বর্তমান প্রায় সবার ব্যাক পেইন অর্থাৎ কোমরের, পিঠে বা মাজার ব্যথা হতে পারে। অধিকংশ মানুষই জীবনের কোন না কোন সময় ব্যাক পেইন বা কোমর ব্যথাজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। আমাদের দেশে প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে চারজন জীবনের কোন না কোন সময়ে এই সমস্যায় ভোগেন। ওষুধ না খেয়েও আপনার ব্যাক পেইন বা কোমর ব্যথা দূর করতে পারেন।
আসুন জেনে নেই, ব্যাক পেইন কেন হয় ? :-
অনেক কারণেই ব্যাক পেইন হতে পারে। মূলত মেরুদণ্ড বা স্পাইন-সম্পর্কিত ব্যথাকেই আমরা ব্যাক পেইন বলা বলে থাকি। স্নায়ু, পেশি, হারজোড় ইত্যাদি কারণেই ব্যাক পেইন দেখা যায়। আমাদের অসাবধানতা (Carelessness) ও কিছু বদ অভ্যাসের কারণে সাধারণত ব্যাক পেইন বা কোমরে ব্যাথা হয়ে থাকে। নিম্নে কিছু কারণসমূহ তুলে ধরা হলো।
১. অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে: অনেকেই অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে একই ভঙ্গিতে কাজ করেন। এতে দেখা যায়, কোমরে ব্যথা প্রচণ্ড হয়ে থাকে। দীর্ঘক্ষণ একটানা বসে কাজ করলে ব্যাক পেইন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
২. ধূমপান : দেখাযায় অনেকেই ধূমপান করে , এতে ব্যাক পেইন বা কোমরে ব্যাথা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৩. ড্রাইভিং করলে: দীর্ঘক্ষণ ধরে ড্রাইভিং করলে বা বেশি সামনে ঝুঁকে গাড়ি চালালে কোমর ব্যথা হতে পারে। ড্রাইভিংয়ের সময় পেছনে কিছু সাপোর্ট না থাকলে ব্যাক পেইন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৪.শুয়ার কমবেশি হলে : অনেকেই শুয়ে বা কাত হয়ে বই পড়েন বা অন্য কাজ করেন, তাঁদের মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও ব্যথা অনুভূত হয়।
৫. ভারী জিনিস উঠতে সতর্কতা : অনেকে ভারী জিনিস সঠিক নিয়মে তুলতে পারেন না। ফলে মেরুদণ্ডে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে এবং তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যথা হয়।
৬. সামনে-পেছনে ঝুঁকে বসলে: বসার চেয়ার টেবিল ঠিকমতো না বসলে বা সামনে-পেছনে ঝুঁকে বসলে কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
৭. বাইক ও বাইসাইকেল: অনেকেই বাইক ও বাইসাইকেল ড্রাইভিং করে থাকে। বেশি ও দীর্ঘক্ষণ বাইক ও বাইসাইকেল ড্রাইভিং করার ফলে ব্যাক পেইন বা কোমরে ব্যাথা হয়ে থাকে।
এছাড়াও আরথ্রাইটিস, স্পন্ডাইলাইটিস (Spondylitis) বা হাড়ের প্রদাহ, স্নায়ুর রোগ বা ইঞ্জুরি ইত্যাদি কারণেও কোমর ব্যথা হতে পারে।
ব্যাক পেইনের সতর্কতা সমূহ :
ব্যাক পেইন বা কোমরে ব্যথার যেসকল উপসর্গ দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে এবং একজন চিকিৎসক বা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে । নিম্নে উপসর্গগুলো তুলে ধরা হলো।
- যদি ব্যথার তীব্রতা প্রচন্ড আকার ধারণ করে এবং রেস্ট নেওয়ার পরেও ব্যাথা না কমে।
- যদি ব্যাক পেইনর সাথে সাথে প্রস্রাব ও পায়খানার কোন পরিবর্তন দেখা দেয়।
- যদি ব্যথার সাথে সাথে দূর্বলতা, অবশ ভাব বা পায়ে ঝিম ঝিম অনুভুতি হয়।
- যে কোন প্রকার স্টেরয়েড ওষুধ খাওয়ার পর যদি ব্যথা শুরু হয়।
- যদি আপনার অতিরিক্ত সিগারেট বা মদ পান -এর বদভ্যাস থাকে।
- যদি ব্যাক পেইনর সাথে জ্বর থাকলে।
- আঘাত জনিত কারণে বা কোন প্রকার ট্রমা হলে।
- যদি ব্যথার সাথে সাথে শরীলের ওজন কমতে থাকে।
- যদি ব্যথা এক বা দুই পায়েই নেমে যায়, বিশেষ করে হাটুর নিচে থাকে।
আসুন জেনে নেই , ওষুধ ছাড়াই কীভাবে ব্যাক পেইন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ওষুধ ছাড়াও ব্যাক পেইন বা কোমরের ব্যাথা নিরাময় করা যায়। এর জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে এবং ব্যায়াম করতে হবে। নিম্নে ওষুধ ছাড়াও ব্যাক পেইন থেকে মুক্তির সমাধান আলোচনা করা হলো। নিম্নে ওষুধ ছাড়াও ব্যাক পেইন থেকে মুক্তির সমাধান আলোচনা করা হলো।
