আপনি কি চুল পড়া বন্ধ করার উপায় খুঁজছেন ? চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমরা আপনাকে একটি সঠিক গাইডলাইন দিবো। যার মাধ্যমে চুল পড়া ও চুল গজানোর উপায় জানতে পারবেন। চলুন বিস্তারিত ভাবে আলোচনা শুরু করা যাক।
বর্তমান চুল কমবেশি সবারই পড়ে। কারও হয়তো কম আবার কারও অনেক বেশি। প্রাকৃতিক পরিবর্তন, আবহাওয়া ও আধুনিকতা এসবের জন্যে নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যেই চুল পড়ার সমস্যা দৃশ্যমান। প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি শারীরিক কিছু সমস্যার জন্য চুল পড়ে থাকে। যেমন – থাইরয়েড, হরমোনাল ইমব্যালেন্স, শরীরে পুষ্টির অভাব অথবা মাথায় রক্ত চলাচল সঠিক ভাবে না হওয়া।
আমাদের চুল পড়াটা অনেক সময় বড় চিন্তার কারণ হয়ে পরে। পুরুষদের ক্ষেত্রে দেখা যায় কখনো কখনো মাথায় টাক পড়ে যায় আর মহিলাদের ক্ষেত্রে চুলের দৈর্ঘ্য পাতলা হয়ে যায় অথবা সিঁথি ফাঁকা হয়ে যায়। বড়দের পাশাপাশি শিশুদের ক্ষেত্রেও চুল পড়ার সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। প্রতিদিন প্রায় ৫০-১০০ টি চুল পড়লে সেটি স্বাভাবিক ধরা যায়। কিন্তু এর বেশি হলে চুল পড়ার সমস্যা হিসেবে ধরা হয়। মূল কোথায়, স্নানের তোয়ালেতে অথবা বালিশের কভারে যদি চুলের পরিমান বেশি লক্ষ্য করা যায় তবে সে ক্ষেত্রে চুলের পরিচর্যার করা প্রয়োজন হবে এবং যদি দিন দিন এর পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায় সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের সরণাপন্ন হতে হবে।
চুল পড়া নিয়ে বেশি চিন্তা করলেও চুল আরও বেশি পড়ে। আপনাকে চুল পড়া সমস্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রথমেই জানতে হবে কেন আপনার চুল পড়ছে। মূল কারণটা খুঁজে পেলে, আপনার সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। তখন আপনিই আপনার চুল পড়া বন্ধ করতে পারবেন। আপনার চুল পড়া বন্ধ করতে এবং চুলের গোড়া মজবুত রাখতে নিয়মিত বেশ কিছু যত্ন নেওয়াও প্রয়োজন।
চুল পড়ার কারন কি?
বর্তমান চুল পড়ার সমস্যায় প্রায় সবার মাঝেই দৃশ্যমান। আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন, প্রাকৃতিক পরিবর্তন, ও মানহীন প্রসাধনীর ব্যবহার এসবের জন্যে অনেকটা দায়ী। এছাড়াও কারও শারীরিক সমস্যার কারণে চুল পড়তে পারে। কিছু কারণে অধিক পরিমান চুল পড়তে পারে। জেনে নিন চুল পড়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণসমূহ:
১। বাত, হৃদপিন্ডের সমস্যা, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা মানসিক চাপের কারণে আপনি ওষুধ দীর্ঘদিন খেলেও আপনার চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২। বংশগত কারণে চুল পড়তে পারে। যদি কারো একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর চুল পড়ার সমস্যা দেখা যায় এবং তাদের পারিবারিক ভাবে সেই বিষয়টি ক্রমান্বয়ে দেখা যায়, তবে সেটিকে বংশগত সমস্যা বলা হয়।
৩। থাইরয়েড, অ্যালোপিয়া কিংবা মাথার তালুতে দাদ এর মতন রোগ দেখা দিলে সে ক্ষেত্রে চুল ঝরার সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। মূলতঃ মাথার ত্বক সংক্রমিত হলেই এই সমস্যা লক্ষ্য করা যায়।
৮। গর্ভাবস্থা, প্রসব বা মাসিক বন্ধ হওয়ার পর কিংবা অত্যধিক জন্মনিয়ন্ত্রণ বরি খেলে অনেক ক্ষত্রে মায়েদের চুল পড়ার সমস্যা দেখা যায়। এসময় শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এরকম সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যা অনেক বেশি হলে ডাক্তারের সাহায্য নিতে হবে।
৫। চিন্তা কিংবা হঠাৎ কোন মানসিক আঘাত পেলে কিংবা ওজন বৃদ্ধির মত সমস্যাগুলি দেখা দিলে চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যায়। অনেক সময় শরীরের সর্বত্রই যেমন ভ্রু, চোখের পাতা, শরীরের লোম সব জায়গাতেই চুল পাতলা হয়ে যায়। এর মূল কারণ হল হেয়ার ফলিকলের ওপর এক প্রকার অপুষ্টির অভাব দেখা দেয় যার ফলে চুল ধীরে ধীরে পাতলা হতে শুরু করে।
৬। শারীরিক অসুস্থতা কিংবা অপারেশনের পরে চুল পড়ার সমস্যা বৃদ্ধি পায়। এই সমস্যাকে শারীরিক সমস্যার কারণ বলা হয়ে থাকে । এসময় চুল যে পরিমাণ ঝরে সেই পরিমান চুলের বৃদ্ধি ঘটে না। দেখা যায় শরীর সুস্থ হয়ে উঠলে এই সমস্যাটির সমাধান হয়ে যায়।
চুল পড়ার লক্ষণ বা উপসর্গ কি ?
