প্রায় বিশ্বের সব জায়গায় হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তনে সর্দি, কাশি, জ্বরের কবলে পড়তে হচ্ছে অনেককে। এই সময়ে বিভিন্ন ভাইরাল ইনফেকশনে ভুগতে হয়। তবে এই জ্বর, সর্দি, কাশির চিকিৎসার বেশ কিছু প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায় রয়েছে।

জ্বর কী (What is fever) ?:

মানব দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হলো (36–37° Centigrade) ৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কোনো কারণে এই দেহের তাপমাত্রা যদি বেড়ে যায় তবে সেই দৈহিক অবস্থাকে জ্বর বলা হয়। জ্বর পরিমাপে ব্যবহৃত যন্ত্রের নাম ‘থার্মোমিটার’ নামে পরিচিত। পারদ স্তম্ভের ওঠানামার পাঠ হতে জ্বর পরিমাপ করা হয়। বর্তমান জ্বর পরিমাপে ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহৃত হয়।

Natural way to cure fever

 

জ্বরের লক্ষণ (Symptoms of Fever): –

জ্বর আসার আগে থেকেই শরীর কিছুটা পূর্বাভাস দেয়। জ্বর হওয়ার পূর্বে থেকেই খুসখুসে কাশি এবং শরীরে একটা ম্যাজমেজে লক্ষণ দেখা দেয়। আসুন, আমরা এক নজরে দেখে নেই জ্বরের লক্ষণ গুলো :

  • হঠাৎ কাঁপুনি এবং শীত শীত ভাব অনুভূত হয়।
  • মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়।
  • চোখে জ্বালা ভাব লক্ষ্য করা যায়।
  • খাদ্যে অনীহা লক্ষ্য করা যায়।
  • হৃদযন্ত্রের পারদ বৃদ্ধি পায়।
  • তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি লক্ষ্য করা যায়।
  • বাচ্চাদের মধ্যে একটা আনছান ভাব লক্ষ্য করা যায়। এ ছাড়াও শিশুদের মধ্যে গলা ব্যথা, কাশি, কানে ব্যথা, বমি এবং ডায়রিয়ার মতন সমস্যা লক্ষ্য করা যায়।
  • সারা শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা এবং হাটু হাত কনুই এর মতন জয়েন্ট অংশ গুলিতে ব্যথা লক্ষ্য করা যায়।
  • হঠাৎ করে অত্যধিক ঘাম হতে দেখা যায়।
  • শরীর গরম হয়ে ওঠে।
  • চোখ মুখ লাল হয়ে যায়।
  • শরীর দুর্বল হয়ে ওঠে।

 

জ্বরের কারণ (Causes of Fever) :-

যেহেতু জ্বর কোনো না কোনো রোগ বা দেহের সমস্যার উপসর্গ সেজন্য জ্বরের নানারকম কারণ হতে পারে। যেমন :- হঠাৎ করে আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে, ধুলো ময়লা নাক দিয়ে ভিতরে গেলে, মশার কামড় খেলে, বৃষ্টিতে ভিজলে, পেটের সমস্যা হলে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে, মানসিক আঘাত পেলে বা ভয় পেলে প্রভিতি কারণে জ্বর (Fever) হয়ে থাকে।

জ্বরের ধরন (Types Of Fever): –

বর্তমান বিশ্বে নানান ধরণের জ্বর দেখা যায়। তবে জ্বরকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন (Bacterial infections), ভাইরাল জ্বর (Viral fever) এবং প্যারাসাইটিক জ্বর (Parasitic Fever)—সাধারণত এই ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু প্রভিতি ধরণের জ্বর হয়ে থাকে।

জ্বরের ঘরোয়া প্রতিকার (Home Remedies fo Faver): –

আমরা জানি, জ্বর যদিও কোন রোগ নয়, এটিকে বড় কোন রোগের লক্ষন। কিন্তু ভাইরাস জনিত জ্বরের ক্ষেত্রে রোগীকে কিছু পরামর্শ প্রদান দেওয়া যেতে পারে। যেমন –

 

  • রোগীকে একটু খোলা জায়গাতে রাখতে হবে যাতে করে রোগী আরও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
  • রোগীর শরীর যদি খুব বেশি উতপ্ত হলে রোগীর শরীরকে সবসময় মুছে দিতে হবে যাতে রোগীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে থাকে।
  • রোগীর হাত এবং পায়ের তলা মুছে দিতে হবে। এতে রোগী স্বস্তি অনুভব করবে ।
  • এছাড়াও শরীর ব্যথায় পথ্য হিসেবে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করা যেতে পারে।
  • রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হলে ডাক্টারের পরামর্শ নিতে হবে।

জ্বর-সর্দি নিরাময়ে প্রাকৃতিক উপায় সমূহ :

বর্তমান আবোহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ভাইরাল জ্বর বা ভাইরাস জ্বর (Virus fever) বেশি দেখা যায়।  আমরা নানান ঔষধ সেবন করে থাকি যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই, আপনি যাতে ঘরোয়া ভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে কোনো রকম ক্ষতি ছাড়াই জ্বর-সর্দি নিরাময় করতে পারেন সে বিষয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

তুলসী পাতা (basil leaves): জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা, ব্রঙ্কাইটিস, ম্যালেরিয়া প্রভিতি রোগের উপশমকারী উপাদান হিসেবে তুলসী পাতার রস বেশ উপকারী। তুলসী পাতাতে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও আরও অনেক উপাদান রয়েছে। ৮ – ১০টি তুলসী পাতা ভালো করে পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর গরম পানিতে বেশ কিছুক্ষণ ধরে পাতাগুলো ফোটাতে হবে। সেই ফোটানো পানি এক কাপ করে নিয়মিত রোজ খেতে হবে ।

আদা (Ginger): তুলসী পাতার মতোই আদার ভেষজ উপকারিতা ও গুনাগুন বলে শেষ করা যাবে না। যা প্রাচীন কাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। নানান রকমের রোগ প্রতিরোধ করতে আদা খুব উপকারী। জ্বর কমাতে এক কাপ আদার রসে মধু মিশিয়ে খেতে হবে। অদা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উপকার পাবেন।

দারুচিনি (Cinnamon): গলা ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা, কফ সারাতে সু-স্বাদু দারুচিনি খুবই উপকারী। এতে অ্যান্টি ফাংগাল, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ভাইরাল উপাদান রয়েছে। এক চামচ দারুচিনির গুঁড়ো মধুর সঙ্গে মিশিয়ে তিন দিন দুই থেকে তিন বার খেতে হবে ।

রসুন (Garlic): বলা হয় প্রাকৃতিক উপায়ের মধ্যে রসুনের থেকে ভালো ওষুধ আর হয় না। রসুনের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। ভাইরাল ফিভার বা ভাইরাস জ্বর , ঠাণ্ডা লাগার মতো অসুখের প্রতিরোধ করতে রসুন খুব উপকারী। ৫ থেকে ৬ কোয়া রসুন থেঁতো করে নিন। এরপর সেটা শুধু খেতে পারেন অথবা স্যুপের সঙ্গে মিক্স করে খেতে পারেন।

ধনে বীজ (Coriander seeds): বিভিন্ন রান্নায় আমরা ধনে বীজ হামেশাই আমরা ব্যবহার করে থাকি। শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ানোই নয়, ভাইরাল ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে এটি খুবই উপকারী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এটি অনেক সাহায্য করে।

আমাদের জ্বর-সর্দি সম্পর্কিত পোস্টি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। পরবর্তীতে দেখার জন্য আপনার টাইম লাইনে রাখুন। কোনো ভুলত্রূটি থাকলে বা কোনো পরামর্শ থাকলে আমাদের কে ম্যাসেজ করুন। জ্বর-সর্দি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কমেন্ট করে জানাতে পারেন। পোস্টি শেষ করার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *