চিন্তাশিল মানুষ সবসময় ভবিষৎ নিয়ে চিন্তা করে। কোভিড-১৯ পরবর্তী পৃথিবী কেমন হবে এটা তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। চিন্তাশিল বেক্তিগনের মতে বিশ্বের সব দেশ করোনার কারণে ভয়াবহ এক সময় পার করছে যার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি থমকে দাঁড়িয়েছে। এখন কেউ বলতে পারছে না বিশ্ব কোন দিকে যাচ্ছে। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, বিশ্ব এক মহামন্দার দিকে ইঙ্গিত করছে ।
বিভিন্ন দেশ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পশ্চিমা দেশগুলো কোভিড-১৯ এ অনেক বেশি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কেননা এসব দেশে করোনা তার আসল রূপ দেখাচ্ছে। উত্তর গোলার্ধে গরম আবহাওয়া যতক্ষণ না আসছে ততোদিন দেশের মানুষকে লকডাউনে ঘরের মধ্যে থাকতে হতে পারে। এজন্য সকলকে করোনাভাইরাস থেকে সতর্কতা থাকার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব সাস্থ সংস্থা। আমরা দুটি বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বিভিন্ন দেশে সেনা অভ্যূত্থান ঘটতে থাকে এবং বিশ্বে প্রচলিত একক মুদ্রা হিসেবে ডলারের ব্যবহার শুরু হয় ইত্যাদি।
তেমনি Novel Coronavirus এর কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্ব হবে এক নতুন বিশ্ব। অনেক কিছু পরিবর্তন হতে পারে । শুধু সময়ের অপেক্ষা, দেখা যাক কি হতে পারে সেই পরিবর্তন। চিন্তাশীল বেক্তিদের ধারণা অনুযায়ী কোভিড-১৯ পরবর্তী পৃথিবী সম্পর্কে তুলে ধরা হলো।
১. বিশ্ব আরও ডিজিটাল হবে (The world will be more digital):- শপিং থেকে শুরু করে প্রকাশনা পর্যন্ত সব ডিজিটাল হয়ে যাবে। রোবর্ট ও স্মার্ট টিভি ও স্মার্ট ফোনের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পাবে। হাতের মুঠোয় সবকিছুই চলে আসবে । একটি মুঠো ফোনের মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট (এআই) ও ন্যানো নতুন প্রযুক্তি বর্তমান প্রচলিত প্রযুক্তিতে আনতে পারে নতুন বিপ্লব।
২. বিশ্বে চুরি এবং ডাকাতি কমে যাবে (Theft and robbery will be reduced):- সারা বিশ্বে চুরি এবং ডাকাতি কমে যেতে পারে। কেননা বিশ্বের মানুষ সাইবার সার্ভিলেন্সের আওতায় আসবে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সুবিধা হবে। তবে সাইবার ক্রাইম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ ডিজিটালের সাথে সাইবার ক্রাইম সম্পর্কিত। সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।
৩. ওষুধ কোম্পানিগুলোকে বিশেষ নজদারির(Special surveillance of Medicine companies):- জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি সামগ্রী উৎপাদনকারী ওষুধ কোম্পানিগুলোকে বিশেষ নজদারিতে এবং আইন বা বিধি প্রণয়ন করতে হবে। কারণ কোভিড-১৯ পরবর্তী সময় জনস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর চাহিদা বেশি থাকবে এবং কোম্পানিগুলো বেশি মুনাফার সুযোগ খুঁজবে। তাই এসব কোম্পানিকে বিশেষ নজদারিতে রাখতে হবে ।
৪. ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন (Radical changes in the banking system):- বেশিরভাগ ব্যাংকগুলো অনলাইন ও ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে সেবা প্রদান করবে। হাজার হাজার মানুষ এই খাতে চাকরি হারাবে কারণ অনেক শাখা বন্ধ করে দিবে। বেশিরভাগ গ্রাহক ব্যাংকে না গিয়ে অনলাইনে লেনদেন করতে চাইবেন। তাই অধিকাংশ লেনদেন হবে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।
৫. বাসা ভাড়া দাম বৃদ্ধি পাবে (Home rental prices will be increase):- সাধারণত মানুষ অফিসে বসেই অফিসের কার্যক্রম করে থাকে । কিন্তু করোনার পরবর্তী সময়ে অফিসের কাজ বাসায় বসে করতে হতে পারে। এক্ষেত্রে করপোরেট অফিসের আয়তন ছোট হয়ে যাবে। ফলে বাণিজ্যিক ভবনের জায়গার চাহিদা ও দাম কমে যেতে পারে। অপরদিকে, আবাসিক ফ্ল্যাট/বাড়ির দাম বৃদ্ধি পেতে পারে।
৬. ডিজিটাল মুদ্রার প্রচলন (Digital currency circulation):- টাকার নোটের মুদ্রার প্রচলন কমে যেতে পারে। বড়তে পারে ডিজিটাল মুদ্রা বা অনলাইনে লেনদেন। যেমন: এখন বাংলাদেশে বিকাশ, রকেটসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কেনাকাটা ও বিল পরিশোধ করা যায়। বিটকয়েন এর প্রচলন বাড়তে পারে।
৭.নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে (Increases in commodity prices):- কোভিড-১৯ এর কারণে বর্তমানে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উৎপাদন কমে গেছে। কোভিড-১৯ পরবর্তী চাহিদার তুলনায় যোগান অনেক কম হবে। যদিও একটা সময় পর ঠিক হয়ে যাবে। সে জন্য সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে খাদ্য পণ্যের ক্ষেত্রে এটি বেশি প্রভাব পরবে। এ ক্ষত্রে বিভিন্ন দেশের সরকারকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নজরদারি বাড়াতে হবে।
৮. বেকারত্ব বৃদ্ধি (increase unemployment) :- করোনার কারণে ইউরোপের অর্থনীতি সহ বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এতে করে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। সরকারও তাদের যথেষ্ট অথনৈতিক সাপোর্ট দিতে ব্যর্থ হবে । ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের মতো কোনো কোনো দেশ পরে যেতে পারে।
৯. পরিবেশ প্রেমীর প্রভাব বিস্তার (Influence of environment lovers):- কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বে পরিবেশ প্রেমী আন্দোলনের প্রভাব বিস্তার ঘটবে। কারণ এটা প্রমাণিত যে, ধরিত্রী যদি বেঁচে থাকে তাহলে মানুষ সমাজেও সুস্বাস্থ্য নিয়ে বসবাস করতে পারবে। এইক্ষেত্রে বন উজাড়, জলচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয় ঘটে এমন বিষয়ের বিপক্ষে পরিবেশপ্রেমীদের আন্দোলন বেড়ে যাবে। বিভিন্ন দেশের সরকার ও জাতিসংঘ নতুন আইন প্রণয়ন করতে বাধ্য হবে।
আরোও পড়তে পারেন: কোভিড-১৯ বিশ্ব মহামারি থেকে মুক্ত পেতে কতদিন লাগবে
১০. স্বাস্থ্যবিধির নীতি নির্ধারণ :- স্বাস্থ্যবিধির নীতি নির্ধারণে আসবে অনেক পরিবর্তন। সমুদ্রগামী পণ্য ও মানুষ্যবাহী জাহাজ, উড়োজাহাজ, কুরিয়ার সার্ভিস এবং কন্টেইনার সার্ভিসের জন্য নতুন স্বাস্থ্যবিধি এবং অপারেশন সিস্টেম আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বিদ্যমান স্বাস্থ্যবিধি ও অপারেশন সিস্টেমের ব্যাপক পরিবর্তন সাধন হতে পারে। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশগুলো স্বাস্থ্যবিধি ও অপারেশন সিস্টেম মেনে চলার বিষয়টি সরকারগুলো কঠোর মনিটরিংয়ের মধ্যে আনতে পারে।
১১. জনসংখ্যা বৃদ্ধি (Population growth) :- কোভিড-১৯ এর কারণে মানুষ হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকায় পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বাড়তে পারে। সারাক্ষণ বাড়িতে থাকায় মানুষের যৌনজীবনে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। এটা বিশ্বের সর্বত্র জায়গায় একই অবস্থা। বিশেষ করে জন্মনিরোধক পদ্ধতির সামগ্রী এখন সরবরাহ কমে গেছে। কারণ চাহিদা অনেক বেশি। এই চিত্র সারা বিশ্বেই। যার কারণে গর্ভধারণ বাড়বে বলে অনেক গবেষণাতেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
১৩. তৃতীয় বিশ্বযুদ্বের সূত্রপাত :- করোনা সমাপ্ত হলে সব ঠিক হয়ে যাবে, তা বলতে পারবো না। চীন এবং আমেরিকার মধ্যে একটি যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। আমেরিকা যদি প্রমাণ করতে পারে, করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে চীনের কোনো হাত রয়েছে। তাহলে তারা চীনকে ছাড় দেবে বলে মনে হয় না। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তো কয়েকবার সংবাদ সম্মেলনে করোনাকে চীনা ভাইরাস হিসেবে অভিহিত করেছেন। ট্রেক্সাস আদালত চীনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ক্ষতির মামলায় চীনের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে চীনকে অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে। এছাড়াও অর্থনৈতিক ও ক্ষমতার লড়াই শুরু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা তৃতীয় বিশ্ব যুদ্দের ইঙ্গিত দেয়।
দেশের সরকারগুলোকে উপরোক্ত বিষয় সমূহ মাথায় রেখে বর্তমান পরিস্তিথি নিয়ন্ত্রণ করা। এখন থেকে আপনার কাছে কোনটার নিশ্চয়তা বেশি মনে হচ্ছে, তা জানিয়ে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। আমাদের পোস্টি ভালো লাগলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন , এতে আমাদের কাজের অনুপ্রেরণা আসবে।
এই পোস্টি পরে আগামী দিনের একটা ধারণা পেলাম।
ধন্যবাদ!! আশা করি আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করবেন।