আলকুশি আমাদের দেশের গ্রাম বা শহরে এটি কম বেশি সবারই পরিচিত একটি উদ্ভিদ। আলকুশি বীজের উপকারিতা অনেক গুণ বেশি। তবে এই আলকুশীকে গ্রামে বিচুটি বলেও ডাকা হয়ে থাকে। এই আলকুশি বাড়ির আশেপাশে বা জংগল দেখা যায়।
এছাড়াও গ্রামেও এখন এ গাছ দেখতে পাওয়া যায় । বিশেষ করে এই ফল যদি গায়ে লেগে যায় তাহলে চুলকানি ও সেখানে ফুলে যায় । আলকুশি গাছের লতা,পাতা ও ছোট লোমে আবৃত থাকে। এই আলকুশি পাতা দেখতে ট্রাইফোলিয়েট বা তিনপাতা বিশিষ্ট।
এই আলকুশি ফল বড় বা শটি প্রকৃতির কিছুটা বাকা ধূসরবর্ণের হয়। আলকুশি তে একটি ফলে ৫-৬ টি চেপ্টা পীতবর্ণের বীজ থাকে। তবে এই গাছের ফুল ও ফল প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। আলকুশি ফল অনেকটা শিমের মত ৪ থেকে ৬টা বীজ থাকে। আলকুশি বিভিন্ন ধরণের ওষধি গুণাগুণ রয়েছে । সুতরাং এখন দেখে নেওয়া যাক এই আলকুশির উপকারিতা গুলো কি।
আলকুশি বীজের উপকারিতা
বুকে কফ হলে: অনেকের এই সমস্যা দেখা যায়, তখন এই আলকুশীর মূল পানি দিয়ে প্র্রথমে সিদ্ধ করে নিতে হবে । তারপর সকাল বিকেল নিয়মিত খেলে বুকে কফ জমায় ভালো হয়ে যাবে।
রক্তপিত্ত: অনেকের রক্তপিত্ত হয়ে থাকে,আর এই রক্তপিত্ত হলে ২০ গ্রাম আলকুশীর বীজ আগের রাতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। এর পরের দিন ভিজিয়ে রাখা বীজ খোসা ছাড়িয়ে একটু থেতো করে পাচ থেকে ছয় গ্রাম পানিতে সিদ্ধ করে আনুমানিক তিন কাপ করে নিতে হবে। এরপর পানি মিশিয়ে নিতে হবে পানি মিশানো হয়ে গেলে, সারাদিন তিন থেকে চার বার খেতে হবে। এই নিয়মে খেলে তাহলে রক্তপাত দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে।
পেটের সমস্যায়: যদি আপনার পেটের সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে আপনি প্রথমে আলকুশির বীজ চূর্ণ করে পানি সহ সেবন করবেন। সেবন করলে পেট ঠান্ড হয়ে যাবে। এছাড়াও বায়ু কমবে এবং পেটের সবরকম সমস্যা দূর হবে ।
ভগ্নধ্বজে: প্রায় এই রোগটি হয়ে থাকে। তবে এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আলকুশি বীজকে রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খোস ছাড়িয়ে বীজগুলো কে সমান পরিমাণ দুধে পানিতে মিশিয়ে সিদ্ধ করে। তারপর এই বীজ শিলে পিষে তাকে ঘিয়ে ভেজে চিনি মিশিয়ে হালুয়ার মতো করে রাখতে হবে। তারপর এটি নিয়মিতখেলে এই রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি যে এই আলকুশি একটি ওষধি গাছ। এই ওষধি গাছের তবে রয়েছে অনেক গুনাগুণ। এই গাছ ব্যবহার করে বিভিন্ন অসুখ থেকে রেহাই পাওয়ার সুয়োগ রয়েছে। সুতরাং দেখে নিন আলকুশি বীজ এর উপকারিতা:-
আলকুশি এর উপকারিতা
- যদি কোন কাজ করার সময় পোকা মাকড়ের কামড়ে বা বিছের দংশন করলে, এই আলকুশীর বীজের গুড়া সেই কামরানো স্থানে লাগালে দ্রুত যন্ত্রণা কমে যায়।
- এই আলকুশির শিকড়ের রস এক চামচ করে, লাগাতারে একমাস খেলে আমাশয় রোগ ভালো হয়ে যায়।
- বিশেষ করে এই আলকুশির পাতার রস ফোঁড়ায় দিলে দ্রুত সেটি ফেটে যায়। এর পর সেটি দ্রুত ভালে হয়ে যায়।
- এই আলকুশির বীজ চিনি ও দুধসহ সেদ্ধ করে নিয়মিত খেলে বাত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এমনকি শারীরিক দুর্বলতাও দূর হয়।
- এই আলকুশি খাওয়ার ফলে শুক্র বৃদ্ধি ও গাঢ় হয় এবং স্নায়বিক দুর্বলতা দূর করে।
- এই আলকুশির শিকড়ের রস খাওয়ার ফলে সর্দি-কাশি ও জ্বর ভালো হয়।
- এই আলকুশির শিকড়ের মানুষের মূত্রযন্ত্রের ও মূত্রবর্ধক রোগ নিরাময়ে বেশ কার্যকারি ভূমিকা পালন করে থাকে।
- আলকুশির কাণ্ডের রস মানুষের চোখের রোগের ক্ষেত্রেও অনেক উপকারি ভূমিকা পালন করে।
এই আলকুশির শিকড়ের রস বিশষ করে পশুপাখির গায়ের ঘায়ে লাগালে ক্ষত দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
আলকুশি গাছ কোথায় পাওয়া যায়
আলকুশি গাছ ফলের আদি স্থান মেক্সিকো ও গুয়াতেমালা। এই গাছ পরে আমেরিকা ও ক্যারাবিয়ান দেশগুলোতে বিস্তার ঘটে। বিশেষ করে যেসব দেশে বেশি আলকুশি উৎপন্ন হয় তার মধ্যে চিলি, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, আমেরিকা, কলম্বো, ব্রাজিল, পেরু, কেনিয়া, রুয়ান্ডা,তবে চীন অন্যতম।
এই আলকুশি চাষ ভিয়েতনাম, অধুনা শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইনস, থ্যাইল্যান্ড, ইসরাইল, নেদারল্যান্ডস ও ভারতে এ ফলের চাষের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ৬০-৭০ জন উৎসাহী চাষি এ ফল সফলভাবে চাষ করছে। কিন্তু তাদের এসব গাছ বীজ থেকে তৈরি এবং আলকুশি গাছের সংখ্যা খুব কম, দু-চারটের বেশি নয়।
আলকুশি চাষ পদ্ধতি
জলবায়ু ও মাটি: আলকুশি গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি, আর্দ্র ও গরম আবহাওয়া এ ফল চাষের জন্য বেশি উপযোগী। কিন্তু ফুল ফল ধরাকালে বেশি গরম এবং শুকনা বাতাস ও ফ্রোস্ট সহনশীলতা এ ফলের অনেক কম। তবে শীত শেষে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ১৮০-২৫০ সেন্টিমিটার তাপমাত্রা ফুল ফোটা ও ফল ধরার জন্য বেশি উপযোগী। আলকুশি এর ফল বড় হওয়ার জন্য ২৫০-৩৫০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে ভালো হয়।
সব ধরনের মাটিতেই প্রায় আলকুশি ফলানো যায়। কিন্তু বিশেষ করে পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত লাল মাটি ও এঁটেল মাটিতেও ভালো ফলন পাওয়া যায়। আলকুশি চাষের জন্য সয়েল পিএইচ মাত্রা ৫-৭ বেশি উপযোগী। কিন্তু গাছের জলাবদ্ধ সহনশীল ক্ষমতা নেই। এর কারণে পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত ও পানির স্তর অপেক্ষাকৃত নিচে যেন থাকে, তবে সারা দিন যেন রোদ পায় এবং অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি এ ফল চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। তবে আলকুশি চাষের জন্য মাটি অবশ্যই ভালো উর্বর ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ এবং পানি নিষ্কাশন হতে হবে।
বীজ থেকে চারা উৎপাদন: এই আলকুশির পুষ্ট ফলের বীজ সংগ্রহ করে তা থেকে চারা তৈরির জন্য বীজতলায় বীজ রোপণ করতে হয়। এরপর বীজ সংগ্রহের পরপরই বীজ বপন করতে হয়। কারণ সংরক্ষিত বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বেশি থাকে না।
কিন্ত ৫০ সে. তাপমাত্রায় বীজ সংরক্ষণ করা হলে অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা কয়েক মাস বাড়ানো যায়। এই আলকুশি বীজতলা বা টবে বীজ বসানোর আগে সমপরিমাণ মাটি, মোটা বালু এবং কোকোডাস্ট মিশ্রিত মিডিয়া তৈরি করে নিতে হবে।
বিশেষ করে বীজ বসানোর আগে বীজের উপরি ভাগের আবরণ সরিয়ে দিলে বীজ বেশি গজায়। তবে কিন্তু এ ফলের বীজ বসানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন বীজের চওড়া ভাগ নিচে থাকে। আর বসানো বীজের উপরি ভাগ সামান্য পরিমাণ পুরু (২/১ ) মোটা লাল বালু ও কোকোডাস্ট মিশিয়ে ঢেকে দিতে হয়। বসানো বীজের মাটি ছত্রাকনাশক দিয়ে শোধন করে নেয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: পেস্তা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বীজতলার মাটিতে যেন রসের অভাব না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং নিয়মিত ঝর্ণা দিয়ে হালকা সেচ দিয়ে চারা গজাতে সহায়তা করতে হবে। কাপে বা প্লাস্টিক বোতলের উপরি ভাগ কেটে তাতে পানি দিয়ে বীজ বসানো হলেও বীজ থেকে চারা গজায়। এক্ষেত্রে বীজের ৩০% পানির ওপরে এবং ৭০% পানিতে ডুবানো অবস্থায় বীজ স্থাপনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপরিক্তে, এই প্রতিবেদনে আলকুশির বিভিন্ন রোগ নিরাময় ও ব্যবহার, এমনকি এর বীজ খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। যদি আপনি এর কোন কিছু ব্যবহার করতে চান অবশ্যই চিকিতসাকের পরামর্শ নিবেন। নতুবা কোন ক্ষতি হতে পারে।