আজকের প্রতিবেদনে আলোচনা করবো জনপ্রিয় একটি খাবার আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা নিয়ে। এই আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। মানুষের শরীরের ওজন, কোলেস্টেরল, রক্তে শর্করার পরিমাণ কমানোসহ বহু উপকার করে এই ভিনেগার। চলুন এবার আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা গুলো জেনে নেই।
জনপ্রিয় ফল আপেল থেকে গাঁজন বা ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় আপেল সিডার ভিনেগার তৈরি করা হয়। এই ভিনেগারে ৫-৬ শতাংশ অ্যাসেটিক এসিড থাকে। আর এই এসিড শরীরের জন্য উপকারি। এছাড়াও রয়েছে আপেল সিডার ভিনেগারে এন্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রচুর পরিমানে খনিজ লবণ।
আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা
এই আপেল সিডার ভিনেগার ব্যাকটেরিয়া নিধন করতে সাহায্য করে। তাই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত স্থান পরিষ্কার করতে এটি ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যভার করা হয় যেমনঃ আঁচিল, নখের ছত্রাক, উকুন, কানের ইনফেকশন উপশম করতেও এ ভিনেগার ব্যবহার করা যায়। এটি কয়েক হাজার বছর আগে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করার জন্য ভিনেগার ব্যবহার করা হতো। এমনকি খাবার সংরক্ষণ করতেও ব্যবহার করা হয় এই ভিনেগার।
এতে করে খাবারে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জন্মায় না। কেউ যদি প্রাকৃতিকভাবে খাবার সংরক্ষণ করতে চাইলে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। এই ভিনেগার ব্রনসহ ত্বকে ব্যাকটেরিয়াজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে খুব কার্যকারি ভূমিকা পালন করে থেকে। কিন্তু ত্বকে দিতে হলে ভিনেগারের সঙ্গে অবশ্যই পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে নেবেন। নতুবা কিছু সমস্যা হতে পারে।
ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য আপেল সিডার ভিনেগারের কার্যকারিতা
আপেল সিডার ভিনেগার ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী খাদ্য। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ যদি রাতে ঘুমানোর আগে মাত্র দুই টেবিলচামচ আপেল সিডার ভিনেগার খেলে, তার সকালে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ার গতি কমবে চার শতাংশ। আর যাদের ডায়াবেটিস নেই, তারাও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। কিন্তু যারা ইতোমধ্যে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঔষুধ খাচ্ছেন। অবশ্যই তাদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আপেল সিডার ভিনেগার খেতে হবে। নতুবা ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে আপেল সিডার ভিনেগার
বিশেষ করে শর্করা সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পর ভিনেগার খেলে দিনের পরবর্তী সময়ে সহজে ক্ষুধা লাগে না। অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া রোগে আক্রান্ত ১৭৫ জনকে নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে, প্রতিদিন আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস ওজন কমাতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে কমে পেটের মেদ। কিন্তু অবশ্যই খাবার গ্রহণের পরিমাণও কমাতে হবে, শুধু ভিনেগারই ওজন কমাবে না।
আপেল সিডার ভিনেগার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে
কোন এক প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে বর্তমান বিশ্বে অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ হৃদরোগ। হৃদরোগ বাড়ার করন রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ে। আর এই আপেল সিডার ভিনেগার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।
আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধী শক্তি
ক্যান্সার একটি মরন ব্যধি রোগ। আর রোগটি নিয়ে অনেকে বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এ ভিনেগার ক্যানসার কোষ নির্মূল ও টিউমার সারাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কিন্তু এটি এখনো সর্বব্যাপী স্বীকৃত নয়। তবে এনিয়ে আরও গবেষণা চলছে।
অ্যাপেল সিডার ভিনিগার খাওয়ার নিয়ম
এটি ব্যবহার করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো রান্নায় ভিনেগার ব্যবহার করা। ঘরে চাইনিজ তৈরির সময় বা সালাদেও দিতে পারেন ভিনেগার। এমনকি পানির সঙ্গে মিশিয়ে পানীয় হিসেবেও পান করতে পারে। অথবা এক গ্লাস পানিতে ১/২ টেবিলচামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করতে পারেন।
আপেল সিডার ভিনেগারে থাকা ব্যাকটেরিয়া শরীরের জন্য খুবই দরকারি। এই ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করে। এছাড়া ওজন কমানো থেকে শুরু করে রূপচর্চায় এর জুড়ি মেলা ভার। জেনে নিন কীভাবে বাসায়ই বানিয়ে ফেলবেন আপেল সিডার ভিনেগার।
আপেল সিডার ভিনেগার তৈরির নিয়ম
পথমে আপনাকে বাজার থেকে আপেল ক্রয় করে আন্তে হবে। এরপর ভালো দেখে তিনটি লাল আপেল বেচে নিতে হবে। সেই তিনটি লাল আপেল ভালো করে ধুয়ে কাপড় দিয়ে শুকনো করে মুছে নিন। তারপর ছোট ছোট টুকরা করে কাটুন আপেল। বিচি বা বিচির অংশ বাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ভালো একটি পরিষ্কার কাচের বয়াম ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিন। সব গুলো আপেলের টুকরো বয়ামে দিয়ে দিন। একদম যেন বয়ামটি ভরে না যায়।
দেড় থেকে দুই কাপ পানির মধ্যে ৩ টেবিল চামচ ব্রাউন সুগার গুলে নিন। বিশেষ করে স্টিলের চামচ ব্যবহার করবেন না। অবশ্যই কাঠের চামচ ব্যবহার করবেন। চিনি মিশ্রিত পানি আপেলের বয়ামে ঢেলে সুতি কাপড় দিয়ে বয়ামের মুখ আটকে দিন। এরপর সুন্দর করে রান্নাঘরের অন্ধকার কোনও স্থানে বয়ামটি রেখে দিন ৩ সপ্তাহ। তবে দুই দিন পর পর অবশ্যই ঢাকনা খুলে কাঠের চামচ দিয়ে আপেল চেপে দেবেন নিচের দিকে। তিন সপ্তাহ হয়ে গেলে পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিন ভিনেগার। যদি সামান্য ভিনেগার বয়ামে দিয়ে নিচে জমে থাকে তবে সেই অংশটুকুও নিয়ে নিবেন অবশ্যই। অর্গানিক আপেল সিডার ভিনেগার কাচের বয়ামে আরও সপ্তাহ দুয়েক রেখে তারপর ব্যবহার করুন।
আপেল সিডার ভিনেগার এর দাম কত
বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের আপেল সিডার ভিনেগার রয়েছে মানভেদে এসকল ভিনেগারের দাম 150 টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভিনেগার কেনার সময় কম দামি আর বেশি দামি ভিনেগার এর মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য পাওয়া যায়নি। তাই চেষ্টা করবেন মাঝারি দামের ভিনেগার কেনার জন্য কিন্তু অবশ্যই খেয়াল রাখবেন ভিনেগার যেন উৎপাদন ডেট বেশি দিনের না হয়। যদি ভিনেগার বেশি দিনের হয় তাহলে একটু সমস্যা হতে পারে। অতএব ভিনেগার কিনার সময় ভালো করে দেখে কিনবেন।
আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
অ্যালার্জিযুক্ত লোকেরা আপেল সিডার ভিনেগারের বিরূপ পার্শ্ব -প্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পারে। আপেল সিডার ভিনেগার এর অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ত্বকের রোগ বাড়াতে পারে। আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের ফলে ইনসুলিন গ্রহণকারী ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে প্রেসক্রিপশন নির্দেশিত ড্রাগগুলির সাথে মিথস্ক্রিয়া হতে পারে। তবে শুরুতে অবশ্যই খুব অল্প পরিমাণ ভিনেগার খাওয়া উচিত। খুব বেশি পরিমাণ ভিনেগার খেলে গলা জ্বলতে পারে। ক্ষয় হতে পারে দাঁতের এনামেল।
পানিতে না মিশিয়ে সরাসরি ভিনেগার খাওয়া কখনোই উচিত নয়। এ ভিনেগার রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে, এটা ঠিক। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে খাবার হজম হতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে। ফলে দেখা দিতে পারে ক্ষুধামন্দা। ডায়াবেটিস ও অন্য বেশকিছু রোগের ওষুধের সঙ্গে ভিনেগার খেলে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ভালো করে জেনেশুনে নিশ্চিত হয়ে ভিনেগার ব্যবহার করা উচিত।
খুব ভালো