প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা করেছেন, ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে  জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি মাধ্যমে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে খাদ্য সংকটের সমস্যা দেখা দিয়েছে । এই পরিস্থিতিতে কারো কোথাও পতিত জমি থাকলে ,তা চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর পাশাপাশি সকলকে ধূমপান ও তামাকের মারাত্মক নেশা থেকে বেরিয়ে আস্তে হবে । তিনি আরো বলেন,অংশীজনদের প্রায়োগিক ভূমিকা এবং জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি র মাধ্যমে আমরা আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব, ইনশাল্লাহ।তামাকের ভয়াল নেশা থেকে দূরে থাকুন

আজ বুধবার ৩১ মে ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস-২০২৩’ উপলক্ষ্যে দেয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন তিনি।বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস-২০২৩’ পালিত হতে যাচ্ছে জেনে প্রধানমন্ত্রী আনন্দিত। তিনি বলেন, দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বর্ধিত নগরায়ন, শিল্পায়ন ও বসতি গড়ে তোলার কারণে চাষাবাদের জমি উল্লেখযোগ্য হারে কমে পাচ্ছে, এর ফলে খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে । তাছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষকরে পানির অভাবে খাদ্যশস্য উৎপাদন প্রক্রিয়া সমস্যা হচ্ছে। জ্বালানি তেল, সার ও কীটনাশকের মূল্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সর্বশেষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে । ফলে দ্রব্যমূলের ব্যাপক হারে দাম বৃদ্ধি হয়েছে । এ অবস্থায় তামাকের মত ক্ষতিকর ফসলের চাষ কমিয়ে এনে অন্যান্য খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো খুব জরুরি।

আরো পড়ুন :চলছে সংসদের বাজেট অধিবেশন

তামাক চাষ ও তামাক পাতা প্রক্রিয়াজাত করার জন্য প্রতিবছর গড়ে দুই লাখ হেক্টর বনজ সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী প্রতি ৩০০টি সিগারেট তৈরির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ কাটা পড়েছে। তামাক চাষে ব্যবহৃত কীটনাশক ও তামাকের ক্ষতিকর রাসায়নিক মাটি ও পার্শ্ববর্তী জলাশয়ের পানি দূষণ করছে। ফলে, মাটি, বায়ু ও পানি নির্ভর জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং কৃষি ব্যবস্থা ও খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরনের হুমকি তৈরি করছে। অন্যদিকে তামাক প্রক্রিয়া, সিগারেট ও বিড়ির ধোঁয়ায় বায়ুর বিষমাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে, যা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।

তামাক ব্যবহার অসংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক মহামারি সৃষ্টি করছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন । তামাক সেবনের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগ যেমন- হৃদরোগ, ক্যানসার, স্ট্রোক, ডায়াবিটিস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাকের ব্যবহার হ্রাস করার লক্ষ্যে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) প্রণয়ন করেছে।তামাক সেবন কেবল ধূমপান, জর্দা ও গুলের ব্যবহারকারীদের ক্ষতি করে তা নয়,এর বাহিরেও বিশাল ধরণের ক্ষতি সদন করে থাকে।

আরো পড়ুন : চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ রাতে বাড়তে পারে

এফসিটিসি’র আলোকে বাংলাদেশে ২০০৫ সালে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ প্রণীত হয় ও ২০১৩ সালে তা সংশোধন করা হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘ তামাককে উন্নয়নের হুমকি বিবেচনায় নিয়ে এফসিটিসির কার্যকর বাস্তবায়ন ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণকে অন্তর্ভুক্ত করে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ (এসডিজি) প্রণয়ন করেছে। এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়টিকে ৭ম ও ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যুক্ত করেছে। সর্বোপরি, দক্ষিণ এশীয় স্পিকার্স সামিট ২০১৬-এ আমরা আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছি। সে লক্ষ্যে আমাদের সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *