আমরা সবাই ‘ব্যবসা’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। ব্যবসার মনে করলে মনে পরে বৃটিশ বেনিয়ারা, যারা একসময় সারা পৃথিবীতেই একচেটিয়াভাবে ব্যাবসা করে গিয়েছে। সেই থেকে আমাদের উপমহাদেশে বর্তমানে চাকুরীর পাশাপাশি ব্যবসা অত্যন্ত জনপ্রিয় আকার ধারণ করেছে। বর্তমান বয়স্ক লোকদের পাশাপাশি তরুণরাও ব্যবসার দিকে ঝুঁকছে।
চাকুরী থেকে ব্যাবসা ঝুঁকি বেশি হলেও ব্যবসাকে চাকুরী থেকে বেশি প্রাধন্য দেওয়া হয় কেননা এতে রয়েছে নিজস্ব স্বাধীনতা তার সঙ্গে রয়েছে মেধা কাজে লাগানোর সুযোগ। তাছাড়াও চাকুরীতে পরাধীন নিয়মে আবদ্ধতা। বাঙালিরা একটা কথা “চাকুরী মানেই চাকর “। আর সেকারণেই বর্তমান সকলেই ব্যবসার দিকে কম বেশি সকলেই মনোনিবেশ করছে ।
যেকোন ধরণের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রেই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। না জেনে ব্যবসা করলে সব চালান হয়ে যেতে পারে লোকসানা সেই সাথে হারিয়ে যেতে পারে আগ্রহ। সকল ব্যবসায় রয়েছে ঝুঁকি, কোন ব্যবসায়ই ঝুঁকিমুক্ত নয় তবে কিছু সাধারন নিয়ম মেনে ব্যাবসা পরিচালনা করলে তাতে ক্ষতির সম্ভাবনা খুব কম থাকে বরং লাভ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আসুন আমরা জেনে নেই কিভাবে, একটা নতুন ব্যাবসা শুরু করতে পারি। ব্যবসা শুরু কি কি লাগবে। বিভিন্ন নিয়ম কানুন সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ নিম্নে আলোচনা করা হলো :-
১। অভিজ্ঞতা অর্জন (Gain experience) :- চাকুরী করতে গেলে অভিজ্ঞতা চায়, এখন ব্যবসা করতেও অভিজ্ঞতা লাগলে যাবো কোথায় টা ভাবতে পারেন। আসলে অভিজ্ঞতা একটা সম্পদ। যার মূল্য তুলনাহীন। পারিবারিক ব্যবসা না হলে আপনাকে ব্যবসা শুরু করার পূর্বে অবশই ১০০ (একশত) বার ভালো ভাবে ভাবতে হবে। আপনার ব্যবসাটি যদি বংশপরাণ না হয় তাহলে মিনিমাম সাত /আট বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো হয়। নতুন হলে প্রথমে শুরু না করে অন্যের ব্যবসায় চাকুরী করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।
২। সঠিক পরিকল্পন তৈরি (The right plan) :- একটা ব্যবসার জন্য সঠিক পরিকল্পন অত্যান্ত জরুরি। ধরা যাক, আপনার মূলধন ২০ (কুড়ি) লক্ষ টাকা, কিন্তু আপনি যে ব্যবসায় করতে চান তার জন্য যোগান লাগবে ২৫ লক্ষ টাকা। তাহলে একবার ভেবে দেখেন ? সেক্ষেত্রে আপনাকে অন্য কোন উৎস থেকে বাকি ৫ লক্ষ টাকা যোগাড় করতে হবে। তাছাড়াও আপনি কোথায় থেকে কিনবেন , কোথায় বিক্রয় করবেন, আপনার কাস্টমার করা, কতটুকু লাভ হবে , ভবিষতে কেমন চলবে , কতজন কর্মী লাগবে প্রভিতি সমস্ত কিছু একটি নিখুঁত ভাবে সঠিক পরিকল্পন তৈরি করা।
৩। একটি সুন্দর নাম নির্বাচন (Choosing a beautiful name) :- আমরা সুন্দরের পূজারী। সুন্দর কিছু কে না পছন্দ করে? আর সুন্দর একটি নাম ব্যবসায়ের একটি প্রধান অঙ্গ। অনেক সময় একটি সুন্দর নামের কল্যাণেই আপনার ব্যবসার সাফল্যের শীর্ষে পারে । তাই এক্ষেত্রে ক্রিয়েটিভ এবং অর্থবোধক নাম ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
৪। ওয়েবসাইটে, লোগো এন্ড ভিজিটিং কার্ড তৈরি (Create a logo and business cards) :- ওয়েবসাইটে ও লোগো হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের আইডেন্টি কার্ড। যা অত্যান্ত প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভিজিটিং কার্ড একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচয় বহন করে তাই শুরুতেই কোম্পানীর নিজস্ব নাম এবং লোগো সহ ভিজিটিং কার্ড তৈরি করুন এবং সর্বত্র তা ব্যবহারের চেষ্টা করুন। ওয়েবসাইট থেকেও অনেক কাস্টমার পেয়ে যেতে পারেন।
৫। জায়গা নির্বাচন (Selection of places) :- আপনার ব্যবসার স্থান সুন্দর নাহলে ব্যবসা সুবিধা করতে পারবেন না। আপনি কোন এলাকায় ব্যবসা শুরু করতে চান এবং কোন স্থান থেকে ব্যবসায়ীক কাজ করলে আপনার পরিবহণ খরচ হ্রাস পাবে সেরকম অনুযায়ী স্থান নির্বাচন করুন।
৬। পরামর্শ গ্রহণ (Taking advice) :- আপনি যে ধরণের ব্যবসা করত চান সে ধরণের পুরানো ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। তাদের সঙ্গে থেকে যতটা সম্ভব কিছু ধারণা নিন। যেসব বিষয়ে আপনার মনে সংশয় আছে সেগুলো প্রশ্ন করার মাধ্যমে জেনে নিন। এতে করে ব্যবসায়ের মাঝে কোন সমস্যার জন্য তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নিতে আপনার সুবিধা হবে।
৭। ব্যবসার নিয়মাবলী চার্ট তৈরি (Creating business rules chart) :- যেকোন ধরণের ব্যবসায় কিছু নিয়ম মেনে নিজেদের কাজ করতে হয়। যা লঙ্ঘন করার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠানের মালিকেরও নেই। এতে যেমন একটি ডিসিপ্লিন কাজ করে এবং ব্যবসায় অপ্রত্যাশিত ক্ষতির সম্মুখীন হয় না। তাই ব্যবসার শুরুতেই তৈরি করে নিন নিয়মানুবলীগুলো।
৮। ব্যবসায় নতুনত্ব (Business innovation) :- মানুষের প্রধাণ স্বভাবের মধ্যে অন্যতম হলো মানুষ সর্বদাই নতুনত্বের খোঁজ করে। আর আপনিও এই সুযোগে নতুন কিছুর মাধ্যমে শুরু করতে পারেন। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন সেসবের প্রতি মানুষ আগ্রহ প্রকাশ করে। অপ্রত্যাশিত কিছু করা যাবে না।
৯। সামাজিক যোগাযোগের ব্যবহার (Use social networking) :- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার ব্যবসাকে খুব দ্রুত এগিয়ে নিতে পারেন । কারণ বর্তমান সকল শ্রেণীর মানুষই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের সাথে জড়িত এবং ব্যবসা শুরুর দিকে এটিই হতে পারে আপনার ব্যবসার মার্কেটিং করার অন্যতম একটি মাধ্যম।
১০। ট্রেড লাইসেন্স ও টিন নাম্বার (Trade License and Tin Number):- যেকোন ব্যবসার ক্ষেত্রেই আপনার প্রয়োজন হবে সরকারি কিছু লাইসেন্স এবং টিন নাম্বার। যদি তা না থাকে তাহলে আপনি ভবিষ্যতে আইনী জটিলতায় পরতে পারেন। এমনকি বন্ধ হয়ে যেতে পারে আপনার শুরু করা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি । তাই ব্যবসা শুরুর আগেই বৈধ উপায়ে ট্রেড লাইসেন্স সহ প্রয়োজনীয় লাইসেন্স এবং টিন নাম্বার সংগ্রহ করুন।
একজন সফল ব্যবসায়ি উপরোক্ত বিষয় সম্পর্কে ভালো ভাবে জানে। একটি নতুন ব্যবসার শুরুতে এরকম কিছু সাধারণ নিয়ম-কানুন অনুসরণ করলে আপনিও হতে পারেন সফল। কোনো বিষয়ে জানতে বা আপনার কোনো পরামর্শ থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা আপনার পরামর্শকে সন্মান করবো ইন্শাআল্লাহ।
এই পোস্টটি আপনার ভাল লেগে থাকলে শেয়ার করুন আপনার টাইমলাইনে। আপনার এই শেয়ার আরো একজনের উপকার হতে পারে এবং পরবর্তীতে আবারো দেখতে পারবেন। নিচে কমেন্ট বক্স থেকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন আপনার মতামত। “সুন্দর হোক আপনার জীবন !!”