অনেকেই সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়াটা ভীষণ স্বাস্থ্যকর / অস্বাস্থ্যকর মনে করে। কিন্তু খালি পেটে রসুন খাওয়া দেহের জন্য ভীষণ স্বাস্থ্যকর। আবার অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ক্ষতি হতে পারে। রসুনের উপকারিতা ও ক্ষতিকর উভয় দিক রয়েছে।
খালি পেটে রসুন খেলে এমন কিছু উপকার হয়, যেটা অন্য খাবারের সাথে রান্না করা অবস্থায় খেলে হয় না। রসুন শুধু বিভিন্ন ধরণের রোগ দূরই করে না, পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে।
তবে আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই খালি পেটে রসুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
রসুন খাওয়ার উপকারিতা সমূহঃ
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে : অসংখ্য মানুষ যারা উচ্চ রক্তচাপের শিকার তারা দেখেছেন, রসুন খাওয়ার ফলে তাদের উচ্চ রক্তচাপের কিছু উপসর্গ উপশম হয়। রসুন খাওয়ার ফলে তারা শরীরে ভাল পরিবর্তন দেখতে পায়।
শরীরকে ডি-টক্সিফাই করে : অন্যান্য ঔষধের তুলনায় শরীরকে ডি-টক্সিফাই করতে রসুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রসুন প্যারাসাইট, কৃমি পরিত্রাণ, জিদ, সাঙ্ঘাতিক জ্বর, ডায়াবেটিস, বিষণ্ণতা এবং ক্যান্সার এর মত বড় বড় রোগ প্রতিরোধ করে।
প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক : গবেষণায় দেখা গেছে, খালি পেটে রসুন খাওয়া হলে এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক এর মতো কাজ করে। সকালে নাস্তার পূর্বে রসুন খেলে এটি আরও কার্যকরীভাবে কাজ করে। তখন রসুন খাওয়ার ফলে ব্যাকটেরিয়াগুলো উন্মুক্ত হয় এবং রসুনের ক্ষমতার কাছে তারা নতিস্বীকার করে। তখন শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াসমূহ আর রক্ষা পায় না।
যক্ষ্মা প্রতিরোধক : আপনার যদি যক্ষ্মা বা টিবি জাতীয় কোন সমস্যা ধরা পড়ে, তাহলে সারাদিনে একটি সম্পূর্ণ রসুন কয়েক অংশে বিভক্ত করে বার বার খেতে পারেন। এতে আপনার যক্ষ্মা রোগ নির্মূলে সহায়তা পাবেন।
ত্বক ও চুলের যত্নে রসুনের উপকারিতা: নিয়মিত রসুন সেবনে ত্বক সুন্দর হয় ও বয়সের ছাপ দূর হয়। এ ছাড়া ফাঙ্গাশ ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে ত্বক সুরক্ষায় নিয়মিত রসুন সেবন করতে হবে। আর চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজাতে রসুন ভালো কাজ করে। এই উপকার পেতে মাথায় নিয়মিত রসুনের নির্যাস বা রসুন সমৃদ্ধ তেল ব্যবহার করতে হবে।
অন্ত্রের জন্য ভাল : খালি পেটে রসুন খাওয়ার ফলে যকৃত এবং মূত্রাশয় সঠিকভাবে নিজ নিজ কার্য সম্পাদন করে। এছাড়াও, এর ফলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয় যেমন- ডায়রিয়া। এটা হজম ও ক্ষুধার উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এটি স্ট্রেস দূর করতেও সক্ষম। স্ট্রেস বা চাপের কারনে আমাদের গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যায় পরতে হয়। তাই, খালি পেটে রসুন খেলে এটি আমাদের স্নায়বিক চাপ কমিয়ে এ সকল সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
ক্যানসার প্রতিরোধে রসুনের উপকারিতা : প্রতিদিন নিয়মিত কাঁচা ও রান্না রসুন সেবনের মাধ্যমে পাকস্থলী ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়। বেশ কয়েকটি গবেষণায় এই দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া নিয়মিত রসুন সেবনে শরীরে সব ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়।
শ্বসন : রসুন যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, ফুসফুসের কনজেশন, হাপানি, হুপিং কাশি ইত্যাদি প্রতিরোধ করে। রসুন এ সকল রোগ আরোগ্যের মাধ্যমে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।
যৌনক্ষমতা বৃদ্ধিতে রসুন এর উপকারিতা:
যৌনশক্তি বাড়াতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পন্ন ঔষধি কৌশল এবং মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা এখন প্রায় সেকেলে হয়ে পড়েছে। আজকাল যৌনশক্তি বাড়াতে প্রাকৃতিক কামোদ্দীপক বা যৌনশক্তি বর্ধক খাদ্যই অনেক বেশি কার্যকরী হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই বিবাহিত জীবনে যৌনতায় ফিট থাকতে হলে আপনাকে দৈনন্দিন খাবার দাবারের প্রতি পূর্ণ মনোযোগী হতে হবে। কারণ সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালো বোঝাপড়া থাকার পাশাপাশি দরকার স্বাস্থ্যকর যৌন জীবন।
অথচ প্রায়ই দেখা যায় যৌন সমস্যার কারনে সংসারে অশান্তি হয়, এমনকি বিচ্ছেদ পর্যন্ত হয়। তাই আগে থেকে সতর্ক থাকলেও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি নাও হতে পারেন আপনি। আপনার যৌন শক্তি বৃদ্ধির জন্য কোন প্রকার ঔষধের প্রয়োজন নেই, তার জন্য দৈনন্দিন পুষ্টিকর খাবার দাবারই যথেষ্ট।
আপনার খাবার মেনু তে নিয়মিত দুধ, ডিম এবং মধু রাখুন আর নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করুন, তাহলে যৌন দুর্বলতায় ভুগবেন না।
যৌন সমস্যা থাকলে এখনই নিয়মিত রসুন খাওয়ার গড়ে তুলুন। স্মরণাতীতকাল থেকেই নারী পুরুষ উভয়েরই যৌন উদ্দীপনা বাড়াতে এবং জননাঙ্গকে পূর্ণ সক্রিয় রাখতে রসুনের পুষ্টিগুণের কার্যকারিতা সর্বজনস্বীকৃত। রসুনে রয়েছে এলিসিন নামের উপাদান যা যৌন ইন্দ্রিয়গুলোতে রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়।
জেনে নিন ব্যবহার পদ্ধতি
পুরুষের যৌন অক্ষমতার ক্ষেত্রে রসুন খুব ভালো ফল দিয়ে থাকে। রসুনকে ‘গরীবের পেনিসিলিন’ বলা হয়। কারণ এটি অ্যান্টিসেপ্টিক হিসাবে কাজ করে আর এটি অতি সহজলভ্য সবজি যা আমারা প্রায় প্রতিনিয়ত খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে থকি। আপনার যৌন ইচ্ছা ফিরে আনার ক্ষেত্রে এর ব্যবহার খুবই কার্যকরী। কোন রোগের কারণে বা দুর্ঘটনায় আপনার যৌন ইচ্ছা কমে গেলে এটি আপনাকে তা পুনরায় ফিরে পেতে সাহায্য করে। এছাড়া যদি কোন ব্যক্তির যৌন ইচ্ছা খুব বেশী হয়বা তা মাত্রাতিরিক্ত হয় যার অত্যধিক প্রয়োগ তার নার্ভাস সিস্টেমের ক্ষতি করতে পারে এমন ক্ষেত্রে ও রসুন বেশ কার্যকর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি মিলিলিটার শুক্রাণুতে ২০ মিলিয়নের কম স্পার্ম থাকলে যেকোনো পুরুষ অনুর্বর হতে পারেন। বাজে খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, অ্যালকোহল, অনিয়ন্ত্রিত জীবন, ব্যায়ামে অনীহা প্রভৃতি কারণে দিন দিন অনুর্বরতা বাড়ছে। এক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক মসলা রসুন। কেননা সুস্থ Semen (বীর্য) তৈরিতে রসুনের জুড়ি মেলা ভার।
ব্যবহার প্রণালী :-
