আমরা মুসলিম আর আমাদের মুসলমানদের সবচেয়ে সুন্নতি ফলের মধ্যে খেজুর একমাত্র ফল। আর এই ফলের মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের উপকারি উপাদান। এতে রয়েছে প্রায় ৮০% চিনিজ।
সব অংশে খনিজসমৃদ্ধ বোরন, ফ্লুরিন, ম্যাগনেসিয়াম, কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্কের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান রয়েছে। এই খেজুরে স্বল্প পরিমাণে পানি থাকে যা শুকানো অবস্থায় তেমন প্রভাব ফেলে না। তবে এ প্রক্রিয়ার ফলে জমানো ভিটামিন ‘সি’ খাদ্য উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। চলুন জেনে নেয়া জাক খেজুরের কিছু উপকারীতা
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
শক্তি বর্ধনে: অনেকের মানসিক বা শারীরিক সমস্যা থাকে আর এই খেজুর শারীরিক ও মানসিক শক্তিবর্ধক প্রচুর পরিমানে কাজ করে থাকে। ডাক্তারদের পরিভাষায় খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান, যা শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধিসহ হজম শক্তি, যৌনশক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এমনকি খেজুর ফুলের পরাগরেণু বন্ধ্যাত্ব দূর করে, শুক্রাণু বৃদ্ধি করে। খেজুর ও খেজুরের ফুল পরাগরেণু ডিএনএ’র গুণগতমান বৃদ্ধি করে এবং অণ্ডকোষের শক্তি বাড়ায়।
হার্টের সমস্যায়: আমাদের দেশে অনেকের এই সমস্যাটা দেখা দিয়ে থাকে, এক্ষেত্রে প্রতিদিন খেজুর খাওয়া জরুরি। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সারা রাত খেজুর পানিতে ভিজিয়ে সকালে পিষে খাওয়ার অভ্যাস হার্টের রোগীর সুস্থতায় কাজ করে। এমনকি এই সমস্যা থেকে অনেকটা মুক্তি লাভ করে থাকে।
দেহের দুর্বলতায়: আমাদের দেশের মানুষ অনেক কঠোর পরিশ্রম করে থাকে। আর এই কঠোর পরিশ্রম করার পরে শরীরে খুব দুর্বল লাগে। তখনী ঝটপট কয়েকটি খেজুর খেয়ে নিলে তাত্ক্ষণিক দেহে শক্তি পাওয়া যায়। তাই প্রত্যেকের খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে তাহলে অনেক রোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
হজম ও রুচি বাড়ায়: অনেকেই আছে যাদের মুখে রুচি কম এবং হজম শক্তি কম তাদের জন্য এই খেজুর যথেষ্ট কাজ করবে। বিশষ করে রুচি বাড়াতে খেজুরের কোনো তুলনাই হয় না। যে সব শিশু ঠিকমতো খেতে চায় না, তাদেরকে নিয়মিত খেজুর খেতে দিলে রুচি ফিরে আসবে। শুকনো খেজুরের মধ্যে রয়েছে স্যলুবল এবং ইনস্যলুবল ফাইবার ও বিভিন্ন ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড, যা সহজে খাবার হজমে সহায়তা করে। একই সাথে রুচি ফিরে পাবে।
ক্যান্সার থেকে রক্ষায়: আমাদের দেশের মানুষের এই মরণ ব্যাধি ক্যান্সার রোগের হাত থেকে বাচার একমাত্র উপায় হলো প্রাকৃতিক ফল জাতীয় খাবার। এর মধ্যে খেজুর হচ্ছে প্রধান। এই প্রকৃতিক খেজুর বিভিন্ন ক্যান্সার থেকে শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডাক্তারি পরিভাষায় খেজুর লাংস ও ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখতে সাহায্য করে এবং শরীর সতেজ রাখতে বিশষ ভূমিকা পালন করে।
কোষ্ঠকাঠিন্যে: যার একনার এই রোগটি হয়েছে সেই বুঝে এর জ্বালা কতো। তাই কেউ যদি নিয়মিত খেজুর খায় খুব সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মিলবে। বিশষ করে শক্ত খেজুরকে সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি সলাল বেলা খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সহজে দূর হয়।
রক্তশূন্যতায়: আমাদের দেশে অনেক ছোট বাচ্চা এবং বড় মানুষের এই সমস্যা টা দেখা দেয়। আর এই খেজুর লৌহসমৃদ্ধ ফল হিসেবে রক্তশূন্যতায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কেউ যদি প্রতিদিন খেজুর খেলে দেহের আয়রনের অভাব পূরণ করে এবং রক্তস্বল্পতা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায়: বাংলাদেশের মাঝারি বয়েসের মানুষের মধ্যে প্রায় এই রোগটি দেখা যায়। আর এই খেজুরের মধ্যে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম বিদ্যমান থাকে, যা মানুষের স্ট্রোক হওয়ার ভয়াবহতাকে প্রায় ৪০% কমিয়ে দেয়। তাই কেউ যদি নিয়মিত খেজুর খায় দেখবেন তার স্টোক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে অনেক আংশ।
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায়: প্রকৃতিক ফল খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং খুব অল্প পরিমাণে সোডিয়াম। আপনি প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দেখবেন দেহের খারাপ কলেস্টোরল কমাবে এবং ভালো কলেস্টোরলের মাত্রা বৃদ্ধি করবে।
খেজুর বিভিন্ন রোগের কার্যকারিতা
খেজুরে রয়েছে উচ্চমাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাট সম্পন্ন। এই খেজুর জ্বর,যৌনরোগ, মূত্রথলির ইনফেকশন, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে খেজুর বেশ উপকারী। খেজুর মানুষের মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত রাখে। বিশেষ করে নারীর শ্বেতপ্রদর ও শিশুর রিকেট নিরাময়ে খেজুর বেশ কার্যকর। খেজুরে থাকে প্রচুর পরিমানে ডায়েটরই ফাইবার আর এই ডায়েট ফাইবার দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
কেউ যদি নিয়মিত খেজুর খায় তার ত্বকে উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে। শুকনো খেজুর দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে বিশেষভাবে সহায়ক। আপনি প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন রাতকানা রোগের হাত থেকে রেহাই পাবেন। খেজুর রাতকানা রোগ ভালো করতে সাহায্য করে থাকে। খেজুর খাওয়ার ফলে মারাক্ত রোগের হাত থেকে আপানাকে বাচিয়ে দিবে আপনাকে যেমনঃ মুখের অর্ধাঙ্গ রোগ, পক্ষঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য উপকারী।
খেজুর চাষ পদ্ধতি
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খেজুর গাছের রস সংগ্রহ: খেজুর গাছ সাধারণত নির্বাচন করা হয় ৫ থেকে ৭ বছর বয়সের এবং যে সকল গাছ দেখতে সুস্থ সবল, সে সব গাছ নির্বাচন করলে অধিক রস আহরিত হয়। খেজুর গাছের রস সংগ্রহের জন্য গাছ নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খেজুরের রস সংগ্রহ গাছ কাটার উপর নির্ভর করে কারণ রস সংগ্রহের জন্য প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে রস সংগ্রহ করা অতি জরুরি।
বিশেষ করে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দক্ষ গাছী দিয়ে খেজুরের গাছ কাটলে রস আহরণের হার ও গাছের স্থায়িত্ব উভয়ই অনেক বৃদ্ধি পাবে।
ভালো গাছী দেখে গাছ কাটার জন্য আনতে হবে। অদক্ষ্য গাছী দিয়ে গাছ কাটলে গাছ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য কিভাবে গাছ কাটতে হবে গাছের কোন অংশে কতটুকু কাটতে হবে, কোন সময়ে বেশি পরিমাণ রস পাওয়া যায়, সর্বোপরি গাছটি কিভাবে কাটলে অধিক রস সংগৃহীত হবে এবং গাছটি দীর্ঘ স্থায়ী হবে তা গাছীর সম্যক ধারণা থাকতে হবে। এই সব ধারনা ও জ্ঞান থাকলে গাছটি সহজে মরবে না। আর এই জন্য গাছীকে অবশ্যই প্রশিক্ষিত হতে হবে। কারণ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ১টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ এবং তা থেকে সিরাপ, গুড়, পিঠা, পায়েস ইত্যাদি মুখরোচক খাবার তৈরি করার জন্য অধিক পরিমাণে রস আহরণ করতে পারবে। গবেষণায় দেখা গেছে গাছের বেডের ১’/৩’ অংশ লম্বা ও ৭.৫ থেকে ১০ সে.মি গাছ কাটলে বেশি পরিমাণ রস পাওয়া যায়। এতে ক্ষতিও কম হয়।
রস সংগ্রহ পদ্ধতি
প্রথমত খেজুর রস সংগ্রহের জন্য ধারালো দা, মাটির পাত্র বা হাড়ি, নেট, লোহার বা স্টিলের কড়াই, চুলা, জ্বালানী, ছাকনি, ও বোতল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে রস সংগ্রহের সময়, নভেম্বর মাসের মাঝামাঝির দিকে গাছ পরিষ্কারের কাজ শুরু করতে হয়। খেজুর গাছ পরিষ্কার করার পর ১৫ থেকে ২০ দিন পর গাছ কাটা শুরু করতে হয়। এরপর গাছের উপরে ছাটা অংশের যেখানে রস নিঃসরণ শুরু করা হয় সেখানে ‘ট’ আকৃতির চিকন প্রায় ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা বাঁশের কঞ্চি আধা ইঞ্চি পরিমাণ গাছে ঢুকিয়ে দিতে হয়। তখন ‘ট’ আকৃতির কাঠির মধ্যে দিয়ে বেয়ে বেয়ে ফোটায় ফোটায় গাছের রস ঝুলন্ত হাড়িতে জমতে থাকে।
খেজুর গাছ একবার ছাঁটলে ৩-৪ দিন রস সংগ্রহ করা যায় এবং পরবর্তীতে ৩ দিন গাছ শুকাতে হয়। এই নিয়মে গাছ কাটলে রস সুমিষ্ট হয়। সাধারণত রস ডিসেম্বর হতে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সংগ্রহ করতে হয়। খেজুর রস সংগ্রহের পর হাড়ি পরিষ্কার করে রৌদ্রে শুকাতে হয় অথবা আগুনে ছেকে নিতে হয়। এতে সংগৃহীত রসে গাঁজন বন্ধ হয়।
আবহাওয়া ও মাটি:
দেশি খেজুর গাছ শুষ্ক থেকে আর্দ্র যে কোনো স্থানে জন্মাতে পারে। দেশি খেজুর গাছের জন্ম ও বৃদ্ধি লাভ করে, সেখানে বেশি ভালো হয় যেখানে সবচেয়ে দিনের তাপমাত্রা ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থাকে। আবার তাপমাত্রা কমে গেলেও খেজুর গাছ বেঁচে থাকতে পারে। ছোট তরুণ গাছ হিমাঙ্কের কাছাকাছি তাপমাত্রায় ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খেজুর গাছের জন্য বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৪০০ থেকে ৭০০ মিলিমিটার দরকার হয়। বিশেষ করে খেজুর গাছের জন্য রোদেলা জায়গা হতে হবে। খেজুর গাছ বিভিন্ন ধরনের মাটিতে জন্মাতে পারে। কিন্তু মাটি অবশ্যই সুনিষ্কাশিত হতে হবে। তা না হলে গাছ টিকবে না। খেজুর গাছের জন্য মাটির অম্লমান বা পিএইচ ৫.৫-৭.৫ হলে ভালো হয়। তবে লবণাক্ত মাটিতে খেজুর গাছ ভালো হয়।
চারা তৈরি
খুব সহজে বীজ থেকে দেশি খেজুরের চারা তৈরি করা যায়। পথমে পাকা ফল গাছ থেকে পেড়ে কয়েক দিন রেখে দিলে ফল আরও পেকে খোসা ও শাঁস নরম হয়ে পচে যায়। সেই সময় ফলগুলো চটকে পানিতে ধুয়ে নিলে বিচি পাওয়া যায়। সেই বিচি গুলো পলিব্যাগে বা বীজতলায় বুনে চারা তৈরি করা যায়। বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালের শেষে চারা তৈরি করা যায়। খেজুরের বীজ থেকে চারা গজাতে ২-৩ মাস লাগতে পারে।
চারা রোপণ
আমাদের বাংলাদেশে অধিকাংশ খেজুরগাছ লাগানো হয় রাস্তার ধারে বা তৃণভূমিতে। তবে বাণিজ্যিকভাবে বা বাগান আকারে খুব একটা খেজুরের চাষ করা হয় না। এ দেশে প্রধানত প্রাকৃতিকভাবেই খেজুরগাছ জন্মে থাকে। কিছু বিক্ষিপ্তভাবে গাছ লাগানো হয়। তবে স্বভাবতই এসব গাছের কোনো পরিচর্যা করা হয় না বা করলেও খুব সামান্য যত্ন নেয়া হয়। এতে করেও এই সব গাছ অনেক ভালো হয়।
আমাদের বাংলাদেশে পাখিরাই মূলত দেশি খেজুর গাছের প্রধান বিস্তারক। ফল খেয়ে সেসব ফলের বীজ পাখিরা দূরবর্তী স্থানে বিষ্ঠা ত্যাগের মাধ্যমে বিস্তার ঘটায়। কাঠবিড়ালিও এর বিস্তারক। বর্ষাকালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া এসব বীজ থেকে প্রাকৃতিকভাবে খেজুরের চারা বিভিন্ন যায় গায় জন্মায়। আমাদের বাংলাদেশে কৃষকরা সাধারণত চারা তৈরি করে না। কিন্তু তারা প্রাকৃতিকভাবে জান্মানো খেজুরের চারা তুলে এনে রোপণ করে।
সাধারণত তারা ১৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার লম্বা ১ থেকে ২ বছর বয়সী চারা তুলে এনে বাগানে এবং বাড়ির আঙিনায় ও পতিত জমিতে বা রাস্তার ধারে লাগায়। বাংলাদেশের সম্প্রতি নার্সারিতে খেজুরের চারা উৎপাদনের মাধ্যমে কোনো কোনো এলাকায় খেজুর চাষ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলে নারিকেলের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খেজুরের চারা রোপণের জন্য আগেই গর্ত করে সার গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরে রাখতে হবে। এতে করে গাছ পরিপুষ্ট হয়। আর দেখা গেছে, রোপণের সময় গর্তে পরিমাণ মতো জৈব ও রাসায়নিক সার দিলে পরবর্তীতে সেসব গাছ থেকে বেশি রস পাওয়া যায়। সবদিকে সমান ভাবে ৫০-৭৫ সেন্টিমিটার আকারের গর্ত খুঁড়ে প্রতি গর্তের মাটির সাথে ৫-৭ কেজি গোবর সার, ৫০০ গ্রাম টিএসপি ও ৩০০ গ্রাম এমওপি সার মাটির সাথে মেশাতে হবে। সার মাটি দিয়ে গর্ত ভরার সপ্তাহ খানেক পর গর্তের মাঝখানে চারা রোপণ করতে হবে। জমির আইলে চারা লাগাতে হলে আইলের প্রশস্ততা বুঝে গর্ত করে জৈবসার দিয়ে চারা লাগাতে হবে। অনেক কৃষকরা বাগানে ঘন করে চারা লাগায় এতে করে গাছ ভালো হয় না। কিন্তু গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪ থেকে ৫ মিটার দিলে ভালো হয়। খেজুরের চারা অবশ্যই সারিতে রোপণ করা উচিত।
আগাছা ও সার ব্যবস্থাপনা
যেহেতু খেজুর গাছের বাগান অনেক দূরত্ব থাকে তাই বাগানে প্রচুর আগাছা জন্মে। বিশেষ করে উলু ঘাস। এসব আগাছা পরিষ্কার না করলে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন কমে যায়। এজন্য চারা রোপণের ১ মাস পর চারার গোড়া থেকে খানিকটা দূর পর্যন্ত আগাছা পরিষ্কার করে মাটি কুপিয়ে সেখানে গাছপ্রতি ১৫০-২০০ গ্রাম হারে ইউরিয়া সার দিতে হবে। আর বর্ষার পর সার দিলে সেসব গাছের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে। চারা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে পরের বছর থেকে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সারের পরিমাণ গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাড়াতে হবে। গ্রামে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাত্র সিকি ভাগ কৃষক শুধু বছরে একবার গাছের গোড়ার কিছুটা দূর দিয়ে মাটি খুঁড়ে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করেন। এতে তাদের অভিজ্ঞতা হলো, ইউরিয়া সার দিলে সেসব গাছে রসের উৎপাদন বাড়ে।
বালাই ব্যবস্থাপনা
আমাদের দেশি খেজুর গাছ অনেক ধকল সইতে পারে। সাধারণত এ গাছে তেমন বালাইয়ের আক্রমণ হয় না। কিন্তু কখনো কখনো গাছে কিছু পোকা ও রোগের আক্রমণ দেখা দেয়, যার ফলে গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও খেজুর পাতায় খোস পোকার আক্রমণ ঘটে। সাদা ও লাল দুই ধরনের খোস পোকা বা স্কেল ইনসেক্ট আক্রমণ করে। তবে অল্প বয়সের খেজুর গাছ সাদা স্কেল পোকা দ্বারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
খেজুর গাছের বয়স ২ থেকে ৮ বছরের মধ্যে সাদা খোস পোকার আক্রমণ হলে গাছের খুব ক্ষতি হয়। দানা দানা শক্ত সাদাটে রঙের চাকতি বা খোসের মতো পোকা পাতায় অনেকগুলো একসাথে কলোনি করে থাকে ও পাতা থেকে রস চুষে পাতাকে বিবর্ণ, দুর্বল ও শেষে মেরে ফেলে। আর পূর্ণবয়স্ক ও বাচ্চা খোস পোকা উভয়ই পাতা থেকে রস চুষে খায়। যখন তীব্র আক্রমণে পাতা হলদে হওয়ার পর মরে বাদামি হয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও লেবু চাষ করে লাভবান হওয়ার উপায়
তখন পাতার উভয় পিঠেই এরা আক্রমণ করে, তবে নিচের পিঠে বেশি থাকে। লাল খোস পোকাও । পূর্ণবয়স্ক গণ্ডার পোকা খেজুর গাছের কচি পাতা খেয়ে সর্বনাশ করে। মাঝে মাঝে খেজুর পাতায় ছাতরা পোকার আক্রমণও দেখা যায়। এসব পোকা নিয়ন্ত্রণে অনুমোদিত কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। রোগের মধ্যে শিকড় পচা, হলদে মোজাইক, কৃমি রোগ, লিথাল ইয়েলোইং বা হলদে মরা, ব্রিটল লিফ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ রোগ। এরা ছত্রাকজনিত রোগ হলে বোর্দো মিশ্রণ বা ছত্রাকনাশক স্প্রে করে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।