পাথরকুচি গাছের ভেষজ গুনাগুন ও কার্যকারিতা

patharkuchi
পাথরকুচি গাছ

আমরা আজকে আলোচনা করবো পাথরকুচি গাছের ভেষজ গুনাগুন ও কার্যকারিতা সম্পর্কে। পাথরকুচি গাছের উপকারিতা লিখে শেষ করা যাবে না। এই গাছের উপকারিতা প্রাচীনকাল থেকে ব্যাবহারিত হয়ে আসছে।

পাথরকুচি একটি বীরুৎজাতীয় ভেষজ বা ঔষধি গাছ। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো পাথরকুচি। এই পাথরকুচির গাছে রোগ প্রতিরোধের অতুলনীয় ক্ষমতা রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক এই পাথরকুচির উপকারিতা, গুনাগুন ও ব্যবহারবিধি এবং বৈশিষ্ট্যসমূহ।

পাথরকুচি গাছ

পাথরকুচি গাছের বৈশিষ্ট্যসমূহ
পাথরকুচি গাছ দেখতে সবুজ এটি দেড় থেকে দুই ফুট উঁচু হয়। এর পাতার আকৃতি ডিমের মতো মাংসল ও মসৃণ। গাছের চার পাশে রয়েছে খাঁজ সেই খাঁজ থেকে নতুন পাতা জন্মায়। বয়স হলে ঝড়া পাতা থেকেউ নতুন মুকূল জন্ম নেয়। কড়া মাটিতে সহজে জন্ম নেয় তবে হালকা ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে জায়গায় দ্রুত বড় হয়। এই গাছের মূল শিখর বা কান্ডের অগ্রভাগে গুচ্ছবদ্ধ, ফুল নিম্নামুখি হয়। গাছ টি দেখতে ঝিলিক বাতির মত ও ভিতরে পেপে গাআআআআছের মতো ফাঁপা। তবে এর ফুল লম্বা এক থেকে দেড় ইঞ্চি হয় এবং পুস্পের বাহিরের দিকে সবুজ লাল ও সাদা দাগ থাকে। শীতকালে ফুল ও গ্রীস্মকালে ফল হয়।

পাথরকুচি গাছের ভেষজ গুনাগুন এবং ব্যবহারবিধি

পাথরকুচি গাছের অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিম্নে আমরা পাথরকুচি গাছের ভেষজ গুনাগুন এবং ব্যবহারবিধি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো :
কিডনির পাথর প্রতিসারণ
মানুষের কিডনিতে বা গলগন্ডে পাথর প্রতিসারণ করতে পাথরকুচির পাতা বিশেষ ভাবে কার্যকর। পাথরকুচির পাতা দৈনিক দুই থেকে তিন বার রস করে অথবা চিবিয়ে খেলে ভালো হয়।

শিশুদের পেট ব্যথা রোগ নিরাময়ে
এই পাথর কুচি গাছের অনেক গুলো বিশেষ উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে বিশেষ একটি হলো শিশুদের পেটব্যথা রোগ। শিশুর পেটব্যথা নিশ্চিত হতে হবে। তবে এই ক্ষেত্রে শিশুর পেটব্যথা রোগের নিরাময়ের জন্যে ৩০-৬০[ ত্রিশ-ষাট] ফোঁটা পাথর কুচির পাতার রস পেটের উপরে মালিশ করলে ব্যথা উপশম হয়।

রক্তপিত্ত রোগ নিরাময়ে
এই রোগ অনেক লোকের হয়ে থাকে। তবে এর সঠিক চিকিৎসা করলে ভালো হয়। পিত্তজনিত ব্যথা বা রক্তক্ষরণ হলে পাথরকুচির পাতা দিনে দুই বার রস করে দুই দিন এক চামচ করে খেলে সেবন করালে দ্রুত্ব ভালো হয়ে যাবে।

পেট ফাঁপা রোগ নিরাময়ে
মানুষের অনেক সময় দেখা যায় খাওয়ার গড়মিল এর কারনে পেট ফাপা বা পেটটা ফুলে গেছে, প্রসাব আটকে আছে, আধোবায়ু, সরছে না, পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে তবে সেই ক্ষেত্রে একটু চিনির সাথে এক বা দুই চা-চামচ তাজা পাথর কুচির পাতার রস গরম করে সিকি কাপ সম পরিমাণ পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়ালে দ্রুত্ব সেরে যাবে। তখন ফাঁপাটাও কমে যাবে, আধো বায়ুরও নিঃসরণ হবে এবং ধীরে ধীরে পেটফাপা কমে যাবে।

পাইলস ও অশ্ব
পাইলস ও অশ্ব একটি জটিল রোগ। অনেকেই এর পিছনে হাজার হাজার টাকা খরচ করেও সমাধা করতে পারেনি। অথচ পাথরকুচির পাতার মাধ্যমে শ্রষ্ঠা এর সেফা দিয়ে রেখেছেন। নিয়মিত পাথরকুচির পাতার রসের সাথে গোল মরিচ মিশিয়ে সেবন করলে এই রোগ থেকে সহজে মুক্তি লাভ করা যায়।

পাথরকুচি ত্বকের জন্য উপকারিতা
ত্বকের জন্য খুবই উপকারী একটি উদ্ভিদ হলো পাথরকুচি। এই গাছের পাতায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় ত্বককে রাখে মসৃণ ও কোমল। এমন কি ত্বকের মধ্যে জ্বালাপোড়া কমানোর ক্ষমতা রয়েছে। তবে ত্বক সম্বন্ধে সচেতন যারা, তিনারা পাথরকুচি পাতা বেটে ত্বকে ভালোভাবে লাগাতে পারবেন অনেক উপকারিতা পাবেন। যাদের মুখে ব্রণ ও ফুস্কুড়ি জাতীয় সমস্যা রয়েছে তাদের এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

কাটাছেঁড়া ও শরীরের জ্বালাপোড়া
কাটা বা থেতলে যাওয়া স্থানে তাজা পাথরকুচির পাতা পরিমাণ মতো হালকা হালকা তাপে গরম করে ক্ষতবা কাটাছেড়া যায়গায় সেক দিলে দ্রুত ভালো হয়ে যায়। এবং শরীর জ্বলাপোড়ার জন্যে পাথরকুচির পাতার রস, আধা কাপ গরম ও সমপরিমান পানিতে মিশিয়ে খেলে তা দ্রুত সেরে যায়।

উচ্চ রক্তচাপ ও মূত্রনালির সমস্যা
অনেক সময় মানুষের হঠাৎ করে উচ্চ রক্তচাস্প বেড়ে যায়। নিয়মিত পাথর কুচির পাতা চিবিয়ে অথবা রস করে খেলে অনেক উপকার হয়। এবং যাদের মুত্রনালী বা মূত্রথলিতে সমস্যা রয়েছে তারা যদি নিয়মিত সাত দিন সকালে খালিপেটে তাজা পাতা দুই থেকে তিনটি করে চিবিয়ে খেয়ে তারপর এক গ্লাস পানি খেলে খুব সহজে ভালো হয়ে যাবে।

কলেরা, ডাইরিয়া ও রক্ত আমাশা
পাথর কুচি পাতার গুরুত্ব অনেক বেশি কেননা কঠিন কঠিন রোগের কজ করে থাকে এই পাতা যেমনঃ ডায়রিয়া, কলেরা ও রক্ত আমাশা। এই রোগ সারাতে পাথরকুচির পাতা খুবই গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে ৩ মি.লি পাথরকুচি পাতার রস বাস জুসের সাথে অন্তত ৩ গ্রাম জিরা ও ৬ গ্রাম ঘি মিশিয়ে লাগাতারে কয়েকদিন খেলে নিশ্চয়ই উপকার পাবেন।

সর্দি ও পুরাতন সর্দি নিরাময়ে
যাদের সব সময় সর্দি লেগেই থেকে তাদের জন্য পাথর কুচির পাতা খুবই গুরুত্ব পূর্ণ একটি ভেষজ গাছ। এই পাতা নতুন সর্দির চেয়ে পুরাতন সর্দিতে এটি বিশেষ কার্যকারিতা রয়েছে।আপনি যদি পাথরকুচি পাতার রস করে সেটি হালকা গরম করে অল্প পরিমান সোহাগার খৈ মিশিয়ে খেতে হবে।

আরও পড়তে পারেনঃ জ্বর-সর্দি নিরাময়ের প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া উপায়

মেশানোটি যেন এমন হয় যেখানে ৩ চামচের বিপরীতে ২৫০ মিলিগ্রাম থাকবে। সবগুলো থেকে ২ চামচ নিয়ে সকালে ১ বার ও বিকালে ১ বার মোট দিনে ২ বার খেতে হবে খেলে দ্রুত্ব রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া যাবে।সুতরাং আপনার নতুন বা পুরাতন সর্দি-কাশি সব ভালো হয়ে যাবে এবং সর্দি-কাশি এতো সহজে আপনাকে কখনোই আক্রমণ করতে পারবে না।

জন্ডিস বা লিভারের রোগ নিরাময়ে
প্রত্যেক টা মানুষের জন্য লিভার কে ভালো রাখার জন্য কিছু প্রাকৃতিক নিয়ম কানুন রয়েছে সে সব নিয়ম মেনে চললে লিভার ভালো থাকে। যদি লিভারে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিলে আপনি তা থেকে রক্ষা পেতে যা করবেন তাজা পাথর কুচির পাতা অথবা এর জুস তৈরি করে নিয়মিত খেলে লিভার ভালো হয়ে যাবে।

মেহ রোগ নিরাময়ে
শরীরের নানান স্থানে ফোঁড়া দেখা দেয় সর্দিজনিত কারণে। এই ধরণের রোগ কে মেহ বলা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে পাথরকুচির পাতার রস করে দিনে দুই বার লাগাতার সাত দিন খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

বিষাক্ত পোকা-মাকোড় কামরালে
বিভিন্ন ধরেনের বিষাক্ত পোকা-মাকড় পৃথিবীতে রয়েছে আর সেই সব পোকা-মাকড় কামড় দিলে পাথরকুচি পাতার রস আগুনে সেঁকে কামড়ানোর বা বিষাক্ত স্থানে লাগালে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তবে, প্রাথমিক বা প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে পাথরকুচির পাতার যথেষ্ট ব্যবহার করা যাবে। তবে যেসব ক্ষেত্রে মৃত্যুর ভয় থাকবে সেসব ক্ষেত্রে অবশ্যই অসুস্থ্য ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন।

মৃগী রোগ নিরাময়ে
এই রোগে যদি কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত্র সময় পাথার কুচির পাতার রস বা জুস ২-১০ [দুই থেকে দশ] ফোঁটা করে খেতে হবে। খেলেই রোগি রোগের উপশম হবে।

পাথরকুচি গাছের একটি মজার বিষয়
এই গাছের একটি অসাধারন ক্ষমাতা রয়েছে সেটা হলো ভাত রান্না করার সময় পাতিলের মধ্যে যদি একটি পাথরকুচির পাতা দিলে সারাদিন চুলার উপরে আগুন জালিয়ে রাখলে সেই ভাত রান্না হবে না। অর্থ্যাত্‍ চাল এর রুপে ই থাকবে। বিশ্বাস না হলে নিজেরাই প্রমাণ করে নিতে পারেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমরা এই ওয়েবসাইটে ভেষজ উদ্ভিদ এর গুনাগুন ও ব্যবহারবিধি সমন্ধ্যে তথ্য প্রকাশ করেছি, বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জনে জন্যে। বিশেষ প্রয়োজনে চিকিৎসাকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করবেন। নতুবা আপনি মানসিক বা শারীরিক ক্ষতি গ্রস্থ হতে পারেন।

আমাদের পাথরকুচি গাছের ভেষজ গুনাগুন সম্পর্কিত পোস্টি কেমন লেগেছে তা জানিয়ে নিচে একটি কমেন্ট করবেন। আর আপনার কাছে পোস্টি উপকারী মনে হলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ !!

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version