সালাত বা নামাজ আমাদের জন্য মহান স্রষ্টার একটি বিশেষ উপহার। নামাজের মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীলকে সুস্থ ও মনকে সান্ত রাখতে পারি। নামাজ আমাদের পার্থিব ও পরকালের উভয়ের জন্য কল্যাণকর। নামাজ আমাদের সুন্দর জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চলুন নামাজ পড়ার সংক্ষিপ্ত নিয়ম জেনে নেই।
নামাজ পড়ার সংক্ষিপ্ত নিয়ম
আল্লাহ সকল মুসলমানদের উপরে নামাজ ফরজ করে দিয়েছে। নামাজের কোনো বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে নামাজের কথা কয়েকবার তুলে ধরেছেন আল্লাহ নিজেই। তাই নামাজের কোনো মাফ নেই নামাজ বা সালাত আদায় করতেই হবে। আমরা আজ কোরআন ও হাদিসের আলোকে জানবো কি ভাবে সংক্ষিপ্ত আকারে সালাত বা নামাজ আদায় করা যায়।
নামাজ পড়ার আগে ওযু করে নিতে হবে। কোনো পবিত্র স্থানে কেবলা মুখি হয়ে দাঁড়াতে হবে। নামাজের নিয়াত করে নিতে হবে। আল্লাহু আকবর বলে তাকবীর দিযে হাত বাঁধতে হবে। হাত বাধার পর সানা পড়তে হবে। সানা পড়া শেষ হলে কোরআন এর প্রথম সূরা,সূরা ফাতিহা একবার তিলাওয়াত করতে হবে। সূরা ফাতিহার সাথে কোরআনের কোন আয়াত বা অন্য কোনো সূরা পড়তে হবে। সূরা পড়া হলে আল্লাহ একবার বলে রুকুতে যেতে হবে বা দুই হাঁটুর মাঝে দুই হাত দিয়ে ভর দিতে হবে। রুকুতে আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরুন। (মুজামে সাগির ২/৪৯৭) নামাজে রুকুতে থাকা অবস্থায় ৩ বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ পড়ুন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২) রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। পড়তে হবে সামিআল্লাহ হুলিমান হামিদ।
আল্লাহ একবার বলে সেজদায় যেতে হবে। সেজদায় পড়তে হবে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা কম পক্ষে ৩ বার। এর পর আল্লাহ একবার বলে সেজদা থেকে উঠে বসতে হবে। এখন পড়তে হবে,আল্লাহুম্মাগফিরলি, ওয়ারহামনি, ওয়াজবুরনি, ওয়াহদিনি, ওয়ারজুকনি। তার পরে আবারো সেজদায় যেতে হবে পুনরায় পড়তে হবে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা ৩ বার। এখন আল্লাহ একবার বলে সেজদা থেকে উঠে দাঁড়াতে হবে।
দ্বিতীয় রাকাতের জন্য হাত উঠাতে হবে না, আগের মতো ছানাও পড়বেন না ঠিক আগের মতো সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলকরে পড়তে হবে। আগের মতোই রুকু সেজদা করতে হবে। সেজদা শেষ করে দেন পা খাড়া করে বাম পা বিছিয়ে দিয়ে বসে পড়েন। আপনার বাম হাত বাম পায়ের উপরে এবং দেন হাত দেন পায়ের উপরে সোজা করে বিছিয়ে রাখুন যাতে হাতের আঙ্গুল গুলো কেবল মুখী হয়ে থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ৯১২)
এখন পড়তে হবে তাশাহহুদ, দরুদ শরিফ, ও দোয়ায়ে মাসুরা পাঠ করবেন। তার পর সালাম ফিরাবেন। প্রথমে ডানে পরে বামে সালাম ফিরিয়ে নিবেন। এখন নামাজ যদি ৩ রাকাত বিশিষ্ট পড়তে হয়, যেমন—মাগরিবের নামাজ, সে সময় প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পরার পর আর কোনো কিছু পড়তে হবে না। বরং ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সোজা দাঁড়িয়ে যাবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২২৪)
আবার নামাজ যদি ৪ রাকাতের হয় সে ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে সুধু সূরা ফাতিহা পরে নিবেন। তার পরে আগের মতোই রুকু সেজদা করে নিতে হবে। বৈঠকে বসবেন তাশাহহুদ,দরুদ শরিফ, ও দোয়ায়ে মাসুরা পাঠ করবেন।তার পর সালাম ফেরায় নিবেন। এই ভাবে আপনারা নামাজ আদায় করতে পারবেন।
আরো পড়ুন : বিয়ে পড়ানোর সুন্নতি পদ্ধতি
নামাজে যে সব দোআ দরূদ পড়তে হয়
সানা : ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবি হামদিকা ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা তোমারই পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি, তোমার নামই বরকতপূর্ণ এবং তোমার গৌরবই সর্বোচ্চ, তুমি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। (নাসায়ি, হাদিস : ৮৮৯)
সুরা ফাতিহা :
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
বাংলা অনুবাদ: পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে।
ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ رَبِّ ٱلْعَالَمِينَ
আলহামদুলিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীন।
বাংলা অনুবাদ: সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে।
ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
আর রহমা-নির রহীম।
বাংলা অনুবাদ: অনন্ত দয়াময়, অতীব দয়ালু।
مَالِكِ يَوْمِ ٱلدِّينِ
মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন।
বাংলা অনুবাদ: প্রতিফল দিবসের মালিক।
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাছতা’ঈন।
বাংলা অনুবাদ: আমরা শুধু আপনারই দাসত্ব করি এবং শুধু আপনারই নিকট সাহায্য কামনা করি।
ٱهْدِنَا ٱلصِّرَاطَ ٱلْمُسْتَقِيمَ
ইহদিনাসসিরা-তাল মুছতাকীম।
বাংলা অনুবাদ: আমাদের সরল পথনির্দেশ দান করুন।
صِرَاطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
সিরা-তাল্লাযীনা আন’আম তা’আলাইহিম।
বাংলা অনুবাদ: তাদের পথে, যাদের আপনি অনুগ্রহ করেছেন।
غَيۡرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا اَ۬لضَّآلِّينَ ص
গাইরিল মাগদূ বি’আলাইহীম ওয়ালাদ্দাল্লীন। (আমিন )
বাংলা অনুবাদ: এবং তাদের পথে নয় যারা আপনার ক্রোধের শিকার ও পথভ্রষ্ট । ( কবুল করুন )
আরো পড়ুন : পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম কোনটি
তাশাহহুদ:
আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তায়্যিবাত। আসসালামু আলাইকা, আইয়্যু হান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
দরুদ শরিফ:
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদ, ওয়ালা আলি মুহাম্মদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদ, ওয়ালা আলি মুহাম্মদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।
আরো পড়ুন : পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব
দোয়ায়ে মাসুরা :
আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরাও ওলা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলি মাগফিরাতাম-মিন ইনদিকা, ওয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
নামাজ সহিশুদ্ধ ভাবে পড়তে হবে। নামাজ বেহেস্তের চাবি, এই আমল ছাড়া জান্নাতে যাওয়া যাবে না। সকল মুসলমানদের উপরে নামাজ ফরজ করা হয়েছে। ইসলামে নামাজের প্রাধান্য বেশি দেওয়া হয়েছে। নামাজ মানুষকে সকল পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। আমরা সবাই ৫ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করবো। কখনই নামাজ ছেড়ে দেওয়া যাবে না।