ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে তুমুল লড়াইয়ের কথা জানিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার রণক্ষেত্রে এই লড়াই হয় বলে দাবি করছে মস্কো। তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণ নিয়ে নীরবতা বজায় রেখেছে কিয়েভ।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমের পুতিন ও এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমরা নিশ্চিত করেই বলতে পারি যে, ইউক্রেইনের আক্রমণ শুরু হয়ে গেছে।”![ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ শুরু](data:image/svg+xml;base64,PHN2ZyB4bWxucz0iaHR0cDovL3d3dy53My5vcmcvMjAwMC9zdmciIHdpZHRoPSI2NDAiIGhlaWdodD0iMzg0IiB2aWV3Qm94PSIwIDAgNjQwIDM4NCI+PHJlY3Qgd2lkdGg9IjEwMCUiIGhlaWdodD0iMTAwJSIgZmlsbD0iI2NmZDRkYiIvPjwvc3ZnPg==)
রাশিয়া এবং ইউক্রেইন দুপক্ষেই শুক্রবার তুমুল লড়াই চলার খবর জানিয়েছে, শুক্রবার রণক্ষেত্রে এই লড়াই হয় বলে দাবি করছে মস্কো। তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণ নিয়ে নীরবতা বজায় রেখেছে কিয়েভ। ইউক্রেনের আক্রমণের তীব্রতা বা মাত্রা কেমন বা রাশিয়ার প্রতিরক্ষা রেখা ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে কিনা তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হচ্ছে না।
কিয়েভের পাল্টা আক্রমণে কয়েক হাজার প্রশিক্ষিত সেনা অংশগ্রহণ করার কথা। যাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে পশ্চিমারা। গত কয়েক মাস ধরে প্রতিরক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া রাশিয়া বলছে, চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে ইউক্রেনের হামলা প্রতিহত করে যাচ্ছে। কিয়েভ এখনো বলেনি তাদের আক্রমণ শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনকে আরো ২০০ কোটি ডলারের অস্ত্র দিবে আমেরিকা
রুশপন্থি সামরিক বস্নগাররা শুক্রবার জাপোরিঝিয়া রণক্ষেত্রে তুমুল লড়াইয়ের কথা উলেস্নখ করেছেন। ওরিখিভ শহরের কাছাকাছি অঞ্চলে ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী একটি স্থল সংযোগের মাঝামাঝিতে এই লড়াই হয়। এই স্থল সংযোগকে ইউক্রেনের একটি সম্ভাব্য প্রধান নিশানা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তবে ইউক্রেইনের সেনারা কোনও সেক্টরেই তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি বলে দাবি করেন পুতিন। সেইসঙ্গে এ মুহূর্তে তুমুল লড়াইয়ে লিপ্ত রুশ সেনাদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “আমরা আপনাদের বীরত্ব দেখেছি।
ইউক্রেইনের সামরিক বিশ্লেষক ওলেক্সান্দর মুসিয়েঙ্কো দেশটির এনভি রেডিও তে বলেছেন, ইউক্রেইন অগ্রগতি অর্জন করছে। তবে দক্ষিণ-পূর্ব জাপোরিজিয়া অঞ্চলে ইউক্রেইনের বড় ধরনের পাল্টা হামলা হওয়ার রুশ খবর নাকচ করে দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি- ২০২৩
“তিনি বলেন এটি সত্য নয়। এ লড়াই পাল্টা হামলার মূল পর্ব নয়। এটি কেবল একটি ধাপ মাত্র। বড় কোনও যাত্রা নয়, যা থেকে আমরা জলদি কোনওকিছু আশা করতে পারি এবং শত শত কিলোমিটার স্বাধীন ভূখন্ড পেতে পারি।”ইউক্রেইনের পাল্টা হামলায় আদতে পশ্চিমাদের প্রশিক্ষিত এবং অস্ত্রসজ্জিত শত শত সেনা যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।যুক্তরাষ্ট্র এ পাল্টা হামলার জন্য শুক্রবার আকাশ প্রতিরক্ষা এবং গোলাবারুদসহ নিরাপত্তা সহায়তা হিসাবে অতিরিক্ত ১২০ কোটি ডলার তহবিল ঘোষণা করেছে।
ইউক্রেনে রাতভর বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে এখন পর্যন্ত একজন নিহত হয়েছে ও ৪ জন আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রুশ হামলায় একজন নিহত এবং আরও তিনজন আহত হয়েছে। হামলায় চারটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার চারটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১০টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রুশ বাহিনী ১৬টি ড্রোন এবং ছয়টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে।
আরও পড়ুন: আমাশয় রোগের লক্ষণ ও বিশেষ প্রতিকার
তবে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণে এই ক্ষয়ক্ষতি বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন তারা। পশ্চিমা দেশগুলো আগেই জানিয়েছিল, পাল্টা আক্রমণ সফল হতে সময় লাগবে এবং এই অভিযানে সেনা, তাদের যুদ্ধাস্ত্র ঝুঁকিতে পড়বে। এছাড়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও কয়েকদিন আগে স্বীকার করেন, পাল্টা আক্রমণ তাদের জন্য অনেক কঠিন হবে এবং এই অভিযানে ‘অনেক সেনা মারা যাবে’।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু দাবি করেছেন, গত বুধবার বাখমুতে হামলা চালাতে আসে ইউক্রেনের সেনারা। তখন তাদের ঠেকিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বৃহস্পতিবার তিনি দাবি করেন, জাপোরিঝিয়াতেও আক্রমণ চালিয়েছিল ইউক্রেনীয় বাহিনী। সেখানেও তাদের রুখে দেওয়া হয়।পাল্টা হামলা চালাতে কিইভের মোট ১২টি ব্রিগেডে ৫০ থেকে ৬০ হাজার সেনা প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে নয়টি ব্রিগেডে পশ্চিমা অস্ত্র সজ্জিত এবং কিইভের পশ্চিমা মিত্ররা তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা