আজকে সারাবিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রি একটি ফল নিয়ে আলোচনা করব। সেই ফলটির নাম হচ্ছে চেরি ফল। এই চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে। দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি খেতেও সুস্বাদু। এই ফল শুধু পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না। এ ফল সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য চাষ করা হয়। আবার অনেক সময় এই ফলকে বানিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। প্রুনাস অভিয়াম প্রজাতির চেরি ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। এই চেরি ফল চাষ করার জন্য কোন আবাদি জমিতে চাষের প্রয়োজন হয় না।
চেরি ফলে যে উপকারি উপাদান থাকে
আমরা জেনে নেই ১০০ গ্রাম চেরি ফলে যে সকল উপাদান থাকে তার মধ্যে থাকে শর্করা প্রায় ১২ গ্রাম, খাদ্য ফাইবার ১ দশমিক ৬ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, চিনি সাড়ে ৮ গ্রাম, ভিটামিন সি থাকে ১৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৬ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৯ গ্রাম, পটাসিয়াম ১৭৫ মিলিগ্রাম। এসব উপাদান আমাদের শরীরে সৌন্দয্য বৃদ্ধি করতে সহেতা করে। এছাড়াও অনেক ধরনের উপাদান থাকে চেরি ফল যা মানব দেহে নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ করে থাকে।
চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা
এই সৌন্দয্য ও স্বাদে ভরা এই চেরি ফলের উপকারিতা বলে শেষ করা সম্ভব নয়। চেরি ফল বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে কমবেশি চাষ হয়ে থাকে। আর এই চেরি ফলের বাণিজ্যিকভাবে যে প্রজাতির চাষ হয় সেটা প্রুনাস অভিয়াম। একটি প্রতিবেদনে চেরি ফলের উপাদান বলে শেষ করা সম্ভব নয়, চেরি ফলের মধ্যে রয়েছে অনেক উপাদান তার মধ্যে রয়েছে শর্করা, চিনি, ক্যালরি, ফাইবার, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদিসহ নানা উপকারি উপাদান।
নিচে সংক্ষিপ্ত চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা বলা হলো:
১। ক্ষত সারাতেঃ এই চেরি ফলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-সি রয়েছে। মানুষের শরীরে কোন যায়গায় কেটে গেলে বা ক্ষত হলে সেই কাটা বা ক্ষত পূরনে অসাধারন ভুমিকা পালন করে থাকে।
২। উচ্চ রক্তচাপঃ এই চেরি ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম যার পরিমান প্রায় ১৭৫ মিলিগ্রাম। আর এই পটাসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে থাকে। বিশেষ করে যাদের রক্ত চাপ রয়েছে তারা নিয়মিত চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা পাবেন।
৩। ডায়াবেটিসঃ একটি মরন ব্যাধির নাম ডায়াবেটিস। এই মরনব্যাধি জীবনে কখন চলে আসে বলা মুশকিল। নিয়মিত চেরি ফল খাওয়ার কারনে আপনার ডায়াবেটিস রোগ নিরাময় হবে।
৪। হার্টের রোগঃ এই চেরি ফল দেহে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে থাকে। যাদের হার্টের রোগ রয়েছে তাদের জন্য চেরি ফলের উপকারিতা অনেক।
৫।কোষ্ঠ্যকাঠিন্যঃ এই রোগটি যার একবার হয়েছে সে বুঝে কতো কষ্ট। আর এই চেরি ফল উচ্চ ফাইবার যুক্ত ফল, ফলে যাদের কোষ্ঠ্যকাঠিন্য রয়েছে তাদের এই ফলের উপকারিতা অনেক। নিয়মিত এই ফলটি খেলে সহজে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর হবে।
৭। ক্যান্সারঃ ক্যান্সারের মতো মারাক্তক রোগ প্রতিরোধ করে থাকে এই চেরি ফল। নিয়মিত চেরি ফলে খাওয়ার কারনে দেহে যে মরা সেল বা কোষ থাকে সেটা শক্তিতে পরিনত করে থাকে।
আরও পড়ুনঃ ক্যান্সার থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক ও বিকল্প উপায়
৮। বলিরেখা প্রতিরোধ করেঃ এই চেরি ফলের অন্যতম উপকারিতার দিক হলো বলিরেখা প্রতিরোধ করে এবং কোষের ক্ষয় রোধ করে থাকে। বিশষ করে মেয়েরা নিয়মিত চেরি ফল খাওয়ার কারনে নিজের ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখে, নিজেকে বুড়িয়ে হতে দেয় না সহজে।
৯। চর্বি কমাতেঃ ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারন চর্বি। আর চর্বি জমা হলে ওজন বাড়তে থাকে। চেরি ফল নিয়মিত খাওয়ার কারনে পেটে চর্বি জমতে দেয় না।
চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম
চেরি ফল খাওয়ার কখন খাব? এই নিয়ে অনেকের অনেক সমস্যা। আসলেই খাবার খাওয়ার আগে না পরে খাবেন চেরি ফল। চেরি ফল বা অন্য ফল খাওয়ার উপযুক্ত সময় সকালে খালি পেটে অথবা দিনের যেকোন সময় ক্ষুদার্থ মনে হলে ফল খেতে পারবেন।
চেরি ফলের দাম
এই ফলের পুষ্টিগুন অনেক। এই ফলের মধ্যে রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারি উপাদান। এক কেজি বিদেশি চেরি ফল বিক্রি হয় ২ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। পুষ্টিতে ভরপুর এই ফল উচ্চ শ্রেনীর মানুষ খেয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে চেরি ফলের চাষ শুরু হয়েছে।
চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা অনেক হওয়ার পিছনে অন্যতম কারন উপাদানগুলো। নিয়মিত চেরি ফল মেয়েদের দেহের গঠন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে থাকে। উপরের উপকারিতা ছাড়াও অনেক ধরনের উপকার করে থাকে চেরি ফল।
চেরি ফল কোথায় পাওয়া যায়
চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে নানা বিষয় নিয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও কূটনৈতিক রেষারেষি আছে। কিন্তু সম্প্রতি তা এক ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে নতুন এক বিতর্ককে কেন্দ্র করে। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে একটি প্রশ্ন: ‘চেরি ব্লসম’ গাছের আদি উৎপত্তি কোথায়? তিন দেশের প্রত্যেকেই বলছে, সুন্দর ফুলবিশিষ্ট এই গাছটির উৎপত্তিস্থল তাদের দেশই।
বিবিসির মাইকেল ব্রিস্টো জানাচ্ছেন, জাপান, চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়া – তিনটি দেশেই বসন্তকালে সাদা ও গোলাপী রঙের চেরি ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করাটা একটা জাতীয় প্রবণতা বলে মানা হয়। তিন দেশের লোকেরাই এ ফুলের জন্য পাগল। জাপানে তো এই ফুল দেশটির প্রতীকেই পরিণত হয়েছে বলা যায়।
কিন্তু গোল বাধে যখন ক’দিন আগে দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয় যে, চেরি গাছের সবচাইতে বিখ্যাত প্রজাতিটির উদ্ভব দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু প্রদেশে।
“সম্পূর্ণ বাজে কথা” – জাপানের এক উদ্ভিদতত্ববিদ পাল্টা জবাবে বললেন, এটা যে জাপান থেকেই এসেছে তাতে কোন সন্দেহই নেই।
চীনও বসে নেই। সেদেশের চেরি ব্লসম এসোসিয়েশন এ বিতর্কে যোগ দিয়ে বলেছে, এই গাছের আসল উৎপত্তিস্থল হচ্ছে চীনের হিমালয়সংলগ্ন অঞ্চলে। চেরি গাছের আদি উৎস কোথায় এ নিয়ে অনেক দিন ধরেই এই তিন দেশের মধ্যে বিতর্ক চলছে।
চেরি ফল চাষ পদ্ধতি
চেরি অতন্ত্য এক জনপ্রিয় ফল। চেরি ফল দেখতেও খুব সুন্দর, তাই হয়তো আপনিও আপনার বাড়ির ছাদ-বাগানে এই ফল চাষে আগ্রহী। হ্যাঁ, আপনি আপনার ছোট্ট ছাদ-বাগানে অনায়াসে চাষ করতে পারেন এই চেরি ফলের। কেমন হবে যদি আপনিও আপনার ছাদ বাগানে একটা ছোট টবের মধ্যে চেরি ফল পান! শুধু তাই নয়, এই ফলের সৌন্দর্যে বৃদ্ধি পাবে ছাদের শোভাও। তবে, এবার জেনে নিন কিভাবে আপনি সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করে চেরি ফলের চাষ (Cherry Cultivation) করবেন।
সাধারণত, চেরি গাছ একটু বড় গাছ হয়। তাই, এই গাছ চাষের জন্য একটি ১২ ইঞ্চির টব কিনতে হবে। প্রয়োজনে, এর থেকে বড় আকারের টব বা প্লাস্টিকের ড্রাম ব্যবহার করতে পারেন। তবে সবসময় আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে, জল নিকাশি ব্যবস্থা যেন খুব ভালো থাকে।
টবের মাটি প্রস্তুতি (Soil Preparation):
ছাদ বাগানে চেরি চাষের জন্য উপযোগী মাটি তৈরী করতে হলে, প্রথমেই যার প্রয়োজন তা হলো কোকোপিট। বাগানের মাটির সাথে নিম খোল, হারের গুঁড়ো , কোকোপিট এবং গোবর সার ভালো করে মাটির সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। গাছে লাগানোর আগে বেশিরভাগ মাটি উন্নত করে নেওয়া দরকার, যাতে গাছের বৃদ্ধি সঠিকভাবে হয়। মাটি তৈরী সময় মাথায় রাখতে হবে, মাটি একটু শুকালেই জল দিতে হবে। জল কম হলে এই গাছে ফুল, ফল কিছুই হয়না। কোনো ছায়ায় গাছটি রাখা যাবেনা, সূর্যের আলোয় এই গাছ রাখা জরুরি। তবেই, গাছে ফুল আসবে।
সার প্রয়োগ (Application of fertilizer):
গাছে সময় মতো চার দেওয়া অতন্ত্য জরুরি। নাহলে, এই গাছের বৃদ্ধি সঠিকভাবে হবেনা। এই গাছের স্যারের জন্য কিছুটা কম্পোস্ট, কিছুটা হার গুঁড়ো এবং তার সাথে কলার খোসার গুঁড়ো দিতে হবে। এখানে কলার খোসার গুঁড়ো পটাসিয়াম হিসাবে কাজ করবে। হারের গুঁড়ো থেকে চেরি গাছ ফসফরাস পেয়ে যাবে। মাথায় রাখতে হবে, সার প্রয়োগের সময় নাইট্রোজেনের পরিমান যেন কম থাকে নাহলে গাছে ফুল আসবেনা। ১০ দিন ছাড়া ছাড়া সর্ষের খোল পচা তরল সার হিসাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
চারা রোপণ:
নার্সারি থেকে কোনো ভালো জাতের চেরি গাছ এনে টবের মাঝখানে ফাঁকা করে গাছটিকে বসাতে হবে ।গাছ বসানোর পর মাটি ভর্তি করে পানি দিয়ে দিতে হবে।
রোগ ও প্রতিকার (Disease management system):
এই গাছে পিঁপড়ের আক্রমণ হয় এবং অনেক পোকারও আক্রমণ হয়ে থাকে। তাই পোকার হাত থেকে বাঁচতে লাল লঙ্কা গুঁড়ো ও কয়েক টুকরো রসুন একদিন রাতে ভিজিয়ে পরেরদিন সেটি গাছের মধ্যে স্প্রে করতে হবে। বাগানের গাছ সুস্থ থাকার জন্য ১৫ দিন ছাড়া ছাড়া পেস্টিসাইড বা নিম তেল ব্যবহার করা বাঞ্চনীয়।
চেরি গাছের ফুল ঝরে যাওয়ার কারণ:
অনেকেই চেরি চাষের সময়, এই ফুল ঝরে যাওয়ার সমস্যায় পড়েন। এর পেছনে রয়েছে ৪-৫ টি কারণ,
পানি ঠিক করে না দেওয়া, কীট-পতঙ্গের আক্রম, ছায়ায় রেখে দেওয়া। সারে নাইট্রোজেনের পরিমান বেশি থাকা, নাইট্রোজেন বেশি থাকলে গাছের পাতা সবুজ হয় ও সুন্দর হয়। কিন্তু ফল ও ফুল হয়না। তাই, এই বিষয়গুলির দিকে খেয়াল রেখে আপনিও করতে পারেন সুন্দর চেরি ফলের চাষ।