ধনিয়া খাওয়ার উপকারিতা ও বিশেষ গুনাগুন

ধনিয়া খাওয়ার উপকারিতা
benefits of eating coriander

আমাদের প্রত্যেকের জানা থাকা দরকার ধনিয়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ও বিশেষ গুনাগুন সম্পর্কে। এটি একটি সুগন্ধি বা ঔষধি গাছ এবং মসলা জাতীয় উদ্ভিদ। তবে ধনিয়া একটি একবর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। এই ধনিয়া অসাধারণ গুণে ভরপুর সুপরিচিত একটি উদ্ভিদ। তবে এর একটি বৈজ্ঞানিক নাম আছে তা হলো (Coriandrum sativum)।

ধনিয়া উত্তর আফ্রিকার স্থানীয় উদ্ভিদ। তবে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এই ধনিয়া পাওয়া যায়। ধনিয়ার বীজ থেকে বানানো তেল- সুগন্ধি এবং ঔষুধ হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। ধনিয়ার তেল মদে ব্যবহার করা হয়। ধনিয়া বঙ্গ অঞ্চলের প্রায় সর্বত্র ধনিয়ার বীজ, পাতা খাবারের মসলা হিসেবে ব্যবহৃত করে। ধনে পাতার সুস্বাদু এশীয় চাটনি এবং মেক্সিকান সালসা তে ব্যবহার করে থাকে। তবে ধনিয়া বীজ বা পাতাকে আমরা সালাদ ও রান্নার স্বাদ বাড়ানোর কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়ানোর কাজেই ধনিয়ার গুণাগুণ শেষ হয়ে না।

ধনিয়া খাওয়ার উপকারিতা ও বিশেষ গুনাগুন

এই ধনিয়া পাতা এবং বীজ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো একটি উপকারী উদ্ভিদ। আমরা অনেকেই প্রায় ধনিয়া খাওয়ার উপকারিতা না জেনেই নিয়মিত বিভিন্ন খাবার বা তরকারিতে ব্যবহার করে থাকি। আজ আমরা আরো জানবো ধনিয়ার ১১ জাতের এসেনশিয়াল অয়েল এবং ৬ ধরণের অ্যাসিড ভিটামিন ‘সি’ নামেই বেশি পরিচিত যা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ও বলা হয়। আরো রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল ও অন্যান্য উপকারী উপাদান। ধনিয়াতে আরো রয়েছে ম্যাংগানিজ, ফাইবার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘কে’, প্রোটিন ক্লোরিন এবং ফসফরাস। সুতরাং এ ধনিয়া পাতাকে সাধারণ কিছু ভাবার কোনো অবকাশ নেই। ধনে পাতা আরেকটি বিশেষ গুন আছে তা হলো রূপচর্চায় অনেক উকারিতা পাওয়া যায়। তবে প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে ধনে পাতা বিভিন্ন ধরনের কার্যকারিতা রয়েছে।

ধনিয়া খাওয়ার উপকারিতা ও বিশেষ গুনাগুন

গুটিবসন্ত প্রতিকার ও প্রতিরোধ করে : এই ধনিয়া পাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টিইনফেকসাস, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, ডিটক্সিফাইং, ভিটামিন ‘সি’ ও আয়রন এই পদার্থ থাকার কারনে গুটিবসন্ত প্রতিকার ও প্রতিরোধ করে থাকে।

ধনিয়া পাতা হজমের জন্য উপকারী:  কেউ যদি ধনিয়া পাতা তরকারির সাথে নিয়মিত খেলে তার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং যকৃতকে সঠিকভাবে কাজ করতে ঙ্গনেক ভূমিকা পালন করে থাকে।

ধনিয়া পাতা পেট পরিষ্কার উপকারি: সঠিক ভাবে কারো যদি পেট পরিষ্কার না হলে এই ধনিয়ার বীজ বা পাতা খেলে তাহার পেট পরিষ্কার হবে।

ধনিয়া পাতা ডায়াবেটিসের কার্যকারিতা: ডায়াবেটিস আক্রান্তদের জন্যে ধনে পাতা বিশেষ উপকারী।ধনিয়া পাতা ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং রক্তের সুগারের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে থাকে।

আলসার নিরাময়েও উপকারী: এই ধনে পাতায় থাকা প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-সেপটিক পেটের আলসার এর বিশেষ কার্যকারিতা পাওয়া যায় এবং এটি চোখের জন্যে ভাল কাজ করে থাকে।

ধনিয়া পাতায় ঋতুস্রাবের উপকারিতা: মহিলাদের ঋতুস্রাবের সময় ধনিয়া পাতা খেলে রক্তসঞ্চানল ভাল হয় এবং এতে থাকা আয়রন রক্তশূন্যতা নিরাময় করতে বেশ কার্যকারি।

ক্যান্সার প্রতিরোধে ধনেপাতা: এই ধনিয়া পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন ‘এ’ এবং ফ্যাট স্যলুবল ভিটামিন, ফুসফুস এবং পাকস্থলীর কাজ করে কাজ করে থাকে। সেই সাথে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে।

আরো পড়ুন: ক্যান্সার থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক ও বিকল্প উপায়

বাথ ব্যথায় ধনিয়া পাতা: এই ধনিয়া পাতা রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা বাতের ব্যথাসহ হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা উপশমে কার্যকারিতা পাওয়া যায়।

ত্বকের জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে: ধনিয়া পাতায় উপস্থিত রয়েছে সিনিওল এসেনশিয়াল অয়েল ও লিনোলিক অ্যাসিড থাকে এবং অ্যান্টিরিউম্যাটিক ও অ্যান্টি-আর্থ্রাইটিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে। এই ধরনের উপাদান ত্বকের জ্বালাপোড়া ও শরীরের ফুলে যাওয়া কমাতে সহেতা করে।

ত্বক সুস্থ রাখতে ধনিয়া পাতা: এই পাতায় রয়েছে ডিটক্সিফাইং, ডিজইনফেকট্যান্ট বা বিষাক্ততা রোধকারী, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকার কারণে এরা ত্বকের বিভিন্ন স্কিন ডিজঅর্ডার অথবা ত্বকের অসুস্থতা (ডাক্তারি ভাষায় বলে একজিমা, ত্বকের শুষ্কতা ও ফাঙ্গাল ইনফেকশন) নিরাময় করতে অনেক উপকার করে থাকে। তাই ত্বক সুস্থ এবং সতেজ রাখতে এই ধনে পাতার গুনাগুন অনেক বেশি।

আরো রয়েছে ধনিয়া পাতা খাওয়ার বিশেষ গুনাগুন

ধনিয়া পাতা খেলে চোখের স্মৃতিশক্তি প্রখর ও মস্তিস্কের নার্ভ সচল রাখতে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে ধনে পাতার ভিটামিন ‘K’ অ্যালঝেইমার রোগ নিরাময়ে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এই ধনিয়া পাতা ক্যালসিয়াম এবং আয়ন কলিনার্জিক ও অ্যাসেটিকোলিন উপাদান মিলে মানুষের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এলার্জি কমাতে সাহায্য করে থাকে কারন এতে রয়েছে অ্যান্টি হিস্টামিন উপাদান থাকায় এরা অ্যালার্জি এর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।

মানুষের খাবারের মাধ্যমে সৃষ্ট সবচেয়ে ভয়াবহ রোগ হলো সালমোনেলা এই সালমোনেল মানুষের অনেক ক্ষতিকর একটি উপাদান। তবে এই ধনে পাতায় রয়েছে উপস্থিত ডডেসিনাল উপাদান প্রাকৃতিক উপায়ে সালমোনেলা জাতীয় রোগ সারিয়ে তুলতে অনেক সাহায্য করে এমন কি অ্যান্টিবায়টিকের থেকে দ্বিগুণ হারে কার্যকারীতা রয়েছে। তবে এই ধনে পাতার সাথে বিভিন্ন ভেষজ উপাদান মিশিয়ে যৌনশক্তি বৃদ্ধি করা যায়।

এবং অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে কারো মুখে যদি দুর্গন্ধ হয়। তার পর অরুচি লাগে তাহলে ধনিয়া পাতা ভেজে বোতলে ভরে রাখুন। পারপর মাঝে মাঝে চিবিয়ে খান মুখে দুর্গন্ধ ভালো হবে। যদি কারও মাথাব্যথা হলে এই ধনে পাতা এবং গাছের রস কপালে লাগালে সাথে সাথে মাথা ব্যথা কমে যায়। তার ধনে পাতা চিবিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের গোড়া বা মাড়ি মজবুত হয় এবং সেই সাথে দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।

ধনিয়া খাওয়ার অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক

আমারা জেনেছি ধনিয়া পাতার গুনাগুন যেমন অনেক তেমনি এর নানা ধরনের ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। তাই আমাদের এই ধনিয়া পাতার অপকারিতা বা ক্ষতিকার দিক গুলো জানা প্রয়োজন। তাই এর ক্ষতিকর দিক গুলো চলুন জেনে নেয়া জাক

ধনিয়া পাতা লিভারের ক্ষতি: এই ধনেপাতা অতিরিক্ত খেলে লিভারের কার্যক্ষমতা খারাপ ভাবে দুর্বল করে। তবে এতে থাকা এক ধরনের তেল যা মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নানা ভাবে আক্রান্ত করে ও ক্ষতি করে থাকে। এই ধনিয়া পাতায় এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। যা সাধারণত লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে। তবে এর উপাদান দেহের মধ্যে এর অতিরিক্ত মাত্রার উপস্থিতি লিভারের ক্ষতি করে থাকে।

ধনিয়া পাতা নিম্ন রক্তচাপ সৃষ্টি: ধনিয়া পাতা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে হৃৎপিন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ধনিয়া পাতা নিম্ন রক্তচাপ সৃষ্টি করে। এটি অতিরিক্ত খেলে সেটা নিম্ন রক্তচাপের সৃষ্টি করতে পারে। তবে এটি মাথাব্যথাও সৃষ্টি করতে পারে।

পেট খারাপ করে: ধনিয়া পাতা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে বা বেশি পরিমাণে ধনেপাতা খেলে পাকস্থলীর হজম ক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, সপ্তাহে ২০০ গ্রামের বেশি ধনেপাতা খেলে তা পেটে ব্যথা, পেট ফোলা, গ্যাসের ব্যথা, বমি হওয়া বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে, এমনকি ডায়রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।

শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি করে: ধনিয়া পাতা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তাই ধনেপাতা খাওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকরা নিষেধাজ্ঞা দেন। সুতরাং ধনিয়া পাতা শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা করে। তবে এর ফলে ফুসফুসে অ্যাজমার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। \

বুকে ব্যথা সৃষ্টি করে: এই ধনেপাতা অতিরিক্ত খেলে বুকে ব্যথার মত জটিল সমস্যা হতে পারে। তবে এটা শুধু যে অস্বস্তিকর ব্যথাই সৃষ্টি করে না এবং এটা দীর্ঘস্থায়ীও করতে পারে। তাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দৈনন্দিন জীবনে আহারে কম পরিমাণে ধনেপাতা খেতে হবে।

অ্যালার্জির সমস্যা বৃদ্ধি করে: এই ধনিয়া পাতার প্রচুর প্রোটিন থাকে, এই উপাদানটি শরীরে আইজিই নামক অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করে থাকে। তবে এটি মানব শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানকে সমানভাবে ক্যারী করে থাকে। সুতরাং এর অতিরিক্ত মাত্রা উপাদান গুলোর ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে। অতিরিক্ত মাত্রা উপাদান থাকার ফলে অ্যালার্জি তৈরি করে। ফলে শরীরের চুলকানি, ফুলে যাওয়া, জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সমস্যা তৈরি হতে থাকে।

ধনে মুখ ব্যথা সৃষ্টি করে: ধনে বা ধনিয়া পাতা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে এর একটি ক্ষতিকর দিক হল মুখে ব্যথা হতে পারে। এই ধনে পাতা পাশাপাশি এটি মুখে প্রদাহের সৃষ্টি অতিরিক্ত খেলে। এটি খেলে বিশেষ করে মাড়ি, ঠোঁট ও গলা ব্যথা হওয়া সম্ভাবনা থাকে।

ধনে পাতা ভ্রূণের ক্ষতি করে: অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়া ফলে নারীদের গর্ভকালীন সময়ে ভ্রূণের বা বাচ্চার শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হতে পারে। এই পাতায় থাকা কিছু উপাদান নারীদের প্রজনন গ্রন্থির কার্যক্ষমতাকেবিনষ্ট করতে পারে। এর ফলে মহিলাদের বাচ্চাধারণ ক্ষমতা হৃাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। তখন বাচ্চাধারণ করলে গর্ভকালীন ভ্রূণের বেশ ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

ধনিয়া বীজের জাতঃ

ধনিয়া পাতা উৎপাদনকারী জাতের মধ্যে রয়েছে বারি ধনিয়া-১ বেশ ভালো ফলন হয়। এরপর লালতীরের সুগন্ধা এবং এলবি-৬০ ও এলবি-৬৫ পাওয়া যায়। তবে বাজারে বেশ ভাল সুনাম করেছে। কিন্তু লালতীরের ধনিয়ার জাত গুলো সারা বছরই চাষ করা যাবে। তবে এই জাত গুলো রঙ উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের হয় এবং সুগন্ধযুক্ত ও দেরিতে ফুল উৎপাদনকারী অর্থাৎ অনেক দিন পাতা ভালো উৎপাদন করে থাকে। তবে এছাড়াও বাংলাদেশে বিলাতী জাতের ধনিয়া পাওয়া যায়। এমন কি হাইব্রীড ধনিয়া চাষ করা হয়। তবে হাইব্রিড এর উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি।

বীজ রোপনের পদ্ধতিঃ

ধনিয়ার বীজ রোপনের আগে জমি তৈরি করে নিতে হয়। তবে ভালোভাবে জমি চাষ দিয়ে এক থেকে সোয়া মিটার চওড়া করে বেড তৈরি করে নিতে হয় এবং দুই বেডের মাঝে ৪০-৫০ সেমি.নালা রাখতে হবে। বীজ রোপনের আগে জমি তৈরির সময় মাটির সাথে হেক্টর প্রতি ৫-৭ টন জৈব বা গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে বুনার আগে বীজ পানিতে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর বীজ কে আস্তে আস্তে ঘষতে হয়। ঘষার ফলে বীজরে দুটি মেরিকার্প মানে (বীজরে দুটি অংশ) আলাদা হয়ে হবে। তবে বীজ বোনার আগে ছত্রাক নাশক (ব্যাভিস্টিন বা থায়রন) দ্বারা শোধন করে নিতে হবে। শোধন করে নিলে চারার গোড়া পচা রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হয়ে যাবে। যে জমিতে বীজ বুনবে এবং বুনার বা ছিটানোর পর হালকা চাষ এবং মই দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হয়। তারপর ৩০ সেমিঃ দূরে দূরে ১.৫ সেমিঃ গভীর করে লাইন টানতে হবে। এরপর উক্ত লাইনে বীজ বুনে ঝুরঝুরা মাট দিয়ে হালকাভাবে ঢেকে দিলে ভালো বীজ জন্মায়। তবে চারা গজানোর ১০-১৫ দিন পর প্রতি ৫ সেমিঃ পর পর একটি চারা রেখে বাকি গুলো তুলে ফেলতে হয়।
 

