এই খাদ্যটি দেখতে উজ্জ্বল সবুজ রঙের দারুণ সুস্বাদু বাদামটির নাম পেস্তা, এই পেস্তা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে। তবে এটা মোটামুটি সকলেই জানেন। এই পেস্তা বাদাম এর বৈজ্ঞানিক নাম: Pistacia vera এবং এর ইংরেজি নাম: Pistachio এটি পর্নমোচী মধ্য এশিয়া জাত। কিন্তু এটি একধরনের বাদাম, এই গাছ ছোট হয়।

এই পেস্তা বাদাম সুস্বাদ ও মনোরম হয়, হাল্কা গন্ধ ও গুনের জন্য এবং সংরক্ষণ এ ভালো এবংএই জন্য অধিক জনপ্রিয়। সুতরাং এই কারণেই অন্যান্য বাদামের তুলনায় এই পেস্তা বাদাম অনেক দামী হয়। কিন্তু এর দামটা বেশ চড়া হলেও বিশেষ উৎসবের সেমাই , পায়েস, পোলাওতে পেস্তার দেখা মেলেই।

পেস্তা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
পেস্তা বাদাম গাছের ছবি

সুতরাং যারা বেশির ভাগ এই পেস্তা বাদাম খান না। তবে বেশির ভাগের মধ্যে তাঁরাও কিন্তু চিনেন এই পেস্তা বাদামের ফ্লেভারের আইসক্রিম। তবে সবারই এই সুস্বাদু খাবারটির সাথে আমাদের প্রত্যেকের সম্পর্ক অনেক দিনের। প্রায় কিন্তু সবারই পেস্তা বাদাম তো খাওয়াই হয়। আপনি কি জানেন পেস্তার গুণাবলী এবং পেস্তা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা? নিয়মিত পেস্তা খেলে কী উপকার হয়? তবে শরীরের জন্য প্রতিদিন কটা বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত? তবে চলুন, এখনিই জেনে নিই।

পেস্তা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

এই পেস্তা বাদাম খাবারের শোভা বাড়ানোর ক্ষেত্রে, শুকনো বাদাম সকলের পছন্দের তালিকা্য সবার উপড়ে। কিন্তু এই পেস্তা বাদাম বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত খাদ্যের মধ্যে অন্যতম একটি খাদ্য। এই পেস্তা বাদাম স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব উপকারি খাদ্য। এই পেস্তা বাদাম বিশুদ্ধ রক্তকে শুদ্ধ করে। এমনকি মরণ ঘাতী ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ থেকেও রক্ষা করে। এই পেস্তা বাদাম নিয়মিত খেলে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সুতরাং জেনে নিন এর বিভিন্ন গুণাবলী গুলো নিচে দেওয়া হলো।

হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে:

পেস্তা বাদাম হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে সহেতা করে থাকে। বাদামের মধ্যে উপস্থিত ভিটামিন বি ৬ নামক প্রোটিনের উপাদান থাকে, যা রক্তে অক্সিজেন বহন করে থাকে। পেস্তা বাদাম প্রতিদিন যদি খাওয়া যায় তবে রক্তে হিমোগ্লোবিন ও অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করে:

এই সামান্য পেস্তা বাদাম ডায়াবেটিসের মতো ভয়ঙ্কর রোগ থেকে রক্ষা করে। মানুষের শরীরের প্রয়োজনীয় ৬০ শতাংশ ফসফরাস পূরণ করে, মাত্র এক কাপ পেস্তা বাদাম থেকে। এটি ডায়াবেটিস থেকে আমাদের রক্ষা করে। এই পেস্তা বাদামে থাকা উপস্থিত ফসফরাস এবং প্রোটিনকে অ্যামিনো অ্যাসিডে ভেঙ্গে দেয় যার ফলে মানুষের শরীরের গুলুকোজের শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে।
আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক ও বিকল্প উপায়

সুস্থ ত্বকের জন্য সহেতা করে থাকে:

আপনি যদি সুস্থ ত্বক পেতে চান? তাহলে আপনি পেস্তা বাদাম নিয়মিত খাবেন। পেস্তা বাদামে ভিটামিন ই রয়েছে, যা স্বাস্থ্যকর চামড়ার জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয়, তাহা এই পেস্তায় প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। তবে এই পেস্তায় থাকা তেলটি আপনার ত্বককে সুন্দর ও ময়শ্চারাইজ করতে সহেতা করবে এবং শুষ্কতার থেকে মুক্তি দেয়। তবে এটি সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে থাকে। এই পেস্তা খেলে ত্বক বৃদ্ধির বাধা দেয় এবং আপনাকে অল্প বয়স্ক দেখাবে।

স্নায়বিক সিস্টেম:

আমরা জানি যে পেস্তা বাদামে রয়েছে ভিটামিন বি ৬ যা স্নায়বিক সিস্টেমের জন্য খুব উপকারি ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এই পেস্তায় থাকা ভিটামিন নার্ভ তন্ত্রগুলির চারপাশে মায়েলিন ঘনত্ব তৈরি করে, যেটি নার্ভের তন্ত্রগুলির মাধ্যমে অন্য স্নায়ু থেকে বার্তা প্রেরণ করে থাকে। তবে এটিকে বলা হয় স্নায়বিক সিস্টেম।

চোখের সমস্যা থেকে রক্ষা করে:

এই পেস্তা বাদাম চোখের জন্যও খুব উপকারি একটি খাদ্য। এটি চোখের বিভিন্ন রোগের সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারে। এই পেস্তা মাস্কুলার বিকৃতি থেকে রক্ষা করে। এটি বৃদ্ধ বয়েসে চোখের সাধারণ সমস্যা এবং যার ফলে চোখের দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে যায়। এই পেস্তা বাদামে লুটিন এবং জ্যাক্স্যান্থিন নামক দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ পাওয়া যায়। যা মানুষের চোখের এই মুক্ত রেডিকেলসকে আক্রমণ করে এবং তাদের কে ধ্বংস করে। তবে পেস্তা বাদাম এই মাস্কুলার কোষগুলোকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করে।

হৃদয় সুস্থ রাখার জন্য সহেতা করে:

এই পেস্তা বাদাম নিয়মিত খেলে হৃদয় সুস্থ থাকে, যা এই হৃদরোগ সংক্রান্ত রোগগুলির প্রবণতা কম থাকে। সুতরাং পেশীর শক্তি বৃদ্ধি করে হার্টকে শক্তিশালী করে তোলে। তবে এর পাশাপাশি খারাপ এলডিএল কম করে এবং ভাল এলডিএল বৃদ্ধি করতে সহেতা করে থাকে।

রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

যদি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। সে ক্ষেত্রে আমরা সহজেই অনেক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি। এই পেস্তায় পাওয়া যায় ভিটামিন বি ৬, এটি রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই পেস্তা রক্ত গঠনে ও শরীরে রক্ত সঞ্চালন করার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এটি আরও মস্তিষ্ক সক্রিয় করে তোলে সহেতা করে।

ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে:

ক্যান্সার এমন একটি মরণ ঘাতী মারাত্মক রোগ, যা সহজেই নিরাময় করা যায় না। কেউ যদি নিয়মিত পেস্তা বাদাম খায়, তবে তার এই মারাত্মক রোগ থেকে বাঁচাতে পারবে। এই পেস্তায় উপস্থিত রয়েছে ভিটামিন বি ৬, যা রক্তের কোষের সংখ্যা বাড়াতে সহেতা করে।

চুলের সমস্যা দূর করে:

এই পেস্তা বাদাম চুলের সমস্যা বিভিন্ন দূর করে। এই পেস্তা বাদামে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড থাকে, যা শক্তিশালী, চুলের গোঁড়া ও ঘন করে তোলে। তবে এই বাদাম ব্যবহার করে যে হেয়ার মাস্ক তৈরি হয়। এটি আপনার ভেতর থেকে ময়শ্চারাইজ করে এবং চুলের পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে। তবে এর পাশাপাশি চুলের আগা ফাটা ও চুল পড়ার সমস্যা থেকে রেহাই দেয়।

আরও পড়ুন: প্রাকৃতিক নিয়মে চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

জ্বলন থেকে রক্ষা করে:

এই পেস্তা বাদামে জ্বালা প্রতিরোধ করার গুণাবলী প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এই পেস্তায় সমৃদ্ধ ভিটামিন ই, ভিটামিন এ এবং জ্বলন প্রতিরোধী ক্ষমতা রয়েছে। যে কোন শরীরের সমস্যায় হাত থেকে রক্ষা করে পারে।

পেস্তা বাদামের পুষ্টি গুণাগুণ

  • এই পেস্তাবাদামে একধরনের লুটেন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। মানুষের বয়সের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যা গুলো হলো, মাংসপেশির দুর্বলতা, চোখের ছানির সমস্যা, ইত্যাদি। তবে এই পেস্তা বাদাম রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • প্রোটিনের সবচেয়ে বড় একটা উৎস হচ্ছে পেস্তা বাদাম।
  • এই পেস্তা বাদামে আরো একটি ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে থাকে, সেটি হলো ভিটামিন বি-৬।
  • পেস্তা বাদাম এর দারুণ উৎস হচ্ছে পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, কপার, ম্যাগনেসিয়াম।
  • পেস্তা বাদাম নিয়মিত প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমান খেলে ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল হয়।
  • এই পেস্তা বাদামে রয়েছে মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা কোলেস্টেরল লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। যার ফলে পেস্তা বাদাম হৃদরোগের ঝুঁকিও কমাতে কার্যকারিতা রয়েছে।
  • যারা বেশির ভাগ ইনসুলিনের ওপর নির্ভরশীল নয়। তবে এধরনের ডায়বেটিসে যাদের আক্রান্ত রোগিদের ক্ষেত্রে এই পেস্তা বাদামে থাকা স্বাস্থ্যকর তেল তাদের জন্য বিশেষভাবে উপকারীতা পাবে।
  • অন্য সব বাদামের চাইতে এই পেস্তা বাদামে রয়েছে অধিক পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোস্টেরল। এই উপস্থিত উপাদান ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে।
  • এই পেস্তাবাদাম দাঁতের রোগ ও লিভারের সমস্যায় বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। এই পেস্তা বাদাম রক্ত শুদ্ধর কাজও করে।

পেস্তা বাদাম খাওয়ার নিয়ম

এই পেস্তা বাদাম খাওয়ার কিছু সুন্দর নিয়ম রয়েছে। তবে এই নিয়মগুলো সঠিক ভাবে অনুসরণ করে আপনি যদি পেস্তা বাদাম খান তাহলে অবশ্যই আপনি এর ভাল ফলাফল পাবেন। তাহলে চলুন জেনে নেই কিভাবে, কখন এই পেস্তা বাদাম খাবেন।

পেস্তা বাদাম ছবি
পেস্তা বাদাম ছবি
  1. এই পেস্তা বাদাম খাওয়ার সময় অবশ্যই উপরের খোসা ছড়িয়ে নেবেন কাঁচা খাওয়ার অভ্যাস করুন। আবার কাচা বাদাম ভিজিয়ে খেলে বা সিদ্ধ করে খেলে বাদামের কিছু গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। যদি কাচা বাদাম খেতে অসুবিধা হলেও বাদামের সাথে মধু দুধ ইত্যাদি জাতীয় কিছু মিশিয়ে নিতে পারেন এতে বাদামের গুনাগুন যেমন থাকবে তেমনি বাদাম খেতেও স্বাদ হবে।
  2. এই পেস্তাবাদাম আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খেতে পারেন। সকালে খালি পেটে পেস্তা বাদাম খেলে শরীরে পুষ্টিগুণ তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায় ও হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। দৈনিক ছয় থেকে ষাট টি পেস্তাবাদাম খেতে পারেন।
  3. পেস্তাবাদাম অনেকেই রয়েছে যারা বাদাম ভিজিয়ে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে তারপর এগুলো খান। তবে এটা মোটেও ঠিক নয়, কারণ এতে বাদামে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো গুনাগুন গুলো নষ্ট হয়ে যায়।
  4.  এই পেস্তা বাদাম রাতে ভিজিয়ে রাখুন এরপর সকালে উঠে ভেজানো বাদামগুলো খেয়ে ফেলুন। কারণ এগুলো খুব দ্রুত হজম হয়ে যায়। ভেজানো পেস্তাবাদাম শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

পেস্তা বাদাম খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

অতিরিক্ত পরিমাণে কেউ যদি পেস্তা বাদাম খায়। এর ফলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। উদাহরণস্বরুপ, কাশি , হাঁচি, অ্যালার্জির সমস্যা , ফুসকুড়ি এবং মুখের ফোলাভাবের মতো লক্ষণগুলির কারণ হতে পারে। আবার অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া, পেট খারাপও হতে পারে।

এই পেস্তাবাদাম অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ভরপুর একটি খাবার, তবে এটি খাওয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন প্রকার পুষ্টির চাহিদা যেমন পূরণ হয় তেমনি শরীরে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে। যদি পেস্তাবাদাম সম্পর্কে আপনার কোন মন্তব্য থাকলে অবশ্যই কমেন্টে বক্সে মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারেন।

আরও পড়ুন: স্বর্গীয় ডালিম ফল খাওয়ার উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *