মানব জীবনে বেচে থাকার সময় নানা ধরনের রোগে আমাদের চেপে ধরে। তার মধ্যে মারাক্তক একটি রোগ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। তাই কিভাবে চিরতরে এই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।

পেট পরিষ্কার হচ্ছে না। বেশির ভাগ সময় পায়খানা করতে কষ্ট হয়। এমন কি টয়লেটে অনেক সময় ধরে বসে থাকতে হয়। এর পরেও পায়খানা ক্লিয়ার হয় না। আজকের এই প্রতিবেদনে কোষ্ঠকাঠিন্যের সবচেয়ে কমন কয়েক টি কারণ এবং সেগুলোর সমাধান তুলে ধরবো। সবগুলো কারণ আমি সহজ ও সুন্দর ভাষায় বুঝিয়ে বলবো যাতে আপনার পেটে কি হয়েছে পুরোটাই ভালোভাবে বুঝতে পারেন। আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

খাদ্যের যথেষ্ট পরিমাণে আঁশ থাকতে হবে

এই রোগটি কারণে বেশির ভাগ সময় পেট ক্লিয়ার হয় না। পেট ক্লিয়ার হওয়ার জন্য খাবারে আঁশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ । প্রত্যেক টা মানুষের পেটের ভেতরে থাকা নাড়িভুঁড়ি যেখানে পায়খানা তৈরি হয় এবং জমা থাকে। আর এই আঁশ জাতীয় খাবার সেখানে অনেকটা স্পঞ্জের মত কাজ করে। বিশেষ করে আঁশ পানি শোষণ ও ধারণ করার মাধ্যমে পায়খানায় পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। এজন্য আঁশ থাকলে পায়খানা নরম হয়। আর সেই পায়খানায় ভেতর দিয়ে সহজেই এগোয় এবং সহজেই সেটা শরীর থেকে বের করা যায়। অতএব স্বাভাবিক পায়খানা হতে আরো অনেক ভাবে সাহায্য করে। সুতরাং খাদ্য যদি যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ না থাকে তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধান হচ্ছে খাবারের আঁশের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সবজি

যে সব খাবারে আঁশযুক্ত রয়েছে সে সব খাবার গোলো হলো গাজর, শসা, টমেটো, ডাল, ছোলা, আপেল, কলা, সবধরণের শাকসবজি, গোটা শস্যদানা, ফলমূল, ইত্যাদি। আবার গোটা শস্যদানা জাতীয় খাদ্যর মধ্যে রয়েছে লাল আটা, লাল চাল, কিন্তু লাল চাল থেকে যখন সাদা করা হয় তখন আঁশের পরিমাণ কমে যায়। তবে আটার জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। এখন তো জানলাম, কোন কোন খাবারে আঁশ পাওয়া যায়। আরো জানবো প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে কি কি পরিবর্তন আনলে আঁশের পরিমাণ বাড়বে?

মধু খাওয়ার উপকারিতা
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে মধুর উপকারি।

মধু: আমরা জানি মধু উচ্চ ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ তরল। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে খুবই উপকারী। কেউ যদি দিনে তিনবার দুই চা চামচ করে মধু খায়। এই রোগ থেকে দ্রুত্ব রেহাই পাবে ইনশাল্লাহ! তবে আপনি চাইলে এক গ্লাস গরম পানির মধ্যে মধু ও লেবুর রস মিশিয়েও খেতে পারেন। কেউ যদি নিয়মিত প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করলে দেখবেন কিছু দিনের মধ্যে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।

 

লেবু
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা

 

লেবু: লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি। আর লেবু বা লেবুর রস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুবই কার্যকরী। কেউ যদি এক গ্লাস গরম পানিতে অর্ধেক লেবুর রস এবং আধা চা চামচ নুন ও সামান্য মধুমিশিয়ে নিতে পারেন। এভাবে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করলে দ্রুত ফল পাওয়া যায়।

 

 

আঙ্গুর ফল খাওয়ার উপকারিতা
আঙ্গুর ফল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

আঙ্গুর: কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রতিদিন অর্ধেক বাটি আঙ্গুর বা অর্ধেক গ্লাস আঙ্গুরের রস পান করুন। আপনার বাড়িতে যদি আঙ্গুর না থাকে বা আঙ্গুর খেতে ভাল না লাগে। সেক্ষেত্রে দু চামচ কিশমিশ জলেতে ভিজিয়ে রাখুন সারা রাত। এরপর কিশমিশসহ এই পানি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। সত্যি দেখবেন কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দ্রুত দূর হয়ে যাবে।

 

 

 

পালং শাক
পালং শাক খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহেতা করে।

পালং শাক: কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পালং শাক রাখুন। এই সবজি টি হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। তবে আপনি চাইলে এটি সালাদ তৈরি করেও খেতে পারেন অথবা রান্না করেও খেতে পারেন। আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা খুব বেশি জটিল আকার ধারণ করে। তাহলে আপনি যা করবেন, পালং শাকের রস বানিয়ে অর্ধেক পানির সঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত দুই বেলা খেয়ে নিন। দেখবেন আপনি দ্রুত কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

 

 

 

ক্যাস্টর অয়েল
ক্যাস্টর অয়েল খাওয়ার ফলে দূর হয়।

ক্যাস্টর অয়েল: এই ক্যাস্টর অয়েল শুধু চুলের যত্নে ব্যবহার হয় না, এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। কেউ যদি সকালে খালি পেটে এক বা দুই চা চামচ ক্যা স্টর অয়েল খায় তাহলে তার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। কিন্তু আপনি চাইলে ফলের রসের সাথে ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়েও খেতে পারেন। আপনি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পরিবর্তন দেখতে পাবেন। কিন্তু এটি দীর্ঘদিন খাবেন না। সুতরাং অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

খাদ্যে আঁশের পরিমাণ বাড়ানোর উপায়

খাবারে খাওয়ার সময় দুটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। যদি হঠাৎ করে খাবারে আঁশের পরিমাণ বেড়ে গেলে পেটে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি পেট ফাঁপাও হতে পারে । এজন্য ধীরে ধীরে খাবারে আঁশের পরিমাণ বাড়াতে হবে। কিন্তু সবগুলো বিষয় একসাথে শুরু করবেন না। কিন্তু প্রয়োজনে খাবার গুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন এবং একটি একটি করে শুরু করুন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আঁশের একটি ধর্ম হচ্ছে আঁশ পানি শোষণ ক্ষমতা বেশি। অতএব খাবারের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই যথেষ্ট পরিমাণ পানি গ্রহন করতে হবে।

পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে না খাওয়ার কারনে কোষ্ঠকাঠিন্য

অনেকেই আছেন খাবার পর সামান্য পানি পান করে থাকে। বেশির ভাগ দেখা যায় তাদের কষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। তাই পায়খানা নরম করতে হলে শরীরে পানির প্রয়োজন হয়। পেটের ভিতরে যাতে আমাদের বৃহদন্ত্রে অর্থাৎ পেটের নাড়িভুড়ি চলাচল করতে পারে কোথাও আটকে না থাকে তার জন্য প্রয়োজন পানি। কেউ যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না খায়। তাহলে পায়খানা নরম না হয়ে বরংচ শক্ত হওয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা দ্রুত্ব বেড়ে যায়। তবে এর আসল সমাধান কি

আরও পড়ুনঃ জেনে নিন জন্ডিসের চিকিৎসা। জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা ও জন্ডিস টেস্ট

হ্যা, কষা পায়খানা দূর করার সমাধান একটাই। প্রতিদিন অত্যন্ত ২ লিটার পানি পান করতে হবে। আপনি চাইলে আপনার সাথে একটি 1 লিটার পানির বোতল রাখতে পারেন। এতে করে আপনি দিনে কতটুকু পানি পান করেছেন তার হিসাব রাখতে খুব সহজ হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ব্যায়াম

এই রোগ হলে ব্যামের মাধ্যেমে রেহাই পাওয়া যায়। তাহলে চলুন ব্যাম কিভাবে করতে হয় দেখে নিন প্রথমে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন। এরপর হাত দুটি শরীরের দুই পাশে তালু উপুড় করে রাখুন।

এবার দুই পা জোড় করে মাটির ওপরে তুলুন। তারপর দুই পা জোড় রেখে মাটি থেকে শরীরটা তুলে পা দুটি মাথার পেছনে রাখুন। দেখবেন এভাবে কিছুদিন চেষ্টা করার পর। এরপর পা দুটি জোড় অবস্থায় সম্পূর্ণরূপে মাথার পেছনে নিয়ে দুই পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মেঝে স্পর্শ করুন। অনেক উন্নতি হয়েছে।

কিন্তু এই ভঙ্গিমায় ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড অবস্থান করুন। শ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। আবার প্রথমের মতো করবেন অথবা স্বাভাবিক অবস্থায় এসে ১০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে আবার করুন। যদি এভাবে তিন থেকে পাঁচবার করতে পারেন। আপনি যদি এভাবে পুরোপুরি আয়ত্তে করতে পারেন, দেখবেন একবার ১ মিনিট পর্যন্ত করা যাবে।

বিভিন্ন ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য

আমাদের জীবন চদলার ক্ষেত্রে নানা ধরনের রোগ চেপে ধরে বসে। সে ক্ষত্রে দেখা যায় নানা ধরনের কিছু ঔষুধ গ্রহনের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে কষা পায়খানা দেখা দিতে পারে। সেই সব ঔষদ গুলো হলোঃ আয়রন, ট্রামাডল বা আইবিপ্রফেন, বা ক্যালসিয়াম সাপলিমেন্ট ইত্যাদি। কিন্তু অনেকসময় সাধারন ঔষুধ খেলেও কষা পায়খানা হওয়া সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই চিকিতসাকের পরামর্শ নিয়ে ঔষদ সেবন করাই ভালো।

কোষ্ঠকাঠিন্যর সারাতে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন

আমাদের এই প্রতিবেদনে ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করে যদি আপনার কোনো সমাধান না হয়। তাহলে অবশ্যই দ্রুত্ব ডাক্তারের কাছে থেকে পরামর্শ নিবেন। আপনার যদি র্দীঘদীন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য বা কষা পায়খানা থাকে,অথবা পায়খানার রাস্তায় ব্যাথা হয় এবং পায়খানার খুব শক্ত ও রং কালো হয়। যদি পায়খানার সাথে রক্ত আসে। এমনকি পেট ফাঁপা থাকে, হজম শক্তি কমে যায়। এই কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে যদি পেটব্যাথা হয়, জ্বর আসে, বিশেষ করে যদি কোনো কারণ ছাড়াই ওজন কমে যায় এবং রক্তশুণ্যতা থাকে তাহলে অবশ্যই একজন ভালো ডাক্তার এর কাছে থেকে পরামর্শ নিবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *