আজকে আমরা আলোচনা করবো বেদানা বা ডালিম ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। আরো আলোচনা করব এর ঔষধি গুনাগুণ ও ব্যবহারবিধি এবং এর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে। এই ডালিম বা বেদনা কে স্বর্গীয় ফল বলা হয়। কেননা এই ফলের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জাদুকরী গুনাগুন।

আনার, ডালিম বা বেদনার ইংরেজি নাম: Pomegranate । আনার বেদানা বা ডালিম এর  বৈজ্ঞানিক নাম: Punica granatum, তবে এটি Lythraceae পরিবারের Punica গণের অন্তর্ভুক্ত গাছ। তবে ডালিম ফলকে ফার্সি এবং পশতু, হিন্দুস্তানি ভাষায় একে আনার বলা হয় থাকে।

ডালিম ফল খাওয়ার উপকারিতা
ডালিম ফলের ছবি

আবার ডালিমকে আজারবাইজানি এবং তুর্কি ভাষায় হিনার ও নার বলা হয় থাকে। আরও অন্য নেপালি এবং সংস্কৃত ভাষায় বলা হয় দারিম। এই ডালিম গাছ গুল্ম জাতীয় হয়। ডালিম গাছ ৫-৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এই ডালিম ফল পাকা দেখতে লাল রঙের হয়। তবে ডালিম ফলের খোসার/ছালের ভিতরে স্ফটিকের মত লাল রঙের গমের দানার মতো হয়ে থাকে সেগুলি খাওয়া হয়।

ডালিমের পুষ্টিমান: অনেক ধর্মীয় বই থেকে ডালিমের পুষ্টিমান, ওষুধি গুণ ও বহুবিদ ব্যবহার জানা যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম ডালিমে ৭৮ ভাগ পানি, ০.১ ভাগ স্নেহ, ৫.১ ভাগ আঁশ, ১.৫ ভাগ আমিষ, ১৪.৫ ভাগ শর্করা, ০.৭ ভাগ খনিজ, ১৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১৪ মিলিগ্রাম অক্সালিক এসিড, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ৭০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ০.৩ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লাভিন, ০.৩ মিলিগ্রাম নায়াসিন ইত্যাদি পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদ চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডালিমের ব্যবহার সর্বজন-স্বীকৃত।

ডালিম ফল খাওয়ার উপকারিতাঃ

ডালিম খাওয়ার বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। তবে, আমাদের মধ্যে অনেকে ডালিম খেতে চান না কারণ এটি অনেক ব্যয়বহুল। যদি কেউ নিয়মিত ডালিম খায় তবে তা শরীরের অনেক উপকৃত করবে। এই প্রতিবেদনটি ডালিম খাওয়ার নানাবিধ সুবিধাগুলি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছে।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে: এই ডালিম ফল খাওয়ার ফলে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করবে। তাই প্রত্যেকের ডলিম ফল বেশি বেশি করে খাওয়া উচিত। এমন কি এটি অ্যালঝেইমার্সের মতো রোগীদের জন্যও উপকারি।

পুষ্টি: ডালিম অনেকগুলি পুষ্টির বৈশিষ্ট্যযুক্ত। কারণ মাত্র এক কাপ ডালিমের বীজে আপনার প্রতিদিনের প্রয়োজন ভিটামিন কে এর ৩৬ শতাংশ, ভিটামিন সি এর ৩০ শতাংশ, ভিটামিন বি৯ এর ১৬ শতাংশ এবং পটাসিয়ামের ১২ শতাংশ রয়েছে।

হৃদরোগের প্রতিকারে: আপনি যদি নিয়মিত ডালিম ফল খান। দেখবেন খেলে দেহের কোলস্টেরলের ঝুঁকি কমায়। এতে করে রক্তচলাচল বৃদ্ধি পায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।

ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী: ডালিম ফল দেহে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সহেতা করে। এই ফল একটি ফাংগাস ইনফেকশনের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখে।

হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে: ডালিম ফলে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদা। যা মানব দেহের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় সহেতা করে থাকে। এতে করে রক্তের ও অ্যানেমিয়া নানা সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

প্রাকৃতিক ইনসুলিন বৃদ্ধি করে: ডালিম এমন একটি ফল। এই ফল ডায়াবেটিসের জন্য বেশ উপকারী। তবে অনেকের মতে ডালিম কে ইনসুলিনের বিকল্প হিসেবে বলেন। যদিও এটি মিষ্টি হলেও সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়ার পরে কোনো ধরনের সমস্যা হয় না।

রক্তচাপ: অনেক মানুষের হঠাত করে রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাদের জন্য ডালিম খাওয়া জরুলী, কেননা এই ফল খেলে দ্রুত্ব রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। যদি আপনিও উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তাহলে নিয়মিত ডালিম খাওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহেই আপনার রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

আথ্রাইটিস ও হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা উপশম: কে যদি ডালিম ফল আথ্রাইটিসে রোগের জন্য খায় তাহলে সে ভালো উপকার পাবে। এই ডালিম ফল এটি হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করে। তাই প্রত্যেকের ডালিম ফল বেশি বেশি করে খাওয়া উচিত।
ক্যান্সার প্রতিরোধক: ক্যান্সার প্রতিরোধ ডালিম ফল খাওয়ার বেশ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে। তবে গবেষণায় বিশেষজ্ঞগনেরা বলেছেন ক্যান্সার প্রতিরোধে ডালিমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ পালন করে থাকে।

কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে: আপনি কি জানেন ডালিম খাওয়া স্বাস্থের জন্য অনেক ভালো। আপনি চাইলে সুস্থ থাকার জন্য কিংবা ভালো থাকার জন্য ডালিম খেতে পারেন। আবার আপনি চাইলে শারীরিক অনুশীলন করে ভালো করতে পারবেন। তবে ডালিম সম্পর্কে চকিতসাক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনুশীলনের পাশাপাশি ডালিম খেলে ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে।

ডালিম ফুলের বিভিন্ন ঔষধি গুণ রয়েছেঃ

ডালিম ফল আয়ুর্বেদিক এবং ইউনানী ওষুধে ডায়েট হিসাবে নিযুক্ত হয়। ডালিমের মধ্যে বুটিলিক অ্যাসিড, অ্যাসিড এবং কয়েকটি ক্ষারীয় পণ্য থাকে যেমন সিউডোপিথেলিয়াম, পেপারিটারাইন, আইসোপ্রেটিন, মেথিল্পের্টেরিন ইত্যাদি ইত্যাদি উপাদান থাকে। কিন্তু এটি বিভিন্ন রোগের চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত হয়। কবিরাজির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, ডালিম হলো সর্বাধিক উপকারী ফল। কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের জন্য উপকারী। ডায়রিয়া এবং ডায়রিয়ার ওষুধগুলি গাছের শিকড় এবং বাকল দিয়ে তৈরি। এটি পুরুষের ইরেক্টিকাল কর্মহীনতা, এফ্রোডিসিয়াক, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং সন্তোষজনক এর জন্য ডালিমের ফুল ব্যবহিত হয়।

(ক) ডালিম ফুল রক্তপাত বন্ধ করতে খুব কার্যকর। হঠাৎ দুর্ঘটনার সময় যদি দেহের কোনও অংশ ছিঁড়ে যায়, চূর্ণবিচূর্ণ হয় বা কেটে যায় তবে ডালিমের ফুল পিষে এবং ক্ষতস্থানে প্রয়োগ করা হলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। ফুল না পেলে পাতাও ভাল কাজ করে।

(খ) ডালিম ফুলের রস নাকফোঁটের জন্য একটি প্রতিষেধক। নাক থেকে রক্তক্ষরণ বা রক্তক্ষরণ একটি সাধারণ রোগ হতে পারে। আমাদের মধ্যে অনেকেই এরকম। আমাদের মধ্যে অনেকেই অকারণে নাক দিয়ে রক্ত ​​পড়ে। এটি শিশুদের মধ্যেও লক্ষ করা যায়। হঠাৎ করেই এটি ঘটে। যদি নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ বা রক্তপাত হয়। তবে কোনও আঘাত, পলিপ বা অন্য কোনও কারণও রক্তপাত হয়। যদি আপনি ডালিমের ফুলের পিষে রস নিঃশ্বাস এর সাথে নেন দেখবেন রক্তপাত বন্ধ হবে।

(গ) ডায়রিয়া নিরাময়ের জন্য ডালিমের খোসা অত্যান্ত্য উপকারি। ডায়রিয়ায় আক্রান্তরা যদি সিদ্ধ ডালিমের খোসা সেবন করে, তবে ডায়রিয়ার নিরাময়ে বেশিরভাগ ফল পাওয়া যায়। কাঁচা খোসা এবং শুকনো বের করে খেলে উভয়ই ডায়রিয়ার নিরাময়ে কার্যকর। সুতরাং ডালিম খাওয়া ভাল এবং এটি খোসা ছাড়াই অভ্যাস ছেড়ে দিবেন।

(ঘ)ডালিমের ছাল ও পাউডার শরীরের যে কোনও জায়গায় বগি বা সিফিলিসের চিকিৎসার জন্য ভালো। ডালিম ফুল মহিলাদের ডায়রিয়া নিরাময়ে অনেক উপাকারি। ডালিম ফুলে দুই ধরণের উপাদান রয়েছে। লিউকোরিয়া এবং হিমোপটিসিস। এটির অভাবে সোরিয়াসিস একটি জটিল স্ত্রীরোগজনিত রোগ হতে পারে। তবে কেউ যদি উভয় ক্ষেত্রেই ৪/৫ ডালিমের ফুল মধুর সাথে মিশিয়ে কয়েকবার খেলে রোগটি নিরাময় হয়।

(ঙ) ডালিম পাতা গর্ভপাত নিরাময়ে কার্যকর। অনেক মহিলা গর্ভধারণের ২ থেকে ৩মাসের মধ্যে গর্ভপাত করে। কিছু মহিলা বেশ কয়েকবার এটি করেন। ডালিমের পাতার সাথে মধু এবং দই একসাথে মিশিয়ে নিয়ে খেলে গর্ভপাতের আশঙ্কা দূর হয়।

(চ) ডালিমের শিকড় কৃমিনাশক এর জন্য কার্যকারি। কৃমি বিষয়টি আমাদের জাতীয় সমস্যা। বাচ্চাদের থেকে বয়স্ক সবাই কৃমির জন্য বিভিন্ন জটিলতায় ভুগেন। যদি আপনি ডালিমের গোড়া থেকে ছাল নিয়ে এবং এটি চুনের পানির সাথে মিশ্রিত করে। তখন এটি সহজেই পিষে যাবে। বয়স এর উপর নির্ভর করে ১-৩ গ্রাম পরিমাণ নির্ধারণ করে খাওয়া উচিত।

(ছ) ডালিমের ছাল শিশুদের পেটের অসুস্থতা নিরাময় করে। শিশুদের পেটের অসুস্থতা অনেক। যেসব যুবকরা পাকস্থলীর বা পেটের বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে ডালিমের গোড়া থেকে ছাল গ্রহণ করে মধুর সাথে মিশ্রিত করে, খাওয়ার মাধ্যমে বেশিরভাগ ফল পাওয়া যায়।

(জ)ডালিম খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। প্রাকৃতিক ইনসুলিন ডালিম ডায়াবেটিসের জন্য অনেক উপকারি। ডালিম যে কোনও ব্যক্তির পক্ষে উপকারী।

ডালিম বা বেদানা খোসার ৫টি উপকারিতা:

আমরা প্রত্যেকেই জানি যে বেদনা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী, আমাদের প্রত্যেকের জানা থাকা দরকার। কিন্তু আপনি কি জানেন বেদানা খোসার কতটা উপকারী? আমরা আপনাকে বলছি

  • বেদানের খোসার মধ্যে পাওয়া অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি আমাদের দেহের সঠিক কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
  • শুকানো এবং বেদনার ছাল সিদ্ধ করার পর বেঁটে মুখে মাখলে ব্রনর সমস্যা দূর হয়।
  • বেদেনার খোসা শুকনো করে গুঁড়ো করে গোলাপ পানি মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল হয়৷।
  • কাশি বা গলাব্যাথার ক্ষেত্রে বেদানার খোসার তৈরি গুঁড়ো সেদ্ধ করে গরম পানি নিয়ে গরগর করলে আরাম পাওয়া যায়।
  • এক গ্লাস পানির সাথে বেদেনের খোসা দিয়ে তৈরি গুঁড়ো মিশ্রিত করে কুলকুচির মাধ্যমে ধুয়ে ফেললে দাঁতের সমস্যা এবং দুর্গন্ধ দূর হয়।

ডালিম বা বেদনের অপকারিতাঃ

ডালিম গাছ – ফল, ফলের খোসা, পাতা থেকে শিকড় পর্যন্ত কোনও কিছু ফেলে দেবেন না। সকল বা যে কোনও মানুষের পক্ষে উপকারী। এবং সেইজন্য ডালিম বা বেদানের রসের উপকারিতা বেশি। এতে কোন ক্ষতি নেই। তাই আপনার নিয়মিত ডালিম বা বেদনের রস খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত, এটি শরীরকে অনেক উপকার দেবে।

ডালিম ও বেদানার পার্থক্য

আমরা সাধারণত ছোটটাকে ডালিম এবং বড়টাকে বেদানা বলে থাকি ৷ অনেকেই বলে থাকে ডালিমের দানার রংটা গোলাপি হয় এবং বেদানার দানাটা লাল বেশি হয়। বেদানা আকারে ডালিমের চেয়ে অনেক ছোট এবং মিষ্টি স্বাদের থাকে। মূলত দুটা একই। বেদানা, আনার এবং ডালিম এক রকমেরই ফল।

ডালিম কোথায় পাওয়া যায়?

ডালিম বা বেদনা ইরান এবং ইরাকের স্থানীয় ফল। এটি অতীতে কাল থেকেই চাষ করা হচ্ছে। সেখান থেকে এটি ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এটি তুরস্ক, ইরান, সিরিয়া, স্পেন, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, লেবানন, মিশর, চীন, বার্মা, সৌদি আরব, ইস্রায়েল, জর্ডান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শুষ্ক অঞ্চল, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। দক্ষিণ ইউরোপ এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আফ্রিকায় ব্যাপকভাবে চাষ হয়। স্পেনীয়রা ১৭৬৯ সালে লাতিন আমেরিকা এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় ডালিম নিয়ে যায়। ফলস্বরূপ, বর্তমানে এটি ক্যালিফোর্নিয়া এবং অ্যারিজোনায় চাষ হচ্ছে। উত্তর গোলার্ধের মধ্যে এটি সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মরসুমের মধ্যে বৃদ্ধি পায়। এটি দক্ষিন গোলার্ধের মধ্যে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত জন্মে।

চারা প্রাপ্তির স্থানঃ ডালিমের চারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারসমুহ, সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন নার্সারিগুলোতে ডালিম বা আনারের চারা পাওয়া যাবে। আপনি যদি ডালিম চাষ করতে চান সেক্ষেত্রে সেখান থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।

ডালিম বা বেদনা চাষ পদ্ধতি:

আমরা জারা ডালিম চাষ করতে চাই। তাদের জন্য ডালিমের সবচেয়ে ভালো জাত হ’ল আনার বা বেদনা। ডালিম আসলে খুব পুষ্টিকর এবং মিষ্টি ও সুস্বাদু, আকর্ষণীয় একটি ফল। কিন্তু বাংলাদেশের মাটি ডালিম বা বেদানা চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত। এজন্যই ডালিমের চাষ প্রায়শই আমাদের দেশের বাড়ির উঠোনে দেখা যায়। ডালিমের অনেক ঔষধি গুণও রয়েছে। নিয়মিত যত্ন সহ,এই ফল চাষ করলে প্রায়শই সারা বছর ধরে। আপনি চাইলে বাগানের মধ্যে টব বা ড্রামে সহজে চাষ করতে পারবেন।

ছাদে ডালিম বা বেদানা চাষের পদ্ধতি

ছাদে ডালিম বা বেদানা চারা লাগাতে মিনিমাম ২০ ইঞ্চি কালার বা রং এর ড্রাম বা টব সংগ্রহ করতে হবে। এই টবের ড্রামের নীচে ৩-৫ ছিদ্র করুন যাতে গাছের নীচে পানি/জল সজে যেন না জমে। টব বা ড্রামের নীচের অংশের গর্তগুলি ইটের ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করতে হবে। সেই টব বা ড্রাম গাছ এমন জায়গায় ছাদে রাখতে হবে যেনো সেখানে সবসময় রোদ পাবে/ থাকে।

এরপর বেলে দোআঁশ মাটির ২ অংশ, গোবর এর ১ অংশ, ৪০-৫০ গ্রাম টিএসপি, ৪০-৫০ গ্রাম পটাশ এবং ২০০ গ্রাম হাড়ের গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে ড্রাম বা টবের ক্ষেত্রে ১০-১২ দিন পানির সাথে রেখে দিন। তারপরে মাটি একটি হালকা আলগা করুন এবং আবার আগের মতো ৪-৫ দিনের জন্য রেখে দিন। এরপর একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্যকর চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের সময় গাছের শিকড় থেকে যেনো কোনও উপায়ে মাটি থেকে আলাদা না হয়। চারাটি সোজা করে রোপণ করতে হবে।

তারপরে গাছের নীচে মাটি উচু করতে হবে এবং মাটিটি হাত দিয়ে চাপ দিয়ে দিতে হবে। এর ফলস্বরূপে, গাছের শিকড় দিয়ে কোন প্রকার পানি/জল প্রবেশ করতে পারে না। গাছটি সোজা কাঠি দিয়ে বেঁধে রাখতে হবে। চারা রোপণের শুরুতে পানি/ জল অল্প দিতে হতে। পরে পানি/জল আস্তে আস্তে বাড়াতে হবে। তবে গাছের নীচে পানি/জল জমা হতে দেওয়া যায় না। মাটিতে পানির ঘাটতি থাকলে গাছে প্রয়োজনমতো সেচ দিতে হবে।

ডালিম/বেদনার অন্যান্য যত্ন

ডালিম বা বেদানা চারা রোপণের ৪/৫ মাস পরে সরিষার খাইল পচা পানি/জল নিয়মিত ২৫-৩০ দিন পরে দিতে হবে। সরিষার খৈল ১০দিনের মতো পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপরে সেই পচা খাইলের পানি হালকা করে গাছের নীচে দিতে হবে।

এক বছর পরে টবের মধ্যে মাটি আংশিকভাবে পরিবর্তন করা উচিত। টব বা ড্রাম মাটি ২ ইঞ্চি প্রস্থ এবং ৬ইঞ্চি গভীর দিয়ে শিকড় দিয়ে সরিয়ে ফেলুন এবং নতুন সারের সাথে মিশ্রিত মাটির সাথে টব বা ড্রামটি পুনরায় পূরণ করুন। মাটি পরিবর্তনের এই কাজটি সাধারণত বর্ষার পথমে এবং শীতের আগে হয়। ১০-১৫ দিনের পরে, টব বা ড্রামের মধ্যে মাটি একটু খুচিয়ে দিতে হবে।

গাছে সার প্রয়োগ: চারা রোপণের আগে গর্তের মধ্যে সার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও গাছে প্রতি বছর নিয়মিত সার দিতে হবে। গর্ত করার পর ৮-১০ দিন পরে, গর্তের মাটির সাথে নিম্নেলিখিত হারে সার মিশ্রিত করে পূরণ করতে হবে। গর্ত ভরাটের ২০-২৫ দিন পরে ডালিমের চারা রোপণ করতে হবে।

সারের নাম:সারের পরিমাণ:সারের নাম:সারের পরিমাণ:
ইউরিয়া১৫০ গ্রামকম্পস্টের গুঁড়া৫০০ গ্রাম
টিএসপি১০০ গ্রামএমওপি১০০ গ্রাম
জিপসাম৭০ গ্রাম

প্রতি ১ বছর বয়সী গাছে ১০কেজি গোবর, ১২৫ গ্রাম ইউরিয়া, ১২৫ গ্রাম টিএসপি এবং ১২৫গ্রাম পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে প্রতি বছর সারের মাত্রা একটু করে বাড়াতে হবে। পর্যায়ক্রমে ১ টি প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ৬০কেজি গোবর, ১.৫ কেজি ইউরিয়া, ১.৫ কেজি টিএসপি এবং ১.৫ কেজি এমওপি (পোর্টাসের মুরেট) সার প্রয়োগ করুন। উপরের পরিমাণ সার দু’বার গাছে লাগাতে হবে। কিন্তু পথম বারে জ্যেষ্ঠ-আশার (মে-জুন) মাসের মধ্যে ও দ্বিতীয়বার আশ্বিন-কার্তিক মাসের মধ্যে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) প্র্যোগ করতে হবে।

ডালিম চাষে আগাছা নিয়ন্ত্রণ: ডালিমের গোড়ায় যেন কোন প্রকার আগাছা না থাকে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এর জন্য আপনাকে নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। কারণ যদি ডালিম পরিষ্কারভাবে চাষ না করা হয় তবে গাছটি রোগান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

পানি/জল সেচ এবং নিষ্কাশন: ডালিম গাছে নিয়মিত হালকা সেচ দিতে হবে। গাছের নীচে মাটির মধ্যে কখনই জল জমে থাকা উচিত না। আবার গাছটিকে খুব বেশি শুকনো রাখা উচিত নয়। সার প্রয়োগের পরে যদি মাটির মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণের রস না থাকে তবে সেচ দিতে হবে।

ডালিম গাছের ডাল পালা ছাটাইঃ কেউ যদি ছাদের উপর ডালিম তথা আনার চাষ করে থাকে। তাহলে তাকে গাছের ডাল নিয়মিত ছাটাই করতে হবে । এতে করে ডালিম গাছের পুরাতন ডালের নতুন শাখায় দ্রুত্ব ফুল আসে। এই জন্য পুরাতন ডালে নতুন শাখা বের করার জন্যই ডাল পালা ছাটাই করা প্রয়োজন। এছাড়াও আনার গাছের শিকড় থেকে বের হওয়া সাকারও ছেঁটে দেওয়া প্রয়োজন।

ডালিম/বেদনা গাছের শিকড় ছাঁটাইঃ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডালিম গাছে সারা বছরই ফুল ও ফল ধরে থাকে। তবে বসন্তে এবং বর্ষার সময় ডালিম/বেদনা গাছে বেশি ফুল ধরে থাকে। কিন্তু বসন্তের ফুল থেকে গ্রীষ্মকালে ফল পাওয়া যায়। আবার বর্ষার ফুল থেকে প্রাপ্ত ফল অক্টোবর-নভেম্বরে সংগ্রহ করা যায়। এই সময়ের ফল গুণগত মান খুবই ভালো হয়। অতএব অসময়ে তথা বর্ষায় গাছে ফুল আসার জন্য মার্চ-এপ্রিল মাসে ১৫ সেমি.গভীর করে মাটি খুঁড়ে শিকড়গুলোকে ১৫ দিন খুলে রাখাতে হবে। এতে জৈব সারসহ মাটি চাপা দিয়ে সেচ প্রয়োগ করতে হবে।

ডালিম / বেদনা গাছের বিশেষ যত্ন: সারা বছরই ডালিম ফুল ধরে থাকে। তবে সব সময় ফুল থেকে ফল পাওয়া যায় না। বসন্তে ডালিমের গাছে যে ফুলগুলি গ্রীষ্মে ফল দেয়। তবে এই ফলের মান খুবই ভালো হয় না। বর্ষার শুরুতে যে ফুলগুলি আসে এবং সেই ফুলগুলি থেকে কার্তিক অগ্রহায়ণ (অক্টোবর-নভেম্বর) মাসের মধ্যে ফল সংগ্রহের জন্য উপযুক্ত হয়। এই ফলের মান খুব ভাল হয়। সুতরাং, বর্ষার শুরুতে ফুল আনার জন্য, পৌষ মাস থেকে বৈশাখ মাসে গাছের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। চৈত্র মাসের মধ্যেই গাছ সেচ দেওয়া শুরু করতে হয়, এবং গাছের নীচের অংশের মাটি কোদাল দিয়ে আলগা করতে হয়। গাছের পাতা চৈত্র মাসের মধ্যে পড়ে এবং তাই বৈশাখ-জ্যেষ্ঠ মাস পর্যন্ত গাছ সুপ্ত থাকে। বর্ষা শুরু হওয়ার আগে ১-২ বার সেচ দেওয়া ভাল। বর্ষা শুরু হওয়ার সাথে সাথে গাছগুলি বাড়তে শুরু করে এবং ফল ধরে। এই ফলটি প্রায়শই কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়।

আরও পড়তে পারেনঃ আমলকির উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন

ডালিম ফলের রোগ ও প্রতিকার:

ডালিম ফলের শত্রু হ’ল প্রজাপতি বা ফল পোকা। এই প্রজাতির লার্ভা ফলের ক্ষতি করে। স্ত্রী প্রজাপতি ফুল এবং সামান্য ফলের উপর ডিম দেয়। ডিম থেকে লার্ভা বের হয়। পরে ফলটির ভেতরে প্রবেশ করে, এবং বীজ এবং ফলের অন্যান্য অংশগুলি খায়। তারপর পতঙ্গে পরিণত হওয়ার আগে ত্বকের অভ্যন্তরে গোলাকার ছিদ্র তৈরি করে ফলটি থেকে পোকা বের হয়। এই পোকামাকড় দ্বারা সংক্রমণ ছত্রাক এবং ব্যাকটিরিয়া আক্রমণ সংক্রমণ হতে পারে।

প্রতিকারঃ

(i)যে সব ডালিম আক্রান্ত হয়েছে। সেই সব ফল গাছ থেকে পেড়ে বা মাটিতে পড়ে থাকা আক্রান্ত ফল কুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলতে হবে।

(ii) ডালিম গাছে ফল ধরার পর ফলের বৃদ্ধি শুরু হলে পলিথিন বা কাপড় অথবা কাগজ দিয়ে ফল ব্যাগিং করে দিলে, প্রায় বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

(iii)এরপররে প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার হারে ম্যালাথিয়ন বা কার্বারিল ( এসিকার্ব ) বা ফস্‌ফামিডন গ্রুপের কীটনাশক ১২- ১৫ দিন পর পর গাছে ও ফলে স্প্রে করতে হবে।

কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা

ডালিম ফল ছিদ্রর আক্রান্তের ক্ষেত্রে, সাধারণত পরিচর্যাবিহীন গাছে দেখা যায়। কিন্তু এই পোকার শূঁককীট রাতের বেলা কাণ্ড ও শাখার ছাল ছিদ্র করে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর ভেতরের অংশ খেতে থাকে। তারপর দিনের বেলা ডালের গর্তের মধ্যে এই শূঁককীট লুকিয়ে থাকে এবং বর্জ্য পদার্থ ত্যাগ করে। এর কাণ্ড বা শাখায় ছোট ছোট ছিদ্র দেখে বা বর্জ্য পদার্থ দেখে এ পোকার আক্রমণ সনাক্ত করা যায়।

প্রতিকারঃ

(i) এই পোকা মারার জন্য গর্তের মধ্যে সরু তার ঢুকিয়ে পোকার কীড়াকে খুঁচিয়ে মারার ব্যবস্থা করতে হবে।

(ii) অথবা এই পোকা মারার জন্য গর্ত থেকে এ পোকার কীড়ার ও বর্জ্য পদার্থ পরিষ্কার করে, সেই গর্তে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ বা তুলার সাহায্যে কেরোসিন বা পেট্রোল ঢুকিয়ে কাদা দিয়ে গর্ত বন্ধ করে দিলে পোকা মারা যাবে নিশ্চিত। ফল ফেটে যাওয়া রোগ বিভিন্ন কারনে ডালিমের ফল ফেটে যাওয়া একটি মারাত্মক সমস্যা। কিন্তু এটি কোন ছত্রাকজনিত রোগ নয়। তবে সাধারণত পুষ্টি উপাদানের অভাবজনিত কারণে বা মাটিতে রসের তারতম্যের কারণে হয়ে থাকে। ডালিম ফলের বৃদ্ধির সময় শুকনো আবহাওয়ায় মাটিতে রসের অভাব দেখা দিলে ফলের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। তখন ফলের ত্বক শক্ত হয়ে যায়। আবার হঠাৎ বৃষ্টি হলে মাটিতে রসের পরিমাণ বেশি ঘটলে ফলের ভেতরের অংশ দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পায়। এর কারণে ভেতরের চাপ সহ্য করতে না পেরে ফলের খোসা ফেটে যাওয়া শুরু করে।

প্রতিকারঃ

(i)এই রোগ থেকে ডালিম ভালো রাখার জন্য গাছে ফল ধরার পর থেকে গাছে ঘন ঘন পানি সেচ দিতে হবে।

(ii) এই ফল ফাটা রোগ থেকে বাচাতে মাটিতে বোরনজনিত সার যেমন বোরিক এসিড প্রতি গাছে ৪০ গ্রাম হারে মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।

(iii) এই ফল যখন বৃদ্ধির সময় অবশ্যই সলুবর বোরন ২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ফলে ও গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে যাতে করে ফল না ফাটে।

(ঘ) সুতরাং ডালিমের যেসব জাতে ফল ফাটা সমস্যা নেই সেই সব জাতের ডালিমের চাষাবাদ করতে হবে এতে করে লাভ বেশি হবে।

ফলের দাগ রোগ

ডালিম/বেদনার এই রোগ বিভিন্ন ছত্রাকজনিত কারণে হয়ে থাকে। এই ফল গাছ এই রোগে আক্রান্ত হলে আক্রান্ত ফলের ওপর অনেক ছোট এবং অনিয়মিত দাগ পড়ে যায়। এই দাগগুলোর চারিদিকে সবুজ হলদে দাগ হয়ে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে সেই দাগগুলো লম্বা দাগে পরিণত হয়। এর ফলে ডালিমের ফলের খোসার নিচের বীজগুলো বাদামি বর্ণের হয়ে যায়। তখন আক্রান্ত ফলের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে বাজার মূল্য কমে যায়।

প্রতিকারঃ এই ধরনের রোগাক্রান্ত হলে। সেই আক্রান্ত অংশ কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এরপর প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মেনকোজেব (ডিইথেন এম ৪৫/ইণ্ডোফিল এম ৪৫) বা ১ গ্রাম হারে কার্বান্ডিজম (অটোস্টিন/নোইনএমকোজিম) ছত্রাকনাশক পানিতে মিশিয়ে ৮-১০ দিন পর পর গাছের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ২-৩ বার সুন্দর ভাবেস্প্রে করতে হবে। তাহলে গাছ ভালো থাকবে।

রস শোষণকারী পোকা

এই ধরনের পোকা ডালিমে বেশ ক্ষতি করে থাকে উদাহরণস্বরুপ, হোয়াট মাছি, শুল্ক বা আঁশ পোকা, থ্রিপস, ছাতরা পোকা, জাব পোকা এবং মাকড় ডালিমের রস শোষণকারী পোকা হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু এসব পোকার আক্রমণে পাতা, মুকুল, ফুল ও ছোট ফল ঝরে পড়ে। এছাড়াও সাদা মাছি ও জাব পোকা পাতা ও কচি ডগার রস চুষে খায়। এর ফলশ্রুতিতে আক্রান্ত অংশ বিবর্ণ ও বিকৃত হয়ে যায়। এই এসব পোকার দেহ থেকে এক ধরনের আঠা বা মধু নিঃসৃত হয়, যা পাতায় লেগে থাকে। এই সব পরবর্তীতে পাতার গায়ে এই নিঃসৃত মধুর ওপর এক প্রকার ছত্রাক জন্মায়। এর ফলে গাছের খাদ্য তৈরি প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। কিন্তু মাকড় ও থ্রিপস পোকা পাতা, ফুলের বোঁটা, বৃতি ও দলমণ্ডলের অংশ ক্ষত করে এবং ক্ষত থেকে বের হওয়া কোষরস খায়। এর ফলে পাতার আগা কুঁকড়ে হয়ে যায়। তারপর ফুল ঝরে যাওয়ায় ফলধারণ বাধাপ্রাপ্ত হয়।

প্রতিকারঃ

(i) এই সব ছাতারা পোকা ও শুল্ক পোকার কীট নির্মূলের জন্য আক্রমণের প্রথম দিকে আক্রান্ত অংশ কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। তারপর প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে ডায়াজিনন দলীয় কীটনাশক পানিতে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে।

(ii যদি ডালিম গাছে জাব পোকা বা সাদামাছি আক্রমন করে। সেই পোকা দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে ডাইমেথয়েট (টাফগর ) অথবা ০.৫ মিলি হারে ইমিডাক্লোপ্রিড (টিডো প্লাস ইমিটাফ ও টিডো) এই সব দলীয় কীটনাশক পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর গাছে দুই বার স্প্রে করতে হবে।

(iii) যদি ডালিম গাছে মাকড় পোকা আক্রমন করে। সেই পোকা দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ১.২৫ মিলি হারে ভার্টিমেক/ সানমেক্টিন ও ২ গ্রাম হারে সালফার ছত্রাকনাশক পানিতে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে।

ফল পচা রোগ

এই রোগ ছত্রাকজনিত সাধারণত বর্ষাকালে দেখা যায়। এই ফল পচা রোগের জীবাণু দিয়ে ফুল আক্রান্ত হলে ফলধারণ বাধাপ্রাপ্ত হয় এমনকি কচি ফল ঝরে যায়। বিশেষ করে বোঁটায় হলদে বা কালো দাগ দেখে এ রোগের আক্রমণ বোঝা যায়। এই রোগের আক্রমণে ফলের খোসা কুঁচকে যায় ও ফলের ওজন কমে যায়। এমন কি আক্রান্ত ফল কাঁচা থাকে, আকার ছোট হয় এবং ফলের উজ্জ্বলভাব নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ফল নরম হয়ে পচে যায় পরবর্তীতে।

প্রতিকারঃ ফল পচা রোগের প্রতিকার ফলের দাগ রোগের প্রতিকারের একই বা অনুরূপ।

ফল সংগ্রহঃ

ডালিম বা আনারের কলমের গাছে ৩-৪ বছর থেকেই ফলন দেওয়া শুরু হয়। আনারের ফুল ধরার পর থেকে ফল পাকা পর্যন্ত ৬ মাস সময় লাগে। এই ফল পরিপুষ্ট ফলের খোসার রঙ হলদে বাদামি হয়ে এলেই ফল সংগ্রহ করতে হবে। তবে গাছে ফল বেশি দিন রেখে দিলে ফল ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যেসব গাছে ফল ফেটে যাওয়ার সম্ভ্যবনা থাকে সেসব গাছের ফল পুষ্ট হওয়ার কিছু আগেই সংগ্রহ করা উত্তম। এর কারনে অপুষ্ট ফলের স্বাদ এবং গুণাগুণ খুব একটা ভালো হয় না। যেহেতু ডালিমের খোসা বেশ শক্ত এজন্য পাকা ফল অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়। খোসা শক্ত হওয়ার কারনে বাজারজাত করার সময় পরিবহনকালেও ফল সহজে নষ্ট হয় না।

ফলনঃ

ভালো মানের ডালিম গাছ সাধারণত চার-পাঁচ বছর বয়স থেকেই ফল দিতে শুরু করে। কিন্তু শুরুর দিকে ফলন তেমন একটা আশানুরূপ হয় না, কারন তখন গাছের বয়স অল্প। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডালিম ৮-১০ বছর বয়স থেকে ভালো ফলন দিয়ে থাকে। তবে প্রথম ফল ধরার সময় গাছপ্রতি ২০-২৫ টির বেশি ফল পাওয়া যায় না। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে ফলন বাড়তে থাকে। যখন দশ বছর বয়স হয়। তখন সেই গাছে গড়ে ১০০-১৫০ টি ফল ধরে। যদি ভালো পরিচর্যা নিলে গাছপ্রতি ২০০-২৫০ টি ফল পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু একটি ডালিম গাছ ত্রিশ বছর পর্যন্ত লাভজনক ফলন দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *