সব বয়সের মানুষেই আক্রান্ত হতে পারে হতে পারে আলসারে। মানুষের পাকস্থলীতে খোলা লোমকুপের মতো ঘা হয়ে থাকে আলসারের কারণে। মানবদেহে আলসার হয় হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে। আমরা সাধারণত ভেবে থাকি আলসার মানে হচ্ছে পেটের অসুখ বা রোগে। ডাক্তারি ভাষায় আলসার মানে ক্ষত। মানুষের শরীরের বাহিরে ক্ষত হলে দেখা যায়,কিন্তু ভিতরে ক্ষত হলে তা আমরা দেখতে পাইনা।
তাই পাকস্থলীতে ক্ষত হলে সেটিকে বলা হয় আলসার। পাকস্থলীর ক্ষত দেখতে না পারলেও তার যন্ত্রণা মানুষকে ভোগ করতেই হয়। স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করে এরকম ওয়েবসাইটের তথ্য মতে,আলসার রোগের কিছু নাম আমরা দেখতে পাই ,যেমন পেপটিক ও গ্যাস্ট্রিক আলসার বলা হয় পাকস্থলীর আলসারকে। তাই বলা যায় পাকস্থলীর গায়ে হওয়া এক প্রকার ঘাই হচ্ছে আলসার। হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি আলসার সৃষ্টিকারী একটি ব্যাকটেরিয়া,এটাকে ধ্বংস করার জন্য কিছু কিছু খাবার রয়েছে। আমরা ওই সব খাবার নিয়ে আজ আলোচনা করবো।
পেটে আলসারের লক্ষণ
- পেটে ব্যাথা
- ওজন কমানো
- ব্যথার কারণে খাওয়া যাচ্ছে না
- ফোলা
- অম্বল
- রক্তাল্পতা
- পূর্ণ অনুভূতি
- বেলচিং বা অ্যাসিডিটি
- রক্তাক্ত বমি
আরো পড়ুন : মরিয়ম ফুলের উপকারিতা
কি খেলে আলসার ভালো হয়?
আমরা জানি সাধারণত গাজর, দই, অলিভ অয়েল,বাধাকপি, মুলা, ফুলকপি, আপেল, রসুন, ক্যাফেইনমুক্ত গ্রিন টি, যষ্টিমধু ও বুলবেরি ইত্যাদি খাবার গুলো আলসার হলে খেতে হয়। আলসার হলে শুকনো জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে। সকাল বা বিকালের হালকা খাবার অর্থাৎ নাস্তা হিসেবে শুকনো খাবার যেমন : মুড়ি ও ক্র্যাকার্স ইত্যাদি খেতে পারেন। সঙ্গে টাটকা ফলমূল খাওয়া যাবে। আমরা মূল মূল কিছু খাবার নিয়ে আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করবো।
আলসার রোগের খাবারের তালিকা :
১# মেথি
মেথি আলসার ভালো করতে কাজ করে। মেথির ঘন ও আঠাল উপাদানে আলসার ভালো হওয়ার একটি শক্তিশালী উপাদান হিসেবে কাজ করে। ৫০০গ্রাম পানিতে ১(এক) চা-চামুচ মেথির বীজ ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিন। খেতে একটু খারাপ লাগলে হালকা পরিমানে খাঁটি মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এই ভাবে যদি প্রতিদিন ২(দুই) বেলা খেতে পারেন তাহলে আলসার ভাল হতে অনেক কাজ করবে মেথি।
২# কলা
কলা একটি সুস্বাদু খাবার। কলাতে রয়েছে প্রচুর ব্যাকটেরিয়ারোধী উপাদান। কলা খেলে হজম শক্তি ভালো থাকে। প্রতিদিন কলা খেতে পারলে আপনার গ্যাস্ট্রিক ও অম্লীয় কোনো প্রকার সমস্যা দেখা দিবে না। কলার মাজে থাকা ‘এইচ.ফাইলরি’ আলসার ভালো করতে অনেক বেশি কাজ করে থাকে। যা পেটের জ্বালাপোড়া কমিয়ে পাকস্থলীর আস্তরণ শক্তিশালী করতে কাজ করে। আলসার ভালো করার জন্য তাই প্রতিদিনা ৩-৪ টি করে কলা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
৩# অলিভ অয়েল এবং অন্যান্য উদ্ভিদ জাতীয় তেল
অলিভ অয়েল তেল খুবই উপকারী একটি তেল। অলিভ অয়েল তেলের মাঝে রয়েছে ফেনল। ফেনল হচ্ছে ব্যাকটেরিয়ারোধী একটি উপাদান। এটি অন্নান্য ব্যাকটেরিয়াকে বিস্তার করতে বাধা দিয়ে থাকে। তাই অলিভ অয়েল তেল আলসার রোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।
৪# ক্যাফেইনমুক্ত গ্রিন টি
গ্রিন টি কার না পসন্দের,এটি খেতে সবাই মজা পেয়ে থাকে। আমরা সবসময় গ্রিন টি কে সাধারণ চা হিসেবে খেয়ে থাকি,কিন্তু এই টি মানব দেহের বিভিন্ন প্রকার উপকার করা থাকে। গ্রিন টিতে রয়েছে ইসিজিসি নামক ক্যাটেচিন এর উচ্চ মাত্রা। আর টি আলসারের প্রতিরোধে অনেক বেশি কাজ করে। ইসিজিসি নামক ক্যাটেচিন এর প্রদাহরোধী আলসার ভালো করতে কাজ করে। আলসার থাকে মুক্ত হতে আপনারা প্রতিদিন ১ কাপ করে ক্যাফেইনমুক্ত গ্রিন টি সকাল ও সন্ধ্যায় খেতে পারেন।
৫# দই
দই আমাদের দেশে একটি বহুল প্রচলিত একটি খাবার। দই আমরা খাবার পরে খেয়ে থাকি। দই মানবদেহের খাবার হজম করতে কাজ করে। দই এর মাঝে রয়েছে প্রোবায়োটিকস, ল্যাকটোবেসিলাস ও এসিডোফিলাস যার কারণে আলসার ভালো করতে অনেক বেশি উপকার করে থাকে। ল্যাকটোবেসিলাস ও এসিডোফিলাস আলসারের প্রতিরোধ করে,যার ফলে দই আলসার ভালো করতে সাহায্য করে থাকে।
৬# ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার
ভিটামি ই সমৃদ্ধ খাবার আমাদের সকলের খাওয়া দরকার। এটি আমাদের শরীরকে মজমুত করতে কাজ করে থাকে। আমরা আলসার ভালো করার জন্য ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারি। আর ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার বলতে আমরা জানি দুধ, ডিমের কুসুম,মাংস, মাছ,গাজর, সয়া,শাকসবজি,ভুট্টা পেস্তা বাদাম ও কাঠবাদাম।
৭# নারিকেলের পানি
নারিকেলের পানি পেটের অনেক উপকার করে। ডায়রিয়া হলে নারিকেলের পানি পানির শূন্যতা পূরণ করে। নারিকেলের পানি খেলে পেট পেট ঠান্ডা করে। বিশেষ করে আলসার ভালো করার জন্য নারিকেলের পানি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। পেটের আরোগ্য ও প্রদাহ কমিয়ে নেয়ার জন্য নারিকেলের পানি খেতে পারেন।
৮# বাধাকপি
বাধাকপি আমাদের দেশের বহুল জনপ্রিয় একটি সবজি যা খেতে খুবই সুস্বাদু। বাধাকপিতে আছে এস-মিথাইল মিথিওনাইন নামক উপাদান। এই উপাদানের কারণে আলসারের ক্ষত সারিয়ে তুলতে কাজ করে। বাধাকপিতে ইউ রয়েছে,যা আলসার ভালো করার জন্য সাহায্য করে। মানবদেহে পিএইচ এর মাত্রায় হেরফের হলে আলসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর বাধা কপিতে যে ভিটামিনা থাকে তা দেহে ক্ষারক বাড়ায়।তাই বাধাকপি আলসার ভালো করতে অনেক বেশি কাজ করে।
বিঃদ্রঃ : আলসার হলে ধূমপান ও অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার কোনো ক্রমেই খাওয়া যাবে না।
আরো পড়ুন : রাতকানা রোগের কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা
আলসার হলে কি খাওয়া যাবে না?
আলসার হলে অনেক প্রকার খাবার থেকে দূরে থাকতে হয়। আলসার বেশি করে থাকে এমন খাবার কখনই খাওয়া যাবে না। আমরা সবাই তেল জাতীয় খাবার খেতে পসন্দ করে থাকি,কিন্তু আলসার হলে আমাদের সর্ব প্রথম তাই জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে। আলসার হলে বেশি বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। তেল জাতীয় খাবার সবার জন্য ক্ষতিকর। তাই আলসার হলে আমরা যেসব খাবার হতে দূরে থাকবো। যেমন :
- তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার
- মসলাদার খাবার
- মসলাদার খাবার
- কফি
- ঝাল খাবার
- লাল মাংস
রাতে খাবার খাওয়ার পরে একটু রেস্ট নিয়ে তার পরে ঘুমাতে যাবেন। রাতের খাবার একটু তাড়াতাড়ি খাওয়ার চেস্টা করবেন। আর খেয়াল রাখবেন কোনো ভাবেই যেন ধূমপানের কাছেও না যেতে হয়। সব সময় আনন্দের মাজে থাকবেন টেনশন মুক্ত থাকবেন ,তাহলে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন। ইনশাআল্লাহ
আরো পড়ুন :
নিয়মিত কিসমিস খাওয়ার ১০টি উপকারিতা
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার বা চিরতরে মুক্তি লাভের ঘরোয়া উপায়
আলসার কত দিনে ভালো হয়?
আলসার একটি মারাত্মক রোগ। নিয়মিত ঔষধ খেলে ও সকল নিয়ম মেনে চলতে পারলে আলসার খুব দ্রুত ভালো হয়। আলসার কত দিনে ভালো হবে তা সঠিক ভাবে বলা খুব কঠিন। কারণ নিয়ম মেনে চলতে পারলে খুব সহজে আলসার ভালো হয়,আর নিয়মের বাহিরে গেলে ভালোতো দূরের কথা আরো বেশি হয়। ডাক্তারের মতে নিয়ম মেনে চলতে পারলে ২ মাসের মধ্যে আলসার ভালো হয়ে যায়। আলসার বলতে মানুষ অনেক কিছু ভেবে থাকে,কিন্তু আলসার হচ্ছে এক প্রকার ঘা,যা নিয়মিত পরিচর্যায় অল্প সময়ের মাজে ভালো হয়। আলসার মানব দেহ থেকে একদম একদম নিরাময় করে দেওয়া যায়। যদি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা যায় তাহলে আলসার মানব দেহ থেকে আলসার নিরামিয় করা সম্ভব। আলসার ভালো করার জন্য ঠিকমতো নিয়ম মেনে চলুন।
আলসার ভালো করতে ডাক্তারে পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ম মেনে চলুন খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন। আলসার হলে যেসব খাবার খেতে হবে তা নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করুন। আলসার ভালো হয়,ইটা নিয়ে ভয়ের কোনো নেই। আলসার হলে অনেক খাবার হতে দূরে থাকতে হয়,সেই সব খাবার কখনো যেন না খান সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। নিয়মিত চিৎসায় আলসার ভালো হয়। সাস্থ বিষয়ক বিভিন্ন প্রকার টিপস পেতে আমাদের সাথে থাকুন। আমরা সব সময় আপনাদের কথা চিন্তা করে এই সমস্ত পোস্ট করে থাকি। আমাদের পোস্ট সম্পর্কে কোনো মন্তব্য থাকলে ,কমেন্ট করে জানাতে পারেন।