রক্ত হলো মানুষ ও অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর সংবহন তন্ত্রের একটি দৈহিক তরল যা কোষে প্রয়োজনীয় পদার্থসমূহ, যেমন পুষ্টিদায়ক অক্সিজেন ও পদার্থ সরবরাহ করে যা কোষ থেকে বিপাকীয় বর্জ্য পদার্থসমূহ একই কোষসমূহ থেকে দূরে বহন করা যায়।
রক্ত লাল বর্ণের, ধামনিক রক্ত অক্সিজেন ধারণ করে এটি উজ্জ্বল টকটকে লাল এবং শিরাস্থ রক্তে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেশি থাকায় এটি অরুণ বর্ণের বা গাঢ় লাল হয়। সংবহন তন্ত্রের রক্ত প্রান্তীয় রক্ত নামেও পরিচিত। যে রক্তকণিকা সমূহ বহন করে তা প্রান্তীয় রক্ত কণিকা নামে পরিচিত। রক্ত রক্তকণিকা দিয়ে গঠিত যেগুলো রক্তরস বা প্লাজমাতে ভাসমান অবস্থায় থাকে।
হিমোগ্লোবিনের প্রধান কাজ হচ্ছে হৃদপিণ্ড থেকে দেহের সব অঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। দেহকোষ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইডও সংগ্রহ করে এবং তা পুনরায় ফুসফুসের কাছে যদি রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যায় তবে দেহ থেকে অক্সিজেনের অভাবে দুর্বল হতে পারে। পৌঁছে দেয় যা নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহথেকে বাহির হয়ে যেতে পারে। সুতরাং রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যায় দেহ অক্সিজেনের অভাবে শরীরি দুর্বল হতে পড়ে। আর এ থেকে বাঁচার উপায় হলো হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায় এমন কিছু খাবার খাওয়া।এর ফলে রক্ত শুন্যতার মতো রোগও হতে পারে।এখানে ১০টি খাবারের তালিকা দেওয়া হলো যেগুলো নিয়মিত খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়তে পারেন।
মানব দেহে রক্ত বাড়ায় এমন ১০টি খাবার
১। মাংস
মাংসে প্রোটিন প্রচুর পরিমাণ থাকে ও প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভিটামিন বি, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, ফসফরাস, রিবোফ্লাভিন নিয়াসিন, এবং আয়রনের একটি উৎস। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দ্রুত বাড়াতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমান প্রাণিজ প্রোটিন। আয়রন হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য জরুরি। সকল ধরনের লাল মাংস,যেমন গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং কলিজা আয়রনের সবচেয়ে ভালো উৎসগুলোর একটি। মুরগির মাংস লাল না হলেও দেহকে বিশাল পরিমাণে আয়রন সরবরাহ করতে সক্ষম।
২। সবজি
সবজি খাওয়া ব্যক্তিদের শাকাহারি বা নিরামিষভোজী বলা হয়। প্রতিদিন তাজা সবজি খেলে আয়রন ও অন্যান্য খনিজ পুষ্টি এবং নানা ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি মিটবে। প্রয়োজনীয় সবজি খনিজ এবং অন্যান্য পুষ্টি, ভিটামিন, যেমন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার প্রদান করে। টমেটো,ব্রকলি,আলু, কুমড়া এবং বিটরুট আয়রনের ঘাটতি মেটাতে সক্ষম। এছাড়া স্পিনাক সহ অন্যান্য সবজিও বেশ আয়রন সমৃদ্ধ।
৩। শুটি জাতীয় বা কলাই
কালাই বা শুটি মানুষের জন্য অন্ত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী খাদ্য। শুটি জাতীয় বা কলাই প্রোটিন প্রধান খাদ্য। শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ এতে প্রোটিনের বিদ্যমান। ছোলা সয়াবিন এবং দানা জাতীয় খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে।বর্তমানে সয়াবিন সবজি ভোজীদের জনপ্রিয় একটি খাদ্য। এ থেকে সুস্বাদু সব খাবার তৈরি হয় যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে সক্ষম।
৪। ডিম
ডিম হচ্ছে প্রাকৃতিক ভিটামিন যা দেহগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সব ধরনের ডিমে রয়েছে ভিটামিন ই, ভিটামিন বি-১২, ফলেট, সেলেনিয়াম, কোলেস্টেরল ও কোলিন অতি মূল্যবান ওমেগা-৩,যা হৃৎপিণ্ডকে কার্যকর রাখতে সাহায্য করে।ডিমের হলুদ কুসুমে আছে খনিজ পুষ্টি এবং ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে। আর এ কারণেই দুর্বল লোকদেরকে প্রতিদিন সেদ্ধ ডিম খেতে বলা হয়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে সক্ষম।ত্রুটি প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
৫। পুর্ণশস্য জাতীয় খাদ্য
গম, বার্লি, চাল এবং ওটস রক্তশুন্যতায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রোয়জন। এই খাবার কার্বোহাইড্রেটসও সরবরাহ করে হিমোগ্লোবিনের প্রধান কাজ হচ্ছে হৃদপিণ্ড থেকে দেহের সব অঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। লাল চাল বিশেষ করে সব বয়সীদের জন্যই আয়রনের একটি সমৃদ্ধ উৎস বলে গণ্য হয়।পুর্ণশস্যজাতীয় খাদ্য রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে সক্ষম।
৬। বাদাম
বাদাম একটি সাধারণ শব্দ যা কোন উদ্ভিদের বড় শুষ্ক এবং তৈলাক্ত বীজ বা ফলকে বোঝায় ।বাদামে মজুত রয়েছে য় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন-ই, ক্যালশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-সি,ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট,পটাশিয়াম অ্যামাইনো এসিড এবং ওমেগা-থ্রিফ্যাটি এসিড। এই কারণে তরুণদের কাজু বাদাম, হিজলি বাদাম, চীনা বাদাম এবং আখরোট খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে দ্রুতগতিতে। যে কোনো ধরনের বাদামই মানবদেহের জন্য উপকারী বলে বিবেচিত হয়। বাদাম রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে সক্ষম।বাদামে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৭। সামুদ্রিক খাদ্য
সামুদ্রিক খাবারে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দ্রুত বাড়াতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমান প্রাণিজ প্রোটিন। সামুদ্রিক খাদ্যে আয়রন এবং অন্যান্য খনিজ পুষ্টি উপাদান আছে প্রচুর পরিমাণে। অ্যানেমিয়া বা রক্তশুন্যতার রোগীদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ক্লামস অয়েস্টার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর সামুদ্রিক খাদ্য রাখবেন ।
৮। ফল
ফল ভেষজ বা ঔষধিগুণে সমৃদ্ধ। নিয়মিত ফল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সুস্থ সবল জীবন লাভ করা যায়।সবধরনের রসালো সাইট্রাস ফল, যেমন;আম,লেবু এবং কমলা ভিটামিন সি-র সবচেয়ে ভালো উৎস। আর দেহে আয়রন দ্রুত শুষে নেওয়ার জন্য ভিটামিন সি সবচেয়ে জরুরি। এর ফলে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের গতি বাড়ে যায়।আপেল, স্ট্রবেরি, তরমুজ, পেয়ারা এবং বেদানাতেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে। এটা রক্তে হিমোগ্লোবিন পরিমাণ বাড়ায়।
৯। ডার্ক চকোলেট
ডার্ক চকলেটে রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড, এল-আর্জিনিন এইচসিএল যা শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ায়। ডার্ক চকলেটে আছে স্টিয়ারিক অ্যাসিড যা আমাদের ত্বক সুন্দর ও কোমল রাখতেসাহায্য করে।এ ছাড়া পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করতে ডার্ক চকলেট বিশেষ ভূমিকা রাখে। কোকোয়াতে পাওয়া ফ্যাট মূলত ওলিক অ্যাসিড যা কোলেস্টেরল লেভেল ঠিক রেখে হার্টের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন রাখে। এই হেলদি ফ্যাটি অ্যাসিড অলিভ অয়েলেও পাওয়া যায় বিশেষজ্ঞদের মতে, ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা যৌন উদ্দিপনা বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখে। ডার্ক চকলেট শিশুদের প্রিয় খাবারএতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। আর এ কারণেই এমনকি ডাক্তাররাও ডার্ক চকোলেট খেতে বলে।
১০। শুকনো ফল
ফলের পানি শুকিয়ে একে শুকনো ফলে পরিণত করা হয়। এতে ফলে থাকা ফাইবার, ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ অন্যান্য পুষ্টি ও ক্যালোরিতে ঘনত্ব আসে। শুকনো ফল বেশি ক্যালোরি সমৃদ্ধ।কনো ফলে প্রচুর আঁশ বা ফাইবার থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। কিসমিস,অ্যাপ্রিকট বা খুবানি এবং খেজুরে আছে প্রচুর আয়রন, আঁশ এবং ভিটামিন। এপ্রিকট ও ফিগ বা শুকনো ডুমুর পরিপাকতন্ত্রের সুস্থতার জন্য ভালো।এসব খাবার খেলে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও বাড়ে দ্রুতগতিতে।
আপনি যদি নিয়মিতভাবে এই খাবারগুলো খেয়ে দেহে রক্তের পরিমাণ জীবনী শক্তি আর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে থাকুন।