ধনিয়া চাষের জন্য যে যে সার ব্যবহার করতে হবে তা নিচে একটি তালিকা তৈরি করা হলো

ধনিয়া চাষের জন্য নিন্মরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।

সারের নাম সারের পরিমান হেক্টর/একর
গোবর সার ৮-১০ টন প্রতি হেক্টর
ইউরিয়া ২০০-২৫০ কেজি প্রতি হেক্টর
টি.এস.পি ১০০-১২৫ কেজি প্রতি হেক্টর
এম.পি ১০০-১৫০ কেজি প্রতি হেক্টর
জিপসাম ৬০-৭৫ কেজি প্রতি হেক্টর
জিংক সালফেট ১২-১৫ কেজি প্রতি হেক্টর

ধনিয়া চাষ করার আগে জমি তৈরির সময় সমসত্ম গোবর সার এবং টি.এস.পি, অর্ধেক ইউরিয়া এমন কি এম.পি সার প্রয়োগ করতে হয়। তবে চারা গজানোর ১৫-২০ দিন পর বাকী ইউরিয়া এবং অবশিষ্ট এম.পি সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। তবে সার প্রয়োগের পূর্বেই আগাছা নিড়িয়ে পানি সেচ দিয়ে নিলে সবচেয়ে বেশি ভাল হবে।

ধনিয়া পাতা চাষের পরিচর্যা

বেশির ভাগ পাতা সংগ্রহের জন্য ধনিয়ার চাষ করা হয়। সেক্ষেত্রে পাতা সংগ্রহের জন্য ৩/৪ দিন পর পর হালকাভাব পানি সেচ দিতে হয়। তারপর নিড়ানি বা কাস্তে দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হয়। পানি দিবার পর প্রতিবার সেচের পর ‘জো’আসা মাত্র মাটির চটা ভেঙ্গে আলগা করে দিতে হয়। তবে গ্রীষ্মকালে বীজ ফেলার পর বেডের উপর হালকা করে খড় বিছিয়ে দিলে ভাল হবে। সেক্ষেত্রে সেচ বা বৃষ্টির পানির ছিটিয়ে পাতায় মাটি লাগতে পারে না এবং পাতা ভালো থাকে। তবে পাতার জন্য ধনিয়া চাষের ক্ষেত্রে ৬০ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করতে হয় নতুবা নষ্ট হবার সম্ভ্যবনা থাকে। এই ফসল তুলার পর একই জমতি ২০% কম সার প্রয়োগ করে আবার এই ফসল চাষ করা যাবে।

ফসল কাটা

এই বীজ বপনের ১১০-১২০ দিন পর বীজ তোলা শুরু করতে পারবেন। এই ফসল যখন বীজ সম্পূর্নভাব পাকবে ও গাছ মোটামুটি সবুজ থাকবে তখন এই ফসল কাটার সময় হবে। সেক্ষেত্রে বীজ যেনো ঝরে পড়ে না যায় তার জন্য সকালে কুয়াশার পানি থাকতেই হাত দিয়ে টেনে বা কাঁচি দিয়ে ফসল তুলতে হবে। ধনিয়া গাছ কাটার পর ছোট ছোট আঁটি বেধে ২ / ৩ দিন ছায়ায় রেখে দিতে হয়। তারপর মাড়াই করার জন্য ছড়িয়ে দিয়ে ২-৩ দিন রোদে শুকানোর পর ফসল মাড়াই করতে পারবেন। আর পাতার জন্য ৩০-৩৫ দিন পর পাতা তোলা ভাল হবে। পাতা তুলে আঁটি করে বাজারে বিক্রির জন্য পাঠাতে পারবেন।

ধনিয়ার ফলন

বীজ হিসেবেঃ ১.৭-২.০ টন / হেক্টর আর পাতা/ শাক হিসেবেঃ ৩.৫-৫.০ টন / হেক্টর

আরও পড়ুন: আমলকির উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version