বাইরে বের হলেই প্রচণ্ড গরম। শীত ও গরম সব ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারেন। জ্বর, ঘামাচি কিংবা পানিস্বল্পতার মতো সমস্যা প্রায় প্রত্যেকেরই হয়। কেউ কেউ হিটস্ট্রোকের মতো গুরুতর সমস্যায় আক্রান্ত হন। এসব সমস্যার পাশাপাশি হতে পারে অবসাদ, অ্যালার্জি, সূর্যরশ্মিতে ত্বক পুড়ে যাওয়া, হজমের অভাবে বমি বা ডায়রিয়াজনিত রোগ ইত্যাদি।
অতিরিক্ত গরমের কারণে সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় পানিস্বল্পতা। প্রচুর ঘামের কারণে পানির সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণও বেরিয়ে যায়। এর ফলে সাধারণত শরীরের রক্তচাপ কমে যায়, দুর্বল লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে।
গরমের সমস্যা থেকে বাঁচার উপায়ঃ
১. যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে।
২. বাইরে বের হলে সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে টুপি বা ছাতা ব্যবহার করতে হবে। পরনের কাপড় হতে হবে হালকা, ঢিলেঢালা, সুতি কাপড়। শরীর যতটা সম্ভব ঢেকে রাখতে হব।
৩. শরীরের উন্মুক্ত স্থানে সম্ভব হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
৪. গোসল করতে হবে এবং শরীর ঘাম ও ময়লামুক্ত রাখতে হবে।
৫. শ্রমসাধ্য কাজ যথাসম্ভব কম করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পরপর বিশ্রাম নিতে হবে এবং প্রচুর পানি ও স্যালাইন পান করতে হবে।
প্রথমে বলি, হিটস্ট্রোক কী।
মানবদেহের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছালে দেহ আর নিজেকে নিজে শীতল করতে পারে না। কারণ, এ সময় মস্তিষ্ক দিশেহারা হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুনঃ উড়িয়ে দেওয়া হলো খেরসনের বাঁধ বড় বিপদের শঙ্কা রেডক্রসের
মস্তিষ্কের ‘হাইপোথ্যালামাস’ অংশটি দেহের নানা অঙ্গের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরের তাপমাত্রার একটি আদর্শ মান আছে এই হাইপোথ্যালামাসে—৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর ওপরে গেলে হাইপোথ্যালামাস নানা কায়দায় দেহ থেকে তাপ বের করে দেয়। এই তাপ বের করে দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া হলো ঘাম। যাহোক, হাইপোথ্যামালাস ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপ উঠে গেলে সেটাকে কমানোর জন্য নানা কারিকুরি করে। কিন্তু এর ওপরে উঠলে আর সামলাতে পারে না। তখন ঘাম দিয়েও লাভ হয় না। শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিক্রিয়া দেখায়, ফলে অঙ্গগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে। একেই বলা হয় হিটস্ট্রোক। এ সময় ১০-১৫ মিনিটে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মতো হয়ে যেতে পারে। (এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, হিটস্ট্রোক কিন্তু স্ট্রোক নয়। দুটোর মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।)
তাপপ্রবাহে শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে যা যা করবেনঃ
- স্বাভাবিক পানি পান করুন।
- ধীরে ধীরে ঠান্ডা পানি পান পরিহার করুন।
- বরফ পানি পুরোপুরিই পরিহার করুন।
১) যখন তাপমাত্রা ৪০°সে-এ পৌঁছে তখন খুব ঠান্ডা পানি পান করতে নিষেধ করেন চিকিৎসকগণ। কারণ এতে রক্তনালী হঠাৎই সংকুচিত হয়ে হঠাৎই স্ট্রোক হতে পারে।
২) যখন বাহিরের তাপমাত্রা ৩৮°সে অতিক্রম করে তখন ঘরে চলে আসুন বা ছায়ায় অবস্থান করুন। ঠান্ডা পানি পান করবেন না। স্বাভাবিক তাপের পানি পান করুন বা ঈষৎ গরম পানি। তাও ধীরে ধীরে।
৩) ঘরে এসেই হাত-পা-মুখ ধুবেন না। হাত-মুখ ধোয়ার আগে একটু অপেক্ষা করুন। দেহকে ঘরের তাপের সাথে খাপ খেতে দিন। অন্ততঃ আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করুন হাত-মুখ ধোয়ার আগে বা গোসলের আগে।
৪) অল্প অল্প করে বারে বারে স্বাভাবিক পানি পান করুন। জ্যুস বা এজাতীয় পানীয় পরিহার করুন। স্বাভাবিক শরবত, ডাব বা লবণ পানির শরবত পান করতে পারেন যদি তা আপনার জন্য অন্য কারণে নিষিদ্ধ না হয়ে থাকে। তবে তাও স্বল্প পরিমাণে।
৫) প্রচন্ড গরমে বা যদি আপনি খুবই ক্লান্ত থাকেন তবে ভুলেও বরফ মিশ্রিত পানি বা ফ্রিজের পানি পান করবেন না, যদিও ওইসময় ঠান্ডা পানি খুব ভালো লাগে। এটা শরীরে প্রশান্তি ভাব এনে দেয়।কিন্তু এতে হঠাৎই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
হিটস্ট্রোক হতে পারে দুভাবেঃ
এক, এক্সাটার্শনাল বা ক্লান্তিজনিত হিটস্ট্রোক। গরম ও আদ্র পরিবেশে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করলে মূলত এ ধরনের হিটস্ট্রোক হতে পারে। খুব দ্রুত, প্রায় কয়েক ঘন্টার মধ্যেই হতে পারে এটা। দুই, নন-এক্সাটার্শনাল। বাংলায় বলা যায়, ক্লান্তিজনিত নয়, এমন হিটস্ট্রোক। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক অবস্থার কারণে এমন হতে পারে। এক্ষেত্রে হিটস্ট্রোকের লক্ষণগুলো কয়েকদিন আগে থেকে ফুটে উঠতে পারে।
আরও পড়ুনঃ এনবিআরে সম্পদের তথ্য জানাতে হবে বিদেশে ঘুরতে গেলে
এ লক্ষণগুলো কী? কী দেখলে বুঝবেন হিটস্ট্রোক হচ্ছে? মার্কিন যুক্তরাষ্টে অবস্থিত একটি অ্যাকাডেমি মেডিকেল সেন্টার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক। তাদের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো হলো—অ্যানহাইড্রোসিস বা শুষ্ক ত্বক (যে ত্বক ঘামে না), অ্যাটাক্সিয়া বা চলাচল ও সমন্বয়ে সমস্যা, শরীরের ভারসাম্যে সমস্যা, বিভ্রান্তি, মাথাঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম, ত্বক গরম ও লালচে হয়ে ওঠা, নিম্ন বা উচ্চ রক্তচাপ, বমি বমি ভাব, ফুসফুসের স্বাভাবিক শব্দের সাথে বুদবুদের মতো শব্দ হওয়া, প্রস্রাব খুব কম হওয়া, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, খিঁচুনি ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। কারো মধ্যে এ ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা গেলে দেরি না করে যতদ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
প্রাথমিক চিকিৎসাঃ
হিসেবে ঘাড়ে, কোমরে, বগলে বরফ দেওয়া যেতে পারে। সামান্য লবণযুক্ত পানীয় খাওয়ানো, ঠান্ডা বাতাসে রেখে শরীর ঠাণ্ডা করার ব্যবস্থা ইত্যাদি করা যেতে পারে। (সূত্র: ক্লিভল্যান্ড মেডিকেল)