পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব নির্বাচন করা সহজ একটি কাজ নয়, কারণ এটি সাবজেক্টিভ একটি বিষয়। মানবের মানে মানুষ সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের মতামত থাকে এবং একটি ক্রমে পরিমিতি সেট করা কঠিন। প্রতিটি মানুষ নিজেই আলাদা আলাদা দক্ষতা, কর্মঠতা, উদারতা, সৃজনশীলতা ইত্যাদি সম্পর্কে বিশেষ হতে পারেন।
পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ হজরত মোহাম্মদ (সাঃ)
ভালো খারাপ মিলেই মানুষ।
বিখ্যাত লেখক জর্জবার্নার্ড‘শ পৃথিবীর সবচেয়ে মহান এই ব্যক্তি কে মানবতার ত্রাণকর্তা আখ্যা দিয়ে বলেন, “তিনি যদি আধুনিক পৃথিবীর শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করতেন, তাহলে তিনি অবশ্যই সকল সমস্যার সমাধান করতে সফল হতেন। সেই সাথে আসতো পৃথিবীর জন্য অতি জরুরী সুখ-শান্তি।” এছাড়াও আরো বহু অমুসলিম পৃথিবীর সবচেয়ে মহান ব্যক্তি কে তার আদর্শের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বিগত প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে শত শত কোটি মুসলিম হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর শিক্ষা চর্চা করে আসছে। ভালো খারাপ মিলেই মানুষ। আপনার কাছে যিনি শ্রেষ্ঠ, অন্য লোকের কাছে তিনি সবচেয়ে খারাপ লোক।
পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ হজরত মোহাম্মদ (সাঃ)। যা বিশ্বখ্যাত লেখক ও গবেষক মাইকেল হার্টথেকে শুরু করে জর্জবার্নার্ড শ’ পর্যন্ত সবাই এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছে। মাইকেল হার্টতার বইয়ে লিখেছেন, “হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাফল্যের মধ্যে জাগতিক ও ধর্মীয় উভয় দিকেরই প্রভাবের এক বিশেষ সংমিশ্রণ রয়েছে। এজন্য সংগতভাবেই তাঁকে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।”
পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মহানবী হযরত মুহাম্মাদ মুহাম্মাদ (সা.) । কুরআন এবং মুসলিম উম্মাহই কেবল তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি দেয়নি, দিয়েছেন অমুসলিম মনীষীরাও এমনকি অন্যান্য ধর্মগন্থও। ‘মাইকেল হার্ট’ যিনি বিশ্বের সর্বকালের সবচাইতে প্রভাবশালী একশত সেরা মনীষীর জীবনী লিখেছেন, তিনি সেই জীবনী তালিকায় প্রথমেই মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে স্থান দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “মুহাম্মদ (সা.) এর সাফল্যের মধ্যে জাগতিক ও ধর্মীয় উভয় বিধ প্রভাবের এক অতুলনীয় সংমিশ্রণ ঘটেছে। এজন্য সংগতভাবেই তাঁকে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।” -(দ্যা হ্যান্ড্রেড)
সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই রবিউল আউয়াল মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম আমিনা। দুনিয়ায় আসার পুর্বেই পিতা আব্দুল্লাহ মারা যান। আবার ছয় বছর বয়সে মা আমিনাও মারা যান। পিতা-মাতা উভয়কে হারিয়ে মহানবী (সা.) অসহায় ও এতিম হয়ে পড়েন। মায়ের মৃত্যুর পর তিনি দাদা আবদুল মুত্তালিব এর আশ্রয়ে বড় হতে থাকেন। কিন্তু আট বছর বয়সে দাদাকেও হারান। এরপর চাচা আবু তালিবের স্নেহে লালিত পালিত হন। বয়স যখন কৈশোরে তখন একটি সত্য ও সুন্দর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে শান্তিকামী যুবকদের নিয়ে তিনি গঠন করেন ‘হিলফুল ফুযুল’ অর্থাৎ শান্তিসংঘ। হিলফুল ফুযুলের উদ্দেশ্য ছিল, আর্তমানবতার সেবা করা। অত্যাচারীকে প্রতিরোধ করা। শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা। তিনি আরব সমাজের সব অন্যায়, অবিচার, শোষণ ও নির্যাতন বন্ধের লক্ষ্যে তাঁর সমবয়সী কিছু যুবককে নিয়ে এ শান্তিসংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ সংঘের প্রতিটি কর্মসূচি থেকে যুবসমাজের জন্য বহু শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
‘হিলফুল ফুজুল’র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য-
- মজলুম ও অসহায়দের সাহায্য করা।
- সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা।
- বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে মৈত্রী ও প্রীতির সম্পর্ক স্থাপন করা।
- পথিক ও মুসাফিরের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
- কোনো জালেমকে মক্কায় প্রবেশ করতে না দেয়া এবং দুষ্কৃতকারীদের অন্যায় আগ্রাসন প্রতিরোধ করা।
ইতিহাস বলে, তৎকালীন আরব সমাজ থেকে অন্যায়, অপরাধ দূরীকরণে এ সংগঠনের অবদান ছিল অসামান্য। শুধু তাই নয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে মৈত্রী ও প্রীতির সম্পর্ক স্থাপনেও এই সংগঠনের ভূমিকা ছিল অনন্য।
যখন মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) -এর প্রজ্ঞা ও যোগ্যতার সংবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন খুওয়াইলিদ কন্যা খাদিজা লোক মারফত মহানবী (সা.)-কে তাঁর ব্যবসায়ে নিযুক্ত করার প্রস্তাব করেন। চাচা আবু তালিবের সাথে আলোচনা করে মহানবী (সা.) তাতে রাজী হলেন। সততা ও চারিত্রিক মাধুর্যতা দেখে মক্কার সম্পদশালী মহিলা খাদিজা (রা:) নিজ ব্যবসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব মহানবী (সা.) এর ওপর অর্পন করেন। অতি কম সময়ে খাদিজার ব্যবসা পরিচালনায় মহানবী (সা.) সততার অনন্য নজির স্থাপন করেন। খাদিজা মহানবী (সা.) এর বিশ্বস্ততা ও কর্মদক্ষতায় অভিভূত হন। মুগ্ধ হন। তারপরই খাদিজা নিজেই মহানবী (সা.) এর সঙ্গে বিবাহের প্রস্তাব পাঠান। চাচা আবু তালিবের সম্মতিতে খাদিজার সঙ্গে মহানবী (সা.) এর বিবাহ সম্পন্ন হয়। এ সময় তাঁর বয়স পচিশ বছর হলেও খাদিজার বয়স ছিল চল্লিশ বছর।
যখন নবুয়ত প্রাপ্তির সময় খুব কাছাকাছি তখন মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) যেন পূর্বাপেক্ষা আরও বেশী নির্জনতাপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এসময় তাঁর বয়স চল্লিশ বছর পূর্ণ হয়ে যায়। হেরা পর্বতের নির্জন গুহায় একাধারে কয়েকদিন আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকেন। হঠাৎ এক রাতে জিবরাইল (আ:) তাঁর কাছে ওহী (আল্লাহর বাণী) নিয়ে আসেন। জিবরাইল (আ:) কুরআনের আয়াত পাঠ করে শুনালেন- “পড় তোমার প্রভূর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” তখন তিনি নবুয়ত প্রাপ্ত হন।
আরো পড়ুন : আবেদন পত্র বা দরখাস্ত লেখার নিয়ম
নবুওয়ত পেয়ে মহানবী (সা.) মানুষদের আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত দেন। এতে মূর্তিপূজারী লোকজন তাঁর দাওয়াতের বিরোধিতা শুরু করে। তাঁর ওপর নানারকম নির্যাতন চালাতে থাকে। তারা মহানবী (সা.)-কে সমাজের নেতা বানানোর প্রলোভন দেখায়। ধন-সম্পদের লোভ দেখায়। মহানবী (সা.) তাদের বলেন, “আমার এক হাতে সূর্য ও অন্য হাতে চাঁদ এনে দিলেও আমি ইসলাম প্রচার থেকে বিরত হবো না।” মহানবী (সা.) এর ওপর মক্কার কাফেররা ভীষণ ক্ষেপে ওঠে। অত্যাচার শুরু করে। তাঁর সাথে করে দুর্ব্যবহার। তাদের দুর্ব্যবহারে মহানবী (সা.) অনেক কষ্ট পান। একসময় জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে তিনি মদীনায় চলে যান। মদীনাকে ইসলাম প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হন। তিনি সেখানে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমান, খ্রিস্টান, ইহুদিসহ সব স¤প্রদায়ের লোকের পরস্পরের মধ্যে শান্তি, সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ‘মদীনা সনদ’ সম্পাদন করেন। এ মদীনা সনদই ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম লিখিত চুক্তি বা সংবিধান। এ সনদের ফলে মুসলমান আর অমুসলমানদের মধ্যে এক অপূর্ব সম্প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয়। নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
উপরোক্ত আলোচনা প্রেক্ষিতে একথা সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব।