ক্যান্সার একটি ‘মরণ ব্যাধি’ যা  একটা পরিবারের সুখ শান্তি কেড়ে নিতে ক্যান্সার দ্বিধাবোধ করে না ক্যান্সার থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক ও বিকল্প উপায় ভাবছেন। তাহলে আমাদের পোস্টি আপনাকে সাহায্য করবে।

এই মরণ ব্যাধি ক্যান্সার দিন দিন মহামারি আকার ধারণ করছে। ২০১৭ সালের একটি হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৮২ লাখ মানুষ এই মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করে। এবং প্রতিদিন নতুন করে ৩৩৪ জন মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পরে। এর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে সর্বশান্ত হয় ৭০ ভাগ মানুষ।

ক্যান্সার হওয়ার কারণ সমূহ :-

বেশ কিছু কারণে এই মরণ ব্যাধি ক্যান্সার হয়ে থাকে। এর মধ্যে বিশেষ কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হলো।

বংশগত কারণ – বংশগত কারণে অনেকের শরীরে ক্যান্সার হয়ে থাকে।

জীবনযাত্রায় অনিয়ম –  যদি কেউ সময়মতো না খায়, পরিমাণমতো না ঘুমায়ে অনিয়মের মধ্যে চলে। তবে তার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

নেশা দ্রব গ্রহণ – আমাদের মধ্যে অনেকেই সিগারেট, মদ, হিরোইন, ইয়াবা ইত্যাদি নেশা দ্রব গ্রহণ করে। এতে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

অনিরাপদ খাদ্য –  ফরমালিন ব্যবহার করা খাবার, নানা ধরনের রং বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় এমন খাবারে খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। খাবার ঠিকমতো সংরক্ষণ না করে খেলে বা মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। সোজা কথায় সচেতনতার অভাবে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ক্যান্সার থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক ও বিকল্প উপায়
ক্যান্সার থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক ও বিকল্প উপায়

মরণ ব্যাধি ক্যান্সার নিরাময়ের প্রতিকার :-

দুশ্চিন্তার কারণ নেই। শ্রষ্ঠা যেমন রোগ দিয়েছে তেমনি প্রতিকারও দিয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে কিছু খাবার আছে যা এই মরণ ব্যাধিকেও প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ভাবছেন কি বলে, হ্যা প্রাকৃতিকভাবে প্রতিরোধ করা যায়। দিন দিন রোগের প্রতিকারের নিত্যনতুন গবেষণা ও চিকিৎসায় পরিবর্তন আসছে আমাদের এই সুশীল সমাজে। বর্তমান চিকিৎসকরাও পুষ্টিকর খাদ্যের মাধ্যমেই বিভিন্ন জটিল রোগ প্রতিরোধের কথা বলছেন। তাই প্রতিদিনের রুটিনে এই খাবারগুলো রাখা হলে ক্যান্সারকে প্রতিরোধ সম্ভব। আজকে আমরা ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় এমন কিছু খাবারের নাম শেয়ার করবো।

ক্যান্সার নিরাময়ে হলুদ: আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, হলুদে ‘কারকিউমিন’ নামক উপাদান আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া হলুদ একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহের টিস্যুর মধ্যে প্রবেশ করে ভেতর থেকে দেহকে ক্যান্সার প্রতিরোধী করে তোলে। সুতরাং নিয়মিত খাদ্যের মধ্যে কাঁচা হলুদ খেতে চেষ্টা করবেন। প্রতিদিন কাঁচা হলুদের রস ২ চা চামুচ খালি পেটে খেতে পারেন।

ক্যান্সার নিরাময়ে রসুন: একটি গবেষণায় দেখা গেছে,  যেখানে যারা রসুন খেয়ে থাকে তাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। এটি ক্যান্সারের জীবাণু প্রতিরোধ করে এবং কিছু ক্যান্সারের জীবাণু ভেঙ্গে ফেলে। তাহলে প্রতিদিন একটি খোয়া রসুন খান যা আপনার ভেতরের ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করবে।

নোটঃ রসুন বেশি খেলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের রসুন নিয়ে একটি পোস্ট দেখতে পারেন।

ক্যান্সার নিরাময়ে গাজর: গাজর একটি পুষ্টিগুণ ও ভিটামিনে ভরপুর খাদ্য। গাজরে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারটিন আছে যা বিভিন্ন ক্যান্সার যেমন পাকস্থলী ক্যান্সার, শ্বাসনালী ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, অন্ত্র ক্যান্সার এমনকি স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সক্ষম। নিয়মিত প্রতিদিন একটি গাজর বা এক গ্লাস গাজরের রস পান করলে এসব ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ক্যান্সার নিরাময়ে পেঁয়াজ: পুষ্টিবিদদের মতে পিঁয়াজেরও রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক উপাদান যা টিউমারের বেড়ে ওঠাকে বিলম্বিত করে। নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে পাকস্থলীর ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। সুতরাং রান্নার ক্ষেত্রে যেমন পিঁয়াজ উপকারী তেমনি ক্যান্সার নিরাময়ে সহায়ক।

ক্যান্সার নিরাময়ে টমেটো: এই মরণ ব্যাধি নিরাময়ে টমেটো অনেক উপকারী একটি খাদ্য। টমেটো হচ্ছে “নিউট্রিশনাল পাওয়ার হাউজ” যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে। টমেটোতে লাইকোপেন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা হৃদরোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে থাকে। টমেটোতে ভিটামিন এ, সি, এবং ই থাকে যা কিনা ক্যান্সার বান্ধব মৌলের শত্রু। টমেটোর রস ক্ষতিকর ডিএনএ এর কোষ নষ্ট করে ফেলে। তাই প্রতিদিন ২ থেকে ৩ টি টমেটো খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।

ক্যান্সার নিরাময়ে গ্রিন টি: আমরা চা তো নিয়মিত খাই।  কিন্তু যদি তা হতো গ্রিন টি।  হ্যা, গ্রিন টি বা সবুজ চা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এই সবুজ চায়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যাটচীন নামক উপাদান থাকে, যা বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এক গবেষণায় আরো দেখা গেছে গ্রিন টি টিউমার হওয়া প্রতিরোধ করে থাকে। সাধারণ চায়ের চেয়ে গ্রিন টি বেশি উপকারী। তাই চা না খেয়ে গ্রিন টি খাবার পরামর্শ রইলো ।

ক্যান্সার নিরাময়ে বাদাম: বাদামে প্রচুর পুষ্টিগুণ থাকে। বাদামে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকার পাশাপাশি পটাশিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, ফোলেট, সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন ই থাকে। এছাড়াও কিছু প্রোটিন ও ফাইবারও থাকে। এক গবেষণায় জানা গেছে যে, সাপ্লিমেন্টের চেয়ে খাদ্য থেকে এই পুষ্টি উপাদানটি শোষণ করা ভালো। বাদামে সেলেনিয়াম নামক অ্যান্টি ক্যান্সার উপাদান বিদ্যমানের কারণে কোলন, ফুসফুস, যকৃত, এবং অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। বাদাম যেমন সুস্বাদু তেমনি উপকারী।  তাহলে কি নিয়মিত বাদাম খাবেন ? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।

ক্যান্সার নিরাময়ে ফুলকপি ও ব্রকলি: ভেষজ উপাদান সমৃদ্ধ একটি  পুষ্টিকর সবজি ফুলকপি ও ব্রকলি। ফুলকপি, বাধাঁকপির মত ব্রকলি একটি আঁশযুক্ত সবজি যা শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এবং গ্যালাকটোজ উপাদান অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার দূর করতে অনেক সহায়ক। ব্রকলির সালফোরোফেন, ইনডোলস উপাদান ব্লাডার, ফুসফুস,  লিমফোমা ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় এবং  সাথে থাকছে অনেক পরিমাণ ক্যান্সার ফাইটিং ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস।

ক্যান্সার নিরাময়ে তরমুজ: তরমুজের এক টুকরাতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রতিদিনের চাহিদার ৮০% ভিটামিন সি, ৩০% ভিটামিন এ ও বিটা ক্যারোটিন বিদ্যমান থাকে। এছাড়াও তরমুজেও লাইকোপেন থাকে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার নিরাময়ে সবুজ শাক: সবুজ শাক ফাইবার, ফোলেট, ক্যারোটিনয়েড ও ফ্লেভনয়েডের চমৎকার উৎস। এই যৌগ গুলোর বেশীর ভাগেরই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপকারিতা আছে যা কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। ফলে ক্যান্সারের প্রতিরোধে সবুজ শাক অনেক উপকারী। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ফল ও শাকসবজিতে ফুসফুস, মুখের, খাদ্যনালীর এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকির মুক্তি পাওয়া যাবে।

ক্যান্সার নিরাময়ে খেজুর: অবাক হলেও সত্য খেজুর ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এক গবেষনায় দেখা যায় খেজুর পেটের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। আর যারা নিয়মিত খেজুর খান তাদের বেলায় ক্যান্সারের ঝুঁকিটা কমে যায় অনেকখানি। স্রষ্টার এক বরকত ময় ফল এটি।

ক্যান্সার নিরাময়ে ডালিম বা বেদানা: ডালিম দেহের শ্রেষ্ঠতম হিতকর ফল। ডালিমে বিউটেলিক এসিড, আরসোলিক এসিড এবং কিছু আ্যলকালীয় দ্রব্য যেমন- সিডোপেরেটাইরিন, পেপরেটাইরিন, আইসোপেরেটাইরিন, মিথাইলপেরেটাইরিন প্রভৃতি মূল উপাদান থাকে। এই ফলটি বিভিন্ন রোগ উপশমে ব্যবহার হয়। এছাড়া বেদানায় ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদানের পাশাপাশি এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ এন্টিইনফ্লামেটরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

সি ফিস বা সামুদ্রিক মাছ: সামুদ্রিক মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড হৃদযন্ত্রকে সক্রিয় ও কার্যক্ষম রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড হৃদযন্ত্রের রিদমকে দ্রুততর করে, ধমনীতে চর্বি জমার মাত্রাকে কমিয়ে দেয়, ধমনীতে পুরনো প্রদাহকে ঠাণ্ডা রাখতে এবং রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক। এক গবেষকেরা জানিয়েছেন হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য প্রতি সপ্তাহে একজন মানুষের ১৭৫০ মিলিগ্রাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড দরকার পড়ে। আর এই সামুদ্রিক মাছের মধ্যে বিদ্যমান থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাট এসিড যা প্রদাহ প্রতিরোধ করে ফলে দেহের ক্যান্সারের রূপ নিতে বাধা দেয়।

ক্যান্সার নিরাময়ে মাশরুম: মাইকোফেজিস্টস বা ‘মাশরুম খাদ্য’ হিসেবে পরিচিত। মাশরুমে রয়েছে  ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান। এছাড়াও রয়েছে পুষ্টি ও ভেষজগুণ যা রোধ করবে ক্যান্সার।

আমাদের ক্যান্সার সম্পর্কিত পোস্টি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। পরবর্তীতে দেখার জন্য আপনার টাইম লাইনে রাখুন। কোনো ভুলত্রূটি থাকলে বা কোনো পরামর্শ থাকলে আমাদের কে ম্যাসেজ করুন। ক্যান্সার সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কমেন্ট করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *