উড়িয়ে দেওয়া হলো খেরসনের বাঁধ বড় বিপদের শঙ্কা রেডক্রসের

উড়িয়ে দেওয়া হলো খেরসনের বাঁধ বড় বিপদের শঙ্কা রেডক্রসের

উড়িয়ে দেওয়া হলো খেরসনের বাঁধ, জরুরি বৈঠকে জেলেনস্কি

ইউক্রেনের খেরসনে নোভা কাখোভকা জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ ধ্বংসের পর বিশাল এলাকা প্লাবিত হওয়ায় নতুন একটি শঙ্কার কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রস। সংস্থাটি বলছে, যুদ্ধকবলিত এসব এলাকায় প্রচুর মাইন পুঁতে রাখা হয়েছিল। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সেগুলোর অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এর ফল ভয়ংকর হতে পারে।

উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় নোভা কাখোভকা বাঁধ। এর ফলে আশপাশের বিশাল এলাকায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রুশ-নিয়ন্ত্রিত খেরসন অঞ্চলে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ এ বাঁধটিতে হামলার বিষয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা হয়েছে।

ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ড মঙ্গলবার (৬ জুন) ফেসবুকে বলেছে, কাখোভকা [জলাধার] উড়িয়ে দিয়েছে রুশ দখলদার বাহিনী। ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা, পানির গতি ও পরিমাণ এবং সম্ভাব্য প্লাবিত এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে।

সম্প্রতি ইউক্রেনের কাখোভকায় বিস্ফোরণের ফলে বাঁধের একাংশ ভেঙে যাওয়ায় নিপ্রো নদীর পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকা ভাসিয়ে দেয়। এতে নদী–তীরবর্তী রাশিয়া ও ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকার ৪২ হাজার মানুষ বন্যার কবলে পড়েছেন। ইউক্রেনের সরকারি কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন, বৃহস্পতিবার নিপ্রোর পানি আরও তিন ফুট বাড়বে এবং আরও নতুন এলাকা প্লাবিত হবে।

আরও পড়ুনঃ পি এস জি অধ্যায় শেষ করে, মেসি যোগ দিচ্ছেন ইন্টার মিয়ামি তে

বার্তা সংস্থা এএফপিকে রেডক্রসের কর্মকর্তা এরিক টোলেফসেন বলেন, এসব মাইন যে শুধু খেরসনের বাসিন্দাদের কাছে বিপদের কারণ, তা–ই নয়, বাইরে থেকে যাঁরা সাহায্য করার জন্য আসছেন, তাঁদের জন্যও বিপদের কারণ।

এরিক আরও বলেন, ‘আগে আমরা জানতাম, মাইনগুলো কোথায় আছে। এখন শুধু জানি, এগুলো পানির নিচে কোথাও আছে।’

ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সাউদার্ন কমান্ডের মুখপাত্র নাতালিয়া হুমেনিউক বলেছেন, রাশিয়া অধিকৃত এলাকা থেকে মাইনগুলো ভেসে গেছে এবং এখন সেগুলো ভাসমান মাইনে পরিণত হয়েছে। এসব মাইন ঘোর বিপদের কারণ।

বাঁধটি ধ্বংসের পর দিনিপ্রো নদীর পানির উচ্চতা ক্রমেই বাড়ছে। এ কারণে নদীর ডান তীরের বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে লোকজনকে সরে যেতে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছে খেরসন অঞ্চলের ইউক্রেনীয় প্রশাসন।

আরও পড়ুনঃ ১৪ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ স্বাভাবিক হবে : নসরুল হামিদ

এক টেলিগ্রাম বার্তায় তারা বলেছে, পানির উচ্চতা বাড়ছে। যারা বিপদগ্রস্ত অঞ্চলে রয়েছেন তারা অবশ্যই সব বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বন্ধ করুন, নথি এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে রাখুন, প্রিয়জন ও পোষা প্রাণীর যত্ন নেন এবং উদ্ধারকারী ও পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা অনুসরণ করুন।সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, নিপ্রোর পানিতে ৩০টি শহর ও গ্রাম ভেসেছে। এর মধ্যে ২০টি শহর ও গ্রাম ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আছে, বাকি ১০টি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। ইউক্রেনের এলাকায় ১৭ হাজার ও রাশিয়ার এলাকায় ২৫ হাজার মানুষের সাহায্য দরকার। খেরসন শহরে দুই হাজার বাড়ি পানির তলায় চলে গেছে।

বাঁধটির গুরুত্বঃ

  • ৩০ মিটার উঁচু ও ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার লম্বা বাঁধটি তৈরি হয় ১৯৫৬ সালে। কাখোভকা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অংশ হিসেবে নির্মিত হয়েছিল এটি।
  •  এতে ১৮ কিমি আয়তনের বিশাল জলাধার রয়েছে, যা ক্রিমিয়া উপদ্বীপ ও জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি সরবরাহ করে। এ তিনটিই বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
  •  জলাধারে থাকা পানির পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের ইউটা রাজ্যের গ্রেট সল্ট লেকের সমান। সোভিয়েত আমলের বাঁধটি ধ্বংস হলে খেরসন অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হবে বলে আগেই সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুনঃ পাইকারী বাজারে কমছে পেয়াজের দাম

কারা এই বিস্ফোরণের পেছনে আছে, তা এখনো জানা যায়নি। ইউক্রেন বলছে, রাশিয়া এই কাজ করেছে। আর রাশিয়ার অভিযোগ, ইউক্রেনের সেনারাই বিস্ফোরণের পেছনে আছেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে ফোনালাপে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, এই কাজ বর্বরোচিত।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version