কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম

আর মাত্র ১ দিন পরে পবিত্র কোরবানির ঈদ বা ঈদুল আযহা। এটি পবিত্র হজ এর একটি অংশ। যারা যারা হজ করতে যায় তাদের কোরবানি করতে হয়। আর আমরা যারা পবিত্র কাবায় যেতে পারি নাই,তারা নিজ নিজ জায়গা থেকে বা সুবিধা মতো স্থানে কোরবানি করতে পারবো। কোরবানি করা ওয়াজিব তাই আমরা আমাদের সামর্থ মতো কোরবানি করবো ইনশা আল্লাহ।

পবিত্র কোরআনুল কারিমে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে: ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।’ (সুরা আল-ইমরান, আয়াত: ৩১)
আমরা যে কোরবানি করবো তা যেন হালাল হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। হালাল টাকা দিয়ে কোরবানির পশু কিনতে হবে ,অন্যথায় কোরবানি হবে না। তাই কোরবানি করার আগে এই সব জেনে নেওয়া দরকার।

অন্যদিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা যখন জবাই করবে, তখন ইহসানের (আসানির) সাথে জবাই করো, আর তোমাদের ছুরিগুলো খুব ভালোভাবে ধারালো করে নাও, যাতে তোমরা তোমাদের জবাইকৃত পশুকে বেশি কষ্ট না পায়।’ (সহিহ মুসলিম)

সঠিক নিয়মে কোরবানির পশু জবাই

কোরবানির পশু শোয়ানোর পর যেন কিবলামুখী হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। পশু কোরবানি করার নিয়ম কেবল মুখ করে। পশ্চিম দিকে যেহেতু আমাদের কিবলা সেই হিসেবে পশ্চিম দিকে হয়ে আমরা সালাত আদায় করে থাকি। তাই যাতে পশুর মুখকেবল দিকে হয় আমরা খেয়াল রাখব। অর্থাৎ, পশুকে বাঁ-পাজরের ওপর, দক্ষিণ দিকে মাথা দিয়ে কিবলামুখী করে শোয়াতে হবে। এভাবেই পশুকে শোয়ানো উত্তম। কোরবানির পশুটিকে এভালোভাবে ধরতে বা বেঁধে নিতে হবে যেন জবাইয়ের সময় কোনো সমস্যা না হয়।

মরুভূমিতে উট কোরবানি করতে দেখা যায়। উট দাঁড়িয়ে কোরবানি দেয়া হয়,উটের বুক থেকে ঘাড় প্রজন্ত যে প্রধান রক্তবাহী রগটি থাকে তা দাঁড়ানো অবস্থায় কেটে দিতে হয়। এর ফলে রক্ত ক্ষরণ হতে হতে উট নিজেই মাটিতে ঢলে পরে। তারপরে ধারলো ছুরি দিয়ে বাকি কাজ গুলো করতে হবে। তবে সমাধানে কাজ করতে হবে সব সময়।

আরো পড়ুন : কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হয় বীমা করার আগে ?

কোরবানির পশু জবাই করার সময় আমাদের কে ছুরি গুলো ভালোভাবে ধারালো করে নিতে হবে। ধারালো ছুরি ব্যবহার করলে পশু কোরবানি করার সময় বেশি কষ্ট পায় না। আগেভাগেই শান দিয়ে খুব ধারালো করে নিতে হবে। কোরবানি দেয়ার সময় সূরা পরে নিতে হবে ,তবে সূরা না বললেও কোরবানি হবে। শুধু ‘বিসমিল্লাহ’ বললেও চলবে। পশুর গলায় ছুরি চালানোর সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলতে হবে। তবে ওযু অবস্থায় থাকতে হবে ,শালীন ভাবে কাপড় পড়ি ধান করতে হবে।

সতর্কতা

খেয়াল রাখবেন পশু শোয়ানোর ক্ষেত্রে যদি অনেক কষ্ট হলে বা বেগ পেতে হলে শোয়ানোর পর রেগে গিয়ে পশুর শরীরে কিল, ঘুষি, লাথি মারা বা আঘাত করা যাবে না। নিজের কোরবানি নিজের হাতে করা উত্তম। আপনার যদি অভ্যাস না থাকে বা ভয় করে থাকেন তাহলে অন্য কারো কাছ থেকে তা করে নিতে পারেন। কিন্তু তার পারিশ্রমিক তাকে দিয়ে দিতে হবে। লক্ষ রাখবেন জবাই করার সময় ডান হাতে বা উভয় হাত দিয়ে ছুড়ি ধরতে হবে। তবে কোনো ক্রমেই শুধু বাঁহাত ব্যবহার করে জবাই করা উচিত নয়। ছুরি চালানোর সময় পশুর গলার মূল তিনটি অঙ্গ কেটে দিতে হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে খাদ্যনালি, দ্বিতীয়টি শ্বাসনালি, তৃতীয়টি হচ্ছে শ্বাসনালির দুই পাশে দুটি রগ রয়েছে সে দুটি। যদি এই ভাবে করা হয় তাহলে জবাই করা পশু কিছুক্ষনের মধ্যে নিস্তেজ হয়ে পড়বে। এই ভাবে কোরবানি করা সুন্নত।

আরো পড়ুন : আমরা কিভাবে ধূমপান ছাড়তে পারি ?

আমাদের দেশে অনেকেই গরু জবাই করতে গিয়ে ছুরি চালানোর পর ছুরির ধারালো বা সুচালো মাথা দিয়ে খোঁচাখুঁচি করেন, মেরুদণ্ডের সঙ্গে ঘাড় পর্যন্ত যে স্পাইনাল কর্ড রয়েছে, সেটির রগ কাটার জন্য চেষ্টা করেন। এ ধরনের খোঁচাখুঁচি কোনোক্রমেই উচিত নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, এভাবে খোঁচাখুঁচির ফলে পশুটি মৃত্যুর আগেই একবার হার্টফেল করে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত।

হাদিস

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উল্লিখিত হাদিসটির মাধ্যমে আমরা যা বুঝি তা হচ্ছে,কোরবানির পশুকে আরামের সহিত জবাই করতে হবে, যাতে পশুটি ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় কসাই অথবা যারা গরুর গোশত কাটার জন্য আসে, তারা পশু নড়াচড়া করা অবস্থায় পায়ের রগ কাটা শুরু করে দেয়। এটা করলে পশুকে সুন্নত পন্থায় জবাই করা হয় না। অনেক সময় এভাবে জবাই করাকে ‘জবাই করা বলে না’ বরং ‘হত্যা করা বলে’। আল্লাহ আমাদের জবাই করার নির্দেশ দিয়েছেন, হত্যা করতে নয়।

তাই আমরা যারা কোরবানি করি তাদের এই নিয়ম গুলো সম্পর্কে জানতে হবে। আমাদের কোরবানিটি যেন সঠিক হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা হাল টাকা দিয়ে কোরবানি করবো ,অন্যথায় আমাদের কোরবানি হবে না। তাই কোরবানি করার আগে আমাদের এই সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। যাতে আমাদের কোরবানি সম্পূর্ণভাবে সঠিক হয় এবং এর জবাই প্রক্রিয়া রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দেখানো সুন্নতমতে হয়। আল্লাহ আমাদের জেনে-বুঝে নিয়মানুযায়ী কোরবানির পশু জবাই করার তাওফিক দিন। আমিন।

আরো পড়ুন : বাংলাদেশ সচিবালয়ে নিয়োগ প্রকাশ

আমাদের এই পোস্টি পরে যদি আপনাদের ভালোলাগে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন। এই রকম পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সব সময় আপডেট  সংবাদ প্রচার করে থাকি। …..