সহীহ পদ্ধতিতে মুসাফাহার দোয়া

Musafah

আমরা চলার পথে অনেকের সাথে সাক্ষাৎ হয়। পরিচিতোদের সাথে মুসাফা করে থাকি। মুসাফা করার সময় মুসাফাহার দোয়া পড়তে হয়। আমরা অনেকেই তা জানি না। কোনো মুসলমান দুই বেক্তির দেখা হলে তারা হাতের সাথে হাত মিলে থাকে। একে এটিকে পরের সাথে সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে তারা হাতের সাথে হাত মিলায়। এটিকে আরবিতে বলা হয় মুসাফাহ (مُصَافَحَة) ইংরেজিতে বলে (Handshake) হ্যান্ডশেক। বাংলায় আমরা এটাকে বলি কর্মদন বা হাতে হাত মেলানো। হাত মিলানো সুন্নতি কাজ। এই হাত মিলানোর মাধ্যমে দুজনের মাঝে থাকা ছোট ছোট গুনাহ গুলো আল্লাহ তালা মাফ করে দেন। প্রত্যেক মুসলমানের মধ্যে দেখা হলে মুসাফা করা উত্তম কাজ। কিভাবে সহীহ পদ্ধতিতে মুসাফাহার দোয়া করতে হয় তা নিয়ে নিম্মে আলোচনা করি।
Musafah

মুসাফাহার দোয়া

ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মুসাফাহার সুন্নাত হলো, পাস্পরিক সাক্ষাতে মুসাফাহা করবে, আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করবে আর (উভয়ে) বলবে-

يَغْفِرُ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ
উচ্চারণ : ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম

মুসাফাহা বা করমর্দন করার দু’আ–

يَغْفِرُاللهُ لَنَا وَلَكُمْ

উচ্চারণঃইয়াগফিরুল্লাহু-লানা ওয়ালাকুম

অর্থ : আল্লাহ তাআলা আমাকে এবং আপনাকে ক্ষমা করুন।’ (বুখারি)

মুসাফাহ করার মাধ্যমে মানুষের মাঝে একটি আন্তরিকতা তৈরী হয়। মুসলমান সব সময় একে অপরের পাশে থাকে। একজন অন্য জনের পাশে থেকে দুজন দুজনের জন্য মঙ্গল কামনা করে। হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যখন ইয়েমেন থেকে লোকেরা আসলো, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমাদের কাছে ইয়েমেনবাসীরা এসেছে। তারাই এসে প্রথমে মুসাফাহা বা করমর্দন করছেন।’ (আবু দাউদ)

আরো পড়ুন : মৃত্যু থেকে পালানোর পথ নেই – জন্ম নিলে মৃত্যু অনিবার্য

মুসাফাহ  করার নিয়ম

আমরা মুসলমানেরা একে অপরের সাথে দেখা হলে সালাম বিনিময় করি। সালাম দেয়ার পরে আমরা মুসাফা করি, মুসাফা করার মাধ্যমে আমাদের হাতের যত গুনাহ থাকে আল্লাহ আমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দেন। দুই জন মুসাফাহ কারি হাত ছেড়ে দেয়ার আগেই আল্লাহতালা তাদের সকল গুনাহ মাফ করে দেন। মুসাফাহ করার সময় ডান হাতের সাথে ডান হাত মিলাতে হবে। ডান হাতের ভিতরের অংশটি মিলাতে হবে ডান হাতের ভিতরের অংশের সাথে বা হাতের তালুর সাথে। এক হাত দিয়ে মুসাফাহ করতে হয়। মুসাফাহার সময় দুই হাত লাগানো যাবে না। মুসাফাহ করার অনেক ফজিলত রয়েছে। মুসলমান হিসেবে আমাদের ঐসব ফজিলত মেনে চলতে হবে।

আরো পড়ুন : সালাত বা নামাজ পড়ার সংক্ষিপ্ত নিয়ম

মুসাফাহার উৎপত্তি

বিশ্ব নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দুনিয়াতে আবিরভাব হওয়ার আগে থেকেই সালাম বিনিময় ও মুসাফাহ করার নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। মুসাফাহ করার সময় হাতের সাথে হাত মিলাতে হয়। মুসাফাহ সর্ব প্রথম শুরু করে ইয়েমেন বাসীরা। ইয়েমেন থেকেই মুসাফাহার নিয়ম চলে আসে। আর সেখান থেকেই মক্কা ও মদিনায় ছড়িয়ে পরে মুসাফাহ করা। ডান হাতের তালুর সাথে ডান হাতের তালু মিলালে মুসাফাহ বলা হয়। মুসাফাহ করে দুজন চলে যাওয়ার আগেই তাদের সব গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দেন। ইয়েমেনিদের থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি কিভাবে মুসাফাহ করতে হয়। তারা শুধু এক হাত দিয়ে মুসাফাহ করে, তাই আমরা এক হাত দিয়ে মুসাফাহ করবো। অনেক হাদিসে মুসাফাহ করা, এক হাতে মুসাফাহ করার কথা বলা হয়েছে।গাছের পাতা যেমন ঝরে পরে তেমনি মুসাফাহ করার মাধ্যমে বান্দার গুনাহ ঝরিয়ে পড়ে, (তবারনির  ছহি হাদিস ২৪৫) তবে দুই হাতে মুসাফাহ করারও কিছু হাদিস রয়েছে,তবে দুই হাতের চেয়ে এক হাতে মুসাফা করার বেশি হাদিস আছে। তাই এক হাতে মুসাফা করার বেশি নিয়ম পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন : পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব

সালাম দেওয়া এবং নেওয়া

সালাম আরবি শব্দ, এর অর্থ হচ্ছে শান্তি। সালাম অত্তান্ত সহজে পালন যোগ্য একটি ইবাদাত। আমরা সালাম দেওয়ার মাঝে ইসলামের যে শান্তির ধর্ম তা আমরা ফুটিয়ে তুলতে পারি। সালামের অফুরন্ত সওয়াব কথা হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। সালাম দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে অহংকার দূর হয়ে যায়। কেউ যদি সবার আগে সালাম দেন তাহলে বুঝা যায় ওই বেক্তির মাঝে কোনো প্রকার অহংকার নেই। সালাম সহি শুদ্ধ ভাবে দিতে হবে। সালাম দিলেও নেকি সালাম নিলেও নেকি পাওয়া যায়। সালাম দেওয়া সুন্নত এবং সালাম নেওয়া ওয়াজিব। তাই সালাম দেওয়ার সময় শুদ্ধ ভাবে সালাম দিতে হবে। সালাম নেওয়ার সময়ও সহি শুদ্ধ ভাবে সালাম নিতে হবে। সালাম মানেই শান্তির দোয়া।

সালাম 
ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ
উচ্চারণ : আস-সালামু ʿআলাইকুম
অর্থ : আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক
সালামের অর্থ
وَعَلَيْكُمُ ٱلسَّلَامُ
উচ্চারণ : ওয়া ʿআলাইকুমু স-সালাম
অর্থ : আপনার উপরও শান্তি বর্ষিত হোক

আমরা উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে জানতে পেলাম কিভাবে সহি শুদ্ধভাবে মুসাফাহ করতে হয়। মুসাফাহ করে কি দোয়া পড়তে হয় তার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করছি। আপনারা সব সময় মুসাফাহ করবেন, মুসাফাহার মাধ্যমে বান্দার ছোট ছোট গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। এই পোস্ট সম্পর্কে যদি আরো কিছু জানার থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা সঠিক ভাবে তার সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version