রংপুর জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান

Vinno-jogot

বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের কেন্দ্রীয় এবং প্রধান শহরের নাম হল রংপুর।যদি আপনি দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ছোঁয়া পেতে চান তাহলে রংপুর হতে পারে আপনার ছুটির দিনে উপযুক্ত ভ্রমণস্থল। আয়তনে ছোট একটি শহর হলেও রংপুরে অনেকগুলো আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির,কলেজ, জমিদার বাড়ি,জাদুঘর, ঐতিহাসিক ভবন এবং গঙ্গা নদীর সৌন্দর্য।

রংপুর জেলা সদর হিসেবে ঘোষণা করা হয় ১৭৬৯ সালে , ১৮৬৯ সালে রংপুর পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।রংপুরে , ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় এই স্থানে প্রচুর নীল চাষ করা হতো যা স্থানীয়ভাবে পরিচিত ছিল রঙ্গো হিসেবে; সেখান থেকে জেলাটির নাম হয় রংপুর। আপনি রংপুর আসতে চাইলে যেসব দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসতে পারবেন ঐসব স্থানসমূহের কিছু বিবরণ এই পোস্টে তুলে ধরা হলো।

১) ভিন্না জগত
২) পায়রাবন্দ
৩) তাজহাট জমিদারবাড়ি
৪) ঝাড়বিশলা
৫) তিস্তা বাঁধ প্রকল্প
৬) কারমাইকেল কলেজ
৭) রংপুর কলেজ
৮) মন্থনার জমিদারবাড়ি
৯) কেরামতিয়া মসজিদ ও মাজার
১০) শাশত বাংলা (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর)
১১) রংপুর চিড়িয়াখানা
১২) ঘাঘট পায়াস পার্ক
১৩) চিকলির পার্ক
১৪) রানিপুকুর
১৫) তনকা মসজিদ
১৬) প্রজম্ন মুক্তিযোদ্ধা স্বারক
১৭) রাম সাগর
১৮) পীরগন্জ থানা
১৯) রংপুর মেডিকেল কলেজ
২০) রংপুর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল
২১) বেগম রোকেয়ার বাড়ি
২২) ক্যান্ট পাবলিক স্কুল
২৩) ড্রিম ল্যান্ড
২৪) মিঠাপুকুর তিন কাতারের মসজিদ
২৫) ইটাকুমারী জমিদারবাড়ি
২৬) ঝাড়বিশলা (কবি হেয়াত মামুদের সমাধি)
২৭) আনন্দ নগর
২৮) ড. ওয়াজেদ মিয়ার তোরণ
২৯) লাহিড়ীরহাট বধ্যভূমি
৩০) সাহাবাজপুর বৌদ্ধনাথের ধাম (শিবমন্দির)
৩১) গংগাচড়া শেখ হাসিনা সেতু
৩২) লালদিঘি নয় গম্বুজ মসজিদ বা লালদিঘি মসজিদ
৩৩) ধুম নদি

 

রংপুর জেলার দর্শনীয় স্থান গুলো কি কি ও প্রতিটি স্থানের সংক্ষিপ্ত বর্ণন তুলে ধরা হলো :

 

ভিন্ন জগত পার্ক

রংপুরের সবচেয়ে বড় পাবলিক পার্ক হচ্ছে ভিন্ন জগত।ভিন্নজগৎ পার্কটি রংপুর শহর থেকে প্রায় ১১কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পার্কটি প্রায় ১.৫ হেক্টর এলাকা জুড়ে অবস্থিত, এই পার্কটি রংপুর ভ্রমণকারীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থল। পার্কটিতে রয়েছে বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য, ফোয়ারা, পিকনিক এলাকা, জগিং ট্রেইল,সুইমিংপুল,তাজমহল, খেলার মাঠ, লেক এবং গাছগাছালিতে ঢাকা হাঁটার জায়গা।পার্কের ভিতরে লেকটিতে রয়েছে বিভিন্ন রকমের জলজ উদ্ভিদ এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।এখানে প্রচুর পর্যটকে সমাগম থাকার কারণে পার্কে নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তাজহাট রাজবাড়ী

মুঘল স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন হল তাজহাট রাজবাড়ী। তাজহাট রাজবাড়ী রংপুর শহর থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণ- পূর্বে অবস্থিত। এই রাজবাড়িতে বর্তমানে প্রাসাদের ভেতরে একটি জাদুঘর আছে । খাজা আহসানুল্লাহ নামক একজন প্রভাবশালী জমিদার দ্বারা তাজহাট জমিদার বাড়ি নির্মিত হয়েছিল বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ।শুনা যায় জমিদারের যে মুকুটটি ছিল সেটি ছিল রত্নখচিত, যার জন্য ওই রাজার মুকুট কে তাজ হিসেবে গণ্য করা হতো; যা থেকে তাজহাট নামটি এসেছে বলে আমরা জানি। প্রাসাদটি একটি দ্বিতল ভবন এবং ছোট টিলার উপর নির্মিত।

tajhat-jamidar-bari

প্রাসাদের দেওয়ালে দেখতে পাওয়া যায় পোড়ামাটির কারুকাজ এবং বিস্তীর্ণভাবে অঙ্কিত খোদাই।। মূলত ইট এবং কাঠ দ্বারা এই প্রাসাদটি নির্মিত। সমনের কেন্দ্রে সাদা মার্বেল পাথর দ্বারা তৈরি প্রশস্ত সিঁড়ি বেয়ে মূল জমিদার বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। প্রসাদের ভিতরে সর্বমোট ২২ টি কক্ষ রয়েছে। ১৮৮৪ থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত রাজবাড়ীটি রংপুর হাইকোর্ট হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

রংপুর চিড়িয়াখানা

উত্তর বঙ্গের বৃহত্তম চিড়িয়াখানা হল রংপুর চিড়িয়াখানা। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। এটি একই সাথে পার্ক, বিনোদন কেন্দ্র, পিকনিক স্পট এবং চিড়িয়াখানা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রংপুরের পুলিশ লাইন রোডে, হনুমান তলা সড়কের পূর্বদিকে চিড়িয়াখানাটি অবস্থান। বর্তমানে পার্কটিতে উপস্থিত প্রাণীসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমির, সিংহ, জলহস্তী, ময়ূর,বানোর, ভাল্লুক, ঘোড়া, শকুন,অজগর সাপ, বলগা হরিণ, তোতা পাখি, টার্কি,টিয়া পাখি,ময়ূর এবং আরো বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখি। তাছাড়াও চিড়িয়াখানায় রয়েছে একটি রেস্তোরাঁ, একটি পার্ক, বিভিন্ন স্থানীয় গাছপালা এবং একটি লেক। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) রংপুর চিড়িয়াখানার উন্নয়ন সম্ভাবনা’র উপরে সমীক্ষা চালাচ্ছে যাতে একে একটি আন্তর্জাতিক মানের চিড়িয়াখানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।ছোট-মনিদের জন্য বানানো হয়েছে শিশু পার্ক।

চিকলি ওয়াটার পার্ক

এই পার্কের প্রধান আকর্ষণ হলো, বিভিন্ন রঙের আলো দিয়ে সজ্জিত কৃত্রিম ঝর্ণা। রাতের বেলায় এই ঝর্ণাটি দেখতে খুব আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে এবং তরুণ থেকে শুরু করে সকল প্রজন্মের দর্শকরা ছবি তুলতে মগ্ন থাকে।চিকলি ওয়াটার পার্কে ঝরনার পাশের ছোট পুকুরে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের মাছ রয়েছে। চিকলি ওয়াটার পার্কে একটি বিশাল ধরণের নাগরদোলা রয়েছে,যেখান থেকে সমগ্র রংপুর শহর দেখা যায়,। তাছাড়াও পার্কে রয়েছে একটি রেস্তোরাঁ, যাতে আপনি আপনার পছন্দের খাবারসমূহ পেয়ে যাবেন। পার্কে প্রবেশের মূল্য ৭০ টাকা। । রংপুর শহর থেকে হনুমান তলা রোডের পাশে বা রংপুর সরকারি কলেজ এর পাশেপার্কটি অবস্থিত।

ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি

ঐতিহাসিক প্রজা বিদ্রোহের মূল নায়ক রাজা রঘুনাথ রায় পীরগাছা উপজেলায় এই জমিদারবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন ১৭৮৩ সালে। উল্লেখিত সময়ে এই এলাকাটি শিক্ষা এবং সংস্কৃতির কেন্দ্র ছিল। যথেষ্ট সংস্করণ এবং সংরক্ষণের অভাবে জমিদার বাড়িটি প্রায় ধবংসের পথে চলে যাছে ।আরো পড়ুন: স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানতাছাড়াও ওই জমিদার বাড়ির অনেক মূল্যবান সামগ্রী চুরি হয়ে গেছে। বর্তমানে স্থানটি তার বেশিরভাগ সুন্দর্যই হারিয়ে ফেলেছে।এটি পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারীতে অবস্থিত।

মিঠাপুকুর বড় মসজিদ

মুঘল সুবেদার খন্দকার আবদুর রহমান ১৬০৭ সালে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় নির্মাণ করেন এই বৃহদাকার মসজিদটি । এই মসজিদে রয়েছে পাঁচটি গম্বুজ এবং চারটি মিনার। মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে ইট এবং পাথর দিয়ে। তাছাড়াও মসজিদের সামনের অংশে রয়েছে বিশাল ময়দান। মসজিদের সামনের অংশ ওযু করার জন্য একটি চৌবাচ্চা বানানো হয়েছে।মসজিদের অভ্যন্তরীণ দেয়াল সুন্দর ক্যালিগ্রাফি দ্বারা সুসজ্জিত। অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা এখানে তীর্থযাত্রায় আসেন এবং রংপুরের মানুষের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উপাসনালয় হিসেবে পরিচিত।

সেনা প্রয়াস বিনোদন পার্ক ঘাঘট

রংপুর মূল শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পার্কটি।বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর দ্বারা পড়ি চালিত এই পার্ক।
শহরের ব্যস্ত জীবন যখন কর্মজীবী মানুষের জন্য যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে, তখন প্রকৃতি এর সমাধান দিতে সক্ষম। সেই প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে এবং নির্মল পরিবেশে ক্লান্তি দূর করার জন্য মানুষজন সেনা প্রয়াস বিনোদন পার্কে বেড়াতে যান। রংপুর শহরের অদূরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত রক্ত গৌরব চত্বরে ঘাঘট নদীর দুপাশে নিসবেতগঞ্জ নামক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছে মনোরম এই পার্কটি।

পার্কের প্রবেশ পথে রয়েছে একটি বিশাল ডাইনোসরের প্রতিমূর্তি এবং অদূরে রয়েছে নৌকার সারি ও কাশবন। সমগ্র এলাকাটির বিস্তৃতি প্রায় এগারশ একর এবং ভিতরে রয়েছে কৃত্তিম ভাবে সাজানো লতাগুল্মের বাগান।এই পার্কে প্রবেশ এর মূল্য ৫০ টাকা। রংপুর ভ্রমণ করতে গেলে অপরূপ এই স্থানটি ঘুরে আসতে ভুলবেন না।

আরো পড়ুন: তাজহাট জমিদার বাড়ি

মন্থনা জমিদার বাড়ি

১৯ তম শতাব্দীর শুরুর দিকে জমিদার মন্থনা এই স্থাপনাটি নির্মাণ করেন। এটি একটি দুই তলা বিশিষ্ট ভবন এবং এর ভেতরের অংশে টেরাকোটা এবং পোড়ামাটির কারুকাজ রয়েছে। প্রাসাদের সামনে একটি নির্মল ফোয়ারা এবং কেন্দ্রীয় উদ্যান রয়েছে। জমিদার বাড়িটির উভয় তলায় চারটি করে কক্ষ রয়েছে। এটি বাংলাদেশের একটি জাতীয় পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন।

গংগাচড়া শেখ হাসিনা সেতু

গংগাচড়া উপজেলায় লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়কে তিস্তা নদীর উপর অবস্থিত গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু। এটি মহিপুর সেতু নামেও পরিচিত। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৭৫০ মিটার এবং প্রস্থ ১২.১ মিটার। ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটি উদ্বোধন করেন। ২০০৬ সালে শুরু হয়ে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত সেতুটির নির্মাণ কাজ চলে।। সেতুর স্প্যান সংখ্যা ১৫টি এবং পিলার সংখ্যা ১৬টি। সেতুটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয় ১২২.০৯ কোটি টাকা। নদী প্রস্থ ৭৬০ মিটার। অ্যাপ্রোচ রোড ২.২৯ কি.মি.এখানে প্রতিদিন বিকাল হলে দূরান্ত হতে পর্যটক আসে। পড়ুন: ঘুরে আসুন হলুদের রাজ্য

কেরামতিয়া মসজিদ ও মাজার

ভারতের জৈনপুর থেকে উনিশ শতকে রংপুরে শাহ কারামত আলী জৌনপুরী এলে তার উদ্যোগে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।রংপুরের জিরো পয়েন্ট থেকে ৩৫০মিটার দূরে এই মসজিদটির অবস্থান।এখানে প্রচুর পরিমানে ইসলাম ধর্ম অবলম্বনকরি মানুষ ইবাদতের জন্য আসে। মসজিদটি আয়তাকার, তিনটি (উঁচু) গোলাকার গম্বুজ বিশিষ্ট। প্রতিটি কোণে অষ্টভূজাকৃতি স্তম্ভ রয়েছে যার উপরে শোভা পাচ্ছে কিউপলা।

 

রংপুর পৌঁছানোর জন্য ঢাকা থেকে সরাসরি বাস এবং ট্রেন সার্ভিস রয়েছে। রংপুরে অবস্থানের জন্য ভালো হোটেল গুলোর মধ্যে রয়েছে লিটল রংপুর ইন, কাশপিয়া, হোটেল নর্থ ভিউ, গ্র্যান্ড প্যালেস হোটেল, রায়ান হোটেল, খান হোটেল এবং হোটেল কেটিএস।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version