১.অফিসে পিঠ সোজা করে বসা: ব্যাক পেইন হলে পিঠ বাঁকা ভাবে নয়, সোজা হয়ে বাসার অভ্যাস করুন। প্রথমেই আপনাকে যে কাজটি করতে হবে, সেটি হলো পিঠ সোজা করে বসতে ও চলাফেরা করতে হবে। অফিসে বা কাজের ক্ষেত্রে বসবার জায়গাটা যেন উঁচু থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
২. ঘুমানোর সময় দুই পায়ের নিচে বালিশ : শোয়ার সময় দুই পায়ের নিচে বালিশ বা এই জাতীয় কিছু একটা দিয়ে পা উঁচু করে রাখতে হবে।
৩. ভারী কাজ করা যাবে না: অতিরিক্ত ভারী ব্যাগ নিয়ে ঘোরাফেরাও হতে পারে আপনার পিঠে ব্যথার কারণ। ল্যাপটপ যদি অফিসে নিয়ে আসতেই হয় তাহলে এক স্ট্র্যাপের ব্যাগের পরিবর্তে ব্যবহার করুন ব্যাগপ্যাক, যাতে কাঁধ ও পিঠের সব জায়গায় সমান চাপ পড়ে। ভারী পানির বালতি বা ভারী কোনো ব্যাগ বহন করলে ব্যাক পেইন হতে পারে। তাই ভারী কিছু বহন করা যাবে না।
৪. উপযুক্ত বিছানা তৈরী : যদি আপনার ব্যাক পেইন বা কোমরে ব্যাথা থাকে তবে নরম বিছানাকে বিদায় দিতে হবে। নরম বিছানা ত্যাগ করে শক্ত বিছানায় ঘুমানোর অভ্যাস করুন যেন আপনার পিঠ সোজা হয়ে থাকে। উচু বালিশ ব্যবহার করা থেকে বিরত তাকুন। পারলে বালিশ ব্যবহার করাও ছেড়ে দিতে পারেন অথবা নিচু বালিশ ব্যবহার শুরু করুন। কাত হয়ে শোয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে পিঠ যেন সোজা থাকে।
৫. বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল: বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানোর কারণে ব্যাক পেইন হতে পারে। এক্ষেত্রে বাইসাইকেল চালানো পরিহার করতে হবে।
৬. বিশ্রাম নিন: ব্যাক পেইন হলে যেটি করতে হবে, সেটি হলো বিশ্রাম নিতে হবে। ব্যাক পেইন ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্রামের বিকল্প নেই।
৭. সেঁক ও বরফ: ব্যাক পেইন সারাতে সেঁক ও বরফ দেয়া যেতে পারে। কখনও কখনও সেঁক দিলে অথবা বরফ দিলে উপকার পেতে পারেন। এক্ষেত্রে অনেক দিন ব্যাথা থাকলে গরম সেঁক দেয়া যেতে পারে। আর আঘাত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা সারাতে বরফ দিতে হবে।
৮. ডাক্তারের পরামর্শ ব্যায়াম: ব্যাক পেইন সারাতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করা উত্তম। ব্যথা ভালো হওয়ার জন্য অনেক সময় ব্যায়াম খুব উপকারী । নিম্নে কিছু ব্যায়াম দেওয়া হলো।
- দেয়ালে হাত রেখে দাঁড়ান। এক পা পিছিয়ে রাখুন। খেয়াল রাখবেন সামনের পায়ের হাঁটু ভাঙবে কিন্তু পেছনের পা সোজা থাকবে। ৩০ সেকেন্ড থাকুন। অন্য পায়ে করুন। প্রতি পা ৩ বার করে করবেন।
- দরজার পাল্লায় দুই হাত রেখে দাঁড়ান। এপর সামনের দিকে এক পায়ের হাঁটু ভাঁজ করতে থাকুন যতক্ষণ না কাঁধের পেশিতে টান পড়ছে। ৩০ সেকেন্ড থাকুন। অন্য পায়ে রিপিট করুন। এভাবে ৩-৪ বার করুন।
প্রতিটি ব্যায়াম করার সময় ৬-৭ বার গভীর শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ুন। লক্ষ্য রাখুন শরীরের কোথাও যেন খুব চাপ না পড়ে। সব থেকে ভালো হয় সকালে ব্যায়াম করলে, তবে যদি করা সম্ভব না হয়, তাহলে দিনের যেকোনো সময় ব্যায়াম করে নিন।
৯. আদা চা : সবার বাড়িতেই মসলার জন্য অদা বেবহার করে। প্রাচীন কাল থেকে অদা ভেষজ চিকিৎসার একটি অন্যতম চিকিৎসা। অদা কেটে কেটে চাকা করে গরম পানিতে হালকা লবন ছিটিয়ে অদা চা করে পান করতে পারেন। এতে তাৎক্ষণিক সজীবতা অনুভব করবেন।
১০. উঁচু হিল থেকে বিরত থাকুন : মেয়েদের পিঠে ব্যথার অন্যতম কারণ হলো উঁচু হিল পরা। উঁচু হিল পরলে আপনার পায়ের উপরে চাপ পড়ে অনেক বেশী, আর এই চাপ সামলাতে মেরুদন্ডের নিচের অংশ পিছনের দিকে বেকে থাকে, যার ফলে বিভিন্ন স্নায়ুর ওপর চাপ পড়ে আর শুরু হয় পিঠে ব্যথা।
১১. সর্বশেষ চিকিৎসা : ব্যথা অনেক বেশি হলে ওষুধ খেতে পারেন তবে ওষুধ খাবার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা উচিত হবে না।