চুল পড়ার সমস্যার বেশ কয়েকটি উপসর্গ আমাদের চোখে ধরা পড়ে। সেজন্য এটিকে আমরা শুধু সাধারণ সমস্যা না বলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা বলতে পারি। চলুন দেখে নেই এই উপসর্গগুলি আপনার দেখা দিয়েছে কিনা :
১। আপনার চুল পড়ার পরিমাণ পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
২। যদি মাথার প্রথম অংশে কপালের উপরে ও তালুতে চুলের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।
৩। যদি মাথার পিছনের দিক থেকে সামনের দিকে থেকে চুল আঁচড়ানোর সময় তালুর অংশে চিরুনি দ্বারা আঘাত লাগে।
৮। আপনার মাথার ত্বকে অধিক শুষ্কতা এবং খুশকির সমস্যা বৃদ্ধি পায়।
৫। আপনার মাথার মাঝে কালো কালো দাগ অথবা দাদের মত মাথার ত্বকে কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে ।
৬। আপনার মাথার চুলের পাশাপাশি ভুরুর চুল অথবা চোখের পাতার চুল পড়ার সমস্যা দেখা যাচ্ছে ।
যদি এই সমস্যা গুলি বেশি মাত্রায় লক্ষ্য করা যায় সে ক্ষেত্রে অতি দ্রুত চুলের যত্ন নেওয়া উচিত । তবে এক্ষেত্রে শুধু মাত্র ঘরোয়া উপায় অবলম্বন না করে একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। চুল পড়া বন্ধ করতে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা বুদ্বিমানের কাজ।
আপনি আরও পড়তে পারেন: নিমপাতার ভেষজ গুনাগুন, উপকারিতা ও ব্যবহার
৮ টি প্রাকৃতিক নিয়মে চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
আমরা চুল পড়া বন্ধ করার জন্য অনেক কিছু ব্যবহার করি। যার বেশির ভাগ তৈরী হয় বিষাক্ত কেমিক্যাল দ্বারা। এতে আমরা অজান্তেই চুলের অনেক ক্ষতি করে ফেলি। যার কারণে আমাদের মাথায় টাক পরে যায়। আজকে আমরা প্রাকৃতিক নিয়মে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল পড়া বন্ধ করার কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।
কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু প্রত্যাহার (Exclude chemical shampoos): কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু চুলের জন্য একটি মৃত্যুর দেবতা। এটার থেকে দূরে থাকা ভালো। আর যদি ব্যবহার করতে হয়, তাহলে সরাসরি শুকনো চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার না করে তেল দিয়ে শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
চুলের যত্নে হেয়ার প্যাক(Hair packs for hair care): আপনার যদি অতিমাত্রায় চুল পড়তে থাকে তাহলে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। আমলকী, ঘৃতকুমারী, শিকাকাই ও নিমের গুঁড়ো একই পরিমাণে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিতে পারেন। মাত্র সপ্তাহে একবার এটির ব্যবহার করলে চুল পড়া অনেক অংশে বন্ধ হবে। তাছাড়াও ডিম, মেথির গুঁড়ো ও টক দই মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে চুলে সপ্তাহে দুদিন দেওয়া যেতে পারে। এই হেয়ার প্যাক ব্যবহারে ফলে চুলের গোড়া মজবুত হয়। প্যাক ব্যবহারের পর পরিষ্কার করতে হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন।
১। অবশ্যই চুলে তেল দিতে হবে (Using oil): আপনার চুল পড়া বন্ধ করতে অথবা চুলের যত্ন নিতে অবশ্যই মাথায় তেল দিতে হবে। আর এর জন্য সবচেয়ে ভালো হলো নারকেল তেল। নারকেল তেলে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে, যা যেকোনো ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসের আক্রমণ থেকে চুলকে রক্ষা করে ও চুলকে মসৃণ ও স্বাস্থ্যবান করে। এজন্য কমপক্ষে সপ্তাহে একদিন চুলে তেল দিতে হবে।
রোজমেরি ল্যাভেন্ডার তেলের ব্যবহার (Using Rosemary Essential Oil): রোজমেরি ল্যাভেন্ডার তেলে চুলের যত্নে অন্যতম একটি কার্যকর উপাদান। এই তেলে চুল পড়া বন্ধ করার উপাদান আছে; যা চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে এবং নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে। এতে রয়েছে নারকেল, আমলকী, জোজোবা, জলপাই, ক্যাস্টর উপাদান যা চুল পড়া বন্ধ করতে দারুন ভাবে সাহায্য করে।
কন্ডিশনার ব্যবহার করুন (Use Conditioner): কন্ডিশনার ব্যবহার করলে আপনার চুল উজ্জ্বলই হবে এবং চুলের গোড়াকে মজবুত করতে সাহায্য করবে। তবে অবশ্যই চুলের ধরন বুঝে বেছে নিতে হবে আপনার কন্ডিশনার। আপনি অ্যাকুয়া, বিটরুট নির্যাস, প্রো ভিটামিন বি-৫ সমৃদ্ধ কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন।
কুসুম পানির ব্যবহার (Use of lukewarm water): কিছু লোক মাঝে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, গরম পানি মাথায় দিয়ে চুল পরিষ্কার করলে চুল ভালো থাকে। মূলত, গরম পানি মাথার তালুর অধিকতর ক্ষতি করে, যার ফলে চুল পড়ে ও চুল দুর্বল হয়ে যায়। তাই চুল পরিষ্কার করতে হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন। যা চুলের জন্য অনেক উপকারী।
গরম বাতাস ক্ষতিকর (Hot air is bad for hair): বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরা মাথার চুল শুকাতে গরম বাতাস বা হিট ব্যবহার করে। মনে রাখতে হবে কোনো প্রকার গরম বাতাস বা হিট চুলে নেওয়া যাবে না। কেননা এটি একটি চুলের জন্য মারাত্মক হুমকি।
স্বাস্থকর খাবার (Healthy food) : আপনি কী স্বাস্থকর খাচ্ছেন? খারাপ খাদ্যাভ্যাস চুল পড়ার একটি অন্যতম কারণ। এ জন্য স্বাস্থকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। চুল পড়া রোধে প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন। সামুদ্রিক মাছের ডিম, ভিটামিন-ই যুক্ত খাবার, গরুর দুধ ইত্যাদি চুলের জন্য খুবই স্বাস্থকর খাবার।
আপনি আরও পড়তে পারেন: ক্যান্সার থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক ও বিকল্প উপায়
মাথায় নতুন চুল গজানোর ৩টি উপায়
১। ম্যাসাজ করা: প্রথম উপায় হলো চুলে প্রতিদিন ম্যাসাজ করা। ম্যাসাজ করার ফলে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং স্ক্যাল্প উদ্দীপিত হবে। Vitamin-E চুলের জন্য প্রয়োজনীয় নিউট্রিশনের যোগান দেয়। ভিটামিন ই এর সাথে চা এর নির্যাস ভালো ভাবে মিশিয়ে হাতের তালু এবং আঙ্গুলের সাহায্যে পুরো মাথার চুলের গোড়ায় গোড়ায় লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর ৫-৬ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এরপর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নিন। কিছুক্ষণ পর শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এই নিয়মটি দিনে ৩ বার ব্যাবহার করতে পারেন। প্রতিবার শ্যাম্পু ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হলো।
২। ভাইব্রেটিং ম্যাসেজার: প্রতিটি চুলের গোঁড়ায় হেয়ার ফলিকল থাকে। ভাইব্রেশনের মাধ্যমে যদি এই ফলিকল উদ্দীপিত করা যায় তাহলে নতুন চুল গজানোর সম্ভব বেড়ে যায় । আমাদের দেশের বাজারেও ভাইব্রেটিং ম্যাসেজার কিনতে পাওয়া যায়। আপনার মাথায় যে জায়গায় বেশি চুল পড়ে যাচ্ছে, সেখানে বেশি মনোযোগ দিন। ভালো ফল পেতে আপনাকে দিনে ৩ বার ৫-১০ মিনিট আপনার স্ক্যাল্প ভাইব্রেট করতে হবে।
৩। শ্যাম্পুর ব্যবহার : বাজারে কিছু ন্যাচারাল শ্যাম্পু পাওয়া যায়। যেটি ব্যবহার করতে পারেন। সেটি আপনার স্ক্যাল্পের মৃত কোষগুলো ঝরে যেতে সাহায্য করতে পারে। মৃত কোষগুলো স্ক্যাল্পের ফলিকল ব্লক করে রাখে, যার ফলে নতুন চুল গজানোর পথে বাঁধা দেয়। যেকারণে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। অল্প পরিমাণ শ্যাম্পু নিয়ে মাথায় ম্যাসাজ়ের মত করে লাগিয়ে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে দিনে একবার ধুয়ে নিন।
আপনি যদি করেন এই পোস্টির মাধ্যমে চুল পড়া বন্ধ করার উপায় কার্যকর মনে করেন তাহলে পোস্টি শেয়ার করে আপনাদের বন্দুদের জানাতে ভুলবেন না। যদি আপনি তাদের ভালোবেসে থাকেন। পোস্টি সম্পর্কে একটি মূল্যবান কমেন্ট আশা করবো। ধন্যবাদ !!
অনেক সুন্দর পোস্ট