প্রতিদিন নিয়ম করে কয়েক কোয়া কাঁচা রসুন খেলে শরীরের যৌবন দীর্ঘ স্থায়ী হয় । যারা পড়ন্ত যৌবনে চলে গিয়েছেন, তারা প্রতিদিন দু’কোয়া রসুন খাঁটি গাওয়া ঘি-এ ভেজে মাখন মাখিয়ে খেতে পারেন। তবে খাওয়ার শেষে একটু গরম পানি বা দুধ খাওয়া উচিত। এতে ভালো ফল পাবেন।
যৌবন রক্ষার জন্য রসুন অন্যভাবেও খাওয়া যায়। কাঁচা আমলকির রস ২ বা ১ চামচ নিয়ে তার সঙ্গে এক বা দুই কোয়া রসুন বাটা খাওয়া যায়। এতে স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের যৌবন দীর্ঘস্থায়ি হয়।
রসুনের সতর্কতা ও ক্ষতিকর দিক :-
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে পুষ্টিবিজ্ঞানের তথ্যানুসারে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে রসুনের কয়েকটি ক্ষতিকর দিক এখানে জানানো হল।
যকৃতের ক্ষতি: রক্ত পরিশোধন, চর্বি ও প্রোটিন বিপাক, শরীর থেকে অ্যামোনিয়া অপসারণ ইত্যাদি হল যকৃতের অন্যতম কাজ। গবেষণা বলে, রসুনে থাকা ‘অ্যালিসিন’ উপাদান যকৃতে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে যদি মাত্রাতিরিক্ত রসুন খাওয়া হয়।
ডায়রিয়া: খালি পেটে রসুন খেলে ডায়রিয়া হতে পারে। কারণ রসুনে আছে সালফার যা পেটে গ্যাস তৈরি করে এবং ডায়রিয়া হওয়ার পেছনে এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকে।
দুর্গন্ধ: রসুন বেশি খেলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। এর প্রধান কারণ রসুনে থাকা সালফার।
বমি ও বুক জ্বালাপোড়া: যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, খালি পেটে তাজা রসুন সেবন করলে বুক জ্বালাপোড়া, বমিভাব ও বমি হতে পারে। হার্ভার্ড মেডিকাল স্কুলের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, রসুনের এমন কিছু উপাদান আছে যা জিইআরডি বা গ্যাস্ট্রোয়েসোফাজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ হওয়ার কারণ।
ঘাম বাড়ায়: একাধিক ক্লিনিকাল স্টাডিতে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে রসুন সেবন করলে ঘাম বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রক্তপাত বাড়ায়: রক্তের ঘনত্ব কমানোর প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে খ্যাতি আছে রসুনের। তাই যারা ‘ওয়ারফারিন’ ‘অ্যাসপিরিন’ ইত্যাদি ‘ব্লাড থিনার’ ধরনের ওষুধ সেবন করেন তাদের অতিরিক্ত রসুন খাওয়া উচিত হবে না। কারণ এতে রক্ত অতিরিক্ত পাতলা হয়ে আভ্যন্তরীন রক্তপাত শুরু হতে পারে।
গর্ভবতী নারীর জন্য নয়: গর্ভবতী নারীদের রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ এতে ‘লেইবার পেইন’ বা প্রসব বেদনা বেড়ে যেতে পারে। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েদেরও রসুন থেকে দূরে থাকতে হবে কারণ তা দুধের স্বাদ পাল্টে দেয়।
মাথা ঘোরানো: রসুন বেশি খাওয়ার কারণে রক্তচাপ কমে যেতে পারে, ফলে দেখা দিতে পারে নিম্ন রক্তচাপের বিভিন্ন উপসর্গ।
দৃষ্টিশক্তির সমস্যা: অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার কারণে ‘হাইফিমা’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ ‘আইরিস’ ও ‘কর্নিয়া’র মাঝে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে। ফলাফল হারাতে পারে দৃষ্টিশক্তি।
নারী যৌনাঙ্গের প্রদাহ: নারী যোনাঙ্গে ‘ইস্ট’জনীত প্রদাহের চিকিৎসা চলাকালে রসুন থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ রসুন নারী যৌনাঙ্গের সংবেদনশীল টিস্যুতে অস্বস্তি সৃষ্টি করে।