে উপকার হয়। চিবিয়ে খেতে অসুবিধা হলে একই নিয়মে ৫ থেকে ৬ চামচ নিমপাতার রস খেলে একই উপকার হয়।
মাথাধরা (Headache): নিম তেল মাখলে মাথা ধরা কমে যায়। সেই সাথে বেশি করে পানি পান করলে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়।
চোখের সমস্যা দূর করে (Remove eye problem): কিছু নিম পাতা সেদ্ধ করার পর পানিটুকু ছেঁকে পুরোপুরি ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। এরপর সেই পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে নিতে হবে। এতে চোখের যেকোনো ধরনের প্রদাহ, ক্লান্তি বা লালচে ভাব দূর হবে।
ক্যান্সার নিরাময় (Cancer Cure): নিমপাতা ক্যান্সারের মতো ভয়ানক রোগের প্রতিকার করে থাকে। নিম তেল, বাকল ও পাতার নির্যাস ব্যবহারে ক্যান্সার-টিউমার, স্কীন ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
স্বপ্নদোষ প্রশমন (Nocturnal emission mitigation): নিম ছালের রস ১-২ চা চামচ ১ (এক) গ্লাস পরিমাণ গরুর দুধে মিশিয়ে রাত্রে শয়নকালে সেবন করলে স্বপ্নদোষ প্রশমিত হয়।
কানফোঁড়া সারায় (The Ear Drops): কয়েকটি নিমপাতা গুঁড়ো করে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিন। যেকোনো ধরনের কানফোঁড়া সারাতে এই মিশ্রণের কয়েক ফোঁটাই যথেষ্ট।
খোস-পাঁচড়া ও পুরনো ক্ষত (Scabies & old wounds): নিম পাতার সাথে সামান্য কাঁচা হলুদ পিষে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ আকারে ৭-১০ দিন ব্যবহার করলে খোস-পাঁচড়া ও পুরনো ক্ষতের উপশম হয়। নিম পাতা ঘিয়ে ভেজে সেই ঘি ক্ষতে লাগালে ক্ষত অতি সত্বর আরোগ্য হয়।
অন্যান্য ত্বকের সমস্যাও দূর করে (And remove other skin problems): নিমপাতা গুঁড়ো করে পেস্ট তৈরি করে তার সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে যেকোনো ধরনের খুজলি, একজিমা, রিঙ ওয়ার্ম এবং প্রদাহজনিত ত্বকের রোগ প্রতিকার করা যায়।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় (Increases Immunity): কয়েকটি নিমপাতা চুর্ণ করে এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
বমি (Vomiting): বমি বমি ভাব বা বমি আসতে থাকলে নিম পাতার রস ৫-৬ ফোঁটা দুধ দিয়ে খেলে উপশম হয়।
চোখের ব্যথা (Eye Pain): চোখে চুলকানি হলে নিমপাতা পানিতে দশ মিনিট সিদ্ধ করে ঠাণ্ডা করে নিয়ে। চোখে সেই পানির ঝাপটা দিতে হবে। এতে আরামবোধ করবেন। নিম পাতা সামান্য শুস্ক আদা ও সৈন্ধব লবণ একত্রে পেস্ট করে সামান্য গরম করে একটি পরিস্কার পাতলা কাপড়ে লাগিয়ে তা দ্বারা চোখ ঢেকে দিলে চোখের যন্তনা ও ব্যথা সেরে যায়।
আলসার নিরাময় (Ulcer Healing): নিমপাতার আরেকটি বিশেষ গুন হলো আলসার প্রতিরোধ করা। নিম পাতার নির্যাস ও নিম বীজ হতে নিম্বিডিন নির্যাস খেলে পেপটিক ও ডিওডেনাল আলসার উপশম হয়।
জন্ডিস (jaundice): ২৫-৩০ ফোঁটা নিম পাতার রস একটু মধুর সঙ্গে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে জন্ডিস রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ক্ষত সারায় (Cure wounds): কিছু নিম পাতা বেটে পেস্ট বানিয়ে আঘাতজনিত ক্ষত বা কীটপতঙ্গের কামড়ে সৃষ্ট ক্ষত জায়গায় প্রতিদিন কয়েকবার করে লাগালে তা দ্রুত সেরে যাবে।
খুশকি তাড়ায় (Dandruff) : কিছু নিম পাতা ও পরিমাণ মতো পানি নিয়ে সেদ্ধ করুন। যতক্ষণ না পানি নীল হচ্ছে সে পযন্ত পানি সেদ্ধ করতে হবে। এরপর তা ঠাণ্ডা করে রাখুন। গোসল করার সময় চুল শ্যাম্পু করে ধোয়ার পর এই পানি দিয়ে মাথা পরিষ্কার করুন।
নিমপাতার ভেষজ গুনাগুন সম্পর্কিত পোস্টি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে আমাদের উৎসাহিত করবেন। এই পোস্ট নিয়ে কোনো মন্তব্য থাকলে কমেন্ট করতে পারেন। সাস্থ সমত্ব যেকোনো বিষয় জানতে আমাদের সাথে যোগাযোগ পেজ থেকে ম্যাসেজ করুন। পোস্টি শেষ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।